উল্লেখ্য যে, গত ১৮ অক্টোবর `সেলিম আল দীন পাঠশালা'র কবিতা অধিবেশনে নব্বইয়ের দশকের ৫জন কবি স্বকণ্ঠে স্বনির্বাচিত কবিতা পাঠ করেছিলেন। সে ৫জন কবি : চঞ্চল আশরাফ, জাফর আহমদ রাশেদ, মুজিব মেহদী, সাখাওয়াত টিপু ও সৈকত হাবিব। অনুষ্ঠানে আলোচক হিশেবে উপস্থিত ছিলেন ড. আজফার হোসেন।
মুজিব মেহদী
জন্ম : ৩ জানুয়ারি ১৯৬৯-এ, ময়মনসিংহে। ১৯৯৪-এ বাংলা সাহিত্যে স্নাতকোত্তর।
লেখালেখি করেন কেবল লিটল ম্যাগাজিনে। সম্পাদনার প্রথম অভিজ্ঞতা অর্জন করেন ময়মনসিংহ থেকে প্রকাশিত সাহিত্যপত্র দ্বিতীয় চিন্তা থেকে। পরে একা ও সবান্ধবে সিঁড়ি, অবয়ব, শিরদাঁড়া এবং লোক-এর বিনয় মজুমদার সংখ্যা সম্পাদনা করেছেন।
বছরখানেক ধরে নিয়মিত ব্লগিং করছেন
বাঁধ ভাঙার আওয়াজ (Click This Link) ও
সচলায়তন (http://www.sachalayatan.com/muzib_mehdy_0)-এ।
লিখেন আমারব্লগ (http://amarblog.com/author/muzib-mehdy) ও
মুক্তাঙ্গন নির্মাণব্লগ (http://www.nirmaaan.com/blog/muzib-mehdy)-এও।
অতি সম্প্রতি প্রথমআলোব্লগ (Click This Link)-এ নিবন্ধন করেছেন।
প্রকাশিত সৃজনশীল গ্রন্থ :
মমি উপত্যকা, কবিতা, শ্রাবণ ২০০১
http://mmmomyupattyaka.blogspot.com/
শ্রেণিকরণ এমন এক সংকীর্ণতা যা সৃষ্টির মহিমাকে ম্লান করে দেয়, উভলিঙ্গ রচনা, প্রতীতি ২০০৩
http://mmsrenikoronsonkirnota.blogspot.com/
বৃষ্টিগাছের তলায়, উভলিঙ্গ রচনা, বাংলাপ্রসার ২০০৬
http://mmbristigachertolay.blogspot.com/
ময়দানের হাওয়া, কবিতা, পাঠসূত্র ২০০৭
http://mmmoydanerhaowa.blogspot.com/
প্রকাশিত মননশীল গ্রন্থ :
মাদ্রাসা শিক্ষা : একটি পর্যবেক্ষণ সমীক্ষা, অনুসন্ধান, বিএনপিএস ২০০১ Click This Link
হাওর : জলে ভাসা জনপদ, অনুসন্ধান, আইইডি ২০০৫ Click This Link
ইকোপার্ক উন্নয়ন : জীববৈচিত্র্য রক্ষার নামে জীবন ও প্রতিবেশ বিনাশী তাণ্ডব, অনুসন্ধান, আইইডি ২০০৫ Click This Link
মুক্তিযুদ্ধ ও নারী, রোকেয়া কবীরের সঙ্গে যৌথভাবে, অনুসন্ধান, আইইডি ২০০৬
http://www.iedbd.org/muktijuddho.htm
মুজিব মেহদীর সাম্প্রতিক রচনা থেকে কবি কর্তৃক নির্বাচিত এবং তৎকর্তৃক সেলিম আল দীন পাঠশালার অনুষ্ঠানে পঠিত ৫টি কবিতা এখানে তুলে দেয়া হলো।
ভ্রমণ, গদ্যভঙ্গিতে
গদ্যভঙ্গির অদূরে স্থাপিত সুউচ্চ আশ্রয়কেন্দ্রে তোমার
কাটিয়ে এসেছি গুরুতর সন্ধ্যা এক থই থই এবার ভাদরে
পথে ছিল জল বাক্যে বাক্যে ঢেউ চাল ছুঁয়ে থাকা
বাঘে-মোষে একাকার হয়ে থাকা পৃষ্ঠা জুড়ে
বহুত্ববাদের সব চারাগাছ দুলতে দেখেছি
বিষাক্ত একটা সাপ প্রকাশ্যে সাঁতরে এসে যে বাক্যে বসেছে
পাশে তার একটি শিশুর হাতে লুটছে পৃথিবী
বানের জলের কোনো প্যারাস্পেস নেই
