somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কোন দিন এমনও হয় ....

০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়া পার হয়ে চানখারপুলে এসে জ্যামে পড়লাম । ভয়াবহ জ্যাম । ডানে বায়ে কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই । লোক মুখে শোনা গেলো সামনে নাকি রাস্তার মাঝখানে একটা ট্রাক আইলেনে ধাক্কা খেয়ে নষ্ট হয়ে গেছে । রাস্তা ক্লিয়ার হতে সময় লাগবে । গাড়ির ড্রাইভাররা এই কথা শুনে ইঞ্জিন বন্ধ করে দিলো ।

দেখতে দেখতে ঘড়ির কাঁটা বারোটা থেকে দেড়টায় । একটু পেছনে তীব্র শব্দে এম্বুলেন্সের সাইরেনটা খুব আকুল হয়ে বাজছে । রোগীর অবস্থা মনে হয় খারাপ । এতোক্ষন একটু ছায়া ছায়া ছিলো , এখন চোখ ঝলসে দেওয়ার মতো প্রখর রোদ । বাংলাদেশে এখন ঋতু হয়ে গেছে একটা ; আজগুবি ঋতু । এ ঋতুতে যখন খুশী রোদ , যখন খুশী বৃষ্টি । রিকশার হুডটা তুলে দেবো কিনা ভাবছি । একটু দ্বিধাদ্বন্দে আছি, কারণ আমার ডানপাশে ঠিক এক রিকশা আগে একজন মায়াবতীর সাথে বেশ কয়েকবার চোখাচোখি হয়েছে । শেষবারে সে একটু অস্পষ্টভাবে হাসলোও যেন । এমন উস্কানিমূলক অবস্থায় রিকশার হুড তুলে দেয়াটা ঠিক নিরাপদ নয় । কারণ কোন এক অদ্ভুত কারনে অনেক মেয়েই রিকশায় হুড তুলে চলা ছেলেদের মেয়েলী স্বভাবের ছেলে ধরে নেয় ।

যাচ্ছি এক বান্ধবীর গায়ে হলুদে । বহু দূরে তার বাসা, জ্যাম না থাকলেও পৌছতে বিকেল হয়ে যেতো । বেলা গড়ানোর সাথে সাথে ক্ষুধা বেড়েই চলেছে । ব্যাগে কখনো সখনো টুকটাক ড্রাই ফুড থাকে । নেড়েচেড়ে দেখলাম । এক বোতল পানি ছাড়া কিছুই নেই । পানিটাই খেলাম একটু ।

......কিছুক্ষনের জন্যে অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম । সংবিৎ ফিরে পেয়ে দেখি ঐ মেয়েটা আরেকজনের সাথে চোখাচোখি করছে । আমার মন বিষন্ন হয় ।

- " বাবা ক্ষুধা লাগছে নাকি তোমার ? "

রিকশার গা ষেঁষে দাড় করানো এক প্রাইভেট কারের জানলা থেকে এক গোলগাল চেহারার মাঝবয়সী মহিলা মুখ বের করে জিজ্ঞেস করেছেন । তার মাঝে মাতৃভাব প্রবল ।

এ ধরনের প্রশ্নে ভদ্রতা দেখিয়ে না করার নিয়ম ।

- " জ্বি লেগেছে । বুঝলেন কিভাবে? "
- " বারবার ব্যাগ কি যেন খুঁজছো দেখে মনে হলো । এই নাও , এইগুলো থাও । "

বলে আমার দিকে এক প্যাকেট বিস্কুট বাড়িয়ে দিলেন । না করলাম না । কিছু মানুষের মমতা ফিরিয়ে দেয়া যায় না । কুটকুট করে খাওয়া শুরু করি ।

বিকেল হয়ে গেলো । কিছুক্ষন আগে থেকে রোগী মারা যাওয়ায় সাইরেন আর বাজছে না । রোদও মরে গেছে । সবাই ক্ষুধার্ত । কিছু খাওয়া দরকার । আশেপাশের দোকান থেকে চাল, ডাল, আনাজ পাতি আনা হলো । আমি সহ আরও কয়েকজন নেমে রিকশা, গাড়ি একটু একটু করে চাপিয়ে রাস্তার মাঝখানে কিছুটা জায়গা ফাঁকা করে ইট দিয়ে চুলো বানালাম । আমাকে বিস্কিট খেতে দেয়া সেই আন্টি কোমড়ে আঁচল বেঁধে রান্নায় নেমে গেলেন । জ্যামের অবস্থা দেখে শুধু দুপুর না , রাতের খাবারও রান্না হলো । খাবারের স্বাদ অমৃতসম ।

