ক্ষত্রিয় বংশের উৎপত্তিঃ
ভীষ্ম চিন্তিত সত্যবতীকে আরো বলেন ব্রাহ্মণের মাধ্যমে ক্ষত্রিয় বংশের উৎপত্তির আরো কাহিনী আছে।
বিখ্যাত ঋষি ছিলেন উতথ্য। তার কনিষ্ঠ হলেন দেবগুরু বৃহস্পতি। মমতা ছিলেন উতথ্যের স্ত্রী।
যুবতী মমতাকে কামে পীড়িত বৃহস্পতি রমণে আহ্বান জানান। মমতা বলেন তার গর্ভে বৃহস্পতিরই ভ্রাতার সন্তান আছে, তার পক্ষে বীর বৃহস্পতির সন্তান ধারণ সম্ভব নয়।
তবু বৃহস্পতি তাকে কামনা করলেন। মমতা তাকে বোঝালেন গর্ভের সন্তান পরম পন্ডিত। গর্ভেই সে ষড়ঙ্গ বেদ অধ্যয়ন করেছে। তার পক্ষে একই সঙ্গে দুই বীর সন্তান ধারণ সম্ভব নয়।
কিন্তু কামে অন্ধ বৃহস্পতি নিষেধ না শুনে শৃঙ্গার করলেন। উতথ্য-নন্দন গর্ভে ছিলেন তিনি বৃহস্পতিকে ডেকে বললেন তিনি অনুচিত কর্ম করেছেন তাই তার বীর্য্য এস্থানে থাকবে না। কামে পীড়িত বৃহস্পতি গর্ভস্থ সন্তানের বাক্য অগ্রাহ্য করে রমণে উদ্যত হলেন। তখন উতথ্যকুমার যুগল চরণে রেতদ্বার রুদ্ধ করলেন। বৃহস্পতির বীর্য ভূমিতে পতিত হল, গর্ভের স্থান পেল না। এতে বৃহস্পতি ক্রুদ্ধ হয়ে শাপ দিলেন উতথ্য-নন্দন জন্মান্ধ হবেন।
এই উতথ্য-নন্দন দীর্ঘতমা সৌরভি বংশে অধ্যয়ন করেন। গোধর্ম পাঠ করে গরুর আচার করেন যাকে পায় তাকে ধরে শৃঙ্গার করে। তার কর্ম দেখে ঋষিরা তাকে ত্যাগ করেন, কেউ তাকে সন্মান করে না, সকলে অবহেলা করে। স্ত্রী প্রদ্বেষীও পূর্বের মত তাকে সমাদর করে না। দীর্ঘতমা স্ত্রীকে অনাদরের কারণ জিজ্ঞাসা করলে স্ত্রী বলেন স্বামীর কর্তব্য স্ত্রীর ভরণ-পোষণ করা। জন্মান্ধ ব্রাহ্মণ তাকে সুখ দিতে পারেন নি। এখন তিনি ব্রাহ্মণের সন্তানদের আর পালন করতে পারছেন না। ব্রাহ্মণের উচিত নিজের সন্তানদের পালন করার মত ক্ষমতা অর্জন করা। তিনি যেদিকে দুচোখ যায় চলে যাবেন।
দীর্ঘতমা স্ত্রীর এত কথা শুনে রেগে গিয়ে বললেন –বিপুল অর্থ দিচ্ছি তা গ্রহণ কর এবং পুরুষের মত বাক্য বলা বন্ধ কর।
তিনি আরো শাপ দিলেন, অর্থ লিপ্সার জন্য তার ক্ষত্রিয়কুলে জন্ম হবে।
স্ত্রী বলেন –অর্থ অনর্থের মূল। তিনি অর্থ চান না এবং ব্রাহ্মণ ও তার পুত্রদের তিনি আর সেবা করতে পারবেন না।
এতো শুনে দীর্ঘতমা বলেন -আজ থেকে নারীজাতি যতদিন জীবিত থাকবে তারা পতির অধিন হবে। পতিবাক্যের অবহেলা করবেনা, জন্মে ও মরণে পতিকে অনুসরণ করবে। পতি ভিন্ন অন্য পুরুষের কথা ভাবলে তার নরক গমন হবে। পতি ছাড়া নারীর গতি নেই। সংসারে পতিহীনা নারী সকল সুখ থেকে বঞ্চিত হবে। এসব নিয়ম যে লঙ্ঘন করবে তার অপযশে ভুবন পূর্ণ হবে।
এতকথা শুনে দীর্ঘতমার স্ত্রী ক্রুদ্ধ হলেন এবং পুত্রদের বললেন এই পাতকীকে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিতে। পুত্ররা মায়ের বাক্যে পিতাকে বেঁধে গঙ্গায় ভাসিয়ে দিল।
ভেলায় ভেসে ব্রাহ্মণ অনেক দূর ভেসে গেল। দৈবক্রমে মহাবীর বলিরাজ তাকে দেখতে পেলেন এবং উদ্ধার করলেন। ব্রাহ্মণের কাছে সকল কথা শুনে বলিরাজা তাকে গ্রহণ করলেন এবং তপোবলে বলির বংশবিস্তার করতে বললেন। দৈত্যরাজের একথায় ব্রাহ্মণ রাজি হলেন।
রাজা বলি রাণী সুদেষ্ণাকে ডেকে বললেন –এই ব্রাহ্মণের সেবা কর, এর থেকেই বংশ বৃদ্ধি হবে।
কিন্তু সুদেষ্ণা অন্ধ দীর্ঘতমাকে অবহেলা করলেন। তিনি শূদ্র দাসীকে সেবায় নিযুক্ত করলেন। দাসীর গর্ভে দীর্ঘতমার সন্তান হল। তারা চার বেদ ও ষড়শাস্ত্র অধ্যয়ন করল। এসময় রাজা বলি এসে দীর্ঘতমাকে জিজ্ঞেস করলেন এরা তার পুত্র কিনা।
দীর্ঘতমা বলেন -এরা আমার সন্তান, দাসী গর্ভজাত। তোমার স্ত্রী আমায় অবহেলা করে কাছে আসে নি।
রাজা বলি অন্তপুরে গিয়ে রাণী সুদেষ্ণাকে তার সকল কথা বললেন। তখন সুদেষ্ণা দীর্ঘতমার সেবায় রত হলেন। এভাবে রাজা বলির বংশবৃদ্ধি হল। তাদের তিন পুত্র-অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গ। এরা পরমবীর হলেন। পরে এরা যথাক্রমে অঙ্গ, বঙ্গ, কলিঙ্গের রাজা হলেন। এভাবে ব্রাহ্মণের সাহায্যে ক্ষত্রিয়ের উৎপত্তি হল।
.........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ৩৮
Click This Link
আলোচিত ব্লগ
বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !
"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমিত্ব বিসর্জন
আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।
"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন
স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?
স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?
সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী
বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন