somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সক্রেটিস - পর্ব ১

০১ লা জুন, ২০১২ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


শায়মা আপিকে কথা দিয়েছিলাম, আমি সক্রেটিস নিয়ে লিখবো। সেই কথা রাখতেই এই লেখা শুরু করা। কিন্তু ভাবছি, কোথা থেকে শুরু করি। কতটুকুই বা জানি আমি সক্রেটিস সম্পর্কে?

তাঁর সম্পর্কে আমরা যে খুব বেশি জানি, একথা বলা যায় না। আবার কিছুই জানি না সে কথাও বলা যায় না। রার্টেন্ড রাসেল বলেছেন, 'সক্রেটিস সম্বন্ধে আমাদের কম জানা আছে, না বেশি জানা আছে, সেটা স্থির করাই মুশকিল'।

এবার তাঁর সম্বন্ধে প্রাথমিক কিছু ধারণা নেয়া যাক-

জম্ম এথেন্সে ৪৬৯ খ্রিস্টপূর্ব সালে। তাঁর বাবার নাম সফ্রোনিসকস (Sophroniscus)। তিনি ছিলেন এ্যালোপেকি গোষ্ঠীর লোক। এটি এথেন্সের দশটি প্রধান গোষ্ঠীর একটি। সক্রেটিস পরিবার ডেইডালস থেকে নিজেদের বংশক্রম গনণা করতো। এ থেকে বোঝা যায় পরিবারটি বনেদি। যতটুকু জানা যায় তার বাবা ছিলেন একজন ভাস্কর। সক্রেটিস নিজেও তাঁর যৌবনকালে ভাস্কর্যকেই জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।

সক্রেটিসের মায়ের নাম ফেনারিটি (Phaenarete)। পেশায় তিনি ধাত্রী ছিলেন। প্যাট্রোক্রিস নামে অন্য স্বামীর ঔরসজাত তার এক পুত্র ছিলো। পরবর্তী জীবনে সক্রেটিস তার মায়ের পেশার তুলনা দিতে পছন্দ করতেন, বলতেন, তিনিও তার মায়ের মতো ধাত্রীর কাজই করে থাকেন। তবে তাঁর মা মানব-শিশু প্রসবে সহায়তা করতেন, তিনি সহায়তা করে থাকেন চিন্তা-ভাবনা প্রসবের বেলায়।

তার স্ত্রীর নাম ছিলো জানথিপি (Xanthippe)। তিনি বয়সে সক্রেটিসের চেয়ে অনেক ছোট ছিলেন। জানথিপি ঝগড়াটে ছিলেন বলে প্রচলিত আছে।তবে প্লেটোর রচনায় এর কোনো প্রমান মিলেনা। এমন উক্তিও প্রচলিত আছে- 'আপনার স্ত্রী যদি সুস্বভাবের হয়, আপনার দাম্পত্য জীবন হবে সুন্দর। আর যদি ঝগড়াটে হয়, তবে আপনি দার্শনিক হবেন।' এই উক্তি কে কবে করেছেন তা জানা না গেলেও সক্রেটিস এর জীবন কে মডেল করেই যে এ উক্তি গড়ে উঠেছে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়।

তাঁদের তিন সন্তানঃ ল্যাম্প্রোক্লিস (Lamprocles), সফ্রোনিসকস (Sophroniscus), মিনিক্সিনস (Menexenus)। সত্তুর বছর বয়সে সক্রেটিসের মৃত্যূদন্ড কার্যকর করা হয়, তখন তাঁর বড়ো ছেলেটি বালক মাত্র, অন্য দুটি নিতান্তই শিশু, ছোট ছেলেটা বলতে গেলে সদ্যোজাত।

সক্রেটিস কে হেমলক বিষপানে মৃত্যূদন্ড দেওয়া হয়েছিল ৩৯৯ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। তখন তার বয়স ৭০ এর কিছু বেশি। এইসব তথ্য থেকে তাঁর বাল্য ও কৈশোর কাল সম্পর্কে কিছুই জানা যায় না, জানা যায় না কিভাবে তার জীবিকা নির্বাহ হতো, তার প্রকৃত পেশা কি ছিলো?

