somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বীয় ও তাহার - প্রথম পর্ব

২৬ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ২:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিল্পী সাহিত্যিকরা সাধারনত উদারভাবাপন্ন হয়। তাই ছোটখাটো বিষয়ে সাধারনত তাদের কোন ধরনের মাথাব্যাথা থাকে না।

সেলিমও তাদের মতই, কিন্তু তবুও নিজের নাম টা নিয়ে কি কারনে যেন তার মধ্যে একটু খচখচানি আছে। "সেলিম", কেমন সেকেলে শোনায় না নামটা? বাবা মা কি আর কোন আধুনিক নাম পেল না? আর তাছাড়া সেলিম নামটা শুনলেই ওর মুখের সামনে অভিনেতা শহিদুজ্জামান সেলিম এর চেহারা ভেসে ওঠে। তাই সে মনে করে অন্যরা হয়তো তার নাম শুনলেও শহিদুজ্জামান সেলিম ধরনের কাউকেই ভাবে। কিন্তু তার নিজের চেহারা মোটেও অভিনেতা সেলিমের মত না। লম্বা চুল, খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর শুকনো শরীর, তাছাড়া গায়ের রংটাও বেশ কালো, ঐসব টিভি তারকাদের মত ফর্সা না।

তার তুলনায় রুপার নাম টা তার চেহারার সাথে খুব গেছে। রুপা!, নামটা শুনলেই সেলিমের চোখে ভেসে উঠে গোল ধরনের একটা মুখ, যেই মুখটা আবার ঠোটের কোন দিয়ে মিটি মিটি হাসছে। ওকে সব চেয়ে বেশি সুন্দর দেখা যায় যখন ও মুদ্রাদোষের কথা "ঠিক আছে ভালো কথা" বলে। যতবারই সে এই কথাটা বলত সেলিম চেষ্টা করত ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে। যদিও প্রতিবার সেটা সম্ভব হত না, কারন ওর দিকে বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকলে রুপা একটা কপট রাগ ভাব এনে বলত, "এভাবে কি দেখ? এত দেখার কি আছে? অন্য দিকে তাকাও, তাকাও বলছি"

এইসব কথা ভাবতে ভাবতে সেলিম চায়ে সল্ট টেস্ট বিস্কিট ডুবিয়ে খাচ্ছিল, বিস্কিট গলে কাপের মধ্যে পরে যাওয়ায় তার ভাবনায় একটু বিঘ্ন ঘটে। সে দোকানদার কে বলে, "মামা চামিচ দেন তো একটা"।

