বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০২: মরনের পরে ( অবশ্যই বাংলাদেশের আলোচিত এবং প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
বর্তমান সময়ে সবথেকে বেশী বিতর্ক হলো আর্ট ফিল্ম আর কমার্শিয়াল ফিল্ম নিয়ে। অনেকে মনে করেন কমার্শিয়াল ফিল্ম বাদ, শুধু আর্ট ফিল্ম বানাতে হবে। আবার কেউ মনে করেন উল্টোটা। তারা আর্ট ফিল্ম সমর্থম করেননা। আর আমরা গুটি কয়েকজন আছি যারা দুটোর উপরেই সমান জোর দেই। ব্যক্তিগত ভাবে " আর্ট ফিল্ম" এই কথাটা আমি বুঝিনা। আর্ট ফিল্ম মানে কি সেটাই আমি এখনো বুঝতে পারিনি।
আমি বুঝি দুইরকমের সিনেমা
এক. কমার্শিয়াল ফিল্ম।
দুই. অফ-ট্রাকের ফিল্ম।
==> অফট্রাকের ফিল্মগুলোই কি আর্ট ফিল্ম ?
= মোটেইনা। সাধারনত আর্ট ফিল্ম যে ফিল্মগুলোকে বলা হচ্ছে তারা অফ-ট্রাক হতে পারে কিন্তু সব অফ-ট্রাককে আর্ট ফিল্ম বলা হচ্ছেনা। সেইজন্য আমি আর্ট ফিল্ম বিশ্বাস করিনা। এবং বুঝতেও পারিনা। অফ ট্রাক যে আর্ট ফিল্ম নয় তার প্রমান শাবানা অভিনীত ভাত দে , মরনের পরে, ছুটির ঘন্টা ইত্যাদি ছবি। এগুলো অফ-ট্রাক অবশ্যই কিন্তু আর্ট ফিল্ম না। সেটা ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।
যাইহোক এইরকম একটা অফ-ট্রাকের ছবি মরনের পরে। অবশ্যই বাংলাদেশের আলোচিত এবং প্রশংসিত ছবিগুলোর মধ্যে অন্যতম।
এই ছবি সম্নধে ফজলে এলাহি পাপ্পু বলেছেন, " এটা কমার্শিয়াল ফিল্ম। এটা যখন হলে দেখি তখন মানুষকে অঝরে কাদতে দেখেছি। হিট হয়েছিল কিন্তু ব্লক বাষ্টার হইনি "
অনেকরকম আগ্রহ থেকে " মরনের পরে " দেখা শুরু করলাম। প্রথম আগ্রহ এর নাম। যাই হোক শাবানার সাবলিল অভিনয় দিয়ে ছবির শুরু। ১৮ মিনিট দেখা হয়ে গেলো, মনে হচ্ছে এটা মিউজিকাল ফিল্ম। ১৮ মিনিটের ১৬ মিনিট খালি গান, তিনটা স্বয়ন-সম্পুর্ন গান। আমি প্রায় আশা ছেড়েই দিয়েছি।এবং তখনই ছবি অন্য রাস্তা নিল। প্রবেশ করলো একটা নতুন অধ্যায়ে, আমি পেলাম এক অসাধারন বাংলা চলচিত্রের অভিজ্ঞতা।
একটা মধ্যবৃত্ত সংসার। কর্তা ( আলমগির) একজন সংকৃতিমনা, গিটার বাদক এবং একটা মিলের আন্ডারগ্রাউন্ডের কর্মচারি । তার স্ত্রি ( শাবানা) অমায়িক, সংসারি, পরিপুর্ন বাংগালি বধু । এবং ৬ সন্তান নিয়ে সাজানো-গোছানো,পরিচ্ছন্ন, চমৎকার এই সংসার কিরকম করে ভেঙ্গে গেল ? কি করে একের পর এক নিয়তির থাবা দাগ বসাতে লাগলো অসহায় মুখগুলোতে, সেই গল্প নিয়েই নির্মিত মরনের পরে।
সংসারে প্রথম ভাঙ্গন আসে কর্তার অন্যকে বাচাতে গিয়ে নিচের দুহাত বিসর্জন দেওয়ার মধ্য দিয়ে। হাতহীন(?),প্রতিবন্ধি একটা মানুষকে কতটা শুনে,দেখে,গিলে বাচতে হয় তা খুব অল্প সময়ে বেশ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে এই ছবিতে। উচ্ছল মানুষগুলো আর তাদের প্রান্তবন্ততা এক নিমিষে কতটা নিস্তেজ হতে পারে তাও মনে করিয়ে দেয় এই ছবি। নিজের ব্যর্থতা, হোক সে শারিরিক অথবা মানসিক, একরকম ব্যর্থতার আঘাত যে যুক্তিবোধ নষ্ট করে দেয় সেই ছবিও খুব-ই ঘনিষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এই ছবিতে।
