ধর্ষণ! ধর্ষণ!! ধর্ষণ!!! চারিদিকে শুধু ধর্ষণ। সর্বশেষ জম্মুর কাঠূয়ার ঘটনা সবাইকে নাড়িয়ে দিয়েছে। বাখরওয়াল সম্প্রদায়ের ছোট্ট শিশু আসিফা বানো বয়স মাত্র ৮। প্রতিদিনের মতো ঘোড়াকে ঘাস খাওয়াতে জঙ্গলে নিয়ে গিয়েছিল আট বছরের মেয়ে আসিফা। তার আর বাড়ি ফেরা হয়নি। যাযাবর বাখরওয়াল উপজাতির এই নাবালিকাকে এক সপ্তাহ ধরে গণধর্ষণ করে দুষ্কৃতীরা। তারপর না খাইয়ে ধর্মস্থানে আটকে রাখে। এখানেই শেষ নয়। বেহুঁশ করে খুন করার আগে আবারো ধর্ষণ করা হয় মেয়েটিকে। ১৭ জানুয়ারি জম্মু কাশ্মীরের কাঠুয়া জেলায় আসিফার দেহ উদ্ধার হয়েছে।
আসিফা জম্মুর বাখারওয়াল মুসলিম উপজাতি পরিবারের সদস্য। বহুদিন ধরেই ওই উপজাতি গোষ্ঠীকে ওই অঞ্চল থেকে উৎখাতের চেষ্টা করা হচ্ছে এবং ঐ উপজাতিদের শিক্ষা দিতে ওদের মনে ভয় ঢোকাতে এই ঘটনা ঘটানো হয় বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। আসিফাকে যে মন্দিরে বেঁধে রেখে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে ধর্ষণ করা হয় এমনকি সেই মন্দিরেই নাকি পূজাঅর্চনা করা হয় ধর্ষণের সাথে সাথে যেন বাখারওয়াল উপজাতি সেই অঞ্চল থেকে চলে যায় সেই কামনা করে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার হলো পিতা-পুত্র একসংগে পালা করে আট বছরের এই শিশুটিকে ধর্ষণ করে। আরো বিস্ময়কর ব্যাপার হলো অভিযুক্তদের একজন তার বন্ধুকে ধর্ষণ করার আমন্ত্রণ জানায় এবং সেই বন্ধু সুদূর উত্তরপ্রদেশের মীরাট থেকে আসিফাকে ধর্ষণ করতে আসে। কি নির্মম শুধুমাত্র ৮ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ করার জন্য সে এই সুদূর পথ পাড়ি দিয়ে জম্মুতে আসে। অসংখ্যবার ধর্ষণের পর যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আসিফাকে মারা হবে তখন হাতে পাথর তুলে নিয়েও থমকে যায় এক অভিযুক্ত কারণ শেষবারের মত আর একবার ধর্ষণ করার জন্য। পাথর নামিয়ে রেখে শেষবারের মত ধর্ষণ করে গলায় কামিজের ফিতে দিয়ে শ্বাসরোধ করে পাথর দিয়ে মুখ থেঁতলে খুন করা হয় ৮ বছরের ছোট্র শিশু আসিফাকে।
এতো কিছু ঘটনার পরও পুলিশ প্রথমে কোনো অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে কারণ ধর্ষনে যুক্ত ছিল দীপক খাজুরিয়া নামের স্পেশাল পুলিশে একজন অফিসার। অতঃপর নিজ বিবেকের তাড়নায় পুলিশের একজন অফিসার R K Jalla নিজের কর্মদক্ষতায় সব বাধা দূর করে অপরাধীদের ধরা শুরু করেন।আর তখনই শুরু হয় ধর্ষকদের সমর্থনে জাতীয় পতাকা হাতে ‘জয় শ্রী রাম’ শ্লোগানে এই মিছিলে অংশগ্রহন করেন জম্মু ও কাশ্মীর সরকারের দুই বিজেপি মন্ত্রী চৌধুরী লাল সিং এবং চান্দের প্রকাশ গঙ্গা। ধর্ষকদের বিরুদ্ধে চার্জশীট ফাইল করতে আইনজীবীরা পুলিশকে বাধা দেন এবং কোর্ট চত্বরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এবং চার্জশীট পেশ করতে পুলিশকে ১ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়। এমনকি ক্রমাগত হুমকি দেওয়া হচ্ছে কাঠুয়া গণধর্ষণকাণ্ডে আট বছরের শিশুর পরিবারের পাশে থাকা আইনজীবী দীপিকা সিং রাজাওয়াতকে। নিজের সহকর্মীদের কাছ থেকেই হুমকি পেয়েছেন এবং জম্মু বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বিএস সালাথিয়া তাকে লাগাতার হুমকি দিয়ে চলেছেন। এই ঘটনা সামনে আসার পর বিভিন্ন স্যোসাল মিডিয়াতে ঝাঁপিয়ে পড়ে উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের আই টি সেল। তারা প্রচার করতে থাকে আসিফা মারা গৌরবের কাজ কারণ আসিফা ভবিষ্যতের জঙ্গি। পক্ষান্তরে সমগ্র ভারতবাসী ক্ষোভে ফেটে পরে আসিফার পক্ষে কারণ মানবতা এখনো মরেনি, মরেনি মানুষের ভালোবাসা শুধু কিছু উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠী বাদে।
(ধর্ষণকারীদের দুজন)
এই পাষন্ডদের শাস্তি হয়তো হবে কিন্তু কোনও শাস্তিই এদের জন্য পর্যাপ্ত নয়।
এ রকমই যদি হতো আসিফা বানুর বিচার।
ছবি নেট থেকে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ২:০৩