[অনেক দিন ধরে ড্রাফটে পড়ে ছিল, অনেক দিন ধরে কিছু লেখাও হয় না, তাই সামুতে আমি বেঁচে আছি এটা প্রমাণ করতে আজকে পাব্লিশ করে ফেললাম ]
“মা, ভিসিআর টা ছাড়ি ?”
“পড়া শেষ করেছ?”
“করেছি মা।“
“অংক করা হয়েছে ?”
“কবেএএএ”
“তাহলে দেখ। "
উপরের কথাগুলো মায়ের সাথে আমার কোন এক ছুটির দিনের। অথবা স্কুল বন্ধের দিনের।
ঝটপট ভিসিআরে ঢোকানো হল টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে। ভিসিআরে ক্যাসেট ঢোকানো হল, ছবি আসতে লাগল আস্তে আস্তে। কিন্তু একী ? ছবি কাঁপে কেন ? নিশ্চয়ই আবার ভিসিআরের হেডে ময়লা জমেছে। ক্যাসেট খুলে তুলাতে ক্লিনার লাগিয়ে পরিষ্কার করা। তারপর ক্যাসেটের ফিতা চায়ের চামচ দিয়ে ঘুরিয়ে টাইট করে নেয়া, কারণ ক্যাসেটের ফিতা লুজ থাকলেও ছবি কাঁপে। এত ঝক্কি পেরিয়া আবার প্লে হল ছবি, এইবার কিছুটা পরিষ্কার আসছে ।
যে ঘটনাটা বলা হল, সেটি আরও কম করে হলেও ৩০ বার করা হয়েছে। প্রতিবারে একই ছবি। টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে।
তখন ভিসিআর(ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার) ,ভিসিপি(ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার) এর যুগ। ক্যাসেট ভাড়া পাওয়া যায় ২০-২৫ টাকায়। যে সব দোকানে ক্যাসেট ভাড়া পাওয়া যেত, আমার কাছে সেগুলোকে স্বপ্নপুরীর চেয়ে কোন অংশে কম মনে হত না! মনে আছে দোকানগুলোতে ছবিগুলোর স্টিকার দেয়ালে লাগানো থাকত। কী যে ভাল লাগত ছবিগুলো দেখতে, ওগুলোর নাম পড়তে। ভিডিও ক্যাসেট কিনতে লাগত ১৫০ টাকা। ৯০ এর দশকের হিসেবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যে একেবারে কম না অঙ্কটা। তখন ঈস্টার্ন প্লাজার ৪ তলায় ফিল্মফেয়ার ভিডিও এর দোকান ছিল। আমার ছোটবেলার স্মরনীয় ঘটনাগুলোর একটি ছিল ওইখানে বারবার যাওয়া। প্রতিবার ২টি করে ক্যাসেট কেনা হত। আব্বু নিজের জন্যে কিনত উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা বা বাংলা গানের 'গীতমালা', আর আমি কিনতাম কার্টুন। মাঝে মাঝে সিনেমা। আমার সংগ্রহে ছিল প্রায় ৩৫টির মত ক্যাসেট, বেশিরভাগই কার্টুনের। কিন্তু দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল টার্মিনেটর টু এর প্রতি। ভাল করে বললে আরনোল্ড শোয়ার্জেনেগারের প্রতি। একটা রোবট, ভাবলেশহীন,গুলি খেলে কিছু হয় না। তার উপর জন কনর (লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও) কে রক্ষা করে। একশন , সাসপেন্স কী নেই মুভিটাতে ?
প্রতিবার ছবি চলার সময় প্রচন্ড রাগ হত রবার্ট প্যাট্রিক(টি ১০০০) এর ওপর,ভিলেন, এত কিছু করার পরেও মরে না দেখে ! তার ওপর সে আবার বিভিন্ন রুপ ধারণ করতে পারে। টার্মিনেটর পারে না। শেষ পর্যন্ত মার খেয়েই যায়। এক হাত হারায়, এক চোখ হারায়, প্রায় মরেই যায়। পরে একটা গুলি বাকি থাকে যা দিয়ে টি ১০০০ কে ছ্যাদা করে দেয়! তখন যে খুশি লাগে। আবার একেবারে শেষে যখন শোয়ার্জেনেগার নিজেকে নিজে টার্মিনেট করে দেয় তখন চোখ ফেটে পানি আসে। আস্তে আস্তে আগুনের লাভায় নামতে থাকে সে, প্রথমে তার পা, এরপর বুক, সবশেষে একমাত্র হাত, হাতটি ডুবে যাওয়ার সময় বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে 'ওকে' বা থাম্বস আপ দেখায়। তখন জন কনরের সাথে নিজেও কী কেঁদে উঠিনি? বা শোয়ার্জেনেগারের পিস্তল তুলে সেই কিংবদন্তিতুল্য ডায়লগ,"আস্তা লা ভিস্তা, বেইবি" এইগুলো কী ভোলা যায় !
