somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ননসেন্স ◎ ধারাবাহিক উপন্যাস ※ এক/০ ২

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক


মেয়েটি নড়েচড়ে বসে । বইটার পৃষ্টা উল্টিয়ে পাল্টিয়ে দেখতে লাগল । বেশ মনযোগী মনে হল । মেয়েদের ধর্য্য আর একাগ্রতা বেশি । আমি মেয়েটির মুখের দিকে তাকিয়ে গম্ভীর শ্বাস নিয় । ততক্ষনে মেয়েটি একটু পড়েই বইটা বন্ধ করে আমাকে ফেরত দিয়ে মিয়ানো গলায় বলল , " বইটা পড়েছি । তারচে আপনিই পড়ুন । লেখক বই-এর এক জায়গায় লিখেছেন , ' মরতে না শিখলে পরিপূর্ন ভাবে মরা যায় না ।' একটু থেমে , যারা বুদ্ধিস্ট তারা মৃত্যুকে জীবনের কাছাকাছি রাখে । কি বলুন ! তাই না ?

আমি ঘাড় নেড়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললাম ," হ্যাঁ " । পুনর্জন্মের স্রষ্টা ঋষি যাজ্ঞবল্ক্য । হিন্দু মতে । আর অষ্টম শতাব্দীতে পদ্মসম্ভব বার-দো-থোস-গ্রোল রচনা করেন । তিনিও বুঝাতে চেয়েছেন ,বইটিতে , মৃত্যু আর পূনর্জন্মের মধ্যবর্তী অবস্থান । যা পাপ বা পূর্ণের ফলভোগ ।

• মেয়েটি হাসহাসতে বলল , ভাগ্যবাদ ও কর্মবাদ শোষণ ব্যবস্থাকে নিশ্চিত করে ।

[] ঠিক বলেছ । ভাগ্যবাদ ও কর্মবাদ প্রতিবাদিকে প্রতিবাদ বিমুখ করে । তাদের ভাল-মন্দ , জীবন-যৌবন সব কিছুই মনে করেন তারদ্বারা প্ররিচালিত । অতএব তার সাথে সমস্ত অন্যায় হওয়াকে ভাগ্যবাদ বা কর্মবাদের ফলস্বরূপ ভাবেন ।

মেয়েটি মাথা নাড়লেন । সঙ্গে গভীর শ্বাস । আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলল , আচ্ছা চলি ।

মেয়েটি সত্যি সত্যি চলে গেল । আমি ভোদাইস্টদের মত চেয়ে রইলাম । অবশ্য 'হ্যাঁ' ' না ' কিছুই বলতে পারলাম না । মেয়েটি আল্টামর্ডান । খাই খাই ভাব একটা শরীরে । চুলবুলে হাঁটচ্ছে ।চরিত্রে তেমন ম্যাচুরিটি নেই । কতক মেয়েরা আছে না ছেলে-ছোকড়া দেখলে একটা খাইখাই ভাব করেন । ঠিক তেমন । আমি যখন কলেজে পড়ি । বেশ কিছুদিন আগের কথা । আমাদের কলেজে নীলাশ্রী নামে এক মেয়ে পড়ত । আমাদের একক্লাস জুনিয়র । নামেও নীলাশ্রী । দেখতেও সুখশ্রী । চেহারাটা ছিল এ্যাংলো । বন্ধুদের মুখে শুনেছি , এ্যাংল মেয়েরা নাকি ইয়ে হয় । আমার সাথে পরিচয় হবার একমাসবাদে একটা ঘটণা ঘটল । আমি তখন প্রেম-ট্রেম ব্যপারে তেমন বুঝতাম না । নীলা সঙ্গে আমার পরিচয় , আমি ভাল ছাত্র হিসেবে । নীলা প্রচণ্ড দূর্বল ছিল আমার প্রতি । নীলাও মন্দছাত্রী , সে কথা বলছি না । সেও ছাত্রী হিসেবে ভাল ছিল । আমি প্রথম প্রথম বুঝতে পারিনা ।' ও ' আমাকে নিয়ে ভাবছে । আমি কলেজ গেটে আমার এক বন্ধুর জন্য অপেক্ষা করছিলাম । পিছনে তাকিয়ে দেখি নীলা । চোখমুখে বেশ একটা উৎসুক ভাব ফুটে উঠেছে । আমার হাসি পেল । আমি হাসলাম । ওও হাসতে ভুল করল না । একদম কাছে এসে দাঁড়াল । মাইরী বলছি আমি বুঝতে পারনি আমি ওর প্রেমে পড়ছি ।

আমার নিরবতা ভাঙতেই । নীলা উচ্ছ্বাস নিয়ে বলল , " এই । আজ কি তোমার একটু সময় হবে ?

