somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভিখারি

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ৯:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জাভেদের নিজের একটা ফার্মেসি আছে শাহবাগে, পিজি হাসপাতালের কাছেই। একদিন দুপুরে এক বুড়ো মতন লোক এলেন ফার্মেসীতে, বয়স ষাটোর্ধ্ব , পরনের পাঞ্জাবিটাও মলিন। এসে বললেন, 'বাবা, ওই যে কানে দিয়া শুনে একখান যন্ত্র ওইডা আছে?' সলিম ফার্মেসীর সেলসম্যান, বুঝলো না কথাটা। বলল,"চাচা কী কন ? কানে দিয়া কী শুনে?" এবার বুড়ো লোকটি তার কান এগিয়ে প্রশ্ন করলেন,"হ্যাঁ?"



জাভেদ বুঝলো বুড়ো লোকটি আসলে হিয়ারিং এইডের কথা বলছে। সলিম কে বলল,"উনি হিয়ারিং এইডের কথা বলছে, বের করে দেখাও।" সলিম বুঝলো এবার। একটা নতুন হিয়ারিং এইড প্যাকেট থেকে বের করে দেখালো বুড়ো লোকটিকে। লোকটি কানে পড়তে চাইলো, পরে গেল টেবিলে। সলিম বললো, "আসেন, আমি পড়ায়া দিতাসি"। সলিম লোকটির কানে হিয়ারিং এইড পড়িয়ে দিল। লোকটি কানে হাত দিয়ে দেখল কানের সাথে ঠিকমত আটকেছে কিনা। সলিম বলল,"চাচা, শুনতে পান ঠিকমত?"
এইবার লোকটির মুখে হাসি ফুটলো। "হ বাজান, সব ঠিকমত শুনতাসি। এইডার দাম কত?"
"চব্বিশশো পঞ্চাশ" জাভেদ গম্ভীরমুখে বলল।
"হ্যাঁ? চব্বিশশো ?"
"চব্বিশশো না, চব্বিশশো পঞ্চাশ," সলিম শুধরে দেয়।

লোকটি কাঁপা হাতে পাঞ্জাবীর পকেটে হাত দেয়, কিছু টাকা বের করে আনে। সেটি জাভেদের দিকে বাড়িয়ে দেয়।
জাভেদ তাকিয়ে দেখে পাঁচশো টাকার একটা নোট।
"চাচা, এটার দাম চব্বিশশো পঞ্চাশ, আরো টাকা লাগবে তো।"
"আর নাই যে বাজান", লোকটি মিনতি করে।
"তাইলে আর কী, কান থেইকা খুলেন।" সলিম বলে।
সলিম কানে হাত দিয়ে খুলে নিতে গেলে লোকটি হাত দিয়ে হিয়ারিং এইড চেপে ধরলো। সলিম বললো, "চাচা, পরে টাকা আইনা নিয়া যাইয়েন, পাঁচশো তে হইবো না, এক হাজারেও না"।
লোকটি কিছু না বলে আগের মত হিয়ারিং এইড চেপে ধরে থাকলো, চোখ ছলছল করছে তার।
জাভেদ দেখছিলো সবই, সলিম কে বললো,"থাক। খোলার দরকার নাই। প্যাকেট টাও দিয়ে দাও উনাকে, আর উনার পাঁচশো টাকাও "।

অন্য কেউ হলে অবাক হত এ কথায়, সলিম হল না। সে গত দুইবছরে জেনে গেছে তার জাভেদ স্যার অন্যরকম মানুষ। তাঁর মনটা অনেক বড়। গরীব দুঃখীদের কাছ থেকে প্রায় সময়ই ওষুধের দাম নেন না তিনি। মুখ দেখে বোঝা মুশকিল কার মনে কী আছে, এই ভাবতে ভাবতে সলিমের চোখেও পানি আসে।
সলিম হিয়ারিং এইডের প্যাকেট এগিয়ে দিয়ে বলল,"চাচা, নেন ধরেন। আর আপনার পাঁচশো টাকাও লাগবো না। স্যার আপনারে এমনেই দিল, দোয়া কইরেন স্যারের লাইগা।"
বুড়ো লোকটি জাভেদের দিকে তাকিয়ে হাসলো, জাভেদও অল্প হেসে পত্রিকা পড়ায় মন দিল।

অবাক করা কান্ডটি হল ঠিক তখন। লোকটি ফার্মেসী থেকে বের হয়ে রাস্তায় পাশে দাঁড়াতেই বিশাল এক সিআরভি গাড়ি এসে থামলো। বুড়ো লোকটি খুব স্বাভাবিক ভঙ্গিতে গাড়ির পেছনের সীটে গিয়ে বসলো। পুরো ঘটনাটা দেখছিল সলিম। সে অবাক হয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলো। হঠাৎ সম্বিৎ ফিরে পেয়ে সে গাড়ির দিকে দৌড়ে গেল। ততক্ষণে সিগনাল পড়ে গেছে, সলিম দৌড়ে গাড়ির কাছে গেল। গাড়ির কাঁচে নক করতে লাগল। কিছুক্ষণ পর গাড়ির কাঁচ নামলে সলিম দেখলো, বুড়ো লোকটি গাড়ির ভেতর সানগ্লাস পড়ে আছে, কানে তখনো লাগানো হিয়ারিং এইডটা। সলিম বললো,"আপনে তো গরীব না, এইরকম করলেন ক্যান ? " বুড়ো লোকটি কিছু বললো না। সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে ততক্ষণে, গাড়িটি কাঁচ উঠিয়ে চলে গেল। সলিম বললো, "শালার কিপটা বুইড়া।" গজগজ করতে করতে দোকানে ফিরে এল সলিম। জাভেদ কে বলতে গেল, জাভেদ হাত তুলে থামিয়ে দিল। চশমার কাঁচ মুছতে মুছতে বললো, "সলিম, দুনিয়াতে অনেক আজব মানুষ পাবা। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। আমার নিয়ত ঠিকই ছিল, তাই আমার কোন আফসোস নাই। আমার কাছে ওই বড়লোক কৃপণ বৃদ্ধটাও আর দশটা ভিখিরির মতই একটা ভিখিরি। কত ভিখিরিকেই তো সাহায্য করি, তাকেও না হয় করলাম।" এই বলে মুচকি হেসে পত্রিকা পড়ায় মন দিলেন জাভেদ।

উৎসর্গঃ প্রিয় ব্লগার, কবি কলমের কালি শেষ কে
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে এপ্রিল, ২০১৫ সকাল ১১:০৮
১০টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কমলার জয়ের ক্ষীণ ১টা আলোক রেখা দেখা যাচ্ছে।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:১৮



এই সপ্তাহের শুরুর দিকের জরীপে ৭টি স্যুইংষ্টেইটের ৫টাই ট্রাম্পের দিকে চলে গেছে; এখনো ট্রাম্পের দিকেই আছে; হিসেব মতো ট্রাম্প জয়ী হওয়ার কথা ছিলো। আজকে একটু পরিবর্তণ দেখা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×