ক্ষমা চাচ্ছি মহান ঋনদাতার কাছে, যিনি আমাকে জীবন দিয়েছেন সাথে তার অনুগ্রহ । দিয়েছেন দুনিয়াকে ফসলি জমি রুপে আর দিয়েছেন সেই জমিতে ফসল বুনিয়ে রাখার বীজ । লাখো শুকরিয়া জানিয়ে তাঁর নামে শুরু করিলাম ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ।।
রাস্তা ঘাটে, হাটে বাজারে কিংবা কর্মক্ষেত্র বা আবাসস্থলে সবাই নতুন বছরকে নিয়ে মেতে আছে । অবশ্যই বাঙালি ভাষা ভাষী হওয়ার দরুন গ্রেগ্রিয়ান কিংবা চৈনিক বা হিজরি পঞ্জির মতো আমাদের ও একটি আলাদা বার্ষরিক পঞ্জি আছে । নতুন দিনকে নতুন ভাবে সাজানোর খায়েশ আমাদের ও আছে । যদিও এই জাতিগত পঞ্জি ধরে রাখতে গিয়ে সংস্কৃতির নামে বিজাতীয় কিছু মিশ্রণে তা তিতিয়ে ফেলি । তবে যে বিষয়টি নিয়ে নিছক বিতর্ক কম হয় কেবল তারই একটি এখানে নিয়ে আসলাম । আর তা হল "হালখাতা" ।
হালখাতা কিভাবে আসল, কেন আসল তা নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয় । এই মস্তিষ্ক ব্যায়ের যুগে আমরা কারনে অকারণে মেধা খরচে নিজ দায়িত্বে উঠে পড়ে লেগে থাকি । তাই ইতিহাস টানা ও এড়িয়ে গেলাম ।
কয়েকদিন ধরে আমার চাচাত ভাইকে দেখলাম তাহার ব্যবসায়িক হিসাবের খাতা উল্টিয়ে পালটিয়ে পরখ করছে । নিতান্ত গুপ্তধনের সন্ধান পাওয়া না অবধি এই কর্ম চলতে থাকে । বহুদিন চিঠি লেখা দেখি না; সেই না দেখা ভাগ্যটি তা দিয়ে মিটিয়ে ফেলা গেল ।
চিঠির শুরুটা যথারীতি যতটুকু নম্র কিংবা ভদ্র ভঙ্গিতে করা যায় তিনি তারই প্রচেষ্টা করলেন । তারপর নববর্ষের শুভেচ্ছা ও মঙ্গালাদি জানিয়ে ইতি টেনে নিলেন । এবং তা একটি আল্পনায় অলঙ্কিত খামে রাখলেন ।
এইটুকু পড়ে আমার সম্মানিত পাঠকেরা বুঝতে পেরেছেন বলে ধরে নিলাম । এখন আসুন উপলব্ধির জায়াগায় । কল্পনা করুন নিজেকে, নিজের নিজেকে । কি ? কি ভাবছেন- কি চিন্তা করবেন? তাহলে মনে করুন আপনার বিবেক মারা পড়েছে । তাকে জাগিয়ে তুলুন ।
সেই প্রাপ্ত বয়স থেকে আজ অবধি কয়টি সিজদাহ মিটিয়েছেন, কয়টি রুকু পাওনা পূরণ করেছেন । নিজের হালখাতাটা নিজে লিখে দেখুন কত পাওনা আছে, কত বকেয়া পড়ে আছে । একজন আপনার কাছ থেকে কত কিছু পাওনা আছেন, তবু আপনি কি আরাম আয়াশে দিন কাটাচ্ছেন । আপনার কি বিবেক নেই, আপনি কি মরে পড়েছেন । ইসলামিক লাগছে ব্যাপারটা তাই না ।
আচ্ছা তাহলে মানবতা প্রেমীদের কাছে আসি, আপনাকে প্রশ্ন করুনঃ কতটা অসুস্থের সেবা বাকি আছে, কতটা সাহায্য বাকি আছে, কত্তটা হক বকেয়া আছে । কি তাও ইসলামিক লাগছে । ভাই ইসলাম তো এগুলো ই । যেখানে যাবি সেখানে ই ইসলাম ।
হালখাতা দেওয়ার পরও বকেয়া থেকে যায় বছর পেরিয়ে নতুন বছর আসে কিন্তু পাওনা ? মাঝে মাঝে ধমক কিংবা সতর্ক করে দেয়া হয় । স্রষ্টার কাছ থেকে কত বছর চেয়ে নিয়েছেন ; তার পাওনা কে মিটাবে ?
হায়! আমার কি যে হল কি করিব ? কত বাহনা বানিয়ে নিয়েছেন হালখাতা এড়িয়ে গিয়েছেন কিন্তু আর কতকাল নিজেকে ফাঁকি দিবেন । আসুন নিজের হালখাতা খুলে দেখি ; যে কালকের ভোর পেরিয়ে সূর্যটির আলোর ছোয়া নেয়ার মত পাওনা মিটিয়েছি কিনা ; সব কিছুর স্রষ্টা অনুগ্রহ গ্রহণ করার মত বকেয়া মিটিয়েছি কিনা । তারপর মিষ্টি খান; পান্তা খান কিন্তু আদৌ কী আমার গিলার সাধ্য কিংবা কর্ম আছে নাকি ।
নিজের হালখাতা নিজে খুলে দেখুন কতটি গুপ্তধন আছে আপনার স্রষ্টার অনুগ্রহ পাবার। দেখুন স্রষ্টা কত বিনয়ী ; কতকাল আপনার কাছে বিনয়ী হয়ে আছে । আপনি কিছু দিন ; আল্লাহ্ আপনার জন্য দ্বার উম্মুক্ত করার অপেক্ষায় আছে । আপনি নিজের কাছে নিজেকে দেওলিয়া করে নিচ্ছেন । স্রষ্টা আপনাকে যা দিয়েছে তা ক্রমাগত গিলে যাচ্ছেন; সাম্নের জন্য কি রেখে যাচ্ছি । আল্লাহর দেয়া একটা নিয়ামত গ্রহণ করে নিজের জন্য আর একটা নিয়ামত সঞ্চয় করুন ।
নয়তু দেওলিয়া হয়ে নিজের হালখাতাতে সব বাকি রেখে কোন একদিন চলে যাবেন । সেই বকেয়া পরিশোধ করার চান্স পাবেন না ।
শুভ নববর্ষ ; (আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ) । হালখাতা লিখুন এবং বকেয়া পরিশোধ করুন আজ থেকে; তাহলে এক দুইটা পাওনা মাফও পেতে পারেন , কিংবা সবই ক্ষমা পেতে পারেন । কিন্তু বকেয়া পরিশোধের চেষ্টা করাটা পূর্ব শর্ত ।
৩০ চৈত্র ১৪২২ বঙ্গাব্দ ।।