গতকালকের এত মন খারাপ করা পরিবেশের মধ্যে একটা ভাল লাগার খবর ছিল। আইসিসির বর্তমান প্রেসিডেন্ট আ হ ম মোস্তফা কামাল পরিষ্কার বলেছেন, গতকালকের খেলায় আম্পায়ারিং পক্ষপাতদুষ্ট ছিল। এটা আইসিসি না, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল। এই কাউন্সিলে আমি সভাপতি থাকতে পারব না। নেক্সট বোর্ড মিটিং এ আম্পায়ারিং এর প্রসঙ্গ তুলবেন। যদি কোন সুরাহা না হয় পদত্যাগ করবেন। আজ আইসিসির চীফ এক্সিকিউটিভ ডেভিড রিচার্ডসন বলেছেন, মোস্তফা কামালের এমন বক্তব্য দুর্ভাগ্যজনক! রুবেলের নো বল ৫০-৫০ ছিল বলেও মনে করেন তিনি এবং মাঠে আম্পায়ারদের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানানোর কথা বলেন! এগুলো উনি বলবেনই, উনি তো চাকরি করেন সেখানে!
৯২ সালে প্রথম থার্ড আম্পায়ার ব্যবস্থা চালু হয়। মূলত রান আউটের সিদ্ধান্ত নিতে অন ফিল্ড আম্পায়রদের সাহায্যের জন্যেই এই ব্যবস্থা চালু হয়। পরবর্তীতে নো বল সহ অন্য যে কোন সিদ্ধান্ত নিতেও টিভি বা থার্ড আম্পায়ারের সাহায্য নেয়া এখনকার মডার্ন ক্রিকেটের অন্যতম দায়িত্ব। কালের পরিক্রমায় এর পর আরো অনেক প্রযুক্তি সংযোজিত হয়েছে। বল ব্যাটের কোনায় লেগেছে কিনা তা নির্ণয়ে 'স্নিকো', আল্ট্রা মোশন রিপ্লে, সুপার জুমিং টেকনোলজি, হক আই। কম্পিউটার এনালিসিসে পুংখানুপুংখ হিসেব, বোলিং, বল কোথায় যাচ্ছে, লাগছে সব বের করা যায় এখন। আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে, ক্রিকেট খেলে ১১+১১=২২ জন ক্রিকেটার। খেলাটা হয় তাদের ভেতরই। খেলায় হার জিত যদি নির্ভর করে খেলোয়াড়দের ওপর, তাহলে আম্পায়ারদের আসলে প্রয়োজন টা কোথায় ? খেলা নিয়ন্ত্রণ ? আম্পায়াররাও জানে মাঠে তাদের উপস্থিতি অপ্রয়োজন, তাই নিজেদের যতটা সম্ভব প্রয়োজনীয় করে তুলতে চায় তারা। এলবিডব্লিউ বা কট বিহাইন্ড হল কিনা এর সিদ্ধান্ত উনাদের ওপর নির্ভর করে। তো উনারা মানুষ, ভুল হতেই পারে, সেই ভুল ঠিক করার জন্যেও তো ব্যবস্থা মাঠেই আছে! থার্ড আম্পায়ার, সব টেকনোলজি। এই সব টেকনোলজি, এত এত ক্যামেরা মাঠে নিয়ে নিশ্চয়ই ঘুমানোর জন্যে যায় না! কেন এক বার রিভিউ ভুল হলে আর রিভিউ নেয়া যাবে না ? কেন যেটা আউট সেটা আমরা পাব না ? তাহলে ফেয়ার প্লে কী করে হয় ? এই প্রশ্নের উত্তর যদি না পাওয়া যায় তাহলে সেই থার্ড আম্পায়ারের কী দরকার ছিল ? ৯২ এর আগে সব ক্ষমতা যেমন আম্পায়ারদের হাতে ছিল, সেটাই বহাল থাকত । সেটা তো থাকে নাই, নতুন সব টেকনোলজি আসছে। কীসের জন্যে তাহলে ? মাঠে আম্পায়ারদের ব্যাপারটা অনেকটা এমন, বিদ্যুৎ আবিষ্কার হয়েছে, বৈদ্যুতিক বাতিও আবিষ্কার হয়েছে, কিন্তু বাতিটা জ্বালানো হচ্ছে না। বা হিসাবের জন্যে ক্যালকুলেটর তো আছেই, আবার কম্পিউটার আবিষ্কার করতে হবে কেন ?
গতকালকের ম্যাচটা ভারত যতটা জিততে চাইছিল, এর চেয়ে বেশি চাইছিল আইসিসি। কারণ এই সংস্থাটা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তিত না, চিন্তিত তার ব্যবসা নিয়ে। এটা একটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম। ২০০৭ এর মন্দা তারা ভুলে যায় নাই, আর তাদের সবচেয়ে বড় বাজার ভারত। কোন ব্যবসায়ী তাদের নিজেদের পায়ে নিজেরা কুড়াল মারতে চায় ? নিকট ভবিষ্যতে আইসিসি একটা গালির নামও হবে ! শুভকামনা!
#riseofthetigers