সুযোগ খুজছে নিক। সে স্পষ্ট বুঝতে পারছে উপরমহলের বেইমানীটা।
ইচ এন্ড এভরিওয়ান ইস অ্যা মাদারফাকিং শিট। লায়ার এন্ড ট্রেইটর।
সে এখন হাতকড়া পড়ে বসে আছে কয়েদী প্লেনের সেলে। তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে আমেরিকায়। একটা মোক্ষম ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে এখন সে এখানে। এক ডায়মন্ডের বিজসেনহোল্ডারকে খুন করার জন্য সে ইতালী গিয়েছিলো। ইন্টারপোল যে তার পিছনে লেগেছে সে এটা জানতে পেরেছিলো বসের কাছ থেকে। বসের কড়া হুকুম ছিলো ক্যামোফ্ল্যাজে থাকার।
কিসের ক্যামোফ্ল্যাজ? হোয়াট দা ফাক ইস দ্যাট? জীবনটাই তো একটা ক্যামোফ্ল্যাজ। সেইভ ইউর আইডেন্টিটি এন্ড রিয়েলিটি ফ্রম আদারস। কখনো কেউ যাতে আসল মানুষটাকে চিনতে না পারে। চিনতে পারলেই সমস্যা।
জেনী তাকে চিনতে পেরেছিলো। তাই ছেড়ে চলে গেছে। নিকও জেনীকে চিনতে পেরেছে। দুনিয়া ছেড়ে দিতে বাধ্য করেছে। সার্কেল। সম্পর্কের বৃত্ত। চাতুর্য্যের বৃত্ত।
বামকাধে প্রচন্ড ব্যাথা। অবশ লাগছে। দু দুটো গুলি গেছে এখান দিয়ে। কপাল জোড়ে বেচে গেছে নিক এযাত্রায়। সেন্স চলে গিয়েছিলো পেটে গুলি লাগার পর। যে গুলি করেছিলো তার চেহারাটা মনে পড়ছেনা। তবে একটা মেয়ে। অনেক কোমল টাইপের একটা মেয়ে। চিৎকার করে বলছিলো নিককে যাতে ও থেমে গিয়ে সারেন্ডার করে। কিন্তু নিক তো থামার জন্য দৌড়োয় না। ও থামেনি। ডান হাতের মধ্যাংগুলি দেখিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে এফ ওয়ার্ডটা জপছিল বারবার। থামলে ও হেরে যেত। কিন্তু না থেমেও কি হারেনি? নাহ, একে হারা বলেনা। এটা ড্র। এক গোল এক গোল। হা হা হা।
বাবা, মার কথা অনেক মনে পড়ছে। মানুষের স্বভাব বড় বিচিত্র। বিপদে না পড়লে কখনো বাপ-মার কথা গডের কথা মনে পড়েনা। বিপদে পড়লেই চোদ্দ গুষ্ঠীর নাম কপচানো শুরু করে দেবে শালারা। কিন্তু এভাবে আর কতক্ষণ। জ্বরে শরীর পুড়ে যাচ্ছে। শরীর প্রচন্ড দুর্বল। পায়ে, পেটে, কাধে ব্যান্ডেজ। হাতে হাতকড়া। নড়াচড়াই কঠিন। তার উপর গেটের বাইরে দুজন গার্ডকে মারা। উফফ, আর কয়টা মার্ডার করতে হবে। যতগুলি দরকার ঠিক ততগুলিই। ভেতর থেকে কে যেন বলে উঠলো। প্রিয় ডায়রীটাকে মনে পড়ছে খুব। সাথে থাকলে লেখা যেত। কিন্তু হারিয়ে গেছে সে। জেনীর মতই। এই মূহুর্তে আছে তো পরের মূহুর্তে নেই।
হাতটা কেডসের নীচে একবার বুলিয়ে এনে নিক নিশ্চিত হয় শেষ ভরসাটা আছে জেনে। গার্ড দুটোর চোখ এড়িয়ে ব্লেডটা হাতের মুঠোয় লুকিয়ে ফেলে। ধীরে ধীরে উঠে দাড়ায় নিক।
- টয়লেট, ইমার্জেন্সী।
কন্ঠের দুর্বল ভাব প্রকাশ করে বৃদ্ধের মত গেটের দিকে এগিয়ে যায় খোড়াতে খোড়াতে। গেট ধরে দাড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকে গার্ড কখন খোলে দরজাটা। খোলার পর সামনে হাটতে গিয়ে ইচ্ছে করেই পড়ে গেল নীচে। গার্ড দুজন তাক করা রিভলবার নামিয়ে তাকে ধরে উঠাতে গেল। ঠিক তখনই অত্যন্ত ক্ষীপ্রগতিতে নিকের ডানহাতের ব্লেডটা একজনের গলা ছুয়ে গেলো। টু শব্দ না করেই গার্ড পড়ে গেল। ঘটনার আকস্মিকতা বুঝতে না বুঝতেই নিক ডান পা ঘুরিয়ে শোয়া অবস্থাতেই মারল দ্বিতীয় গার্ডের দুই পায়ের মাঝখানে কোমড়ের নীচে। প্রচন্ড ব্যাথায় সেন্সলেস হয়ে গেলো গার্ড। নিক শেষবারের মত কারো গায়ে আবার রক্ত ঝড়ালো। ধমনী কাটা শেষ করে হাত ঢুকিয়ে দিলো গার্ডের পকেটে। বের করে আনলো সিগারেটের কেইস আর লাইটার। একটা সিগারেট বের করে ব্লেডের গায়ে লেগে থাকা কিছু রক্ত লাগিয়ে দিলো সিগারেটের গায়ে। তারপর ইমার্জেন্সী এক্সিট দরজার নব এষে দাড়িয়ে বেশ আয়েশ করে আগুন ধরালো সিগারেটে। সাথে সাথেই মিনি জেটটায় এলার্ম বাজতে শুরু করলো।
