যা কিছু আছে, যা কিছু ছিল আর যা কিছু থাকবে, তার সবটা মিলেই হচ্ছে এ মহাবিশ্ব
লিখেছেনঃ মাজেদুল হাসান << সময়: শুক্র, 03/01/2014 - 2:19পূর্বাহ্ন
আমাদের জীবন কাল বড় জোড় ১০০ বছর। কিন্তু মহাবিশ্বের বয়সের তুলনায় এ ১০০ বছর কি আনেক বেশি?
প্রকৃতিতে এমন এক কোষী অনেক প্রাণের অস্তিত্ব্ও আছে, যাদের আয়ু ৩০ মিনিট বা তারও কম। যেমন ব্যাকটেরিয়ার আয়ুস্কাল ৩০ মিনিট।
আবার প্রজাপতির জীবন কাল ১দিনের। তাহলে, কি দাড়াল? দাড়াল, ব্যাকটিরিয়ার কাছে এক বছর মানে সহস্র প্রজন্মের ধারা। আবার প্রজাপতির কাছে এক যুগমানে, সহস্র প্রজন্ম। ঠিক তেমনি নক্ষত্রের বয়স সীমাথেকে মানবের শত বছরও আলোর ঝলকের মতই অস্থিরতায় পূর্ণ। এ হিসেবে আমরাও হলাম সেটি, যেটি প্রজাপতি, যেটি, একটা দিনকে মহাকাল ভেবে বসে আছে।
একটা ৬ মাসের শিশুর থেকে আরেকটা ২ বছরের বড় শিশুর বয়সের পার্থক্য যেই গুরুত্ব বহন করে, আমার কাছে মনে হয় না, যখন, তাদের বয়স ৮০ ও ৮২ বছর হবে তখনও একই গুরুত্ব বহন করবে!
আর সে জন্যই ১০ লক্ষ বছর আগের একটা ঘটনা আর ৪০ লাখ বছর আগের আরো একটি ঘটনার সময় কালকে কাছাকাছি বলেই মনে হয় বা সময়ের ব্যবধান তেমন গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় না। অথচ এই কালের ব্যপ্তি বিশাল সময়ের! কিন্তু আমাদের মস্তিস্ক তা ধারন করতে ভূল করে।
এই ব্যপার গুলো চিন্তা করেই বিখ্যাত জ্যোতিঃপদার্থ বিজ্ঞানী কার্ল সাগান এমন একটা ক্যালেণ্ডার তৈরি করেন যার বৈশিষ্ট সাধারন ক্যালেণ্ডার মতই ১২ মাস বা ৩৬৫ দিনে এক বছর। সাধারন ক্যালেন্ডারের মতই জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুরু হয়ে ডিসেম্বরের ৩১ তারিখ পর্যন্ত বিস্তৃত। তবে, এর বিশেষত্ব হল ১৫ শত কোটি বছর আগে সংগঠিত হওয়া বিগব্যাং এর মধ্যদিয়ে সময়ের যে, সূচনা হয় সেখান থেকেই সাল গননা শুরু করে, ১৮৯৯ সাল পর্যন্ত সময়কালকে ৩৬৫ দিনে ভাগ করে, তারিখ হিসেব করা হয়েছে। তিনি তার ক্যালেণ্ডারের এই এক বছর সময় কালকে মহাজাগতিক বছর বা Cosmic Year বলে অভিহিত করেছেন।
এই হিসেবে পার্থিব ১০০ কোটি বছর মহাজাগতিক বছরের ২৪ দিন। এর একটা ছোট সময় হিসাব দেওয়া গেল যেমন,
৪ কোটি ১০ লক্ষ বছরে ১ দিন, ১৮ লক্ষ ৬২ হাজার ৫০০ বছরে ১ ঘন্টা, এবং ২৮ হাজার ৫শত বছর ১ মিনিটকে প্রকাশ করে।
সূর্যকে ৪৭৫ বার আবর্তনের সময়কে প্রায় ৪৭৫ বছর ধরা হয়। এই ৪৭৮ বছর সমান মহাজাগতিক বছরের ১ সেকেন্ড।
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র-এর একটা প্রকল্পরে নাম হল 'আলোর ইশকুল' এই প্রকল্পরে বিদ্যার্থীদরে জন্য তাদের নিয়মিত র্কাযক্রমের একটা অংশ হল জ্ঞনের বিভিন্ন ক্ষেত্র বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে সেমিনার, প্রর্দশণী ও বক্তৃতার আয়োজন করা। এরই ধারাবাহকিতায় গত শুক্রবার সকাল ১১টা ৩০মিনিটে পেশাদার বিজ্ঞান বক্তা আসিফ ও তার ডিসকাশন প্রজেক্ট আমন্ত্রিত হয়।
আসিফ মাব কল্যাণে বিজ্ঞান ও বিজ্ঞান মনস্কতার প্রয়োজনিয়তা জানিয়ে মানুষের সামনে বিজ্ঞান ধরনের বক্তৃতা দিয়ে বেড়ান গত ২২ বছর ধরে। আর এই সমাজকে বিজ্ঞান মনস্ক করে তোলা ও বিজ্ঞানকে সহজ করে জনসম্মুখে প্রকাশ করার জন্য ১৯৯২সালে জন্মনেয় ডিসকাশন প্রজেক্ট নামের সংগঠনটি।
