somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নারী ও যৌনতা-১ : গোপন ভিডিওর ছড়াছড়ি আর আত্মহত্যা নামক সমাধান।

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১২:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েদের প্রতি মানুষের ঘৃণার তীব্রতা দেখে আমি আজকাল হতবাক হয়ে যাই। আমরা তো দিনে দিনে এগিয়ে যাচ্ছি, মেয়েরা পড়ালেখা করছে, কাজকর্ম করছে, এখন আর নারী মানেই নিষিদ্ধ- এজাতীয় কোন বিষয় নেই, ছেলেরা-মেয়েরা পরস্পর বন্ধু হচ্ছে, একসাথে ক্লাসে, ক্যাম্পাসে, কর্মক্ষেত্রে দেখা হচ্ছে, ফেসবুক-মোবাইলের কল্যাণে চাইলেই প্রেম করা যাচ্ছে, তাহলে দৃষ্টিভঙ্গি কেন পালটাচ্ছে না? বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোনো শিক্ষিত যুবক, দেশপ্রেমের লেবাসে মোড়ানো তরুণ বিপ্লবী, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে নব্য আবির্ভূত ফেসবুক সেলেব্রিটিদের মধ্যে কি সব অসুস্থ চিন্তার লালন পালন!
আপাতদৃষ্টিতে কথাবার্তা শুনলে, দুটো ফেসবুক স্ট্যাটাস পড়লে বোঝা যায়না, কিন্তু একটু নাড়া দিলে নিচের নোংরা তলানিগুলো ভেসে ওঠে, তখন বোঝা যায়, মেয়েদের নিয়ে এদের করা মন্তব্যগুলো কি অকথ্য, আর কি পরিমাণ উদ্ভট কামনা এদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে। কতটা অসুস্থ মানসিকতার হলে কেউ নিজেদের যৌন কার্যকলাপের ভিডিও প্রকাশ করে দিতে পারে, তা আমার মাথায় আসেনা। আর যারা আবার এধরণের ঘটনা দ্বারা "মেয়েটির উচিত শিক্ষা" হল বলে মনে করে আর ফেসবুকে, ব্লগে তা নিয়ে ঝড় তোলে, তাদের কথা আর কি বলব! কিন্তু এরাই তো দেশের শিক্ষিততম অংশ, এরাই যদি এরকম ভাবে তো সাধারণ মানুষের কি অবস্থা?

নারীবিদ্বেষী অনেকরকম দেখেছি, এরা কেউ নারীদের একবাক্যে ঘৃণা করে, কেউ ভাবে মেয়েমানুষকে মাথায় চড়ানো ঠিক না, কারো কাছে নারী শুধুই সুখদুঃখের সঙ্গী, রাত দুপুরে কবিতা শোনাবার যন্ত্র, তবে নারীর নিজস্ব কোন সুখদুঃখ থাকতে নেই, কেউ আবার বয়ান দেয়, মেয়েরা মায়ের জাত, অতএব তাদের শ্রদ্ধা করা চাই (শুধু মায়ের জাত বলে আপনি কাউকে শ্রদ্ধা করবেন? পিতার অবদান কি জীবনে কম? আর যে নারী মা হতে পারবেনা, সে কি মানুষ না? তাকে আপনি কোন কাতারে ফেলবেন?) আর সেই পুরোনো- মেয়ে মানেই শোয়ার বস্তু, সে তো আছেই।

হয়ত কৈশোরে, যৌবনে কোন অপরিপক্ব কিশোরী, যুবতী তার মন ভেঙ্গে দিয়েছিল, হয়ত পরিবারে গাঁথা আছে নারী নির্যাতনের ইতিহাস, বাবার হাতে মাকে প্রহৃত হতে দেখেছে, শিক্ষাদীক্ষা, আত্মসম্মানের অভাবে তলিয়ে যেতে দেখেছে আপন বোনদের, হয়ত ছিল চাপা, অব্যাক্ত যৌন কামনা, যা কখনও প্রকাশ করবার সুযোগ মেলেনি, কারো কারো নারীর সাথে পরিচয়ই ঘটেছে পর্ণছবির মাধ্যমে, স্বমেহনের তালে তালে.... কাকেই বা দোষ দেবো?

sexual liberation- সে এক তীব্র controversial ও ভিন্ন আলোচনার বিষয়, কিন্তু তা বাদ দিয়েও যদি ভাবি, একজন নারীর যেমন ভালবাসার মানুষ, প্রেমিক, স্বামী ইত্যাদি বেছে নেয়ার অধিকার আছে, তেমনি কার সাথে সে শয্যায় যাবে সেটাও তার নিজস্ব বিষয়। যুক্তি অন্তত তাই বলে। নৈতিকটা বিসর্জন দিয়ে কোন নারী যদি কারো শয্যাসঙ্গী হয়েই বসে, তবে তার দায় সম্পূর্ণ ঐ পুরুষ ও নারীর, যদি তারা উভয়েই প্রাপ্তবয়স্ক হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখছি তার বিপরীত প্রতিফলন। কোন মেয়ের বিয়ের আগে প্রেমিক থাকলে, তার সতীত্ব হারানোর খবর পাওয়া গেলে সেটা তার জন্য একান্ত কলঙ্কের বিষয়। আর যদি কেউ গোপন ভিডিও ছেড়ে দেয়, তবে একমাত্র উপায় আত্মহত্যা! প্রশ্ন হচ্ছে, মেয়েটি কি প্রেম একা একা করেছিলো? শয্যায় একা গিয়েছিল? আর একান্ত মুহূর্তের ভিডিও প্রকাশ করে দিতে পারে যে কাপুরুষ, তার নৈতিকতার হিসেব কে নেবে? অনেককে বলতে শুনি, ভালই হয়েছে, আকাজ-কুকাজ করার সময় মনে ছিল না? আশ্চর্য বিষয়!! কাজটা কি সে একা করেছে? আর করলেই কি তার শাস্তি এভাবে দিতে হবে?
বেশির ভাগ প্রেমের সম্পর্কেই শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে মেয়েটির সম্মতি থাকে না। কখনো প্রেমিকের চাপে পড়ে, কখনো বিভিন্ন ব্ল্যাকমেইলের স্বীকার হয়ে মেয়েটি শারীরিক সম্পর্ক করতে রাজি হয়। আর যদি তার সম্মতি থেকেও থাকে, সেক্ষেত্রে মেয়েটিকে অপদস্ত করার কি অধিকার আছে আমাদের? অথচ, আমরা সবাই এরকম দু/একজন ছেলেকে চিনি, যারা শুধু শয্যায় যাওয়ার জন্যই মেয়েদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলে। কই, তাদের তো আমরা সামাজিকভাবে বয়কট করতে পারিনা?

পুরুষের যৌন কামনার চাপে পড়ে নারী চিরকাল পিষ্ট হয়ছে। আমরা কবে স্বীকার করতে পারবো, নারীরও কামনা রয়েছে? আর তা অনৈতিকভাবে পূর্ণ করতে যাওয়াটা পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য লজ্জাজনক? নারীকে মানুষ মনে করুন, মানুষের কাতারে ফেলে তার বিচার করুন। মেয়েরা কোন আলাদা biological species নয় যে, আমাদের প্রদত্ত মনগড়া শাস্তি তাকে সহ্য করতে হবে, আর তা করতে না পারলে পটাপট মরে যেতে হবে। আত্মহত্যার ফলে যে তাজা প্রাণগুলো ঝড়ে যাচ্ছে, তা বন্ধ করতে না পারলে, এত বড় বড় কথা বাদ দিয়ে আমাদেরই মরে যাওয়া উচিত।
২১টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি শেষ কবে একটি বই পড়েছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২২


আজ ২৩ এপ্রিল, বিশ্ব বই দিবস। অনেকেই একে বলেন ‘বিশ্ব গ্রন্থ ও গ্রন্থস্বত্ব দিবস’। ইউনেসকোর উদ্যোগে ১৯৯৫ সাল থেকে দিনটি পালিত হয়ে আসছে বই, লেখক এবং কপিরাইট রক্ষার বার্তা নিয়ে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেমিট্যান্সযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৫

টাকা পাচারকারীদের ধরা খুব মুশকিল বলে উল্লেখ করে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী বলেছেন, টাকা পাচারকারীদের যদি কোনোভাবে ধরতে পারেন, তাহলে ছাড় দেবেন না। আজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২০


মহাকাশের দূত ও সৌর শক্তির ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি
সত্যজিৎ রায়ের কালজয়ী সৃষ্টি প্রফেসর শঙ্কু — তাঁর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিজ্ঞানের আশ্চর্য সব আবিষ্কার, একেকটি কল্পনার জগৎ, আর রহস্যে ঘেরা... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিশুদের গুড টাচ ব্যাড টাচ শেখানো আপনার দায়িত্ব

লিখেছেন অপলক , ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১১:৩৪

বর্তমানে বাংলাদেশে একক পরিবার বেশি। আগের যুগে যৌথ পরিবারে শিশুরা বয়োজৈষ্ঠ্যদের কাছে অনেক কিছু শিখত, নিরাপত্তা পেত। এখন সে সুযোগ অনেকটাই কম। কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ৫ বছরের শিশুও... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুন্নী না হয়ে জান্নাতি হওয়ার কোন সুযোগ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৫ ভোর ৬:৫৯



সূরাঃ ১৭ বনি ইসরাঈল, ৭৭ নং আয়াতের অনুবাদ-
৭৭। আমার রাসূলদের মধ্যে তোমার পূর্বে আমি যাদেরকে পাঠিয়ে ছিলাম তাদের ক্ষেত্রেও সুন্নাত (নিয়ম) এরূপ ছিল। আর তুমি আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×