somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময় পূরন

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের আগের দিন। স্থান সুন্দরবন হোটেলের সামনের রাস্তা। ফুটপাতের ওপর পাশাপাশি তিনটি ঘড়ির দোকান। এর একটির মালিক সোলায়মান মিয়া। দুপুর থেকেই বিক্রি মোটামুটি বেশ ভাল। বিক্রি ভাল দেখে ঘড়ির দামও কম রাখছে সোলায়মান। অন্য সময় যে ঘড়ির দাম ৩০০ এর নীচে বলে না, সেগুলো আজ বিক্রি করছে ২৫০ টাকায়। তার কেনা পড়ে ঘড়ি প্রতি ১২০-১৫০ টাকা। বাকি পুরোটাই লাভ। অল্পবয়স্ক কলেজ-ভার্সিটির ছেলেগুলোই তার প্রধান কাস্টমার। মেয়েদের ঘড়িও ভাল বিক্রি হচ্ছে। ছেলেগুলো বাড়িতে ছোটবোনের জন্যে বা হয়ত প্রেমিকার জন্যে ঘড়ি কিনছে।



এক ছেলে অনেকক্ষণ ধরে দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে ঘড়িগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে। ভিড় একটু কমে গেলে সোলায়মান বলে,'ভাই, ঘড়ি কোনটা নিবেন?' ছেলেটা ইতস্তত করে একটি ঘড়ির দিকে আঙ্গুল তুলে দেখালো। গোলাকৃতির একটি ঘড়ি। সোলায়মান এগিয়ে দিল ঘড়িটি,'নেন ভাই, দেখেন।'
'কত দাম?'
একদাম ৩০০, সোলায়মান জবাব দেয়।
২০০ টাকায় দেয়া যায় ?
না ভাই, এইগুলা দেখেন, ২৫০ টাকা করে। ভাল ঘড়ি। এক বছরেও কিছু হইবো না।
না এইগুলা না, আমার ওইটাই লাগবে। দেবেন ভাই ২০০ টাকায় ?
ভাই, ঘড়ি বিক্রি করতেই বসছি। ওই ঘড়িটা আমার কেনাই আছে ২৮০ টাকা। ২০ টাকা লাভ না করলে খাবো কী বলেন?
ছেলেটা কিছু বললো না। ঘড়িটা হাত থেকে নামিয়ে রাখলো আস্তে। দোকান থেকে একটু পেছনে গেল। সোলায়মানও অন্য কাস্টমারদের ঘড়ি দেখানো নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। এক কাস্টমার নিয়ে বসে থাকলে হবে ?
ভিড় একটু কমে গেলে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো, ভাই নিলেন না ?
ছেলেটা কাছে এসে আস্তে বলল,'আমার কাছে এই ২০০ টাকা ছাড়া আর কোন টাকা নাই'
সোলায়মান কিছু বলল না।

সোলায়মান বুঝতে পারছে, ছেলেটার ঘড়িটা খুব দরকার। এই ঘড়ির জন্যেই শেষের চাকরির পরীক্ষাটা সময়মত শেষ করতে পারেনি সে। যখনই এনালিটিকাল পার্ট শেষ করে ম্যাথ পার্টটুকু ধরবে, তখনই শুনলো এক্সামিনার বলছে, আর ৫ মিনিট বাকী! ৩০ টা অংক সে সবগুলোই পারবে, কিন্তু ৫ মিনিটে কীভাবে পারবে ? দুঃখে, রাগে তার চোখে পানি চলে এসেছিলো। সে আর অংকগুলো করেইনি। কী লাভ করে ? কয়টাই বা করতে পারবে ৫ মিনিটে।

তাই ২০০টাকা পকেটে নিয়ে সে সুন্দরবন হোটেলের সামনে এসেছে। সে জানে এখানে ফুটপাতে কমদামে ঘড়ি পাওয়া যায়। কিন্তু কম আর কই? ২০০টাকায় তো হচ্ছে না।

