-ভাই ; আপনি তো আল্লাহ, পরকাল বিশ্বাস করেন
-জী; ভাই করি
-তাহলে এই রক্ত দান, মানব সেবা করার পাশাপাশি ইসলামকে মানলে ভাল হতো না
-ভাই ইসলাম মানাটা এতো জরুরি কি
-কেন; ভাই
-কেন আবার কোরআনে বলা আছে না;
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
"Surely, those who believe, and the Jews and the Christians and the Sabians, whoever have faith with truehearts in Allah and in the Last-day and do good deeds, their reward is with their Lord, and there shall he nofear for them nor any grief."
"নিশ্চয় যারা ঈমানদার এবং যারা ইয়াহুদী, খৃষ্টান এবং অগ্নি উপাসক; এদের যারাই আল্লাহ্ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে তাদের জন্য তাদের রবের কাছে পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই আর তারা দুঃখিত ও হবে না "(১)
-তার মানে ইসলাম দরকার নেই;
-আমি তো তা বলি নি ; আমি বলছি ভাল কাজ আর পরকালে বিশ্বাস রাখলে ই তো হয়
-আচ্ছা আপনি এই আয়াত পড়েছেন তো
وَمَن يَبْتَغِ غَيْرَ الإِسْلاَمِ دِينًا فَلَن يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
"And whoever desires other than Islam as religion-never will it be accepted from him, and he, in the hereafter, will be among the losers"
" যে কেউ ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্ম অন্বেষণ করবে, তাঁর পক্ষ হতে তা কখন ও গ্রহণ করা হবে না । আর সে হবে পরলোকে হতিগ্রস্থদের দলভুক্ত ।(২)
এই হচ্ছে একটা জেনারেশন এর বিশ্বাস ; এমনকি অনেক মুসলিম মনে করে ভাল কাজ, পরকালে বিশ্বাস ই তাদের পরকালে ভাল পথ বাতলে দিবে ।
কোরআনে ভাষা এবং এর অর্থ বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে তার শাব্দিক অর্থকে, মাঝে মাঝে বাক্যগত এবং মাঝে মাঝে স্থান কাল ভেবে অর্থ এবং এর ব্যবহার হয়ে থাকে ।
কোরআনকে বুঝার জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে আল্লাহ্ স্বয়ং নিজেই কোরআনের অন্য সূরায় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন; আর বাকি ক্ষেত্রে রাসূল (সাঃ) কে সেই সক্ষমতা দিয়েছেন । এই বুঝার অর্থ হল "তাফসীর" ।
তাফসীরের ক্ষেত্রে নিচের পদক্ষেপ গুলো অনুসরণ করা হয়ঃ
১) কোরআন দ্বারা কোরআন এর তাফসীর
২)সুন্নাহ দ্বারা কোরআনের তাফসীর
৩) আ-সার দ্বারা কোরআনের তাফসীর
৪) ভাষার মাধ্যমে কোরআনের তাফসীর
৫) মতামত দ্বারা কোরআনের তাফসীর
তাফসীরের সঠিক পদ্দতি উপেক্ষা করলে কি ধরনের ভয়াবহ অসংলগ্নতা ও প্রবঞ্চনা দেখা দেয় এর একটি উদাহরণ দিচ্ছিঃ
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষার্ধে ভারতে মির্জা গোলাম আহমেদের নেতৃত্বে পথভ্রষ্ট ফিরকা "কাদিয়ানী" সম্প্রদায়ের উদ্ভব । তাদের দাবির ক্ষেত্রে নিম্নোক্ত আয়াতের কথা উল্লেখ করে থাকেন:
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا
"Mohammed is not the father of any of your men; yes He is the Messenger of Allah and the last one among all the prophets. And Allah knows all things"
"মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারও পিতা নয় বরং সে আল্লাহ্র রাসূল এবং শেষ নবী.......।"(৩)
তাদের মতে এখানে "খাতাম" মানে নবুওতের সিলমোহর নয়, বরং এর অর্থ হল "আংটি" । এ ব্যাখ্যার আলোকে তাদের দাবি হলো- আংটি যেভাবে আঙ্গুলকে সৌন্দর্যমন্ডিত করে, নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) ও কেবল তেমনি নবুওতের সৌন্দর্য বর্ধন করেছেন । অতএব এই আয়াতের অর্থ হচ্ছে নবী মুহাম্মাদ (সাঃ) সর্বশ্রেষ্ঠ নবী, কিন্তু সর্বশেষ নবী নন ।(৪)
তারা আরো বলে যে খাতাম শব্দের অর্থ সীলমোহর ধরে নেয়া হলেও তা হবে চিঠিপত্রের খামের উপর ব্যবহৃত সীলমোহরের ন্যায় যা তার বিষয় বস্তুকে মোহরাংকিত করে সীমাবদ্ধ করে না ।
অথচ এই আয়াতের , ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বুখারী শরীফের একটি হাদিস উল্লেখ করলাম"
হযরত জাবির ইবনে আব্দিল্লাহ (রাঃ) হতে বর্নিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন "আমার দৃষ্টান্ত ও নবীদের দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির দৃষ্টান্তের মত যে একটি ঘর বানালো এবং পূর্ণ ও সুন্দর করে বানালো। কিন্তু একটি ইট পরিমাণ জায়গা ফাঁকা রেখে দিল । সুতরাং সি সেখানে প্রবেশ করে অ ওর দিকে তাকায় সেই বলে "এটা কতইনা সুন্দর ! যদি এই পরিমাণ জায়গাটি ফাঁকা না থাকতো !" আমি ঐ খালি সাথানের ইট । আমার মাধ্যমে নবীদের ধারাবাহিকতা শেষ হয়েছে ।(৫)
আয়াতের অন্য অংশের ব্যাখ্যা; মহান আল্লাহ্ বলেনঃ "মুহাম্মাদ (সাঃ) তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নয় ।
আল্লাহ্ তা'আলা নিষেধ করেছেন যে, এরপর যেন যায়েদ ইবনে মুহাম্মাদ (সাঃ) বলা না হয়।"
অর্থাৎ তিনি যায়েদ (রাঃ) এর পিতা নন । যদিও তিনি তাকে পুত্র বানিয়ে নিয়েছিলেন । রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কোন পুত্র সন্তান প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া পর্যন্ত জীবিত থাকেন নি । কাসেম, তাইয়েব ও তাহের নামক তার তাঁর তিনটি পুত্র সন্তান হযরত খাদীজা (রাঃ) এর গর্ভজাত ছিলেন এবিং তিন জনই শৈশবে ইন্তেকাল করেন । হযরত মারিয়াহ কিবতিয়াহ (রাঃ) এর গর্ভজাত ইবরাহীম, তিনি দুগ্ধ পান অবস্থাতেই ইন্তেকাল করেন । (৬)
আল্লাহ্ তা'আলা বলেনঃ বরং মুহাম্মাদ (সাঃ) আল্লাহ্র রাসুল ও শেষ নবী । আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সর্বজ্ঞ ।
প্রত্যকটি আয়াতের অর্থ জানার চেষ্টা করুন, কারন শেষ জামানায় এরকম কিছু উদ্ভট পরিস্থিতির সম্মুখীন হবেন যা ভাবতে পারবেন না । আপনার কলম দিয়ে আপনার ই ফাঁসির রায় দেয়ার চেষ্টা করবে । তাই আমাদের উচিত কোরআন কে বুঝা এবং তাফসীর সহ পড়া ।
আমরা আমাদের পরবর্তী লেখায় জানব তাফসীর কি, এবং কিছু আয়াতের তাফসীর এবং পদক্ষেপ সমূহের ব্যাখ্যা , ইনশা আল্লাহ্
স্বত্বঃ মোঃ তাজুল ইসলাম
পাদটীকাঃ
১) সূরা বাকারাহ (২:৬২)
২) সূরা আলে ইমরান (৩:৮৫)
৩) সূরা আল আহযাব (৩৩:৪০)
৪) কাদিয়ানীয়াত, (পৃঃ ৩০৬)
৫) সহীহ বুখারী
৭) কোরআন বোঝার মূলনীতি
৬) তাফসীর ইবন কাসীর (পঞ্চদশ খণ্ড ; পৃঃ ৮১০)
৮) তাফসীর আহসানুল বায়ান (পৃঃ ৭৩৮)
৯) http://www.ahadees.com/arabic-surah
১০) http://www.ourholyquran.com/index