সস্তা সিগারেট টানায় কাশির দমক এলো। মাথা ঘুরানো শুরু হল। শরীর প্রচন্ড দুর্বল হয়ে গেছে। চোখের দৃষ্টিটাও ঘোলাটে। কানে এলার্মের শব্দ ছাপিয়ে অস্পষ্টভাবে ভেসে আসছে পায়ের শব্দ। সময় নেই হাতে। একদম সময় নেই।
গ্যালিলির ফর্মূলার কথা মনে হচ্ছে। এই সময়টা পরীক্ষার জন্য আদর্শ। দরজার নবটা ঘুরাতে শুরু করলো নিক। ঠিক এমন সময়ই করিডোর পার হয়ে পুলিশ চলে এ্লো।
- সিট অন ইউর নিস
- ফাক ইউ।
ইন্টারপোলের সুন্দরী অফিসারের মুখটা স্পষ্ট দেখতে না পেলেও কড়া জবাব দিয়ে মনটা খুশী হয়ে গেছে নিকের। মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে। না, আর দেরী করা যাবেনা। ঝাপসা চোখে সিগারেটের দিকে তাকিয়ে দ্রুতগতিতে বলতে লাগলো নিক,
“হেই ইউ পিপল, স্পেশালী ইউ দ্যা প্রেশাস লেডী। লিসেন কেয়ারফুলী। ডোন্ট লেট দ্যা ফায়ার টাচ ইউ। হুয়েন এ ফায়ার উইল টাচ ইউ, ইউ উইল বি এ পিস অফ নিকোটিন। এ সিগারেট। সবাই জালিয়ে খাবে, মজা নেবে। তারপর ফেলে দেবে। এখন আমি ফেলে দেবো। দেখি কে আগে নীচে নামে। আমি নাকি সিগারেট। ফাক ইউ অল দ্যা গাইজ উইথ মাই লাস্ট কিস অন দ্যা সিগারেট। উইথ মাই লাস্ট পাফ।”
সিগারেটের ধোয়াটা মুখে নিয়ে নবটা খুলে দেয় নিক। সিগারেটটা ফেলে দেয় খোলা আকাশে। উল্টো হয়ে লাফ দেয় নিজেও। ধোয়া ছাড়তে থাকে একটু একটু করে। নীচে পড়ছে একটু একটু করে। আর কিছুক্ষণ পর হাজার ফিট নীচে আছড়ে পড়বে একটা অর্ধেক পোড়া সিগারেট আর একটা নি:স্ব মানুষের দেহ। মাটিতে পড়ার মুহুর্তেই প্রাণ বেরিয়ে যাবে। এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের ব্যাপার।
ঠিক লাফ দেয়ার সময় সামনের ছবিগুলো হঠাৎ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। নিক তার ঠিক সামনেই জেনীকে দেখতে পেয়েছিলো। পুলিশের ড্রেসে দাড়িয়ে আছে অনেকের সাথে। জেনী কি সত্যিই প্লেনে? তাহলে কি নিক লাফ দিয়ে ভুল করলো। ফেরার কি আর কোন উপায় নেই? উফফ শিট, জেনী। শিট।
কিছুক্ষণের মধ্যেই শহরের রাস্তায় হঠাৎ করেই উপর থেকে একটা পোড়া সিগারেট পড়লো। তার কিছুটা দূরে আছড়ে পড়লো একটা মানুষের দেহ। পড়ার সাথে সাথেই তার মুখ থেকে বেরিয়ে গেলো কিছু ধোয়া।
লাস্ট স্মোক অফ দ্যা লাস্ট পাফ।
সমাপ্ত
লাস্ট পাফ এর পিছনের কথা
==================================
তখন ক্লাশ নাইনের শেষ দিক। মাথায় সিনেমার ভূত চাপলো। দেখার না। সিনেমা বানানোর ভূত। সারাদিন ঘাটাঘাটি করি। প্লট চিন্তা করি। শেষমেষ ক্লাশ টেনে একটা ফুল স্ক্রিপ্ট দাড় করিয়ে ফেলি একটা সিনেমার। নাম ঠিক করেছিলাম 'পোর্ট্রেট'। সেই স্ক্রিপ্ট কিভাবে যেন হারিয়ে গেছে। আমিও কনফার্ম হয়ে গেছি কখনোই আর ফিল্মমমেকার হতে পারবোনা।
'পোর্ট্রেট এর স্ক্রিপ্টে একটা সাইকো কিলার চরিত্র ছিলো। নিক। আমার অনেক প্রিয় চরিত্র। হঠাৎ একদিন চিন্তা এল নিককে নিয়ে লেখার।' লেখা শুরু করলাম লাস্ট পাফ। স্ক্রিপ্টের নিকের মোটামোটি আশি ভাগ এখানে প্রতিফলিত হয়েছে। ব্যস্ততার কারণে পর্বগুলো দিতে একটু দেরী হওয়ায় দু:খিত।
পুরো গল্পটার পিডিএফ ভার্সন পাবেন নীচের লিংকে। ধন্যবাদ।
লাস্ট পাফ পিডিএফ
লাস্ট পাফ - ১ম পর্ব
লাস্ট পাফ - ২য় পর্ব
লাস্ট পাফ - ৩য় পর্ব