somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৯

১৪ ই আগস্ট, ২০১০ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
জন্মেজয়ের ধর্ম্মহিংসাঃ
সৌতি বলেন –

রাজা জন্মেজয় সব পাত্রমিত্রদের ডেকে বিলাপ করে বললেন –আমার হৃদয়ে যে হিংসা তা এখনও দুর হল না। আমি অনেক ভেবে দেখলাম, ব্রাহ্মণই আমার আসল শত্রু।

আমার পিতা ধর্মশীল ব্যক্তি। বিনা অপরাধে তাকে শাপ দেওয়া হল। আবার পিতার হত্যাকারীকে যখন বধ করতে গেলাম তখনও এসে এই ব্রাহ্মণই বাধা দিল।
প্রথমে ব্রাহ্মণ শাপ দিয়ে পিতা পরীক্ষিতকে মারল। আবার দুষ্ট তক্ষককেও রক্ষা করল। ব্রাহ্মণের এই কুরীতি আমি আর সহ্য করতে পারছি না। আমার শরীর রাগে জ্বলছে। এখন মনে হচ্ছে সব ব্রাহ্মণদেরই আমি মারবো।
আগেই কার্তবীর্য ব্রাহ্মণ ধ্বংস করেছিলেন, উদর চিরে মেরেছিলেন ভৃগুবংশ। তার মত আমিও ব্রাহ্মণ সংহার করবো-এই আমি প্রতিজ্ঞা করলাম।

রাজার কথা শুনে সকলে স্তব্ধ হয়ে গেল। কেউ কোন কথা বলল না।
রাজা তাদের এই নিরবতার কারণ জিজ্ঞেস করলেন।


মন্ত্রীরা বলল –রাজা কথাটা শুনেই আমাদের ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বেরচ্ছে না। কেউই ব্রাহ্মণ হত্যার সপক্ষে যুক্তি দেবে না। তুমি যে কার্তবীর্যের ব্রাহ্মণ হত্যার কথা বললে তার শাস্তিও পৃথিবী বিখ্যাত। সেই ভৃগুবংশে রাম জন্মান এবং ক্ষত্রিয়ের রক্তে পৃথিবীকে পবিত্র করেন। ক্ষত্রিয় যখন পৃথিবীতে আর ছিল না তখন ব্রাহ্মণের ঔরসেই আবার ক্ষত্রিয়ের জন্ম হয়। তাদের কথায় সৃষ্টি ও পালনকার্য চলে। তাদের অভিশাপে ক্ষণকালেই সব ধ্বংস হয়। অগ্নি, সূর্য, কালসাপের প্রতিকার আছে কিন্তু ব্রাহ্মণের শাপের কোন নিস্তার নেই।

তবে, একটি উপায় আছে। সেই উপায়ে ব্রাহ্মণের তেজ ভাঙ্গা যেতে পারে। কুশের স্পর্শে ব্রাহ্মণরা পবিত্র হন। কুশ ছাড়া তাদের কোন কাজ সম্ভব নয়। কুশের অভাবে ব্রাহ্মণের তেজ ক্ষীণ হবে। তারপর তাদের পিছনে লাগা যাবে।

রাজা বললেন –ঠিক আছে, এই উপায়েই ব্রাহ্মণদের বিনাশ করবো। এই বলে রাজা দূতদের ডেকে পাঠালেন এবং আজ্ঞা দিলেন সব খননকারদের ধরে আনতে। খননকারদের নির্দেশ দিলেন পৃথিবীর সব কুশ খুঁড়ে ফেল।
কিন্তু মন্ত্রীরা সে কার্যে বাধা দিলেন। কারণ সেই কুশ আবার সংসারে অশান্তির সৃষ্টি করতে পারে। তাই কুশ খনন না করে তার মূলে ঘি, দুধ, মধু, গুড় দিলে পিপঁড়ে আসবে, তারাই কুশের সর্বনাশ করবে। আবার কেউ সন্দেহও করবে না!

শুনে রাজা খুশি হয়ে সেই আজ্ঞাই দিলেন। পৃথিবীর সব কুশ নিধনে অনুচরদের যাত্রা শুরু হল।

ব্রাহ্মণের পদধুলি মস্তকে নিয়ে গদাধরের অগ্রজ কাশীরাম এ সকল কথা শুনালেন।
..............................
জন্মেজয়ের নিকট ব্যাসের আগমনঃ

ব্যাসমুনি

কুশের অভাবে ব্রাহ্মণরা চিন্তিত হলেন। সকলে আলোচনায় বসলেন। সব শুনে ব্যাস রাজার সাথে দেখা করতে চললেন।

ব্যাসকে দেখে জন্মেজয় খুশি হলেন। তার পা ধুয়ে, সেবা যত্ন করে পূজা করলেন।


ব্যাসমুনি খুশি হয়ে রাজাকে আশির্বাদ করলেন এবং মধুর হেসে জিজ্ঞাসা করলেন –বদরিকাশ্রমে শুনলাম তুমি ব্রাহ্মণদের উপর রেগে আছ, এর কারণ কি!
তুমি পন্ডিত তবু কেন এমন কাজ করছ! এই ব্রাহ্মণের ক্রোধেই যদু বংশ ধ্বংস হল, সগররাজের বংশ উচ্ছন্নে যায়, চাঁদ কলঙ্কিত হন, সাগর লবণাক্ত হন, আগুন সর্বভুক হলেন, ইন্দ্র ভগাঙ্গ হন। তোমার পূর্বপুরুষরা এদের সেবা করেই পৃথিবী জয় করতে পেরেছিলেন। তাদের উপর তোমার এত হিংসা হল কেন!

সব শুনে রাজা বলেন –বিনা অপরাধে ব্রাহ্মণের জন্যই পিতার মৃত্যু হল। আবার পিতার শত্রুকে হত্যা করতে চাইলে সেই ব্রাহ্মণই বাধা দিল। এজন্য ব্রাহ্মণ আমার শত্রু।

ব্যাস বলেন –ধৈর্য ধর রাজন, ক্রোধে ধর্ম নষ্ট করা উচিত কাজ নয়। ব্রাহ্মণদের অকারণে তুমি রাগাচ্ছ। ভবিষ্যৎ কখনও খন্ডন করা যায় না। তোমার পিতার যখন জন্ম হয় তখনই সকল গণৎকাররা বিচার করে দেখেন সাপের কামড়েই তার মৃত্যু হবে। আমার কথা শোন, পিতার জন্য দুঃখ করো না। দৈব্যের বচন কেউ খন্ডন করতে পারে না। শুধু শুধু ব্রাহ্মণদের বিরোধী হয়ো না।

ব্যাসের মুখে এত কথা শুনে রাজা কুশ নিধন বন্ধের নির্দেশ দিলেন।
..........................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
..........................................
আগের পর্ব:
কথাচ্ছলে মহাভারত - ১৮
Click This Link
২৩টি মন্তব্য ২৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×