টানাস্রোত ভেঙে ভেঙে যেখানে দাঁড়াই
সেটা ছিল বিস্তারিত ফুটনোট গলাঅব্দি জলে
অনুজ্ঞাজ্ঞাপক এক বাক্যের কোমর ধরে সামনে এগোতে দেখি
একটু-আধটু করে কমে জল জেগে ওঠে ঊর্ধ্বমুখী সিঁড়ি
মিতক্রিয়াময় বাক্যদের জানালায় টই টই প্রভূত বাতাস
শৈলীপনা
একটা শব্দকে ধরে ঝুলে পড়ে
কতদূর যাওয়া যায় দেখিয়ে গেছে
আমাদের সুরেশ কাহারি
রেশ ধরে যেতে গেলে, জানত সুরেশ
যারা থাকে পড়ে থাকে পথের দু’ধারে
একদিন ঝুলে পড়া ছেড়ে দিয়ে
ভাবের পাখায় সে ভাসতে থাকে অবলম্বনহীন
দেখা গেল, যাপনবিষাদঘেঁষা ওর সব স্মৃতি থেকে
নতুন কাঠামো গড়তে উঠে আসছে
ফেলে আসা স্যাঁতসেঁতে জীবনের আনাচকানাচ
ওর কিছু শৈলীপনা আমাদের ভালো লেগেছিল
শোনা যায়, একান্ত দুর্দিনে কিছুদিন
পথেই থেকেছে আমাদের সুরেশ কাহারি
মন খুলবার শব্দ
মন খুলবার শব্দ পেলাম নরম এই কুয়াশা শরতে, ভেজা ঘাসমাঠ হাহা হিহি করে জানিয়ে গেল রোদের কাছে এই কাণ্ডকীর্তি, বিপ্লবী ঘটনা যেন পুঁজিতান্ত্রিক বিশ্বে
কথার শক্তি বিষয়ে আমার ধারণা জন্মেছিল বেশ বালক বয়সে, তবে কথাদের কলা হয়ে উঠতে যে অস্ত্রশস্ত্র লাগে, লাগে যে শানবিদ্যা, বাতাসের চেয়েও ওটা কম আয়ত্তে ছিল, এমনকি জানতাম না যে আয়রনি কাকে বলে, ঘৃণাকে আমি ঘৃণার অধিক কিছু কখনো ভাবি নি
বহু তিতিক্ষা তরণি বেয়ে মতিফুল ফুটল এবার, রামধাতানির মধ্যে চুপে মন খুলবার শব্দ পেলাম তোমার, সাক্ষী হয়ে মাথা নাড়ল অরূপ চাহনি
মায়া দিয়ে লেখা
অনন্তের দিক থেকে যাত্রা শুরু করে ফের ক্রমশ অনন্তে
মিশে যাওয়ার মধ্যিখানে কেবল মায়াই সত্য
শৈশব ফেলে কৈশোরে যাই, মায়া থাকে
কৈশোর ফেলে যৌবনে, তাও মায়া
যৌবন রেখে প্রৌঢ়ত্বে, মায়া
প্রৌঢ়ত্ব থেকে বার্ধক্যে, সেখানেও মায়া
মায়াজন্ম এ জগতে অবিরাম ঘটেই চলেছে
সংসার ভেঙে যায়, থাকে মায়া
সম্পর্কে ফাটল ধরে, নুয়ে যায়, মায়া থেকে যায়
স্বজন হারাই, মায়া এসে সামনে দাঁড়ায়
গ্রাম ছেড়ে আমরা শহরে আসি
মায়া পড়ে থাকে
ফের শহর বদল করি
মায়া সঙ্গে আসে
মায়া ঘুমে, মায়া তন্দ্রাচ্ছন্নতায়
মায়া সর্বত্র ছড়ানো
মায়ায় মায়ায় ভরা এ জগৎ
মায়াই আঁঠার মতো লেগে থেকে
এ জগৎ অখণ্ড রেখেছে
সময়ের ফুরালে সময়
তীরের নিকটে এসে ডুবে গেল তরী
এই ক্ষত বয়ে বেড়াবে অনন্ত জল
আমার মনের
একটা নতুন রেখা সমতলে জেগেছিল বলে
কোনোভাবে এইবারও বেঁচে যাওয়া হলো
সঞ্চয়ের মতো মনে হয় যতসব নুড়ি
আসলে সঞ্চয় নয়
পাহারা বসিয়ে রেখে তার চারপাশে
শুধু শুধু বেঁচে থাকা
করে যাব হয়ত উদযাপন
সময় সইছে বলে এত কিছু
সময়েরও ফুরালে সময় একদিন
নুড়িপাথরের প্রেম ভেঙে যাবে
বালির জগতে গিয়ে জমা হবে
জীবনের সকল রসদ
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১:০৬