somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আগা নষ্টালজিক গোড়া নষ্টালজিক [এক]

২৮ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েক মাস আগে টোকাই এর ফেসবুক স্ট্যাটাস এ আমরা দুই বন্ধু ছোটবেলার স্মৃতি রোমন্থন করতে করতে কিভাবে যেন ৫০০'র উপর কমেন্ট হয়ে গেল। আমরা কি করতাম, কি খেলতাম, কি খেতাম ইত্যাদি ইত্যাদি। তখনই টোকাই কে বলেছিলাম, একটা কিছু লিখতে ইচ্ছা করছে। পরে লিখতে গিয়ে দেখলাম এক এক টা স্মৃতি এতটাই বিশাল যে সেই ৫০০ কমেন্ট ময় স্মৃতি একই পরিসরে লিখা আমার জন্য অসম্ভবের মত একটা কাজ। তাই ভাবলাম একটা একটা করেই লিখে ফেলি। নাই মামার চাইতে তো কানা মামা ভালঃ

:::টারজান আর জেন:::

উঁহু উঁহু...শিরোনাম দেখেই এত খুশি হওয়ার কিছু নাই। দুষ্টু ছেলের দল, তোমাদের দুষ্টুমিতে ভরা চিন্তা গুলোকে সংযত কর। আমি আমার শৈশবের স্মৃতি রোমন্থন করছি, কৈশরের না। আমি বলছি আজকে থেকে প্রায় বিশ বছর আগের কথা। এখনও মনে আছে, কারেন্ট চলে যাওয়া এক সন্ধ্যায় আব্বু আমাকে একটা গল্প শুনিয়েছিল। কিভাবে বনের মধ্যে একটা প্লেন ক্র্যাশ করল, কিভাবে জঙলে হারিয়ে যাওয়া শিশু গরিলা পরিবারে বড় হয়ে একদিন শক্তিশালী হয়ে উঠল আর তার নানা রকম দুঃসাহসিক এডভেঞ্চার। বাসায় তখন ইত্তেফাক রাখা হত। সেই ইত্তেফাক এর মাধ্যমেই পরে সেই গল্পের নায়ক টারজান, জেন আর এডগার রাইজ বারোজ এর সাথে আমার পরিচয়। সেই থেকে আমি ইত্তেফাক এর নিয়মিত পাঠক হয়ে গেলাম। এক সময় ইত্তেফাক এর পাতায় চোখ বুলানো টা নেশার মত হয়ে গেল। বেশী কিছু না, শুধুমাত্র টারজান এর সেই তিন ব্লক কার্টূন।

প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতাম। বাসার সবাই উঠার আগেই টারজান টা পড়ে নিব বলে, একদিন মিস করলেই হয়েছে, সারা বাড়ি- এই ঘর থেকে সেই ঘর লাট্টুর মত ঘুরতে হবে।
ছোটবেলায় ধৈর্য আর অধ্যাবসায় প্রথম পাঠ রবার্ট ব্রুস এর আগে মনে হয় টারজান এর এই ধারাবাহিক কার্টূন পড়তে গিয়ে পেয়ে গিয়েছিলাম। প্রতিদিন সর্বসাকূল্যে চার থেকে পাঁচ টা ডায়লগ। কাহিনী তো আর আগায় না। এরপর কি হবে, জংলিরা কি জেন কে মেরে ফেলবে? সারাদিন জল্পনা-কল্পনা করতাম আর ছটফট করতাম। পরে বিরক্ত হয়ে এক কঠিন সংকল্প করে ফেললাম- পুরো কার্টূন টা একবারে পড়ব। তখন কি আর জানতাম, এই কাহিনী চুইংগাম এর মত খিচতেই থাকে। কোনদিন শেষ হয়না। ইত্তেফাক এ এখনো টারজান এর কার্টূন ছাঁপে-ঐ ৩ ব্লকই। তাও ভাগ্য ভাল জেন এর প্রেম এ পরে ২০ বছর অপেক্ষা করে বসে থাকি নাই। আমার সংকল্প স্থায়ী ছিল ৭-৮মাস। প্রথম প্রথম কচি মন কে সংযত করতে অনেক কষ্ট হত। মাঝে মাঝে চোখ চলে যেত, পরে নিজেকেই প্রবোধ দিতাম, শুধু তো চোখ বুলাইসি, কিছু পড়ি তো নাই।

কয়েকদিন পরই এক সমস্যায় পরলাম। পুরানো পেপার গুলা যে দুইদিন পর কই চলে যায় পরে আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এরপর থেকে প্রতিদিনের কাজ হল টারজান এর কার্টূন ব্লক টা কেঁটে নেয়া। এইজন্য ভাইয়ার শেভিং কিট থেকে একটা কাঁচি ও মেরে দিলাম। একদিন ভোরে টারজান কেঁটে স্কুলে চলে গেছি, দুপুরে বাসায় ফিরতেই আব্বুর সেই কি বেদম মার। আমি নাকি কোন এক গুরুত্বপূর্ণ খবর হাওয়া করে দিয়েছি। এখন আমি কিভাবে জানব যে টারজান এর পিছেন আবার খবর ও ছাপা থাকে।

