জাতীয় ইস্যু নিয়ে লেখার ইচ্ছে থাকে না; কারণ প্রায় প্রত্যেকটি ইস্যু; ইস্যু হউক না হউক তা ইস্যু বানিয়ে দিচ্ছি । যেখানে ধর্মের অবমাননা শুরু হয়েছিল হুমায়ন আজাদ দিয়ে সেখানে তার ছেলেদের কুপিয়ে আজ এমন একটি স্থানে দাড় করানো হয়েছে; ধর্মের বিরুদ্ধে কিছু বলা মানে সৎ সাহস আর বিজ্ঞানমনস্ক হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে । আসলেই কি এরকম কিছু হওয়ার কথা ছিল?
বলা হয়ে থাকে যে কথা দিয়ে না পারে সে শরীর ব্যবহার করে; তাহলে আমরা মুসলিমরা কি মূর্খ নাকি সন্ত্রাস । আজকের এই কথিত সৎ সাহসের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পিছনে এই দেশের প্রত্যেকটি মুসলিমের দায়বার আছে । গ্রীক পুরানের একটি monster আছে "হাইড্রা"; যার একটি মাথা কাটলে দু'টি মাথা গজিয়ে থাকে । আজকের এই মুক্তমনা ব্লগারদের "বিজ্ঞানমনস্ক" হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছি ঠিক সেই ভাবে। একজনকে কুপিয়েছেন তো তার ইতবৃত্ত সহসায় এই সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে হাজার হাজার পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়ছেন; আপনি । তার প্রতিবাদে, সাপোর্টে আরও দু'টি মাথা গজিয়েছে । আপনি আর একটি মাথা কেটেছেন; আরও দু'টি মাথা বেড়েছে । এভাবে ব্যাঙের ছাতার মত প্রতিনিয়ত বেড়ে চলছে ।
অন্যদিকে কি হচ্ছে; মুসলিম হিসেবে আপনি দাঁড়ি রাখতে ভয় পাচ্ছেন; পাঞ্জাবী পড়তে ভয় পাচ্ছেন; হাতে ইসলামিক বই রাখতে ভয় পাচ্ছেন; জিহাদের কথা বলতে ভয় পাচ্ছেন; আপনার পরিবার টুপি; দাঁড়িওয়লা মানুষের সাথে চলতে বারণ করছে এই সকল নিত্য নতুন সমস্যা ব্যাধি আকারে জন্ম নেওয়ার পিছনে একটি ইস্যু কাজ করেছে।
আমাদের মহান শিক্ষক; অনুকরণীয় এবং অনুস্মরণীয় ব্যক্তি মুহাম্মাদ (সাঃ) কে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠী দ্বারা অপমান করার জন্য ; এবং তার প্রতিবাদ করে এগিয়ে যাচ্ছেন কতিপয় রাসূলপ্রেমী যুবকেরা । যাহারা নবীকে জানার আগেই তাঁকে অন্ধভাবে ভালবেসে নিয়েছে । বলতে পারেন তাদের এই ভালবাসা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য । হায় ! ইসলাম কি এই ভালবাসা সমর্থন করে; অবশ্যই করে কিন্তু বিশেষ ক্ষেত্রে । যেখানে রাসূল আমাদের অনুকরণীয় এবং অনুস্মরণীয় আদর্শ সেখানে তাঁকে ভালবাসার একটি অভিন্ন পথ হল জানতে হবে তাঁহার জীবন; কর্ম; ত্যাগ এবং মহত্ত্বসহ অন্যান্য গুণাবলি।
ইসলাম মুখের ভাষা দ্বারা যতটুকু না প্রচার হয়েছে; তাঁর পিছনে যে জিনিসটি বেশি কাজ করেছে তা হল "তাকওয়া"। যখন দেখেছে একজন মুসলিম কথায়; কাজে হৃদ্যতাপূর্ণ তখনই তাদের ইসলামের প্রতি আগ্রহ জন্মেছে । এমন অনেক সাহাবী এবং মুজাহির ছিলেন যারা রাসূল (সাঃ) এর মুখের হাসিতে ইসলামকে ভালবেসে ফেলেছিলেন । তাই ইসলামে প্রত্যেক ব্যক্তিকে কৃতকাজ কর্মের জন্যে আল্লাহ্র কাছে জবাবদিহিতার ব্যবস্থা রেখেছে; আপনি আপনার কাজ দ্বারা কিংবা ব্যবহার দ্বারা কতটুকু আকর্ষণ করেছেন ইসলামকে জানার এবং ভালবাসার ।