অনেক দিন পর্যন্ত এর কাহিনী ঠিকমত বুঝে উঠিনি। দেখতাম কেবল একশনের জন্যে। শোয়ার্জেনেগারকে অনেক বেশি মানবিকও মনে হত জন কে বাঁচাতে চায় বলে। যখন টার্মিনেটর ১ থেকে পুরো কাহিনী জানলাম, ভাললাগাটা যেন বেড়ে গেল আরও। আরনোল্ড শোয়ার্জেনেগারের নামটাও তখন ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারতাম না; বলতাম আরনল্ড শোয়ারজেঞ্জার !
পাড়ায় তখন আমাদের বাসাতেই ভিসিআর। যাদের সাথে বিকেলে খেলতাম, তাদের মধ্যে থেকে সৌভাগ্যবান কাউকে কাউকে নিয়ে আসতাম এই ছবি দেখানোর জন্যে। একসাথে সবাইকে আনতাম না, আম্মা রাগ করত। একজন একজন করে সবাইকেই দেখিয়েছিলাম। বা একজনকে হয়ত দেখে গেছে, সে এটা গিয়ে গল্প করেছে আরেক বন্ধুর সাথে, পরদিন থেকে আমার সাথে তার কথা বন্ধ! কেন ? অনেক জোরাজুরির পর সে বলল, আমাকে টার্মিটর দেখাইলা না ! অমুক রে তো ঠিকই দেখাইসো। বুঝলাম এতক্ষণ পর তার মন খারাপের কারণ। তাকেও আশ্বাস দেয়া হল, পরের ছুটির দিনে তার ছবির টিকিট কনফার্ম।
এমনই ছিল আমার ছুটির দিনগুলো। এখন মুভি নামানোর কত শত ওয়েবসাইট। কত রকমের প্রিন্ট; ক্যামরিপ,ডিভিডিরিপ, ব্লুরে। তখন এত শত কিছু ছিল না। একটাই মাধ্যম ছিল বাইরের বিদেশী সিনেমা দেখার। প্রিন্ট যেমনই হোক সিনেমার প্রতি ভাললাগাটা ছিল অনেক বেশি। টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে, একটি মুভি যা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ছোটবেলার অলস দিনের সকাল দুপুরের মাঝে। ভাল থাকুক আমার টার্মিনেটর। মিশে থাকুক শুভ স্মৃতিতে।
“মা, ভিসিআর টা ছাড়ি ?”
“পড়া শেষ করেছ?”
“করেছি মা।“
“অংক করা হয়েছে ?”
“কবেএএএ”
“তাহলে দেখ। "
উপরের কথাগুলো মায়ের সাথে আমার কোন এক ছুটির দিনের। অথবা স্কুল বন্ধের দিনের।
ঝটপট ভিসিআরে ঢোকানো হল টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে। ভিসিআরে ক্যাসেট ঢোকানো হল, ছবি আসতে লাগল আস্তে আস্তে। কিন্তু একী ? ছবি কাঁপে কেন ? নিশ্চয়ই আবার ভিসিআরের হেডে ময়লা জমেছে। ক্যাসেট খুলে তুলাতে ক্লিনার লাগিয়ে পরিষ্কার করা। তারপর ক্যাসেটের ফিতা চায়ের চামচ দিয়ে ঘুরিয়ে টাইট করে নেয়া, কারণ ক্যাসেটের ফিতা লুজ থাকলেও ছবি কাঁপে। এত ঝক্কি পেরিয়া আবার প্লে হল ছবি, এইবার কিছুটা পরিষ্কার আসছে ।
যে ঘটনাটা বলা হল, সেটি আরও কম করে হলেও ৩০ বার করা হয়েছে। প্রতিবারে একই ছবি। টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে।
তখন ভিসিআর(ভিডিও ক্যাসেট রেকর্ডার) ,ভিসিপি(ভিডিও ক্যাসেট প্লেয়ার) এর যুগ। ক্যাসেট ভাড়া পাওয়া যায় ২০-২৫ টাকায়। যে সব দোকানে ক্যাসেট ভাড়া পাওয়া যেত, আমার কাছে সেগুলোকে স্বপ্নপুরীর চেয়ে কোন অংশে কম মনে হত না! মনে আছে দোকানগুলোতে ছবিগুলোর স্টিকার দেয়ালে লাগানো থাকত। কী যে ভাল লাগত ছবিগুলো দেখতে, ওগুলোর নাম পড়তে। ভিডিও ক্যাসেট কিনতে লাগত ১৫০ টাকা। ৯০ এর দশকের হিসেবে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্যে একেবারে কম না অঙ্কটা। তখন ঈস্টার্ন প্লাজার ৪ তলায় ফিল্মফেয়ার ভিডিও এর দোকান ছিল। আমার ছোটবেলার স্মরনীয় ঘটনাগুলোর একটি ছিল ওইখানে বারবার যাওয়া। প্রতিবার ২টি করে ক্যাসেট কেনা হত। আব্বু নিজের জন্যে কিনত উত্তম-সুচিত্রার সিনেমা বা বাংলা গানের 'গীতমালা', আর আমি কিনতাম কার্টুন। মাঝে মাঝে সিনেমা। আমার সংগ্রহে ছিল প্রায় ৩৫টির মত ক্যাসেট, বেশিরভাগই কার্টুনের। কিন্তু দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল টার্মিনেটর টু এর প্রতি। ভাল করে বললে আরনোল্ড শোয়ার্জেনেগারের প্রতি। একটা রোবট, ভাবলেশহীন,গুলি খেলে কিছু হয় না। তার উপর জন কনর (লিওনার্দো ডি ক্যাপ্রিও) কে রক্ষা করে। একশন , সাসপেন্স কী নেই মুভিটাতে ?
