মা দিবসের প্রতিজ্ঞাঃ আসুন মা কে খুশি করার জন্য দিনে অন্তত একটি ভালো কাজ করি।
ফেসবুকে ইভেন্ট জয়েন্ট করতে পারেন
প্রতি বছর মে মাসের ২য় রবি বার পালিত হয় "মা দিবস"। ১১ মে, রবিবার "মা" দিবস।
নাড়ীর বন্ধনে যার সাথে আমার অস্তিত্ব একাকার হয়ে আছে তিনি আমার মা। আমার এ শরীরের রক্ত প্রবাহে যার নির্ঘাত সঞ্চালনা বিদ্যমান তিনি আমার মা। মাকে নিয়ে লেখার কি শেষ নামানো সম্ভব ? মা প্রত্যেকের কাছে দুনিয়ার সবকিছুর চাইতে প্রিয়। মা প্রত্যেকের কাছে পৃথিবীর অবধারিত অস্তিত্ব। কিন্তু কষ্ট পাই এই মাকে যখন বৃদ্ধাশ্রমে দেখতে যাওয়ার খবর শুনি অথচ মাকে নিজের সাথে রাখার অর্থনৈতিক সামর্থ্য সন্তানদের রয়েছে। এটা মায়ের অতুলনীয় ভালোবাসার সাথে নির্মম বিশ্বাসঘাতকতা। এটা নিজের অস্তিত্বের সাথে চরম দুঃখজনক ও আত্মঘাতী আচরণ। পৃথিবীর সব ভালোবাসা, সব স্নেহ-মমতা জড়ো করে কোটি কোটি গুণ বৃদ্ধি করলেও মায়ের সিন্ধুসম ভালোবাসার এক ফোঁটা পানির সমান হওয়া অসম্ভব। সেই মা যখন সন্তান কর্তৃক নিগৃহীত, বঞ্চিত ও অত্যাচারিত হয় তখন সৃষ্টিকর্তার আরশ সঙ্গত কারণেই প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
প্রত্যেক মা তার সন্তানের কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মমতাময়ীদের অন্যতম। দুনিয়ার সবকিছু ভেজালে ছেয়ে গেলেও মায়ের ভালোবাসায় কোন রকম মেকি কিংবা ভেজালের বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের পক্ষ থেকেই মাতৃত্বের মহান সত্ত্বাকে এভাবেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এজন্য মাকে পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ স্বর্গীয় উপহার হিসেবে গণ্য করা হয়। মায়ের সান্নিধ্য দুনিয়ার তাবৎ অশান্তি ও অনিরাপত্তার আবহ দূর করে জান্নাতী প্রশান্তি এনে দেয়। মায়ের স্নেহ পার্থিব সব অমঙ্গল থেকে সন্তানকে আগলে রাখে। সন্তানের জন্য ত্যাগ স্বীকারের ক্ষেত্রে মায়ের যে অবিসম্বাদিত ভূমিকা তা কোন পাল্লায় ওজন করা যায় না। এমন ঘটনাও আছে যে, মায়ের এক চক্ষু কানা থাকার কারণে বাহ্যত তাকে অসুন্দর দেখা যাওয়ায় কোন কোন সন্তান হীনমন্যতায় ভোগেন কিংবা কোন কোন পরিবেশে মায়ের পরিচয় দিতে ইতস্তত বোধ করেন। অথচ শৈশবের বেপরোয়া দুষ্টুমিতে চোখ হারানো ঐ সন্তান মায়ের দেয়া চোখ প্রতিস্থাপনের মাধ্যমেই বিশ্ব দেখছেন। মায়ের এ আত্মত্যাগের ঋণ কিছুতেই পরিশোধ হবার নয়। তদুপরি মাকে এ ব্যাপারে অমর্যাদার চোখে দেখা, কষ্ট দেয়া কিংবা তাঁকে উপযুক্ত অধিকার বঞ্চিত করা অক্ষমার্হ অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
মায়ের ঋণ কি কখনই পরিশোধ করা সম্ভব ? শিশু অবস্থায় কত শীতার্ত রাতে নিজের অজান্তে মায়ের কাপড় ভিজিয়ে দিয়েছি অথচ মা মোটেও রাগ করেননি বরং ঘুমের ঘোরে যদি আমার বিছানা বদলাতে দেরি হয়েছে, তাহলে মা চোখের পানি ফেলেছেন এই ভেবে যে, না জানি তার কলিজার টুকরা কখন থেকে প্রস্রবের ভেজা কাপড়ে শুয়ে আছে, না জানি ঠাণ্ডা লেগে যায়। দুর্গন্ধময় ঘৃণ্য বস্তু মায়ের পরিচ্ছন্ন শুভ্র কাপড়ে মাখিয়ে দিয়েছি হয়ত কোন অনুষ্ঠানে, অনেকের সম্মুখে অথচ মা মোটেও ঘৃণা বোধ করেননি। শৈশবের বেপরোয়া দুষ্টুমিতে মাকে সীমাহীন যন্ত্রণা দিয়েছি অথচ মা যন্ত্রণা বোধ করেননি। সুলভ-দুর্লভ জিনিসের জন্য কত রকম আবদার মায়ের কাছে করেছি অথচ মা বিরক্ত বোধ করেননি। বরং সাধ্যের সর্বশেষ প্রান্ত পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন সেই জিনিসটি আমার জন্য সংগ্রহ করতে। কত দরিদ্র মা সন্তানের মুখে এক মুঠো আহার তুলে দিতে সীমাহীন পরিশ্রম করেছেন অথচ নিজে অনাহারে থেকেছেন। এ ঋণ কি কোনদিন শোধ করা যায় ? ঐ যে বলা হয়, ‘মায়ের এক ধার দুধের দাম, কাটিয়া গায়ের চাম, পাপোশ বানালেও ঋণের শোধ হবে না’ - একদম যথার্থ অভিব্যক্তি।
যাদের মা বেঁচে আছেন তাদের কাছে মায়ের অনুভূতি যত বাস্তব ও প্রাণবন্ত, যাদের মা বেঁচে নেই তাদের কাছে তা আরো গভীর। অবশ্য এ কথা ঠিক যে, মা সমগ্র বিশ্বের মধ্যে সৌভাগ্যের প্রতীক। যিনি মাকে সঙ্গে নিয়ে বসবাস করছেন তিনি অবশ্যই পরম সৌভাগ্যবান।
আসুন মা'কে ভালোবেসে আমরা শপথ করি, "মা কে খুশি করার জন্য দিনে অন্তত একটি ভালো