-হ্যালো স্যার ?
-হুম ।
-কি করেন ?
-কিছুনা ।
-স্যার আপনি কি মিথ্যা কথা বলা পছন্দ করেন ?
-কেন ?
-এমনি । মনে হচ্ছে আপনি এক্ষণ মিথ্যা বলতে চাইছেন ।
-না চাইছি না ।
-কি চাইছেন ??
-কিছু চাইছি না ।
-এইযে মিথ্যা বললেন । আপনি এখন কিছু একটা চাইছেন ।
বলব কই চাইছেন ?
-কি ?
-চাইছেন , আমি আপনাকে উল্টা পাল্টা টাইমে ফোন না দেই । উল্টা পাল্টা প্রশ্ন না করি । আমি রাইট ?
-জানিনা ।
-উঁহু ! আপনি জানেন । না জানলে তো আপনি স্যারই না ।
না জানলে আমি আপনার কাছে পড়তাম না । আপনি কই চান আমি না পড়ি আর আপনার কাছে ??
বিপদ দেখা যায় ! আরমান মাঝে মাঝে ভেবে পায় না , এই মেয়ের কথার কি উত্তর দেবে । উত্তর গুলো আসলে কেমন হওয়া উচিত - তার মাথায় আসেনা । মাথায় হয়তো যখন আসে তখন সেখানে আরশী নেই !
এটা অবশ্য ওর জন্মগত প্রবলেম । জানে না এর কোন সমাধান আছে কিনা । যেকোন তীর্যক কথার উত্তর তার মাঠায় আসে দেড় দুই ঘন্টা পরে - যখন সেটার আর দরকার নেই ।
এই যেমন এখন কিছু মাথায় আসছে না । মাথায় আসছে না , প্রাইভেট টা হারালে কি হবে ?!
এই একটা মাত্র প্রাইভেটের বেতনটার উপর তার সব প্রতীক্ষা নিয়ে তাকিয়ে থাকতে হয় - সারাটা মাস । ওতে মিশে থাকে হরেক প্রয়োজন , আর সামান্য কিছু অভ্যেশ কিঞ্চিত আহ্লাদ কিংবা অভিলাস !
এটা হাতছাড়া করা যাবে না !
-স্যার ?? চুপ কেন , কি ভাবেন ??
-কিছুনা ।
-আমি জানি কি ভাবেন । বলব ?
-কি ?
-প্রাইভেটটা কিভাবে টেকানো যায় । আচ্ছা , আপনি কি করেন এখন ?
-সবই তো জান । এটাও আন্দাজ করে নাও না !
-আমি আন্দাজ করতে পারি না । আপনিকি বসে আছেন জানালার পাশে ??
-হুম !
-কি করেন , বৃষ্টি দেখেন ??
-না
-কেন না ?? বাইরের আবহাওয়াটা কি সুন্দর দেখেছেন ? আজকের বৃষ্টিটাও সুন্দর ! এই সময়ের বৃষ্টিগুলো অনেক সুন্দর হয় । দেখেন আকাশটা ! ওটা কেমন হাসছে মেঘের আড়াল থেকে ! দেখেন না !!
আরমান জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো । রুমঝুম ঝরে চলেছে অনবরত । আকাশ দেখতে ওর খারাপ লাগে না । অনেক গুলো রাত জীবনে রাতের আখাশ দেখে কাটিয়েছে । ওখানে কে যেন আছে - যার কাছে সান্তনা আছে । যার কাছে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় !
কিন্তু এমুহূর্তে সে আকাশ দেখছে না । তার হাতের বিয়ের কার্ডটা দেখছে । কার্ডটা সুন্দর ! একটু বেশি সুন্দর । ঠিক তেমন সুন্দর , যে সুন্দরটা আসলে সহ্য করা যায় না ! ঠিক এমন সুন্দর , যে সুন্দর বুকে হাহাকারের মাতম তোলে !
যেমনেখন তুলছে ! বাইরের একটানা বর্ষনের মতোই একটানা মাতম তুলে চলেছে তার হৃৎপিন্ডে ! মাতমের উৎস ঠিক তার হাতের কার্ড টা না । মাতমের উৎস কার্ডটা যার বিয়ের সে ! সেই মেয়েটা !
দুদিন বাদে সে কোন হাইপ্রোফাইল টাকমাথা ছেলের ঘর আলো করবে । হয়তো সে আরমানের চেয়ে দেখতে ভালো না ... হয়তো সে আরমানের মত খলা আকাশ দেখে না ... কিন্তু, যেটা দেখে সেটার নাম টাকা ! ওতে অনেক কিছুই হয় !
আবার না দেখতে পেলে অনেক কিছুই হয় না । এই যেমন , সমবয়সী কোন লাস্যময়ীর হৃদয়ে ছাপ ফেললেও তার মনের দুয়ার খোলার চাবি মেলে না ! যেমন মিলল না আরমানের !
হয়তো এক বিশাল খোলা আকাশ ছিল আফরিনের জন্য ! কিন্তু , ছিল
না সেই আকাশে বাড়ি বানাবার ক্ষমতাটাই !