সোলায়মান সব বুঝতে পারছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ছেলেটাকে ডাকলো সে।
নেন আপনার ঘড়ি।
ছেলেটা বললো, ২০০ টাকার বেশি নাই আমার কাছে সত্যি।
সোলায়মান বললো, ২০০ টাকাই দেন। কী আর করা। মাঝে মাঝে লস দিয়া বেচন লাগে।
ছেলেটা হাসিমুখে পকেট থেকে দুইটা ১০০ টাকার নোট বের করে এগিয়ে দিল। সোলায়মান বলল,'হাতে দিয়া দেখেন বেল্ট বড়-ছোট হয় কিনা, ঠিক করে দেব'। ছেলেটা ঘড়ি হাতে দিলো।

ছেলেটা দেখলো সে অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হাতের ঘড়িতে সময় দেখলো। সকাল ৯টা ৫০। ছেলেটার আজ এই অফিসে পরীক্ষা। কিন্তু ছেলেটার মাথায় ঘুরছে, সে এখানে কী আগেও একবার এসেছিলো? সব চেনা মনে হচ্ছে কেন ? হাতে সময় নেই, পরীক্ষা শুরু ১০ টায়। ছেলে তারাতারি করে অফিসে ঢুকলো।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৮:৫৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

১. ১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:১৬

হাইপারসনিক বলেছেন: ঘড়িটা খুবই দরকারি ছিল বটে কিন্তু সময়টা আর কিনতে পারল না...

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৪৮

লেখক বলেছেন: মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
সময় কিনতে পেরেছে। আরেকবার পড়েন। :)

২. ২২ শে জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:২০

হাসান মাহবুব বলেছেন: ফিনিশিংটা জোস্!

২২ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪০

লেখক বলেছেন: ঈদের শুভেচ্ছা হামা ভাই। আর সুন্দর মন্তব্যের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
লখালেখি অনেক কঠিন। আরও কঠিন মনে হয় নিয়মিত না লিখলে ! তাও মাঝে মাঝে অদম্য ইচ্ছায় কীবোর্ড চাপতে বসি। আপনাদের ভালবাসা বোনাস।

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে "রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ": পুনর্বাসন নাকি নতুন ষড়যন্ত্র?

লিখেছেন মুনতাসির রাসেল, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬


বাংলাদেশের রাজনীতি বর্তমানে এক অনিশ্চিত ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ গত ৫ আগস্টের গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা হারিয়েছে, এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। কিন্তু সাম্প্রতিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া, মাথা ঘোরানো -----------------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০





মহাকাশে সময় কাটানো এবং পৃথিবীর অপরূপ দৃশ্য দেখা অনেকের কাছেই আজীবনের স্বপ্ন। তবে মানবদেহ শুধু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণে কাজ করার জন্যই বিকশিত হয়েছে। তাই মহাকাশের শূন্য মাধ্যাকর্ষণে সময় কাটানোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার একটা ব্যক্তিগত সমুদ্র থাকলে ভালো হতো

লিখেছেন সামিয়া, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৮:২৭


আমি এসে বসছি
নরম বালুর উপর,
সামনে বিশাল সমুদ্র,
ঢেউগুলা আমারে কিছু একটা বলতে চাইতেছে,
কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না।

আমার মাথার উপর বিশাল আকাশ,
আকাশের নিচে শুধু পানি আর পানি,
আমি একলা,
আমার সামনে সমুদ্রের একলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্তের এই মাতাল সমীরণে... সাজাই এ ঘর ফুলে ফুলে ...

লিখেছেন শায়মা, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ৯:৫৮


ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল
স্থলে জলে বনতলে লাগল যে দোল দ্বার খোল, দ্বার খোল....
বসন্তের আগমনে প্রকৃতিতে লাগে দোল। সাথে সাথে দোলা লাগে বুঝি আমাদের অন্তরেও। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের চ্যাপ্টার ক্লোজড ! নতুন করে ওপেন করার সুযোগ নেই......

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে মার্চ, ২০২৫ রাত ১০:৪৫


..বলে মনে করেন জামায়াতের আমীর শফিকুর রহমান। বাংলাদেশের রাজনীতি আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রধান উপদেষ্টা সাম্প্রতিক সময়ে একটি স্বনামধন্য থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের প্রধানের সাথে বৈঠকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×