চা শেষ করে সে পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করে সময় দেখার জন্য। মোবাইলের চার্জ শেষ দাগে এসে পৌছেছে, সেলিম সেইদিকে চোখ না দিয়ে ঘড়ির দিকে দেখল, ন'টা বিশ। এখন তাকে যেতে হবে মনির ভাইয়ের বাসায়। টাকাটা আজকেই আনতে হবে। মনির ভাইয়ের "নটনন্দন" পত্রিকায় সেলিমের একটা রিভিউ ছাপা হয়েছে। চলচ্চিত্র সমালোচনা। ছবির নাম "প্রেমনগর", পরিচালক সিদ্দিকুর রহমান সুমন। ছবিতে যায়গায় যায়গায় ডায়লগের মাধ্যেমে নানা পন্যের প্রচার করায় সেলিম বেশ প্রতিবাদী ভাষায়ই রিভিউটা লিখেছিল, তারপরও মনির ভাই কিভাবে ছাপলেন কে জানে? সিদ্দিকুর সুমন আবার হালের নাম করা পরিচালক, সেই তুলনায় মনির ভাইয়ের "নটনন্দন" পত্রিকার জনপ্রিয়তা শুন্যের কোঠায়, এটাই বোধহয় কট্টর ভাষার লেখা ছাপা হওয়ার কারন। নটনন্দন পত্রিকা সিদ্দিকুর সুমন কোনদিন চোখেও দেখবেন সেই সম্ভাবনা সেলিম যেই চায়ের দোকানের সামনে, তার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া ড্রেনের মতই ক্ষীণ। কিন্তু তারপরও নটনন্দন পত্রিকা নিয়ম করে প্রতি মাসে দুবার বের হচ্ছে। আজিজ মার্কেট আর চারুকলায় বটগাছের মত শক্ত শিকড় গেড়ে বসে থাকা "এসপায়ারিং ফিল্মমেকার" আর তথাকথিত সর্ব বিষয়ে জ্ঞানী "বড় ভাই" রা পেটে ভাত না ফেলতে পারলেও কিভাবে কিভাবে যেন এই পত্রিকা যোগার করছে এবং এতে ছাপা সিনেমা-নাটকের খবর গুলো নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা গলাবাজী করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে যারা আবার দুয়েকটা ছোটখাট শুটিং সামনা সামনি দেখেছে তাদের তো এ সময় মাটিতে পা ই পরেনা। যা জানে তা তো বলেই, যা জানে না তাও ধ্রুব সত্যর মত বলার আর্ট টা এরা ভালই জানে। তাই নটনন্দন হাতে নিয়ে যেসব আড্ডা হয় সেগুলোতে এদেরকে আসরের মধ্যমনি হিসেবেই দেখা যায়।

প্রায় এক ঘন্টা হতে চলল সেলিম মনির ভাইয়ের বাসায় বসে আছে। মনির ভাইয়ের পিচ্চি ছেলেটা কার্পেটে বসে তার দুই পায়ের পাতা এক সাথে লাগিয়ে হাতটাকে কড়াতের মত ঘসে ঘসে সেই পায়ের জোড়া কেটে ফেলছে আর প্রতিবারই হাসতে হাসতে গড়িয়ে পরছে। সেলিম প্রথম দিকে এই খেলা বেশ আগ্রহ নিয়েই দেখছিল। লেখক হতে হলে ভালো পর্যবেক্ষন ক্ষমতা থাকা লাগে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও বাচ্চাটা এই সামান্য খেলায় কেন এত আনন্দ পাচ্ছে তা বুঝে উঠতে না পেরে সে কিছুটা নেতিয়ে পড়ল। তবে লাভ এই হল যে তার মনে কবিতার নতুন একটা লাইন এসে পরল

"শিশু খেলে মাঠে, যুবক খেলে খাটে"

না না, বেশি অশ্লিল হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য অসুবিধা নেই, "সাহিত্য সৌরভ" পত্রিকার আনোয়ার ভাই তো নিজেই ঐদিন বলছিলেন, "কি মিয়া তুমরা দ্যাশাক্তবোদক কবিতা লেইহা লইয়াও, আরে মিয়া...কিষ্ন রাদার লিলা খ্যালা লয়া কিসু ল্যাকতে পারো না? পাবলিক তো আইজকাইল ঐগুলাইনই খায়"। যদিও এখানে "পাবলিক" বলতে আনোয়ার ভাই ঠিক কাদের বোঝাতে চেয়েছেন তা সেলিম ঠিক বুঝতে পারে না। কারন জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে সাহিত্য সৌরভ নটনন্দন এরও নিচে।

এই সব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই মনির ভাই চলে এলেন। তার মুখ হাসি হাসি। আজকালের দিনে বাজার করে বাড়ি ফিরে কেউ অমন মুখ হাসি করে রাখতে পারে তা বিশ্বাস করা কষ্টকর। তবে যাক, মুখ যেহেতু হাসি আছে, টাকাটা পেতে সেলিমের কষ্ট হবে না। সে মুখে তেলতেলে ভাব নিয়ে মনির ভাইয়ের দিকে এগিয়ে গেল।

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০০৮ রাত ১০:৪৫
১১টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×