ভূমিকাঃ
কে ছিলেন কামাল আতাতুর্ক? প্রশ্নটা আপাত দৃষ্টিতে অর্থহীন বা সাদা-মাটা । আধুনিক তুরস্কের স্থপতি, যিনি তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর (গাজী), মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ কারী যে ব্যাক্তিটি উসমানী খিলাফতের বিলুপ্ত সাধন করেন, যার নামে ঢাকা শহরে একটি রাস্তার নামকরণ করা হয়েছে , যাকে নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কবিতায় স্ততি রচনা করেছেন “ কামাল তুনে কামাল কিয়া”। ইতিহাস ও রাজনীতি বিষয়ে সামান্যতম ধারণা আছে এমন যে কোনো ব্যাক্তি এগুলো জানেন? তাছাড়া মুস্তফা কামাল পাশার সংক্ষিপ্ত জীবনী নিয়ে আমার লিখা ব্লগ “ মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক ও ইসলাম বিদ্বেষ” এ ব্যাপারে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ যদি বলেন তুর্কী জাতির পিতা কামাল আসলে তুর্কী বংশোদ্ভুতই নন, তিনি একজন ইহুদী এবং ফ্রী-মেসন, তাহলে অনেকেই হয়ত আঁতকে উঠবেন? আসুন আমরা জানার চেষ্টা করি উপরোক্ত দাবীর কোনো সারবত্তা আছে কি না?
সালোনিকাঃ
সালোনিকা (Salonica) এজিয়ান সাগরের উত্তর তীরে অবস্থিত বর্তমান গ্রীসের একটি সমুদ্রবন্দর এবং দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর। ১০০ বছর ধরে কন্সটান্টিনিপলের পরেই এটি বাইজেন্টাইন সম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হিসাবে পরিচিত ছিল। ১৪৩০ সালে উসমানী সুলতান ২য় মুরাদ সালোনিকা অধিকার করে নেন এবং এ কে উসমানী সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করেন এবং তখন থেকে প্রায় পরবর্তী ৫০০ বছর ধরে এটি সম্রাজ্যের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর এবং সমুদ্র বন্দর হিসাবে পরিচিত ছিল। শহরটি উসমানী সম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর তুর্কী মুসলমানেরা এখানে বসবাস করা শুরু করে, শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা ছিল অর্থোডক্স খৃস্টান এবং জাতিগত ভাবে পুর্ব ইউরোপীয়।, উসমানী সম্রাজ্যের পুরো সময় জুড়ে মুসলমানেরা এখানে সংখ্যালঘু ছিল। এ শহরের জনসংখ্যার দ্বিতীয় বৃহৎ পরিবর্তন সাধিত হয় ১৪৯২ সালে স্প্যানিশ ইঙ্কুইজিশনের সময়। স্পেনের রাজা দ্বিতীয় ফার্ডিনান্ড এবং রাণী ইসাবেলা ইহুদীদের স্পেন থেকে বহিস্কার করেন। উসমানী সম্রাজ্যের তদানিন্তন সুলতান দ্বিতীয় বায়েজীদ ইহুদীদের তার সম্রাজ্যে আমন্ত্রন জানান এবং বসবাসের অধিকার প্রদান করেন। স্পেন থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের অধিকাংশ তখন সালোনিকাতে বসবাস শুরু করেন করেন। তখন থেকেই শহরটি তিন ধর্মের মিলনস্থলে পরিণত হয়।
সালোনিকাতে তিন ধর্মের নারী
বিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে উসমানী সম্রাজ্যের বৃহত্তম ইহুদী বসতি ছিল সালোনিকাতে, যা দেখে ইসরাইলের দ্বিতীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্বস্ত হন যে, উসমানী ইহুদীদের নিয়ে ইসরায়েল রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব। ১৯১৩ সালে গ্রীসের কাছে সালোনিকার পতন হয়, তখন থেকে এটা গ্রীসের অন্তর্গত একটি শহর।
এই সালোনিকাতেই ১৮৮১ সালে আলি রিজা এবং জুবায়দা দম্পত্তির ঘরে শিশু মুস্তফা’র জন্ম হয়।
সাবাতি জেভিঃ
সাবাতি জেভি
সাবাতি জেভি একজন ইহুদী সেফার্ডিক রাব্বি (Sephardic rabbi, সেফার্ডিক বলতে মুলত বোঝায়, যারা স্পেন থেকে বিতাড়িত হয়ে উসমানি সম্রাজ্যে আশ্রয় নেয়) ছিলেন, এবং কাবালা যাদুবিদ ছিলেন। তার জন্ম ১৬২৬ সালের ১লা আগস্ট স্মিরনা (Smyrna), বর্তমানে তুরস্কের ইজমির এ। তাদের পুর্বপুরুষ ছিল রোমানিয়ান বশদ্ভুত যাদের বসতি ছিল গ্রীসের Patra অঞ্চলে। ১৬৪৮ সালে মাত্র বাইশ বছর বয়সে ইহুদিদের বহুল প্রতীক্ষিত মাসিহ বলে নিজেকে দাবী করেন। ইজমিরের ইহুদীরা অত্যন্ত রক্ষণশীল ছিল, তারা তাকে মাসিহ হিসাবে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানান এবং ১৬৫২ সালে ইজমির থেকে বিতাড়িত করেন ।
নিজ জন্মভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে তিনি কন্সটান্টিনিপল গমন করেন, সেখানে তিনি কিছু অনুসারী জোগাড় করতে সমর্থ হন। সাবাতি সেখান থেকে সালোনিকাতে পাড়ি জমান এবং সম্রাজ্যের বৃহত্তম ইহুদী বসতিতে নিজের ঘাঁটি স্থাপন করেন। তিনি সারা নাম্নী এক পতিতাকে বিয়ে করেন এবং ধর্ম গ্রন্থে বর্ণিত মাসিহ সংক্রান্ত ভবিষ্যিদবাণী প্রমাণ করেন। (তাদের ধর্ম গ্রন্থে ভবিষ্যদবাণী আছে যে মাসিহ একজন অসতী রমণীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন) এতে তার অনুসারীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। ১৬৬৬ সালে তিনি আবার কন্সটান্টনিপল গমণ করেন, এবং দাবী করেন রাজমুকুট তার মাথায় স্থাপিত হবে। তার এ দাবীর কারণে সুলতান তাকে গ্রেফতার করেন, তাকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলা হয়, নতুবা রাজদ্রোহীতা এবং ধর্মদ্রোহীতার কারণে তাকে মৃত্যু দন্ড প্রদান করা হবে। তিনি প্রথমটি গ্রহণ করেন এবং ইহুদী রাব্বির পোশাক বর্জন করে মুসলমানদের পাগড়ি পরিধান করেন। সুলতান তাকে আফেন্দী উপাধি প্রদান করেন এবং ভাতার ব্যবস্থা করেন। তার সাথে সাথে তার তিনশত অনুসারী পরিবার ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়। ইতিহাসে এই ধর্মান্তরিত গোষ্ঠি কে Domneh (ধর্মান্তরিত) বলা হয়। সাবাতি জেভি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার পরও তার ইহুদী ধর্ম চর্চা অব্যাহত রাখেন। ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কারণ হিসাবে ইহুদীদের বলেন যে, তিনি মুসলমানদের মাঝে ইহুদী ধর্মের প্রচার করছেন। অপরদিকে সুলতানের কানে ব্যাপারটি গেলে তিনি সুলতানকে বলেন, আমি ইহুদীদের ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি। তার প্রচেষ্ঠার ফলে তার অনুসারীর সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পায়। এরা প্রকাশ্য ইসলাম ধর্ম চর্চা চালিয়ে গেলেও সিনাগগে যেত এবং গোপনে বাড়িতে ইহুদী দের আচার –প্রথা পালন করতে থাকেন। আর এ কারণেই ইতিহাসে এদের গুপ্ত ইহুদী (Crypto Jew) বলা হয়।
১৬৭৪ সালে তিনি তার অনুসারী সহ সালোনিকাতে ফিরে যান এবং ১৬৭৬ সালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সালোনিকার জনগোষ্ঠির মধ্যে বৃহত্তম অংশ ছিল Domneh. এরা পরবর্তীতে সম্রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে ভুমিকা রাখে। ১ম বিশ্ব যুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে সালোনিকাতে ১৫০০০ Donmeh ছিল, ১৯১৩ সালে গ্রীসে অন্তর্ভুক্তির আগে পর্যন্ত তারা সেখানেই বাস করেন।
ধর্মত্যাগী হিসাবে মুসলমান এবং ইহুদী উভয়ই তাদের ঘৃণার চোখে দেখত। সাবাতি জেভি তাদের যৌনতার দিক দিয়ে উচ্ছৃংখল হওয়ার স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। এদের বিয়ে-শাদী সব সময় নিজেদের মধ্যে হত।
“ বছরে একবার (Donme দের বাৎসরিক ভেড়া উৎসবের সময়) নৈশ ভোজের পর সব গুলো মোম বাতি নিভিয়ে দেয়া হতো, তার পর শুরু হতো বিকৃত যৌনাচার এবং স্ত্রী বদল—— এই আচার অনুষ্ঠিত হওয়ার দিন টি ছিল সাবাতি জেভির জন্ম দিন…… । তাদের এই মিলনের ফলে জন্ম নেয়া শিশুটিকে ঋষি তুল্য জ্ঞান করা হতো।”
আলি রিজা, জুবায়দা ও DONMEH:
তুর্কী জনগোষ্ঠী মুসলিম, ইহুদী এবং খৃস্টানদের মধ্যে এমন কোনো বহুল প্রচলিত পরিস্কার কোনো প্রমান নেই যে, যাতে করে বলা যায় মুস্তফা কামালের পিত-মাতা বা তাদের কেউ একজন Domneh সম্প্রদায় ভুক্ত ছিলেন।
কে ছিলেন তার পিতা আলি রিজা?
তার সম্মন্ধে খুব কমই জানা যায়। তিনি সালোনিকাতে একজন কাস্টমস এর কেরানী ছিলেন। চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের পর যিনি দুই দুই বার ব্যাবসা প্রচেষ্টায় ব্যার্থ হন এবং মদের ভেতর নিজের আশ্রয় খুজে নেন। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই তার মৃত্যু হয়। তার আদিনিবাস নিয়ে জীবনী লেখকদের মধ্যে মত-পার্থক্য রয়েছে। কেউ বলেন তিনি আনাতোলিয়ান, কী বলেন সালোনিকান কিংবা কেউ বলেন তিনি আলবেনিয়ান। তার মা জুবায়দা আলবেনিয়ান সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মেয়ে, তিনি ইসলামের প্রতি নিবেদিত প্রান একজন ধার্মিক মহিলা ছিলেন।
কিন্তু তার জীবনী লেখকগণ তার নিজের জবানীতে পিতা-মাতার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা নিম্নরূপঃ
“আমার বাবা ছিলেন উদার চিন্তার অধিকারী একজন মানুষ, বরং তিনি ধর্মের প্রতি একজন শত্রু ভাবাপন্ন ব্যাক্তি এবং পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার একনিষ্ঠ সমর্থক ছিলেন। তিনি আমাকে এমন একটি প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসাবে দেখতে চেয়েছিলেন যে, যেখানে শিক্ষা ব্যাবস্থা কুরান- সুন্নাহ ভিত্তিক নয় বরং তা আধুনিক বিজ্ঞানের উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত।
ধ্যান-ধারনার এই যুদ্ধে, একটি ছোট কৌশলে আমার বাবা জয় লাভ করেন। তিনি ভান করেন যে, আমার মায়ের উদ্দেশ্য পুরণের জন্য, আমাকে ঐতিহ্য বাহী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘ফাতমা মোল্লা কাদিন’ এ একটি ইসলামিক স্কুলে ভর্তি করেন……
ছয় মাস অথবা তার কম বেশী পর তিনি আমাকে সেখান থেকে চাড়িয়ে নিয়ে আসেন এবং পুরাতন ‘শেমসি আফেন্দী প্রিপারেটরে স্কুলে’ ভর্তি করেন, যেখানে ইউরোপীয় পদ্ধতিতে পাঠদান হতো। আমার মা আর আপত্তি করেননি, কেননা তার ইচ্ছা পুরন হয়েছিল। এটা শিক্ষা নয়, কিন্তু ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান, যা তাকে সন্তষ্ট করেছিল।” (FORWARD, A Jewish Newspaper published in New York, January 28, 1994)
Lord Kinross’ compendious 1964 “Ataturk” এ তাকে একজন রহস্যাবৃত ব্যক্তি বলে উল্লেখ করা হয়, সেখানে আরো উল্লেখ করেন যে, আলি রিজা কখনোই তার পারিবারিক ইতিহাস উন্মুক্ত করতে চাইতেননা।
এখানে দেখা যায় আলি রিজার আচরণ একজন Domneh’র আচরণের সাথেই সঙ্গতিশীল।
তবে কেন সালোনিকাতে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক এর পারিবারিক ইতিহাসের বিশদ বিবরণ কিংবা Domneh সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক গত পরিস্কার কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না?
কারণ গুলো নিম্নরূপঃ
১। মুস্তফা কামাল বিখ্যাত হয়ে উঠার আগে তার পারিবারিক ইতিহাসে বিশদ বিবরণ জানার প্রয়োজন পড়েনি। এ সমস্ত ক্ষেত্রে পরিবার কর্তৃক সংরক্ষিত ইতিহাসই পরবর্তীতে মূল সুত্র হয়ে থাকে। মুস্তফা কামাল তার পিতার মতই নিজের পারিবারিক ইতিহাস নিয়ে গোপণীয়তা অবলম্বন করতেন।
২। তার মা প্রকৃতই একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান হওয়াতে তার Domneh সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্কের ব্যাপারে সন্দেহের উদ্রেক হয়নি। প্রসংগত আমরা জেনেছি Domneh সম্প্রদায়ের বিয়ে-শাদি নিজেদের মধ্যেই হয়।
৩। ১৯১৩ গ্রীসের হাতে সালোনিকার পতনের পর তুর্কি নাগরিকেরা মুলতঃ মুসলমান এবং Domneh সম্প্রদায় ইস্তানবুলে গিয়ে বাস করা শুরু করেন এবং পরবর্তীতে সেখানেই আত্মীকৃত হয়ে যায়। ফলে তাদের আর তেমন খুঁজে পাওয়া যায়না।
৪। Domneh সম্প্রদায় বাহ্যিক ভাবে মুসলমানদের মতই ছিলেন। তাদের এই বর্ণচোরা বৈশিষ্ট্যের কারণে কাউকে সন্দেহাতীত ভাবে Domneh বলা সম্ভব নয়।
এই কারণ গুলোর পাশাপাশি একটি সম্ভাবনাও রয়ে যায়, আর তাহলো তিনি প্রকৃতই এক মুসলিম পরিবারের সন্তান, যে পরিবারের কর্তা সেকুলার ধ্যান-ধারণা পোষনকারী ব্যাক্তি, যা আমাদের সমাজে আকসার দেখা যায়।
কিন্তু, ১৯৯৪ তে নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত Forward নামক ইহুদী সংবাদপত্রের ২৮শে জানুয়ারী সংখ্যা কামাল আতাতুর্ক এর পরিচয় এর উপর হঠাৎ আলোর ঝলকানি ফেলে। সেই বছর ২৪শে জানুয়ারী ইসরাইলের প্রেসিডেন্ট এজের ওয়েজমেন কোনো ইসরায়েলি রাস্ট্র প্রধান হিসাবে সর্বপ্রথম তুরস্ক সফর করেন। জিকরন ইয়াকুব নামে একজন সাংবাদিক প্রেসিডেন্টের সেক্রেটারীকে ফোন করে জিজ্ঞাসা করেন যে, প্রেসিডেন্ট কামাল আতাতুর্কের স্মরণে কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন কিনা? সেক্রেটারী তার সফর সূচী দেখে হাঁ সুচক উত্তর দেন।
এই মোক্ষম সময় তিনি দ্বিতীয় প্রশ্ন করে বসেন, “প্রেসিডেন্ট কি জানেন যে, কামাল আতাতুর্ককে শৈশবে হিব্রু প্রার্থনা শিক্ষা দেয়া হয়েছিল এবং তিনি ইহুদী বংশদ্ভুত। তিনি সাথে সাথে বিস্মিত না হয়ে বলেন অবশ্যই। ফোন রেখে দেয়ার পর তিনি বুঝতে পারেন যে তিনি ভুল করে ফেলেছেন, এবং আতাতুর্কের গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দিয়েছেন। তাই পরবর্তীতে তিনি জনাব ইয়াকুবের কাছে আবার টেলিফোন করেন এবং জানতে চান, তিনি এই গোপন তথ্যের ব্যাপারে কতটুকু জানেন। সেক্রেটারী সেই তথ্যেরই সত্যায়ন করেন যা কামালের জীবদ্দশায় মানুষের মুখে মুখে ছিল, যা তিনি সব সময়ই অস্বীকার করে এসেছেন, তার জীবনী লেখকেরাও কখনো এই ব্যাপারটাকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করেননি।
সাংবাদিক সাহেব যা জানেন তার সংক্ষিপ্ত রূপ ফ্যাক্স করে পাঠান।
জিকরন ইয়াকুবের ব্যাপারটি নজরে আসে যখন তিনি ইতামার বেন আভির আত্ম জীবনী পড়ছিলেন, যিনি এলিজার বেন আভির সন্তান। এলিজার বেন আভি সেই ব্যাক্তি যিনি উনবিংশ শতাব্দীতে হিব্রু ভাষায় কথনকে পুনরূদ্ধার ও প্রচলন করেন। বেন আভি একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি লিখেনঃ
১৯১১ সালের শরৎ কালীন এক সন্ধ্যায় তিনি জেরুসালেমের কামেনিটজ হোটেলে প্রবেশ করেন, হোটেলের মালিক তাকে বলেন,
“তুমি কি ঐ তুর্কী অফিসারকে দেখেছ, যে ঐ কোণায় এক বোতল আরক (এক প্রকার মদ) নিয়ে বসে আছে?”
“হাঁ”
“তিনি তুর্কী সেনাবাহিনীর একজন অন্যতম প্রভাবশালী অফিসার।”
“ তার নাম কি?”
“ মুস্তফা কামাল”
“ আমি তার সাথে কথা বলতে চাই” তিনি তাকে বলেন, “কেননা যে মুহুর্তে আমি তাকে দেখি তার তীক্ষ্ণ সবুজ চোখের দৃষ্টি দেখে আঁতকে উঠি।”
বেন আভি মুস্তফা কামালের সাথে দুইটি সাক্ষাতের বিবরণ দেন, যিনি তখনো আতাতুর্ক নাম ধারণ করেননি। দুইবারই কথোপকথন ফ্রেঞ্চ ভাষায় হয়েছিলো, যার অধিকাংশই ছিল আরকের নেশায় আচ্ছন্ন অবস্থায় উসমানী রাজনীতি নিয়ে। প্রথমেই কামাল আস্থার সাথে বলেনঃ
“আমি সাবাতি জেভির একজন বংশধর- কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমি এখন আর ইহুদী নই, কিন্তু আমি তোমাদের এই নবীর (সাবাতি জেভি) একজন গুণমুগ্ধ ভক্ত। এই দেশের সকল ইহুদী তার সাথে যোগ দিলে ভালো করত।”
১০ দিন পর তাদের দ্বিতীয় সাক্ষাতে তিনি বলেন, “ আমার বাড়িতে ভেনিসে মুদ্রিত একটি হিব্রু বাইবেল আছে। এটা আসলে অনেক পুরনো, আমার মনে আছে আমার বাবা আমাকে এটা শিক্ষা দেয়ার জন্য একজন কারাইতে শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছিলেন, যিনি এটা আমাকে পড়তে শেখান। আমার এখনো এটা থেকে কিছু শব্দ মনে আছে—–”
বেন আভি বলতে থাকেনঃ
সে কিছুক্ষণ চুপ থাকেন, তার চোখ শুন্যে কিছু খুঁজছিল। তার পর সে বলেনঃ
“শেমা ইস্রায়েল, আদোনাই এলোহেনু, এদোনাই এহাদ!” শোনো ও ইসরায়েল, প্রভু আমাদের উপাস্য, আমাদের উপাস্য এক”)
“এটা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থনা ক্যাপ্টেইন”
“এবং এটা আমারও গোপণ প্রার্থণা” গ্লাস গুলো পূর্ণ করতে করতে সে উত্তর দেয়।
যদিও বেন আভি’র এটা জানার কোনো উপায় ছিলনা, কোনো সন্দেহ নেই আতাতুর্ক আক্ষরিক অর্থেই গোপণ প্রার্থণা বুঝিয়েছেন। Donmeh দের গুপ্ত প্রার্থণা গুলোর খবর ১৯৩৫ সালে সর্ব প্রথম বিদগ্ধ মহল জানেন, যখন জেরুজালেম ন্যাশনাল লাইব্রেরী থেকে একটি বই তাদের হাতে পৌঁছে, যা ছিলো তাদের বিশ্বাসের স্বীকারোক্তিঃ
“একমাত্র সাবাতি জেভিই সত্য মাসিহ। শোনো ও ইসরায়েল, প্রভু আমাদের উপাস্য, আমাদের উপাস্য এক”
এটা সন্দেহাতিত ভাবে এই বই থেকেই আতাতুর্ক এই প্রার্থণা কে মনে রেখেছেন, বাইবেল থেকে নয়। যেটা পরিণত বয়সে তার গুপ্ত বিশ্বাসের একটি স্বীকারোক্তি, যা তিনি করেছিলেন একজন তরুন ইহুদী সাংবাদিকের কাছে মাতাল অবস্থায়। এ ঘটনার প্রায় এক দশক পরে, প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে উসমানী সম্রাজ্যের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর যখন তিনি জাতির নেতৃত্ব গ্রহন করেন, আগ্রাসী গ্রিকদের পরাজিত করেন। অতঃপর মসজিদ সমূহের বিকৃতি ঘটান। তখন তার Donmeh পরিচয় গোপণ করার জন্য যথাযথ কারন বিদ্যমান ছিলো।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে সন্দেহাতীত ভাবেই বলা যায়, মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক একজন গুপ্ত ইহুদী ছিলেন এবং ভন্ড মাসিহ সাবাতি জেভির বংশধর।
ফ্রী-মেসন্স, ইলুমিনাটি, NEW WORLD ORDER:
ফ্রী-মেসন্স একটি গুপ্ত সমাজের নাম, যারা কাবালা যাদু বিদ্যার মাধ্যমে শয়তানের উপাসনা করে থাকে। এই গুপ্ত সমাজের সদস্যরা একে অপরের সাথে সাংকেতিক ভাষায় তাদের যোগাযোগ সম্পন্ন করে। যারা যে স্থানটিতে পুজা-অর্চনার জন্য মিলিত হয়, সে ই স্থান টিকে লজ বলে। তাদের সভ্যদের মর্যাদার স্তর বিন্যাস সমাজের কর্ম-কান্ডে তাদের অংশ গ্রহণ এবং অবদানের ভিত্তিতে বিভিন্ন ডিগ্রীতে নিরূপিত হয়। যেমন কোনো কোনো সদস্যকে বলা হয় ৩২ ডিগ্রী ফ্রি-মেসন ১৩ ডিগ্রী ফ্র-মেসন ইত্যাদী । বিভিন্ন জ্যামিতিক আকৃতি, ইন্সট্রুমেন্ট, পিরামিড, পেন্টাগ্রাম তাদের সমাজের প্রতীক হিসেবে ব্যাবহৃত হয়। সবচেয়ে বিখ্যাত প্রতীক হচ্ছে, শয়তানের তথাকথিত ‘সর্ব দর্শী এক চোখ’।
ফ্রী-মেসন্সরা হলো পৃথিবীর সব চেয়ে প্রভাবশালী গোষ্ঠী। মূলতঃ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক ভাবে পুরো বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে। এরা তাদের সামাজিক সংস্থা গুলোর দ্বারা তথাকথিত জনকল্যাণ মূলক কাজের মাধ্যমে অজ্ঞ জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটি মহৎ ভাব বজায় রাখে।
এদের উৎপত্তির সাথে ক্রুসেডের যুদ্ধের ইতিহাস জড়িত। ক্রুসেড ফেরত কিছু যোদ্ধাদের দ্বারা ত্রয়োদশ শতাব্দীতে সর্বপ্রথম ফ্রান্সে এদের কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে স্কটল্যান্ড হয়ে ইংল্যান্ডে এরা ঘাঁটি গাড়ে এবং ইহুদীদের সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়। সেখান থেকে তারা আমেরিকাতে বিস্তার লাভ করে।
(ফ্রী-মেসন্সদের উৎপত্তি ও কার্যকলাপ নিয়ে পৃথক একটি সিরিজে আলোচনা করা হবে ইন শা আল্লাহ)
১৭৭৬ সালে ১লা মে এডাম উইশপ্ট নামে একজন ফ্রী-মেসন্স এর হাতে ইংল্যান্ডে ইলুমিনাটি অর্ডারের সূচনা হয়। ইলুমিনাটি শব্দের অর্থ আলোক প্রাপ্ত। ইলুমিনাটি নামকরণের ক্ষেত্রে গ্রীক পুরাণের প্রমিথিউসের কাহিনীকে রূপক অর্থে গ্রহণ করা হয়েছেঃ
প্রমিথিউস স্বর্গের দেবতা জুপিটারের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সুর্য থেকে আগুন চুরি করে মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছিল আর তাই জুপিটার তাকে পর্বত চুড়ায় শৃংখলিত করে রেখেছে।
তেমনি ভাবে তাদের বিশ্বাস মতে শয়তান মানুষের কাছে আলো পৌঁছে দেয়ার জন্য ঈশ্বর কর্তৃক শাস্তি প্রাপ্ত হয়।শয়তান হলো Light Bearer, যার অর্থ লুসিফার, তাই তারা শয়তানের উপাসনা করে।
ইলুমিনাটি বা ফ্রীমেসন্স দের বার্তা পৌছানোর জন্য সবচাইতে পরিচিত মাধ্যমটি আমেরিকান ১ ডলারের নোট। যেখানে একটি অসমাপ্ত পিরামিডের উপর একটি একচোখের ছবি, পিছনে উদীয়মান সুর্য। নীচের দিকে অর্ধ বৃত্তাকারে ল্যাটিন ভাষায় লিখিত আছে “ NOVUS ORDO SECLORUM” ইংরেজীতে যার অর্থ হলো ‘NEW ORDER OF THE AGE’ যা ‘NEW WORLD ORDER’ এরই অন্য একটি রূপ।
ফ্রীমেসন্স রা ছাগল মাথার শয়তানের পুজা করে যাকে তারা Baphomet বলে। তারা তাদের একচোখ বিশিষ্ট নেতা বা ঈশ্বরের আগমণের জন্য অপেক্ষমান, যিনি তাদের নতুন একক বিশ্বব্যাবস্থায় (New World Order) পুরো বিশ্বের নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু তাদের এই নতুন বিশ্ব-ব্যাবস্থা গঠণে সবচেয়ে বড় বাধা ইসলাম। আর এই বাধা অপসারণে এ যাবত কালের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো ১৯২৪ সালে খেলাফতের বিলুপ্ত সাধন। আজও তাদের বাধা অপসারণের কাজ অদম্য গতিতে এগিয়ে চলেছে। বলা হয়ে থাকে বর্তমানে পৃথিবীতে এমন কোনো দেশের সরকার নেই যারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে ইলুমিনাটিদের উদ্দেশ্য সাধনে কাজ করে যাচ্ছে। তারা তাদের এক চোখ বিশিষ্ট ঈশ্বরের আগমণের পথ প্রশস্থ করণে ব্যাস্ত, তারাই তার পুরোগামী। আর এই পুরোগামীদের মধ্যে একজন হলেন ফ্রীমেসন্সদের গ্রান্ড ওরিয়েন্ট অটোমান / ইটালিয়ান লজের তৎকালীন সদস্য মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক।
উল্লেখ্য, ইসলামী বিশ্বাস মতে শেষ জামানায় কিয়ামতের পুর্বে একজন এক চোখ বিশিষ্ট ব্যাক্তির আবির্ভাব হবে যিনি নিজেকে ঈশ্বর দাবি করবেন, তার নাম দাজ্জাল।
মুস্তফা কামাল যে, ফ্রী-মেসন্স দের একজন নামজাদা সদস্য ফ্রিমেসন্সদের নিম্নোক্ত ওয়েব সাইট গুলো ভিজিট করলে জানা যাবেঃ
http://www.internetloge.de/arst/masons1.htm
Atatürk, Mustafa Kemal – Vater der modernen Türkei
http://www.angelfire.com/ga/fdl746/famous.html
Ataturk, Mustapha Kemal – President of Turkey
http://www.editions-maconniques.eu/
– ATATURK, Mustapha Kemal (1881‑1938) Chef des “Jeunes Turcs” et père de la Turquie moderne dont il fut le Président de 1923 jusqu’à sa mort. Il était membre d’une loge italienne, Macedonia Resortae Veritas.
তরুন তুর্কী আন্দোলনঃ
তরুন তুর্কী আন্দোলন ছিল ১৯০৮ সালে খলিফা দ্বিতীয় আব্দুল হামিদের বিরূদ্ধে আন্দোলন। খলিফা ১৮৭৬ সালে রাজতন্ত্র চালু করেন এবং সংবিধান স্থগিত করেন। এই আন্দোলনে কতগুলো আন্ডার গ্রাউন্ড রাজনৈতিক দল অংশ গ্রহণ করে, এরা হলো ‘Committee of Union of Progress’, ‘Freedom and Accord Party’ এবং ‘Ottoman Socialist Party’
এদের উদ্দেশ্য ছিল, সংবিধানের পুনরূদ্ধার এবং বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও খলিফা আব্দুল হামিদ কে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো সালোনিকা। তখন সালোনিকার জন সংখ্যা ছিলো ১৪০০০০ যার মধ্যে ৮০০০০ ছিলো স্প্যানিশ ইহুদী আর ২০,০০০ ছিলো Domneh সম্প্রদায় নামক গুপ্ত ইহুদী।
এই ইহুদী এবং গুপ্ত ইহুদীরাই আন্দোলনের মূল চালিকাশক্তি হিসাবে কাজ করে, যাদের অনেকেই ছিলেন ফ্রীমেসন্স। মুস্তফা কামাল আতাতুর্কের নেতৃত্বাধীন ভাতান আন্দোলন( কট্টোর জাতীয়তাবাদী এবং সেকুলার সংগঠন) এই আন্দোলনের সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক সহ সেনাবাহিনীর অনেক তরুন অফিসার বিদ্রোহ করে। যদিও দেনা কমাতে সুলতান দ্বিতীয় আব্দুল হামিদ যথেষ্ট কৃতিত্ব ও সফলতার পরিচয় দেন, তবুও তরুন তুর্কীরা তাকে বিদায় নিতে বাধ্য করে।
আব্দুল হামিদকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য মন্ত্রীপরিষদ প্রধান তৌফিক পাশাকে ডেকে দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তিনি তা করতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। পরে তারা চার জনের একটি দলকে পাঠান যাদের মধ্যে ছিলেনঃ আরেফ হিকমত, আরাম আফেন্দী ( আর্মেনিয়ান), আসাদ তোবাতানি এবং ইমানুয়েল ক্রা’শ (ইহুদী)। যখন তারা তার অফিসে প্রবেশ করেন, তিনি তখন শান্তভাবে দাঁড়িতে ছিলেন। আরেফ হিকমত তার বিরূদ্ধে যখন রায় পড়ে শোনান এবং আসাদ তোবাতানি এগিয়ে আসেন এবং বলেন, “ জাতি আপনাকে আপনার পদ থেকে অপসারন করেছে”
তিনি তখন রাগান্বিত হন এবং বলেন, জাতি আমাকে আমার পদ থেকে অপসারন করেছে, ঠিক আছে, তবে তোমরা কেন ইহুদীকে খলিফার কক্ষে নিয়ে এসেছ? তিনি ইমানুয়েল ক্রা’শ এর দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করেন।
আব্দুল হামিদ স্পষ্টতঃ তাকে উৎখাতের প্রকৃত কারণ অনুধাবন করেছিলেন।
এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলেও এর প্রকৃত কারণ এবং পটভুমি ছিল ভিন্ন।
অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে উসমানী শাসক বৃন্দ একটি মারাত্মক পাপকাজে লিপ্ত হয়। ইসলামের ও মুসলমানদের অভিভাবক হয়েও খলিফা ইহুদী ব্যাংকারদের কাছে থেকে সুদে অর্থ ধার করেন। যে কাজটি করতে কুরান ওই সুন্নাহয় সুস্পষট ও কঠোর নিষেধাজ্ঞা আছে। আর এর দরুন উসমানী সম্রাজ্যে সুদী ব্যাঙ্কিং প্রথার প্রচলণ ঘটে। কিন্তু উসমানী সুলতানরা এই দেনা শোধে ব্যার্থ হন। এই ব্যাংকাররা সুলতান আব্দুল হামিদের কাছে প্রস্তাব রাখেন, এই দেনার বিনিময়ে প্যালেস্টাইন ইহুদীদের নিকট লিখে দিতে। সুলতান ২য় আব্দুল হামিদ তা রীতিমত প্রত্যাখ্যান করেন।
ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম হলো সেই ব্যাক্তি, যিনি খলিফা আব্দুল হামিদ দ্বারা প্রত্যাখ্যাত হন, কারন সে প্যালেস্টাইন চেয়েছিলো। যারা আব্দুল হামিদকে ক্ষমতাচ্যুত করে, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যে একজন। তার পরিবার ছিলো তৎকালিন বৃহত্তম অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এবং তুরস্কে ইহুদীদের অধিকার রক্ষাকারী।
পরবর্তীতে এই ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম-ই সেই ব্যাক্তি যিনি লর্ড কার্জনকে বলেন, তুরস্কের স্বাধীনতাকে স্বীকার করে নিন এবং আমি আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করছি, তারা এমন এক শর্তে রাজী হবে, যাতে করে তারা ইসলাম এবং যা ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব (খিলাফত) করে তাকে পদদলিত করবে।
হাইম নাহুম ঘনিষ্ঠ ভাবে মুস্তফা কামাল এবং অন্য একজন মহিলার সাথে কাজ করেন, যিনি ব্রিটিশ সিক্রেট এজেন্সীর সদস্য ছিলেন। যিনি ইসমেত ইনোনুর ( তুরস্কের প্রধান মন্ত্রী, পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট) খুবই ঘনিষ্ঠ হন। তাদের ঘনিষ্ঠতা এমন পর্যায়ে পৌঁছে যে, কুটনৈতিক মহল পর্যন্ত উদবিগ্ন হয়ে উঠে।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের সফলতা সেনাবিহিনীতে মুস্তফা কামালকে পাদ-প্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে, এবং সেনাবাহিনীর একজন প্রভাব শালী সদস্যে পরিণত হন এবং রাজনীতিতে প্রকাশ্য ভুমিকা রাখার সুযোগ পান। যা পরবর্তীতে তাকে সাফল্যের চুড়ায় নিয়ে যায়।
তরুন তুর্কী আন্দোলনের পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন যে, পরিপুর্ণ ভাবে ফ্রী-মেসন্স দ্বারা সংঘটিত হয়েছিলো তার প্রমাণ নিম্ন লিখিত পত্র থেকে জানা যায়ঃ
পত্রটি কন্সটান্টিনিপল এ নিযুক্ত তৎকালীন ব্রিটিশ রাস্ট্রদূত স্যার জেরাল্ড লোথার কর্তৃক প্রখ্যাত ব্রিটিশ ইতিহাস বেত্তা স্যার চার্লস হারডিং এর প্রতি প্রেরিত।
প্রাচ্য কিভাবে হারল
গোপণীয়
স্যার জেরাল্ড লোথার কর্তৃক স্যার চার্লস হারডিং এর প্রতি প্রেরিত।
(ব্যাক্তিগত ও গোপণীয়)
কন্সটান্টিনিপল
২৯শে মে, ১৯১০
প্রিয় চার্লস,
২৩ শে এপ্রিলে প্রাপ্ত গোরস্ট এর টেলেগ্রাম (স্যার এল্ডন গোরস্ট, কায়রোতে নিযুক্ত প্রধান ব্রিটিশ এজেন্ট) যা মোঃ ফরিদেকে কায়রোতে কন্সটান্টিনিপল ফ্রি-মেসন্স দের প্রতিনিধি হিসাবে নিযুক্তির গুজবের ব্যাপারে লিখিত, এটা ঘনিষ্ঠ ভাবে ‘Committee of Union of Progress’ এর সাথে সম্পর্কিত। তাই আমাকে তরুন তুর্কীর মাধ্যমে পরিচালিত মহাদেশীয় ফ্রী-মেসনরি সম্পর্কে তোমার কাছে একটি কষ্টকর লম্বা চিঠি লিখতে উদ্বুদ্ধ করেছে। তাই ব্যাক্তিগত ও গোপনীয় ভাবে বলি, তুরস্কে এই নতুন ফ্রি-মেসনরি যা ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার মত নয়, এর বিরাট অংশ রাজনৈতিক ও গোপণীয়তায় আচ্ছাদিত, একান্ত কঠোর গোপণীয়তার সাথেই কোনো তথ্য পেতে হয়। যখন কেউ বিশ্বাসঘাতকতা করে, তখন মাফিয়াদের হাতে এই তথ্যের গোপণীয়তা হুমকির সম্মুখীন হয়। কিছুদিন আগে একজন স্থানীয় মেসন কৌশল সংক্রান্ত গোপণ সংকেত প্রকাশ করলে তাকে এই বলে কোর্ট মার্শালে পাঠানোর হুমকি দেয়া হয়, যা আমাদের অবরোধের কারণে গঠিত।
যেহেতু তুমি জান, প্যারিসে তরুন তুর্কী আন্দোলন অনেকাংশে পৃথক ছিল, তার কারণ সালোনিকাতে কর্ম কৌশলের ব্যাপারে একটা বড় অংশই অজ্ঞ ছিলো। সালোনিকার জন সংখ্যা প্রায় ১৪০০০০, তার মধ্যে ৮০০০০ স্প্যানিশ ইহুদী, ২০০০০ হাজার সাবাতি জেভি সম্প্রদায়ের গুপ্ত ইহুদী যারা প্রকাশ্য মুসলমান হওয়ার ভান করে। আগের গ্রুপের অনেকেই অতীতে ইটালিয়ান নাগরিকত্ব গ্রহন করেছে, তারা ফ্রীমেসন্স এবং ইটালিয়ান লজের সদস্য। রোমের ইহুদী মেয়র নাথান একজন উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফ্রী-মেসন্স। ইহুদীদের প্রিমিয়ার লুজ্জাতি এবং সোন্নিও এবং অন্যান্য ইহুদী সিনেটরকে দেখে বোঝা যাচ্ছে তারাও মেসন্সদের সদস্য পদ গ্রহণ করেছে।
তারা দাবী করে যে, তারা প্রাচিন স্কটিশ লজের অর্চনা পদ্ধতি অনুসরণ করে।
সালোনিকা ( কামাল আতাতুর্ক এই সালোনিকা থেকেই এসেছেন) আন্দোলনের অনুপ্রেরণা মুলতঃ ইহুদীদের দ্বারাই এসছে, যেখানে স্বাধীনতা সাম্য, ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি শব্দ গুলো, তরুন তুর্কীদের উদ্দেশ্য, ইত্যাদী ইটালিয়ান লজ থেকেই এসেছে। ১৯০৮ সালে বিপ্লবের পর যখন কন্সটান্টিনিপল এ তাদের কমিটি স্থাপিত হয়, তখন জানা যায়, এদের নেতৃস্থানীয় অনেকেই ফ্রিমেসন্স। এটা লক্ষণীয় যে, সকল বর্ণের দেশী-বিদেশী ইহুদীরা নতুন পরিস্থিতির উদ্যমী সমর্থক, যে পর্যন্ত একজন তুর্কী বলেছে, এই আন্দোলন মূলতঃ ইহুদীদের আন্দোলন, তুর্কীদের নয়———–। (Satanic voices Ancient and Modern-by David Musa Pidcock)
ব্রিটিশ এজেন্ট মুস্তফা কামাল পাশাঃ
মুস্তফা কামালের বীরত্বের কথা আমরা আগেই জেনেছি, তিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ও পরবর্তীতে ব্রিটিশ আগ্রাসনের বিরূদ্ধে ও তুরস্কের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়ে যুদ্ধে জয় লাভ করেন এবং জাতীয় বীরে পরিণত হন। কিন্তু কি কারণে সেদিন ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন মিত্র শক্তি তুরস্কের সাথে সন্ধি করতে বাধ্য হয়েছিলো, যারা ১ম বিশ্ব যুদ্ধে অক্ষ শক্তিকে পর্যদুস্ত করেছিল, কিন্তু তুরস্কের কাছে এসে হোঁচট খেলো, এটা কি মুস্তফা কামালের বীরত্ব না অন্য কিছু?
এর কারণ ছিল মূলত দুটি, প্রথমতঃ ইতিহাস থেকে মিত্র শক্তি জানত যে, মুসলমানদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেলে তারা কেমন ভয়ংকর হয়ে উঠতে পারে। তখন হয়ত কিছুদিনের জন্য তুরস্ক অধিকার করে রাখতে পারবে, কিন্তু একটি স্বাধীনতাকামি জনগোষ্ঠীর সাথে জনযুদ্ধের সম্মুখীন হতে হবে। সারা পৃথিবীর মুসলমান তাদের সাথে এসে মিলিত হবে। তারা এই ঝুঁকি নিতে চায়নি।
দ্বিতীয়তঃ তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো খিলাফত তথা উসমানী সম্রাজ্যের পতন। দ্বিতীয় উদ্দেশ্য যদি যুদ্ধ ব্যাতিত অন্য কোনো উপায়ে সাধিত হয়, তাহলে যুদ্ধের আবশ্যকতা থাকে না।
ব্রিটিশ সরকার মূলতঃ মস্তফা কামালের সাথে খিলাফত ধ্বংস করার শর্তে পিছু হটেছিলো।
এর প্রমাণ পুর্বে উল্লেখিত লর্ড কার্জনের প্রতি ইহুদী রাব্বি হাইম নাহুম এর উক্তিতে।
১৯১৫ সালে গেলিপলুর ( বর্তমানে GELIBOLU) যুদ্ধে মিত্র শক্তির বিরূদ্ধে ডার্ডানেলস প্রণালী রক্ষা করার জন্য তৎকালীন কর্ণেল মুস্তফা কামাল রণ কৌশল সাজাচ্ছিলেন, তখন ব্রিটিশ বাহিনী রহস্যজনক কারণে তার সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হন এবং পিছু হটেন ( এই ঘটনা মুস্তফা কামালের রণ নৈপুণ্যের মাইল ফলক হয়ে আছে, যদিও প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা খুব কমই হয়েছে)। আর সেদিন থেকে মুস্তফা কামাল পরিণত হন ব্রিটিশদের ভবিষ্যত পরিকল্পণা বাস্তবায়নে দাবার বোর্ডে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ঘুঁটি এবং একজন পাপেট।
গেলিপলুর যুদ্ধের পর মুস্তফা কামাল পাশা (জেনারেল) উপাধি লাভ করেন। এবং খেলার দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় ১৯১৯ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে। মুস্তফা কামালকে নিয়ে তুর্কীদের পরিকল্পণা ছিলো নিম্নরূপঃ
তিনি ইস্তানবুল ত্যাগ করেন বান্দিরমা ( আংকারায় আতাতুর্ক যাদুঘরে এই সুন্দর নৌকার একটি মডেল সংরক্ষণ করা হয়েছে) নামে একটি ছোট নৌকায়। সেখান থেকে তিনি কৃষ্ণ সাগর উপকুলে একটি ছোট শহর স্যামসান এ অবতরণ করেন। ১৯শে মে ১৯১৯ সালে ( পরবর্তীতে এ দিনটি তুরস্কের যুব দিবসের মর্যাদা লাভ করে) স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয়। তিনি তুরস্কের মানুষের কাছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা তুলে ধরেন। ব্রিটিশরা এই ভাবে “দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া নিপীড়িত জনগোষ্ঠী যারা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত” তাদের একজন যোগ্য নেতার ব্যাবস্থা করেন।—- এই নেতা আর কেউ নন তাদেরই পুতুল মুস্তফা কামাল পাশা।
আর তাই ব্রিটিশ রাজা যুদ্ধ পরবর্তীতে মুস্তফা কামাল আতাতুর্ক কে ব্রিটিশদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সম্মাননা প্রদান করতে উৎসাহিত হন।
তুরস্কের প্রথম ( মুস্তফা কামাল) ও দ্বিতীয় প্রেসিডেন্টের ( ইসমেত ইনোনু) মধ্যে কথোপকথনের মাধ্যমে বিষয়টি আরো উন্মোচিত হয়।
মুস্তফা কামালঃ ইসমেত তুমি মনযোগ দিয়ে আগ্রহ সহকারে কি পড়ছ? এটা কি সেই সম্মাননা যা দিয়ে ব্রিটিশ রাজা আমাকে সম্মানীত করবেন?
ইসমেত ইনোনুঃ এই সম্মাননাটা আসলে কি?
মুস্তফা কামালঃ তুমি কি আমেরিকান এবং সারা বিশ্বের খবরের কাগজ পড়নি যে, ইংরেজদের রাজা আমাকে সর্বোচ্চ সম্মাননা দেবেন।
ইসমেত ইনোনু ঠান্ডা ভাবে জিজ্ঞাসা করেনঃ ঠিক আছে, কিন্তু কি কারণে তারা আপনাকে এই সম্মাননা দেবে?
মুস্তফা কামালঃ ইসমেত, সবার চেয়ে তোমার বেশী জানার কথা যে, ইংরেজরা আমাকে অনেক বেশী ভালোবাসে আর এর প্রমাণ লয়েড জর্জকে ( তুরস্কের স্বাধীনতার বিরোধীতাকারী প্রধান মন্ত্রী) সরিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।
লুসানে চুক্তি ( তুরস্কের স্বাধীনতা দানকারী চুক্তি, যা ১৯২৩ সালের ২৪ শে জুলাই সুইজারল্যান্ডের লুসানে শহরে স্বাক্ষরিত হয়) শুধু একটি শান্তি চুক্তিই নয়, এটা ছিলো পাশ্চাত্য, বিশেষ করে ব্রিটেনের স্বার্থ রক্ষাকারী চুক্তি। এর প্রাথমিক লক্ষ ছিলো উম্মাহ এবং ইসলাম কে ধ্বংস করা। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লর্ড কার্জনের বিবৃতিটি এখানে প্রণিধান যোগ্য, “ তুরস্ক শেষ হয়ে গেছে, এখন থেকে এই জাতি আর মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা, কারণ আমরা এর নৈতিক শক্তিকে ধ্বংস করে দিয়েছি”।
আর তাই, ১৯৮৩ সালের ১১ই নভেম্বর মুস্তফা কামালের উপর একটি নিবন্ধে ডেইলী টেলিগ্রাফ পত্রিকা লিখেঃ মুস্তফা কামালের মৃত্যু আমাদের দেশের জন্য অনেক বড় ব্যাপার ছিল। সে একমাত্র একনায়ক যিনি স্বভাবগত ভাবেই ইংরেজদের সত্যিকার সহযোগী ছিলেন।
এটা ছিলো একটি ত্রিভুজ, যা খিলাফাকে ধ্বংস করেছিল, আর এই ত্রিভুজের তিন বাহু হলো ব্রিটিশ, ইহুদী এবং মুস্তফা কামাল, যিনি নিজে একজন ইহুদী এবং ব্রিটিশ এজেন্ট (এরা সবাই ফ্রী-মেসন্স)। এরা খিলাফা ধংসের অন্তর্গত উদ্দেশ্য কে লুকিয়ে চতুরতার সাথে পরিকল্পণা প্রণয়ন করে, যাতে করে প্রথমে খিলাফা ও পরে ইসলামকে ধ্বংস করা যায়। এই মোনাফেকরা খিলাফা রক্ষার স্লোগান দিয়ে মানুষকে যুদ্ধের জন্য সংগঠিত করে যেমন, এস আমরা খিলাফা কে ও কুরানের শাসনকে রক্ষা করি। ক্ষমতা লাভের আগ পর্যন্ত তারা খলিফা কে অনুপুরক হিসাবে সামনে রাখে। তার পর মুষ্টিমেয় কিছু ইহুদী, মুস্তফা কামাল এবং ব্রিটিশরা তাদের সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করে। তারা ইসলাম ও খিলাফার ইতিহাসকে অন্ধকারে নিক্ষেপ করে।
উপসংহারঃ
উপরোক্ত আলাচনা থেকে আমরা জেনেছি, কামাল আতাতুর্ক বংশ পরম্পরায় একজন গুপ্ত ইহুদী, যারা মূলত স্পেন থেকে বিতাড়িত ইহুদীদের বংশধর। কামাল আতাতুর্কের মা একজন আলবেনীয় বংশোদ্ভুত। জাতিসত্ত্বায় তিনি কোনো ভাবে তুর্কী নন। তথাপিও তিনি নিজেকে তুর্কি জাতির পিতা হিসাবে নিজেকে দাবী করেছেন।
তিনি ডোমনে সম্প্রদায় ভুক্ত সাবাতি জেভির বংশধর, একজন ফ্রী-মেসন, একজন ব্রিটিশ এজেন্ট যিনি খিলাফা ধ্বংস করেছেন। নাসিরুদ্দীন আলবানীর ভাষায় তিনি ইসলাম ত্যাগকারী একজন মুরতাদ।
.
রেফারেন্সঃ
১। The City of Salonica: A true cross road by Victoria M. Lord
২। Weakipedia
৩।Exposed-ATATURK WAS A CRYPTO-JEWISH CABAL OPERATIVE & FREEMASON!
৪। FORWARD, A Jewish Newspaper published in New York, January 28, 1994
৫। How the world is controlled intellectually- A research by Siraj Wahaj
৬। “En Route to Global Occupation” by Gary H. Kah,
৭। Satanic voices Ancient and Modern-by David Musa Pidcock
৮। The Biggest Crises in the History of the “Secular” Republic
The Source of it & The Solution to it
কালেক্টেড