একজন জিহাদি ব্যক্তি হওয়ার জন্য আপনার প্রথম কর্তব্য হল আল্লাহ্ এবং ইসলামকে মন থেকে ভালবাসা এবং রাসূলের আদর্শ সঠকভাবে জানা । তা না জেনে ভালবাসি বলে তাঁর দোহাই দিয়ে অন্যের গলা কাটতে ইসলাম কখনও সায় দেয় না । এই ভালবাসার মাধ্যমে আপনি বাকি দশটি মুসলমানের স্বাভাবিক জীবন নষ্ট করতেছেন ।
এভাবে তাঁরা কিভাবে রাসূলকে ভালবাসল; যখন রাসূল বলেন "দুজন মানুষের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করে দেওয়া হচ্ছে সাদকাহ; কোন আরোহীকে তাঁর বাহনের উপর আরোহন করতে বা তাঁর উপর বোঝা উঠাতে সাহায্য করা হচ্ছে সাদকাহ; ভালো কথা হচ্ছে সাদকাহ; সালাতের জন্য প্রত্যেক পদক্ষেপ হচ্ছে সাদকাহ এবং কষ্টদায়ক জিনিস রাস্তা থেকে সরানো হচ্ছে সাদকাহ"(সহিহ বুখারী ২৯৮৯)
কোথায় আমরা ভালবাসলাম; একজনকে গুপ্তহত্যা করে লাখো মুসলিমের প্রভুর প্রতি ভালবাসার পথকে কণ্টকময় করলেন; এই বুঝি শিক্ষকের আদর্শে বেড়ে উঠা । এই জন্য বোধহয় রাসূল (সাঃ) আল্লাহ্র কাছে অনুযোগ করবেন যে তাঁর উম্মাত কুরআনকে; কুরআনের শিক্ষাকে পরিত্যাগ করেছিল।( সূরা আল ফুরকান ২৫:৩০)। রাসূলের সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে আমরা তাঁর সুন্নাহকে অপাংক্তেয় করে ফেলেছি ।
আমরা এ জামানার মুসলিমরা না জানি দ্বীন না জানি ভালবাসা । কিভাবে দ্বীনের পথে থেকে অন্যকে ভালবাসতে হয় তা আমাদের অজানা । কিভাবে ভালবাসার মানুষের সম্মান রক্ষা করতে হয় তা আমাদের কাছে অজানা । কিভাবে জানব যখন দ্বীন এবং রাসূল দোহাই দেওয়া অবধি , যখন মনে থাকে ব্যাটম্যানের কিংবা মারদাঙ্গা ফিল্মের হিরোর আদর্শ । অবশ্যই আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসতে হবে এবং সেই ভালবাসা স্থায়িত্ব করার জন্য জানতে হবে; মানতে হবে । অবশ্যই কিচ্ছা কাহিনী দিয়ে নয়; কোরআন এবং হাদিসের আলোকে । নিজের ভালবাসার জায়গায়টি শুধু আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের নামে স্থায়িত্ব হলেই ফরমালিন মুক্ত ভালবাসা সম্ভব ।
তাহলে রাসূলকে (সাঃ) অবমাননার জন্য কি করব; গুপ্তহত্যা কি সাপোর্ট করব ; রাসূল (সাঃ) ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কিভাবে অপবাদ ও অপমান প্রতিহত করেছেন পরবর্তী পর্বে জানানোর চেষ্টা হবে ।
মন্তব্যঃ ইহা আমার একান্ত অভিমত; কোরআন এবং হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক হলে জানানোর পরামর্শ রইল ।
০৯ শাবান ১৪৩৭ হিজরি
চলবে..................