সবচেয়ে বেশী পেপার কেঁটেছি নারায়নগঞ্জ এর সূধীজন পাঠাগার থেকে। সেই ছোটবেলা থেকে রাম ভাই কে পটিয়ে আর্কাইভ রুমে ঘন্টার পর ঘন্টা কাটানো। চারিদিকে পুরানো বই, পেপার আর ম্যাগাজিন এর সাড়ি- এর মাঝে বসে তন্ময় হয়ে আমি এক এক করে টারজান কাটছি। দেখতে দেখতেই অনেক অনেক টারজান কাটিং জমতে লাগল।



কয়েকমাস পর হঠাৎ করেই একদিন আব্বু একটা বই নিয়ে আসে, ছোটদের আবিষ্কার। ঐ বইতে জুতার বাক্স দিয়ে একটা বায়োস্কোপ বানানোর নকশা ছিল। সেটা দেখে মনে হল, অনেক ধৈর্য্য হইসে। এখন সব পড়া যাক, আসল কথা হল বায়োস্কোপ টা বানানো যাক। তারপর সব কয়টা কাটিং এক এক করে সিরিয়াল এ সাজালাম।এখন একটা শক্ত জুতার বাক্স লাগবে। ছোট চাচার ঘর থেকে একটা মেরেই নকশা অনুযায়ী কেঁটে ফেললাম। কাটিং গুলোকে এক এক করে সাঁজিয়ে আঠা লাগিয়ে উপরে আর নীচে দুটা চকবার এর কাঠিতে পেঁচিয়ে দিলাম। কাঠি দুটা জুতার বক্সের সাইডে বসিয়ে দিলাম যা চেঞ্জার হিসেবে কাজ করত। অন্ধকারে পড়ার সুবিধার জন্য বক্সের ভিতরে লাইটিং এর ও ব্যাবস্থা করেছিলাম। নানার স্টীলের টর্চ লাইট থেকে লাইট চুরি করে তার আর ব্যাটারী দিয়ে সুন্দর একটা সার্কিটও বানিয়ে ছিলাম।

সেই ছোট্ট কালো রঙের জুতার বাক্স টা আমার অনেক প্রিয় ছিল। সারাক্ষন সাথে নিয়ে ঘুরতাম। সময়ের সাথে সাথে সেই বাক্স টাও কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইনডিয়ান মিডিয়া, র এবং সংখ‍্যালঘু প্রসঙ্গ

লিখেছেন মোরতাজা, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১২:৫৭



১.
ইন্ডিয়ান মিডিয়াকে ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত সাংবাদিকতার ক্ষেত্র বঙ্গে গীতা/বাইবেল জ্ঞান করা হতো। ৫ আগস্টের পর এই দেশটির মিডিয়া আম্লীগ এক্টিভিস্ট সুশান্তের আমার ব্লগের চেয়ে খারাপ পর্যায়ে প্রমানিত হয়েছে—জানায়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ বলা হবে, না প্রতারণা বলা হবে?

লিখেছেন সাড়ে চুয়াত্তর, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১:৪১

আমাদের দেশে এবং ভারতের আইনে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে যৌন মিলনকে ধর্ষণ হিসাবে গণ্য করা হয়। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এই ধরণের বিধান আছে বলে আমার মনে হয় না।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশ, চীন ও ভারত: বিনিয়োগ, কূটনীতি ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:১০


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের বর্তমান আন্তর্জাতিক সম্পর্কের সমীকরণ নতুন মাত্রা পেয়েছে। চীন সফরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ ও আর্থিক প্রতিশ্রুতি নিয়ে ফিরছেন, যা দেশের অর্থনীতির জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪

ড. ইউনূসকে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান....

বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। শনিবার (২৯ মার্চ) এক বিশেষ অনুষ্ঠানে ক্ষুদ্রঋণ ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ড. ইউনুস: এক নতুন স্টেটসম্যানের উত্থান

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২৯ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ড. মুহাম্মদ ইউনুস ধীরে ধীরে রাজনীতির এক নতুন স্তরে পদার্পণ করছেন—একজন স্টেটসম্যান হিসেবে। তার রাজনৈতিক যাত্রা হয়তো এখনও পূর্ণতা পায়নি, তবে গতিপথ অত্যন্ত সুস্পষ্ট। তার প্রতিটি পদক্ষেপ মেপে মেপে নেয়া,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×