আরেকবার , জানলা দিয়ে বাইরে তাকায় আরমান । নাহ , কই আরশী তো ভুল বলেছে । আকাশটাতো হাসছে না , তার আকাশটা কানছে ! সে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ...
-স্যার ?? আপনি কোথায় চলে যান একটু পরপর ?? স্যার !!
-হুমম !!
-আপনি একটু বাসায় আসবেন ??
- কি ? এখন ??
-আজতো আসার কথা না ।
-জানি ,তারপরও ! স্যার প্লীজ আসেন না !
-এই বৃষ্টিতে ?
-আরে ধ্যাৎ ! কিছু হবে না ! ছাতা নিয়ে চলে আসেন । না থাকলে ভিজে আসেন ! দেখি ভেজা অবস্থায় কেমন লাগে আপনাকে !
-তুমি ফাজলামো করছ , এখন ঠিক ফাজলামোর মুডে নেই আমি !
- যে মুডেই থাকেন । আসতে বলেছি , আসেন ! প্লীজ স্যার , এখন না আসলে আপনাকে আর আসতে হবে না !
আর হ্যাঁ , আপনার অফ মুডের কারনটাও নিয়ে আসবেন কিন্তু , মনে থাকে যেন !
::::::::::::::::::::::::::: ___ :::::::::::::::::::::::::::
আরমান বসে আছে আরশীর পড়ার টেবিলে । টেবিলের উপর বিয়ের কার্ডটা পড়ে আছে । আরশী সেটা নিয়ে নাড়াচাড়া করছে ।
সে বিব্রত বোধ করছে । আবার কখন কোন বিব্রতকর প্রশ্ন শুরু কয়রে দেয় মেয়েটা !
অবশেষে সে কথা বলে উঠল !
-স্যার !
-হুম ?
-একটা প্রশ্ন করব ??
এই বুঝি শুরু হল !!
-কি প্রশ্ন
-আপনি প্যাণ্ট ওরকম ভাজ করে রাখেন কেন ?
জিন্স ভাজ দিলে খারাপ লাগে দেখতে ।
-ভাজ না করলে কাদা লাগে ।
-একটু কাদা মাঝে মাঝে লাগাতে হওয় জানেন না ?
-আমি কম জানি
-উঁহু ! আপনি কম জানেন না । জানলে কি আমার টিচার হতেন ?? মোটেও না !
-একটা কথা বলি ?
-কেন না ?
-তুমি কি এসব অনর্থক কথা বলার জন্য এই বৃষ্টিতে বের করে এনেছ আমাকে ?
-আপনি যদি ভাবেন অনর্থক তবে অনর্থক ! আচ্ছা স্যার এই অনুষ্ঠানে আপনি কি পরে যাবেন ? পাঞ্জাবি ??
-জানিনা ?
-আপনার পাঞ্জাবি আছে তো ? তাহলে কখনো পড়েন না কেন ??
-আমি এটায় যাবো না । ওটা মেসের পাশের ড্রেনে ফেলে দেব !
-উঁহু!! তা হচ্ছে না ! এটায় আপনি যাচ্ছেন ফর শিওর !!
-হয়তো !
-আচ্ছা , আপনি সব সময় দ্বন্দে ভোগেন কেন ??
-জানিনা
-দ্বন্দে ভুগবেন না !
-আচ্ছা ।
-স্যার দেখেন বৃষ্টি থেমে গেছে ! চলেন বেরোই ।
-বেরোই মানে ?!
-মানে বাইরে যাবো চলেন ।
-কোথায় যাবো ?!?
-আমি যেখানে যাবো সেখানেই আপনাকে যেতেই হবে , চলেন ।
-না বললে আমি যেতে পারব না ।
-মার্কেটে যাবো !
-কি ! মার্কেটে মানে ?
-কাজ আছে । পাঞ্জাবি কিনবো ।
-আমার পাঞ্জাবি লাগবেনা !
-কিন্তু আমার লাগবে । চলেন । ওঠেন বলছি !!
কি বিপদ ! এই মেয়ের মত একরোখা মেয়ে সে জীবনে দেখেনি । আর কেন যেন ওর মুখের ওপর কোনবারই না করা যায় না । বলেছে যখন যেতেই হবে ।
-আচ্ছা স্যার নীল হলে কেমন হয় ??
-কি জানি
-আপনার গাঢ় নীলের সাথে আমিও নীল পড়ব ! ভালো লাগবে না ?
-তুমি নীল পড়বে মানে ?!?
-মানে আমিও আপনার সাথে যাব ওখানে । আপনি চান বা না চান ! লালের
ছড়াছড়ির মাঝে যেন দুটো নীল পদ্ম ! - হি হি হি
আরমান আসশীর চোখের চোখ রাখে । কেন যেন কালো চোখের মনিদুটো নীলচে লাগছে !
আবার আকাশটাকে দেখার চেষ্টা করে , কিন্তু কই এ আকাশটাকে তো সে আগে দেখেনি !! কেমন যেন রহস্যময় গভীর নীলের সাগর ! ওই সুগভির নীলের চাদরে কে যেন লুকিয়ে মুখটিপে হাসছে , সে দেখতে পাচ্ছে না ......
হঠাৎ করেই যেন অচেনা নতুন এই নিলাকাশটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে ...
... একটু বেশিই সুন্দর ..