সক্রেটিস সম্পর্কে জানার উপায় তিনটি।
১. প্লেটোর (Plato) 'ডায়ালোগ সমূহ'
২. জেনোফনের (Xenophon) 'ডায়ালোগ'
৩. এ্যারিস্টোফেনিসের (Aristophanes) নাটক 'দি ক্লাউডস' (The Clouds)(এটি সক্রেটিসের উপর একটি ব্যাঙ্গোচিত্র)।

পরবর্তী সময়ে এরিস্টটলের রচনায় সক্রেটিসের দর্শন সম্বন্ধে কিছু আলোচনা আছে। কিন্তু তিনি জম্মগ্রহণ করেন সক্রেটিস মারা যাওয়ার পনেরো বছর পর। তাই ব্যাক্তি সক্রেটিস সম্পর্কে জানার উপায় কেবল প্লেটোর রচনাগুলো আর জেনোফনের রচনার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এরা দুজনেই সক্রেটিসের শিষ্য ছিলেন। কিন্তু মুশকিল হচ্ছে এদের দু'জনের সক্রেটিস আবার এক রকম নয়। তবু সক্রেটিস সম্পর্কে যে চিত্রটি এদের লেখা থেকে জানা যায় তা অনেকটা এরকম হবে বৈকিঃ

১। তিনি মোটেও সুদর্শন ছিলেন না। খানিকটা বেঁটেও ছিলেন। তার চোখ ছিল ছোট ছোট। হাটতেন হাসের মতো থপথপ করে। (এই নিয়ে পড়ে আরো লেখা হবে।)
২। জীবন ধারনের জন্য তাঁকে তেমন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ হতে দেখা যায় না। আবার একথাও ঠিক সারাজীবন তাঁকে দারিদ্রের সীমানা ঘেষে চলতে হয়েছে।
৩। পোষাক পড়তেন খুবই সাধারণ। মোটা খসখসে কর্কশ ছিলো তাঁর জামা কাপড় আর সে সব পড়ার মধ্যেও ছিরিছাঁদ বলতে কিছু ছিলো না।
৪। খালি পায়ে থাকতেন সবসময়। শীতে-গ্রীষ্মে, এমন কি বরফের উপর দিয়েও তিনি অবলীলাক্রমে খালি পায়ে চলাফেরা করতেন।
(এই ব্যাপারটায় হুমায়ূন আহমেদের হিমুর সাথে মিল আছে। ঢাকা শহরের মতো শহরে সে খালি পায়ে হেঁটে বেড়ায়। জানি না, সক্রেটিস থেকেই এই ধারণা তিনি নিয়েছেন কিনা?)
৫। তাঁর কষ্টসহিষ্ণুতা ছিলো প্রবাদ কাহিনীর মতো আর সাহস ছিলো সীমাহীন।
৬। এককথায় তিনি ছিলেন জিতেন্দ্রিয় মুক্ত পুরুষ। বুদ্ধি ছাড়া অন্য কোনো বৃত্তির বশ্যতা স্বীকার করেন নি কখনো।
৭। তাঁর দেশপ্রেম প্রবাদ প্রতিম।
৮। জ্ঞান অর্জনের একান্ত নিজস্ব পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। তেমন কিছু না শুধু প্রশ্ন করা এবং এর থেকে উত্তর খুঁজে নেয়া।


পাঠক ক্ষমা চাচ্ছি। একবারে বেশি লেখার অভ্যাস আমার না থাকায় আর লিখতে মন চাচ্ছে না। এই লেখা চলতে থাকবে। আমি চেষ্টা করবো একজন সক্রেটিস কে খুঁজে বের করার যিনি সেই সময়ে খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন যুবকদের মাঝে। তারপর আজ অবধি এই আড়াই হাজার বছর পরেও কেন লোকজন তাকে স্মরন করেন।

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১২ রাত ১০:৩৭
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×