রাতে খাওয়ার সময় দেখলাম ঐ ছেলে মেয়ে দুটোর প্রেম হয়ে গেছে । খাওয়া শেষে মেয়েটা লাজুক মুখে তার রিকশা ছেড়ে চলে গেলো ছেলেটার রিকশায় । তাদের মনে মনে আশীর্বাদ করি । জগতের সকল ভালোবাসা সুখি হোক ।

সকাল হলো । রাতে রিকশায় বেকায়দায় ঘুমানোয় সারা শরীর ব্যথা । উঠে রাস্তার পাশের সরকারি কলের পানিতে মুখ ধোয়া শেষে দেখি রাতের উপায়েই নাস্তা হাজির ।

ছুটছে, ছুটবে করেও জ্যাম ছুটলো না । দিন কাটতে লাগলো । কাটতে লাগলো সপ্তাহ, মাস ...

একদিন শুনি মেয়েটা আর ছেলেটার সম্পর্কটা নেই । ভেঙ্গে গেছে । সে আবার ফিরে এলো তার নিজের রিকশায় । চেহারায় মলিনতার ছাপ । মাঝেমাঝে সে পিছু ফিরে এক দৃষ্টে আমার দিকে তাকিয়ে থাকে । আমিও মায়াবতীর চোখে চোখ রাখি । কিন্তু বুকের ভিতরে কিছু অনুভব করি না ।

......আমরা সবাই স্থবির হয়ে দাড়িয়েই আছি । এরই মাঝে বেশ কয়েক বছর সময় কেটে গেছে । যে বান্ধবীর বিয়ে খেতে যাওয়ার কথা ছিলো, সেদিন ফোনে জানালো তার এখন ফুটফুটে একটা বাচ্চা আছে, ক্লাস টুতে পড়ে ।

..... এখানে এখন আর কেউ দিন - তারিখের হিসাব রাখে না । কি লাভ রেখে? রিকশা, গাড়িতে থাকা বাচ্চাদের পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে দেখে আমরা একটা স্কুল খুলেছি কিছুদিন হলো । আমি ওখানে বাংলা পড়াই । আর মেয়েটা গনিত । প্রতিদিন দেখা হয় তার সাথে , কখনো কথা হয় না । নামটাও জানা হয় নি । মায়াবতী তো মায়াবতীই, তার অন্য নামের আবার কি দরকার?

সময় নিস্তরঙ্গ । তবু আজও আমরা অপেক্ষা করি একদিন গাড়ির এ জট ছুটবেই , তখন আমরা যার যার গন্তব্যে পৌছবো । যারা গন্তব্যের ঠিকানা ভুলে গেছে, তারা নতুন গন্তব্য খুঁজে নেবে । নগরীর মাঝে আটকে পড়া আমাদের কথা আর কারো মনে নেই । আমরা সবার মাঝে থেকেও হারিয়ে গেছি ।

সবকিছুর পরেও, এই অন্তহীন স্থবিরতায় বেশ ভালোই আছি আমরা ।

( অনেক আগে একটা ম্যাগাজিনে লেখক শিমু নাসেরের একটা ছোট গল্প পড়েছিলাম । এতদিন পর এখন আর নামটা মনে পড়ছে না । এ লেখাটা সেই লেখার ছায়া অবলম্বনে রচিত )
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:০৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গণপরিষদের সাথে বিএনপির সখ্যতার কারণ কি ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭


বিএনপির নেতাদের সাথে গণপরিষদের নেতাদের ঘন ঘন সাক্ষাতের বিষয়টি মিডিয়াতে প্রচারিত হচ্ছে।বিষয়টি প্রথম আলোচনায় আসে যখন বিএনপি হাই কমান্ড থেকে পটুয়াখালী -৩(দশমিনা-গলাচিপা) আসনের নেতাকর্মীদের কাছে চিঠি দেয়া হয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি অন্ধকার?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫২



সুকান্তর একটা কবিতা আছে, দুর্মর।
"সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়:, জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার, তবু মাথা নোয়াবার নয়।" মানুষের ভবিষ্যৎ বলা সহজ কিন্তু একটি দেশের ভবিষ্যৎ কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২১

যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী ফলাফলে বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা নেই

ট্রাম্প হচ্ছে একজন আপাদমস্তক বিজনেসম্যান। কমলা হ্যা্রিস যেহেতু ইন্ডিয়ান বংশোদ্ভূত তাই ইন্ডিয়ান ভোটার টানার জন্য সে নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে টেনে জাস্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসকন

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৬ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৭


INTERNATIONAL SOCIETY FOR KRISHNA CONSCIOUSNESS যার সংক্ষিপ্ত রূপ হলো ISKCON এর বাংলা অর্থ হল আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ। যে সংঘের ঘোষিত উদ্দেশ্য হল মানুষকে কৃষ্ণভাবনাময় করে তোলার মাধ্যমে পৃথিবীতে প্রকৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×