২য় ভাঙ্গনটা আসে যখন জানা যায় শাবানার লান ক্যন্সার হয়েছে। স্বামীর দু হাত নেই। কর্মক্ষমতাহীন স্বামীকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হয়। তার উপর তার মৃত্যু সংবাদ পুরো সংসারটার উপর ঘনিয়ে আনলো কালো ছায়া। সীধান্ত নেওয়া হলো সবগুলো সন্তানকে পালক দেয়া হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হলো। চলচিত্র প্রবেশ করলো সবথেকে শক্তিশালী পয়েন্টে।
এই চলচিত্রে দেখানো কিছু ব্যস্তবতার আড়ালে লুকায়িত কথাটা আপনি জানেন। আপনি জানেন বিচ্ছেদ কতটা আঘাত দিতে পারে। আপনি অবশ্যই জানেন নিসংগতা কতখানি বিষের কাজ করেনা। কিছু না করতে পারার ব্যাথা, আর ব্যর্থতার বেদনা চোখের জল শুষে নিয়ে হৃদয়কে করে দেয় পাথর।
এবার এই ছবি সম্নধে আমার মতামত কিছু প্রশ্ন-উত্তরের মাধ্যমে দেওয়ার চেষ্টা করলাম।
==> আপনি কি ছবিটি দেখে কেদেছেন ?
= কান্না মানে যদি চোখ থেকে পানি পরা হয় তবে কাদিনি। কিন্তু খুব টাচিং ছিল, কোথাও কোথাও শিরশির করছিল। মোট কথা, আমার ইমোশনকে যথেষ্ট ছুতে পেরেছিল।
==> এটা কি একটা স্বার্থক চলচিত্র ?
= অবশ্যি স্বার্থক। এবং বেশী কিছু আছে বলে আমার মনেহয়।
==> যারা বাংলা ফিল্ম দেখেনা তারা এটা দেখে মজা পাবে ?
= সেটা আমি আপাতত বলতে পারছিনা। হয়তো এটা দেখার পর তাদের মতামত জেনে পরের ছবিগুলো সম্নধে আইডিয়া করতে পারবো। কিন্তু আশা করি ভালোলাগবে।
==> এটা কি আর্ট ফিল্ম?
= মোটেই না। হাই কমার্শিয়াল। কিন্তু অবশ্যই অফ-ট্রাকের চলচিত্র। একটা অন্যরকম চেষ্টা।
==> এই ছবির হিডেন মেসেজ কি ?
= এই মেসেজের ব্যাপারটা আমি একটু কম বুঝি। জেনেটিক বিবর্তনে আমি যথেষ্ট হিডেন মেসেজ নিয়ে এসেছি। তাই নিয়েই সর্বোচ্চ খুশি আমি। তাই চলচিত্র এবং সাহিত্যে মেসেজ খুজি কম। যেহেতু খুজিনা সেহেতু পাইনা। যেকেউ যেকোনরকমের মেসেজ এটা থেকে নিতে পারেন। একদম রুট ধরে আমি বলতে পারছিনা
==> ছবিতে আসলে কি ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ?
= অনেক কিছুই। একেক্সময় একেক্রকম মনে হয়েছে। ব্যস্তবতার একটা পাকেজ বলা যায়। মাতৃত্ব,নিয়তীর মার-প্যাচ, প্রেম, প্রিতী,নিসঙ্গতা,বিরহ,ব্যর্থতা ইত্যাদি। পালক নিতে আসা চতিত্রগুলো দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম।
==> ছবিটি সম্নধে এককথায় কি বলবেন ?
= চমৎকার ভাবনা
==> ছবিটির নেতীবাচকতা ?
= পরিচালক যথেষ্ট চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আলমগিরের হাত যে পিঠের কাছে গুটিয়ে রাখা তা কোথাও কোথাও পাঞ্জাবি দেখেই বোঝা যাচ্ছিল। সংলাপ আরও সুন্দর হতে পারতো। প্রথম ১৮ মিনিট দিয়ে পরিচালক যা বোঝাতে চেয়েছেন, তা ১৯-২০ অর্থাৎ ১ মিনিটেই বুঝেছি। প্রথম ১৮ মিনিটের ব্যবহার শুধু শুধু। তাছাড়া এত গান এতে যে আমার মনে হয়েছে এটার জেনার মিউজিকাল,ফ্যামিলি-ড্রামা।
ছবিটির ইতিবাচকতা ?