উপরে উল্যেখিত সময়কালের ব্যাপ্তিতে আসিফ ব্যাখ্যা করেছেন এই মহাজগতে মানুষের আবির্ভাব কত অল্প দিনের আর কত ক্ষুদ্র। তবে মানব বিবর্তনের একটা ছোট ইতিহাসও দর্শক শ্রোতাদের নিকট উপস্থাপন করেন।
কার্লসাগানের তৈরিকরা একটা ছোট ভিডিও রেখাচিত্রের মাধ্যমে।
দুই ধরনের বিবর্তনের মধ্যে সংস্কৃতিক বিবর্তনটাও চলে এসেছে। স্যার আর্থার সি ক্লার্ক ও স্টিভেন স্পিলভার্গের তৈরিকরা সল্পদৈর্ঘ্যর চলচ্চিত্র 'দ্যা ডউন অব ম্যান' এর মাধ্যমে চিন্তা ও হাতের ব্যবহারের মাধ্যমে কি ভাবে এ মানব সভ্যতা এগিয়েগেছে তার ব্যখ্যাও করেছেন।
আসিফ বলেনঃ যা কিছু আছে, যা কিছু ছিল আর যা কিছু থাকবে তাই নিয়ে এই মহাবিশ্ব।
বক্তৃতার শেষে আসিফ দর্শক শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্লের উত্তর দেন।
এই অনুষ্ঠানের শ্রোতারা ছিল ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী।
সাংস্কৃতির বিবর্তনের সাথে প্রাণী জগতে প্রেম ভালবাসা কিভাবে চলে এল? তেমন একটা প্রশ্লের উত্তর দেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ।
তিনি তার বক্তব্যে আসিফকে বিশেষ ধন্যবাদও জ্ঞাপন করেন। এ এক ঘন্টা সময়ের মধ্যে সংক্ষেপে সাবলিল ভাষায় বিগব্যাং ও এর পর থেকে মনব সভ্যতায় মহাকাশ সংস্কৃতি পর্যন্ত বিস্তৃতি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার। তিনি মজা করে বলেনঃ 'আমি সায়েন্সের ছাত্র না তাই মাঝ খান থেকে ধরতে পারব না বলে অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগেই চলে এসেছি। এত এত ইনফরমেশন শ্রোতারা মনে রাখতে পারলেই হল।'
উল্লেখ্য, এই অনুষ্ঠানটির শিরোনাম ছিল 'মহাজাগতিক প্রেক্ষাপটে মানুষ'।
এ অনুষ্ঠানে ডিসকাশন প্রজেক্টের অন্যান্য সদস্যদের সাথে বিজ্ঞান লেখক খালেদা ইয়াসমিন ইতি, বিজ্ঞান লেখক ও কর্মী যোয়েল কর্মকার এবং জাহাঙ্গীর আলম সুর। বিজ্ঞান কর্মী ও বিজ্ঞানের ছাত্র অনিক ও রফিক।
অসুস্থতা নিয়েও উপস্থিত ছিলেন সুমনা বিশ্বাস।
আসিফ তার নয় বছরের ছেলে অরণ্যকে নিয়ে যান, এ ব্যপারে তিনি বলেনঃ বড় পরিসরে এ ধরনের বক্তৃতায় অংসগ্রহণ করলে এদের মধ্যে এক ধরনের কমিউনিকেশন পাওয়ার বা সামাজিক যোগাযোগ সক্ষমতা তৈরি হবে যা স্কুল কলেজের আবদ্ধও ছক বাধা নিয়মের মধ্যে সম্ভব নয়। এখানে দেখেছ বিভিন্ন বয়সের মানুষের সাথে পরিচয় হবে তাদের দেখবে তাদের কাছ থেকে শিখবে সেটাইতো আসল শিক্ষা। ইজিয়ান সাগরের আয়োনীয়ান আর প্রাচীন গ্রীক দার্শনিকরা প্রকৃতি থেকে এভাবেই শিখেছেন। তারা ছিল কৃষক, তাতী ও নাবিকদের সন্তান। তাদের কাছ থেকেই আমাদের এই প্রজন্ম তারা যে ভাবে প্রকৃতি থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছে সেই পদ্ধতিটা ছিল অহংকার মুক্ত ও প্রাকৃতিক। আমাদের সন্তানকেও এই ধরনের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যদিয়ে নিয়ে যেতে পারলেই প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করা যাবে।'