প্রতিবার ছবি চলার সময় প্রচন্ড রাগ হত রবার্ট প্যাট্রিক(টি ১০০০) এর ওপর,ভিলেন, এত কিছু করার পরেও মরে না দেখে ! তার ওপর সে আবার বিভিন্ন রুপ ধারণ করতে পারে। টার্মিনেটর পারে না। শেষ পর্যন্ত মার খেয়েই যায়। এক হাত হারায়, এক চোখ হারায়, প্রায় মরেই যায়। পরে একটা গুলি বাকি থাকে যা দিয়ে টি ১০০০ কে ছ্যাদা করে দেয়! তখন যে খুশি লাগে। আবার একেবারে শেষে যখন শোয়ার্জেনেগার নিজেকে নিজে টার্মিনেট করে দেয় তখন চোখ ফেটে পানি আসে। আস্তে আস্তে আগুনের লাভায় নামতে থাকে সে, প্রথমে তার পা, এরপর বুক, সবশেষে একমাত্র হাত, হাতটি ডুবে যাওয়ার সময় বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে 'ওকে' বা থাম্বস আপ দেখায়। তখন জন কনরের সাথে নিজেও কী কেঁদে উঠিনি? বা শোয়ার্জেনেগারের পিস্তল তুলে সেই কিংবদন্তিতুল্য ডায়লগ,"আস্তা লা ভিস্তা, বেইবি" এইগুলো কী ভোলা যায় !
অনেক দিন পর্যন্ত এর কাহিনী ঠিকমত বুঝে উঠিনি। দেখতাম কেবল একশনের জন্যে। শোয়ার্জেনেগারকে অনেক বেশি মানবিকও মনে হত জন কে বাঁচাতে চায় বলে। যখন টার্মিনেটর ১ থেকে পুরো কাহিনী জানলাম, ভাললাগাটা যেন বেড়ে গেল আরও। আরনোল্ড শোয়ার্জেনেগারের নামটাও তখন ঠিকমত উচ্চারণ করতে পারতাম না; বলতাম আরনল্ড শোয়ারজেঞ্জার !
পাড়ায় তখন আমাদের বাসাতেই ভিসিআর। যাদের সাথে বিকেলে খেলতাম, তাদের মধ্যে থেকে সৌভাগ্যবান কাউকে কাউকে নিয়ে আসতাম এই ছবি দেখানোর জন্যে। একসাথে সবাইকে আনতাম না, আম্মা রাগ করত। একজন একজন করে সবাইকেই দেখিয়েছিলাম। বা একজনকে হয়ত দেখে গেছে, সে এটা গিয়ে গল্প করেছে আরেক বন্ধুর সাথে, পরদিন থেকে আমার সাথে তার কথা বন্ধ! কেন ? অনেক জোরাজুরির পর সে বলল, আমাকে টার্মিটর দেখাইলা না ! অমুক রে তো ঠিকই দেখাইসো। বুঝলাম এতক্ষণ পর তার মন খারাপের কারণ। তাকেও আশ্বাস দেয়া হল, পরের ছুটির দিনে তার ছবির টিকিট কনফার্ম।
এমনই ছিল আমার ছুটির দিনগুলো। এখন মুভি নামানোর কত শত ওয়েবসাইট। কত রকমের প্রিন্ট; ক্যামরিপ,ডিভিডিরিপ, ব্লুরে। তখন এত শত কিছু ছিল না। একটাই মাধ্যম ছিল বাইরের বিদেশী সিনেমা দেখার। প্রিন্ট যেমনই হোক সিনেমার প্রতি ভাললাগাটা ছিল অনেক বেশি। টার্মিনেটর টুঃজাজমেন্ট ডে, একটি মুভি যা ওতপ্রোতভাবে মিশে আছে ছোটবেলার অলস দিনের সকাল দুপুরের মাঝে। ভাল থাকুক আমার টার্মিনেটর। মিশে থাকুক শুভ স্মৃতিতে।