অসুস্থ সন্তানের কারণে থেকে বিতাড়ন প্রক্রিয়া এক সপ্তাহের জন্য স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশি এক দম্পতির। মিশিগান অঙ্গরাজ্যের ডেট্রয়েট নগরীতে গত মঙ্গলবার বাংলাদেশি এ পরিবার নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে। সহানুভূতিশীল জনতার প্রতিবাদের মুখে অভিবাসন বিভাগের তাত্ক্ষণিক বিতাড়ন প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে পরিবারটি।
দীর্ঘ দিন থেকে বৈধ অভিবাসনপত্র ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন বাংলাদেশি আব্দুল আহাদ ও তাঁর স্ত্রী মুমতাহিনা চৌধুরী। যুক্তরাষ্ট্রে জন্ম হয়েছে তাঁদের তিন সন্তানের। জন্মগতভাবেই এসব সন্তান যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আব্দুল আহাদ এখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছিলেন। তাঁর আইনজীবী সঠিকভাবে আশ্রয়ের আবেদন না করায় অভিবাসন বিভাগ আব্দুল আহাদকে বিতাড়নের নির্দেশ দেয়। ডেট্রয়েট অভিবাসন আদালত গত মঙ্গলবার তাত্ক্ষণিকভাবে আব্দুল আহাদকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী বিমানের ওয়ান-ওয়ে টিকিটও তৈরি রাখা হয়। আব্দুল আহাদের তিন সন্তানের মধ্যে একজনের জন্মগত জটিল ব্যাধি রয়েছে; নিয়মিত রক্ত পরিশোধন করতে হয় স্থানীয় হাসপাতালে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশের বিরোধিতা করে আব্দুল আহাদ ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের সামনে চিত্কার করে বলতে থাকেন, ‘আমাকে গুলি করে মেরে ফেল, বাংলাদেশে গেলে আমার সন্তানের চিকিত্সা হবে না। আমার সন্তান মারা যাবে বিনা চিকিত্সায়।’ এ সময় আব্দুল আহাদের স্ত্রী মুমতাহিনা চৌধুরীও একইভাবে বিলাপ করতে থাকেন। তাঁদের চিত্কারে শত শত প্রবাসী বাংলাদেশি জড়ো হয় অভিবাসন বিভাগসংলগ্ন সড়কপথে। তাদের সঙ্গে বেশ কিছু এ দেশীয় সহানুভূতিশীল লোকজন জড়ো হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে। অভিবাসন বিভাগের আব্দুল আহাদকে অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশের পর তাঁকে বাংলাদেশমুখী ফ্লাইটে উঠিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। অসুস্থ সন্তানের চিকিত্সার আয়োজন সম্পন্ন করার জন্য মুমতাহিনা চৌধুরীকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়।
অভিবাসন বিভাগের এমন নিষ্ঠুর আদেশে সমবেত লোকজন বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। লোকজন চিত্কার করে বলতে থাকে, অভিবাসনের কারণে অসুস্থ শিশু বিনা চিকিত্সায় মারা যাবে—এমন অমানবিক সিদ্ধান্ত কোনো আইনের আওতায় পড়ে না। জনক্ষোভ বিবেচনা করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অভিবাসন বিভাগ তাদের আদেশ সংশোধনে বাধ্য হয়। নতুন সিদ্ধান্তে আব্দুল আহাদ ও তাঁর স্ত্রী মুমতাহিনা সবকিছু গোছানোর জন্য এক সপ্তাহের সময় পেয়েছেন। বিষয়টিকে মানবতার পক্ষে জনতার জয় হিসেবে দেখছেন আব্দুল আহাদের মার্কিন আইনজীবী কারিডেড কারডিন্যাল। আইনজীবী জানিয়েছেন, এ সময়সীমার মধ্যেই তাঁরা উচ্চ আদালতে যাবেন। আব্দুল আহাদের বিতাড়ন প্রক্রিয়া স্থায়ীভাবে স্থগিত বা প্রলম্বিত করার ব্যাপারে তিনি আশাবাদী।
তাত্ক্ষণিক বিতাড়ন প্রক্রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার পর স্ত্রী ও দুই সন্তানকে জড়িয়ে কাঁদতে থাকেন আব্দুল আহাদ। আহাদ দম্পতির বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটে।
Click This Link