[] ক্যানো গো । 'গো ' বলায় জিহ্ব কাটলাম । এ এক আমার মুদ্রাদোষ ।
¤ বলো না পারবে কি না ?

[] আমি ভনিতা না করে বললাম , পারবো ।

¤ পশ্চিমপাড়ার বকুল গাছটার ওখানে এসো ।

[] সময় ?

¤ বিকেল পাঁচটায় ।


বুকের মধ্যে একটা গভীর উদ্বেগ শুরু হলো । নীজেকে ধরে রাখতে পারছি না । বারবার ঘড়ি আর চোখ চঞ্চল করে তুলছিল । আস্তে আস্তে সময় গড়িয়ে এল । বিকেল পাঁচটা ।
আমি যতটা সম্ভব শরীরটাকে মেজে-ঘষে নিয়ে পথ চলা শুরু হল । ভাবছিলাম । আবল-তাবল ভাবছিলাম । শুরু শেষ নেই । কেন ডাকল ? বকুল তলায় কেন ? কলেজেই তো বলতে পারত ? এমন কি কথা , যা কলেজে বলা যায় না । বুকুল তলায় বলা যায় । নাঃ ! ভাবতে পারছি না । আমি কি তালগোল পাকিয়ে ফেলছি ! বিশ্রী লাগছে । হু । যাকে বলে বয়েসের দোষ । এই বয়সে বহুগামী দোষ থাকে , শেষ নেই । অনন্ত মুখী । নিজেকে সামলে নিয়ে হাঁটছি । সঙ্গে ঘনঘন হাতঘড়ি দেখছি । আর কিছু সময় । তারপর বুকুলতলা । দূর থেকেই দেখলাম নীলাশ্রী'কে । দাঁড়িয়ে আছে । নীলাশ্রীকে দেখে ভিতরে আলোরণ খেলে গেল । নতূন যৌবন । নতূন গোঁফ । শরীরের যত আলোরণ সব নতুন । তাই সেই আলোরণকে চিনতে পারলাম না । আমাকে দেখে স্বভাব সুলোভে হেঁসে দিল নীলা । আমিও হাসলাম । অকৃপণ হাসি । হাসির রেশ অদৃশ্য হয়ে রয়ে গেল ।

বকুলতলা থেকে সোঁজা আমরা পার্কে গিয়ে ঢুলাম । পার্কের উত্তরকোণে গিয়ে বসলাম । পাশাপাশি । মাঝেমাঝে চোখে চোখ । সে এক নতুন চেনা জীবন । আর অপেক্ষা করতে পারলাম না । শরীর , মন , ঠোঁট ভারি হয়ে উঠেছে । কি বলব ভাবতে পারছি না । তালগোল পাকতে শুরু করেছে চিন্তা-চেতনায় । সামলে নিয়ে বললাম , -তোমায় কিন্তু বেশ লাগছে ।
নীলাশ্রী উত্তর না দিয়ে হাসল । আমার চোখের দিকে তাকাল । আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম । নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না । বোধিদীপ্ত নির্জনতা আমাদের কে আরও ঘন করে তুলল ।

আমি ছোট্ট করে বললাম ,-কিছু বলছো না যে … । কেন ডেকেছো বলো…?

নীলাশ্রীর চোখে মুখে রহস্য খেলছে । নিরাকার অজানা গভীর সে রহস্য নেতিয়ে ছড়াচ্ছে আমার বুকে । এত অপেক্ষার ধর্য্য আমাকে বাঁধন হারা করে তুলল । নীলাশ্রীর মোহ ভঙ্গটার নাম যে প্রেম ছিল । বুঝতে না পারলেও আন্দাজ করেছিলাম ।
নীলাশ্রী বিশ্রীভাবে ওর জামার ভিতর থেকে একটি কাগজ বের করে আমার দিকে তাকল ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ৮:৩২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণপরিষদের সাথে বিএনপির সখ্যতার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭


বিএনপির নেতাদের সাথে গণপরিষদের নেতাদের ঘন ঘন সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে।বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন বিএনপি হাই কমান্ড থেকে পটুয়াখালী -৩(দশমিনা-গলাচিপা) আসনের নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২



সুকান্তর একটা কবিতা আছে, দুর্মর।
"সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।" মানুষের ভবিষ্যৎ বলা সহজ কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×