= অনেক-ই আছে। কাহিনিতো প্রচন্ড সুন্দর। আর আলমগীর যে একজন শক্তিশালী অভিনেতা এটা তার একটা দলিল। শাবানাকে নিয়ে কিছু বলার নেই। বরাবরের মতো। এবং স্পেশালী বলতে গেলে আহমেদ ইমতিয়াজকে ধন্যবাদ। ব্যক গ্রাউন্ড স্কোর প্রশংসা পাবার মতো। প্রধান সঙ্গিতটা সত্যি অসাধারন। " দুদিনে ভাঙ্গে খেলাঘর " গানটা হৃদয় ছুয়ে যায়। এবং আবেগের কুঠুরিতে আঘাত করে।
ছবির নামঃ মরনের পরে
মুক্তির সালঃ ১৯৯০
পরিচালনাঃ আজহারুল ইসলাম খান
অভিনয়েঃ শাবানা,আলমগির
সঙ্গিতঃ আহমেদ ইমতিয়াজ
টনি ফিল্মস এর ব্যনারে
জাতিয় চলচিত্র পুরুষ্কার জিতেছে ৩ টা
সেরা অভিনেতা - আলমগীর – মরণের পরে
সেরা অভিনেত্রী - শাবানা – মরণের পরে
সেরা পার্শ্বচরিত্রে অভিনেত্রী - আনোয়ারা – মরণের পরে
আমি আশা করবো যাদের সামর্থ্য আছে তারা স্বাদটা একটু জাগিয়ে নিন। ছবিটা দেখুন। ভালোলাগার মতো যথেষ্ট জিনিষ এতে আছে।
" বাংলা ছবি দেখুন, নিজের দেশকে ভালোবাসুন " এই ধরনের উপদেশ বাক্যতে আমার নিজের-ই এলার্জি আছে। দেখুন- দেখুন না বলে ভালো জিনিষটা মানূষের কাছে পৌছে দেওয়াটাকেই আমি সঠিক মনে করি। আমি দিলাম, বাকি সীধান্ত আপনাদের উপরে।
এই লিঙ্কে প্রবেশ করে সংগ্রহ করতে পারেন।
বাংলা চলচিত্র রিভিউ - ০০১: ভন্ড ( রুবেল,তামান্না,হুমায়ুন ফরিদী )
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
স্বাধীনতাকামীদের বাচ্চারা মাদ্রাসায় গিয়ে কিসে পরিণত হয়?
স্বাধীনতাকামীদের বাচ্চারা মাদ্রাসায় গিয়ে শিবির কিংবা হেফাজতে পরিণত হয়, যারা ১৯৭১ সালের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।
মুসলিম বিশ্বে, গরীবদের ছেলেমেয়েরা মাদ্রাসায় গিয়ে, আধুনিক জীবনভাবনা থেকে বিদায় নেয়,... ...বাকিটুকু পড়ুন
সামু ব্লগ কি আবারও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হইতেছে!
সামু ব্লগ কি আবারও ধর্মবিদ্বেষ ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত হইতেছে!
ইহা, উহা, ইহার, উহার, ইহাকে, উহাকে - ইত্যাকার সাধু ভাষার শ্রুতিমধুর কিছু শব্দসম্ভারের প্রয়োগ কদাচিত আমাদের প্রিয়... ...বাকিটুকু পড়ুন
হাফ-লেডিস বলছি.......
(ছবি নেট হতে)
আজ ব্লগ না থাকলে কবেই আত্মহত্যা করতে হতো। জ্বী আমার কথাই বলছি। আমার মতো উপযোগহীণ গর্দভ টক্সিক ব্যক্তি বেঁচে আছি শুধু ব্লগের জন্যে। কিভাবে? তবে বলছি শুনুন।
ছোটবেলা হতেই... ...বাকিটুকু পড়ুন
=ভুলে যাচ্ছি কত কিছু=
ভুলে যাচ্ছি মমতার ঋণ, বাবার আদর
ক্রন্দনরত দিন, বৃষ্টির ঝুম আওয়াজ
ভুলে যাচ্ছি কত কিছু দিন দিন
বিছানো ছিল কোথায় যেন স্নেহের চাদর।
ভুলে যাচ্ছি দেহের শক্তি, সরল মন
কঠিনের মাঝে ডুবে ধীরে
ভুলে... ...বাকিটুকু পড়ুন
রেমিট্যান্স যোদ্ধা!
সদ্যই আমেরিকার নতুন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সপরিবারে হোয়াইট হাউসে উঠেছেন। নির্বাচনে যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন তাদেরসহ অন্যান্য সবাইকে এক প্রীতিভোজের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নিরাপত্তা রক্ষীরা যাচাই-বাছাই করে সেসব অতিথিদের ভেতরে ঢুকতে... ...বাকিটুকু পড়ুন