গত তিন দিন আকাশের অবিরাম ক্রন্দন দেখে কে বলবে এখন অক্টোবরের পোস্ট মনসুন পিরিয়ড চলছে? ৭২ ঘন্টা ধরে ভানলাল দা'র জুমে আমরা দু'জন আঁটকা পরে আছি। প্রতিদিনই ভাবি আজকে হয়ত মেঘ কেঁটে যাবে আর আমরা নীচে নেমে প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো কালেক্ট করতে পারব। কিন্তু প্রকৃতি আমাদের এই ইচ্ছার সাথে তিন দিন ধরে একমত হতে পারছে না। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। শুধু খাই দাই ঘুমাই। প্রতিদিন পালা করে একজন ৩০০মিটার নিচে নেমে ঝিঁড়ি থেকে খাবার পানি নিয়ে আসি। সারভাইভাল টেকনিকে দিয়াশলাই/লাইটার ছাড়া সারাদিন ধরে আগুন জ্বালানো প্র্যাকটিস করি। কষ্ট সবচেয়ে বেশী হয় রাতের বেলা। ঝুম বৃষ্টির মধ্যেই বাধ্য হয়ে সারা শরীরে পলিথিন পেঁচিয়ে মাচায় কোন রকমে রাত কাটাতে হচ্ছে। জুম ঘর ভর্তি নতুন কাঁটা ধান। ধানের সাথে সাথে হাজার রকমের পোকা ফ্রী। পোকার কামড়ে অতিষ্ঠ হওয়ার চাইতে বৃষ্টির ছাঁট গায়ে লাগানো আমাদের জন্য বেশী আরামদায়ক ছিল।
আজকে সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। রাতের ঘন কালো মেঘ গুলো এখন থোকা থোকা হয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা তাড়াতাড়ি মাম এর ৫ লিটার এর বোতল, কম্পাস, স্টপ ওয়াচ,রশি, জিপিএস আর হাবিজাবি নিয়ে নীচে নামা শুরু করলাম। আজকে যেভাবেই হোক ডাটা সংগ্রহ করতেই হবে। বাংলাদেশের ওয়াটার ফল গুলোকে আন্তর্জাতিক ভাবে স্বীকৃত করতে ডি-ওয়ে এক্সপেডিটর্স এর "হান্ট ওয়াটার ফল" নামে একটা প্রজেক্ট আছে। বিভিন্ন ঋতুতে ওয়াটার ফল গুলোর ফ্লো, এক্টিভ সোর্স, চারপাশের ভূ-প্রাকৃতিক গঠন ইত্যাদি হাবিজাবি ডাটা সংগ্রহ করতে হান্ট ওয়াটার ফল প্রজেক্টের এক্সটেন্ডেড এক্সপিডিশনে বাকলাই এসেছি আমি আর মাইনুল ভাই। জুমের রাস্তা দিয়ে নামতে নামতে এক সময় রাস্তা শেষ হয়ে গেল। এরপর ঝুড়া মাটির লম্বা একটা ঢাল শুরু হয়ে গেছে। কয়েকদিনের ঝুম বৃষ্টিতে সব কাঁদা হয়ে আছে। সাবধানে নামা শুরু করতেই দেখি মাটি ধসে যাচ্ছে। মাইনুল ভাই ব্যাগ থেকে ১০০ফিট রশি বের করে গাছের সাথে বেঁধে দিল। এত ভারি একটা রশি ক্যারি করতে দেখে মনে মনে আবারও স্বীকার করলাম-মাইনুল ভাই আসলে মানুষ না। আস্ত একটা অমানুষ!
রশি ধরে রেপেলিং করে একজন একজন করে নিচে নামা শুরু করলাম। ১০০ফিট শেষ হতেই দেখি বাকলাই ফলস এর স্ট্রীম আরও প্রায় ৫-৭ফিট নীচে। এখানে পাহাড়ে ধসে পুরা নব্বই ডিগ্রি হয়ে আছে। পাথরে বাড়ি খাইলে খাইলাম, যা আছে কপালে চিন্তা করে ঝিড়ির উপর দিলাম লাফ। মাইনুল ভাই নামতেই আমরা ঝিড়ি ধরে উপর দিকে এগুতে লাগলাম। ১০ মিনিট ও গেল না, কোথা থেকে যেন এক ঝাঁক কালো মেঘ পুরো আকাশ ঢেকে ফেলল। শুরু হল অঝোরে বৃষ্টি। ধীরে ধীরে ঝিঁড়ির পানি বাড়তে লাগল। শান্ত হয়ে বয়ে চলা প্রসবন এখন উত্তাল হয়ে চাপা গর্জন শুরু করল। মাইনুল ভাই এর অভিজ্ঞ চোখে মুহুর্তেই অবস্থার ভয়াবহতা ধরা পরল। "তাড়াতাড়ি উপরে উঠ। যে কোন সময় ঢল নামতে পারে। একটা ধাক্কা খাইলে আর তাল রাখা যাবে না". দু'জন আবার দৌড়ে উপরে উঠা শুরু করলাম। রশি ধরে এইবার জুমারিং করার সময় কাঁডায় পা দেবে যাচ্ছে। হাঁটু পর্যন্ত কাঁদা থেকে পা টেনে টেনে উপরে উঠতে অনেক কষ্ট হচ্ছিলো আমার। কুকুরের মত হাঁফাতে হাঁফাতে দু'জন যখন মাঁচায় ফিরে আসতেই ভোজবাজীর মত বৃষ্টি বন্ধ হয়ে গেল। রাগ, কষ্ট, দুঃখ আর হতাশা নিয়ে বাক্লাই এর দিকে তাকাতেই স্তব্ধ হয়ে গেলাম। বিস্ময়ে বিমূঢ হওয়া যাকে বলে। বাকলাই এর এই রকম পাগলা ভয়ানক চেহারা দেখব আশা করি নাই কখনো। আর তার গর্জন এর কথা আর নাই বা বলি। আমার লেখা বা ছবি কোন টাই সেই হুংকার কে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে না।
এক্সপিডিসনঃ সর্বোচ্চ ঝর্নার খোঁজে [২০১০]
বাকলাই ফলস
বাকলাই, বান্দরবান।
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন