somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চাষী

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যদিও আমি গ্রামের মানুষ তবু ক্ষেত-খামারের সাথে আমার সম্পর্ক কম । বাব-মা এর অত্যাধিক আদরের ঠেলায় এই অবস্থা । আজকাল জীবনটাকে নতুন করে দেখে যাচ্ছি । একটা বিশেষ বইয়ের একটা একটা শব্দ হঠাৎ করে নিজেকে থমকিয়ে দিচ্ছে ।

সেই বিশেষ বইয়ের ভাষায় একটা শব্দ আছে ফাল্লাহ; যার বাংলা অর্থ কৃষক বা চাষী অথবা যারা কঠোর পরিশ্রম করে । কৃষক বললেই আমাদের মাথায় আসে একজন পরিশ্রমী মানুষ, যে তার ফসলকে খুব ভালবাসে । শুধু ভালবাসলেই বললে হবে না কেননা এই ভালবাসাটা এতোটাই নিখাদ যে তা বর্ণনার দাবি ছাড়া বুঝানো যাবে না ।

অধিকাংশ চাষীর নিজস্ব কোন জমি থাকে না, তাই অন্যের জমি বর্গা করে চাষ করতে হয় । ফসল রোপনের জন্য বীজ, পানি, সার, শ্রম দরকার । শ্রম সে নিজে দিয়ে থাকে । বাকি তিনটি জিনিস দেওয়ার মত অনেক কৃষকেরই সামর্থ্য থাকে না । তাই কারও কাছ থেকে কর্য্য করতে হয় ।

তারপর বীজ বপন এর পরই কিন্তু সে ফল পায় না; তার জন্য তাকে প্রতি নিয়ত বীজের পরিচর্যা করতে হয়, আগাছা দূর করতে হয়, পোকামাকড় দূরীকরণে কীটনাশক দিতে হয়, মাটির উর্বরতার জন্য সার দিতে হয়, পশু-পাখির অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য নিয়মিত দেখাশোনা করতে হয়, নিয়মমাফিক সেচ দিতে হয় । তারপর সে একটা ভাল ফসলের স্বপ্ন দেখে ।

যে স্বপ্ন তাকে কর্য্য থেকে বাঁচাবে, বর্গার পাওনা দিবে এবং বাকি ফলনের আগ পর্যন্ত ভালভাবে সারভাইব করতে পারবে ।

এখানে আমাদের শিক্ষা রেখেছেন মহান আল্লাহ্‌ আমরা শুধু পরিশ্রম করলেই হবে না আমাদেরকে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ চাইতে হবে; ঠিক যেভাবে একজন কৃষকের শ্রম থাকা সত্ত্বেও তাকে বাকি জিনিসগুলোর জন্য অন্যের অনুগ্রহ নিয়েছে।

আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে ফলনের জন্য; কৃষক কিন্তু বীজ বপন করেই ভাল ফসলের অপেক্ষা করে নি । তেমনি আমাদেরকে আল্লাহ্‌র কাছে কিছু চেয়ে তার জন্য অপেক্ষা করতে হবে, পাশাপাশি পরিচর্যা করতে হবে ।

মোটকথা একজন মুত্তাকী বা ইমানদার লোককে একজন কৃষক এর মত হতে হবে; ঈমান এনে তার পরিচর্যা করতে হবে, আগাছা সদৃশ শির্ক, কুফর দূর করতে হবে, পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার জন্য দোআ চাইতে হবে, ঈমানের উর্বরতার জন্য বেশি বেশি সহীহ আমল করতে হবে, ঈমানহারা হওয়ার ভয়ে মুত্ত্বাকী সঙ্গী লাগবে আর নিজের ঈমান এর দেখাশোনা নিয়মিত করতে হবে ।

এগুলোত আমার কথা সেই বিশেষ গ্রন্থ কি বলে দেখুন; ফাল্লাহ শব্দের মূল হচ্ছে فلاح এই মূলের আর একটি শব্দ হল মুফ্লিহুন । আল্লাহ্‌ মুত্ত্বকীদের মুফ্লিহুন বলে সম্বোধন করেছেন । তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন মুত্ত্বাকীদেরকে জান্নাত পাওয়ার জন্য চাষির মত পরিশ্রমী হতে হবে, ভাল ফসলের জন্য ধৈর্য্য ধরতে হবে এবং অবশ্যই আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ চাইতে হবে ।

ভাষার এই পদ্ধতিটা আমার কাছে খুব মজার লাগে; যখন আপনার কোন আরবি শব্দের ভাবানুবাদ আপনার মনমত হচ্ছে না, বুঝতে সমস্যা হচ্ছে তখন ঐ শব্দের মূল থেকে সৃষ্টি অন্যান্য শব্দগুলো দেখলে আপনার context অনুযায়ী অর্থ বুঝতে কষ্ট হবে না ।

সে যাক, চাষী নিয়ে এতো কিছু লেখার মানে কি?

মানে হল সহজ; এই লেখা লেখার আগে অনেক এর কাছ থেকে শোনতে হয়েছে তাদের দো’আ কেন কবুল হয় না, তাদের ডাকে কেন সাড়া দেওয়া হয় না ।

এটা মনে রাখবেন সব চাষি ভাল ফসল ঘরে তুলতে পারে না, যে প্রত্যেকটা সময় সঠিকভাবে ব্যায় করেছে তার ফসলের ভাল ফলনের প্রতি সে ই কেবল ভাল ফসল তুলতে পারে । সবসময় নিজেকে কেন্দ্র করে ভাবলে মনে হবে আমার চাওয়ার কমতি ছিল না; কিন্তু যখন আপনি মাঠে গিয়ে জমির আইল ঠিক আছে কিনা; ফসলের বীজের পাতার রঙ ঠিক আছে কিনা, জমিতে পানি পরিমাণমতো আছে কিনা তখন আপনি অজুহাত খুজবেন না, পরের বার সেই ভুল গুলো সমাধান করার চেষ্টা করবেন ।

তাই আপনার দো’আর ক্ষেত্রেও ঠিক অনুরূপ পরীক্ষাগুলো যখন করবেন; তখন আল্লাহ্‌কে বলবেন আমি এতো দিন, এতো কিছু করেছি কিন্তু তুমি কোন কারণে আমাকে তা দাও নি ( আস্তাগফিরুল্লাহ,)
ভাল কিছুর জন্য আপনার ধৈর্য থাকা দরকার, সালাতে আল্লাহ্‌র কাছে বেশি বেশি চাইতে হবে, অন্তরে নম্রতা-স্থিরতা রেখে আপনাকে চাইতে হবে । ঠিক চাষির মতো আপনাকে ঘরে ফসল তুলা অবধি !
না চাষি ফল পাওয়ার পর তার দেখাশুনা ভুলে যায় না, জমির পরিচর্যা, নতুন বীজের পরিচর্যা শুরু করে দেয়, তাই আপনাকেও অপেক্ষা করতে হবে, তারপর শুকরিয়া জানাতে হবে, পরের কাজে আরও স্থিরতা-নম্রতা-সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে হবে ।

যাকে আমরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য ভাবি, অবহেলা করি আল্লাহ্‌ সেখানে আমাদের জন্য অনেক বড় কিছু উদাহরণ রেখেছেন । চাষীর মত উদাহরণগুলো নিয়ে শুধু ভাবার সময়টুকু বের করতে হবে । তাহলে সাফল্য-কল্যাণ ধরা দিবে । আল-বাক্বারাহ (২: ৪৫-৪৬); এর এই আয়াতগুলো দিয়ে শেষ করছি ।

ধৈর্য-নিষ্ঠার সাথে চেষ্টা করে সালাতে সাহায্য চাও, যদিও এটা করা খুবই কঠিন, তবে তাদের জন্য কঠিন নয়, যাদের অন্তরে স্থিরতা-নম্রতা রয়েছে- যারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে একদিন তাদের প্রভুর সাথে দেখা হবেই ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প বলেছে, বাংলাদেশ পুরোপুরি এনার্খীতে, তারা মাইনোরিটির উপর অত্যাচার করছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৬



৩ দিন পরে আমেকিকার ভোট, সাড়ে ৬ কোটী মানুষ ভোট দিয়ে ফেলেছে ইতিমধ্যে; ট্রাম্পের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা শতকরা ৫১ ভাগ। এই অবস্হায় সনাতনীদের দেওয়ালী উপক্ষে ট্রাম্প টুউট করেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

×