জীবদ্দশায় যেখানেই তিনি গিয়েছেন মুহুর্তেই জনসমূদ্র হয়ে গেছে, ইন্তিকালের পরেও ঘটেছে একই ঘটনা।
শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগে স্বাক্ষি হওয়া হাসপাতাল জুড়ে ছিলো বাঁধভাঙা জনস্রোত, লাশ মুবারাক ফরিদাবাদ আনা হলে বিশাল মাদ্রাসা প্রাঙ্গণ তিল ধারণের সক্ষমতা হারায়।
তিনি শায়িত হবেন তাঁর প্রিয় মাদারিসের মারকাবায়। লক্ষ জনতা ছুটেছে দেশের সকল প্রান্ত থেকে। চিটাগং হাইওয়ে ছিলো গতরাতে স্মরণকালের মধ্যে সবচেয়ে ব্যস্ততম।
তাঁর গাড়ি ঢাকা থেকে রওনা হয় ভোর রাতের কিছু আগে, তারও আগে থেকে "জানাযা সংঘটিত হবার স্থান" ঘোষিত হবার মূহুর্ত থেকেই জনস্রোত বয়ে চলেছে। প্রাইভেট গাড়ি গুলোর সবগুলো সীট পূর্ণ, বাসের টিকেট সংকট, বিমানের সকল টিকেট বুকিং হয়ে গেছে, কেউ মোটর সাইকেলে, পিক-আপ ভ্যানে, এমনকি ট্রাকে করে একই গন্তব্য পানে ছুটেছে।
যেন সমগ্র বাংলদেশ যাবে আজ শায়েখ রহিমাহুল্লাহর প্রিয় মাদারিসে।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে তিনি ইন্তেকাল করেছেন গত শুক্রবার মাগরিবের পূর্ব মূহুর্তে। ঘোষনা এসেছে ছ'টার পর। জীবন সায়াহ্নের কিছুকাল আগ থেকে স্বার্থান্বেষী মহল তাকে অপশক্তির বেষ্টনীতে আটকে রেখেছিলো।
তাঁর বার্ধক্যজনিত অপারগতার সুযোগে অনেক দুষ্কৃতকারী নিজেদের ফায়দা হাসীলের ঘৃণ্য লক্ষ্যে শাইখুল ইসলাম রহিমাহুল্লাহকে বিতর্কে জড়িয়েছেন। তিনি ছিলেন সমগ্র বাংলাদেশের মুখলিস মানুষের হৃদয়ের মধ্যমনি, অবিসংবাদিত মহান নেতা, ইসলামী জাগরণের মহানায়ক, আধ্যাত্মিক শাহানশাহ্, মুকুটহীন সম্রাট, জীবিত সকল উলামায়ে ক্বিরামের সেরেতাজ।
ইন্তিকালের প্রায় অর্ধ দ্বিবস আগে তিনি কুচক্রিদের এতদিনের ষড়যন্ত্র ও সত্য ঘটনা বুঝতে পেরে স্বেচ্ছায় নিজের আসন থেকে অবসর গ্রহণ করে সর্বমহল থেকে তিনি বিতর্কের উর্ধ্বে আরোহণ করেন।
আল্লাহ্ তাঁকে পৃথিবীর দায় মুক্ত করে, সম্মানজনক মৃত্যু দান করেন।
মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। ইন্না-লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রজিউন। তিনি এই দীর্ঘ জীবনের প্রায় সমগ্র অংশই ব্যয় করেছেন দ্বীনি খিদমাতে। তাঁর রেখে যাওয়া লক্ষ লক্ষ উত্তরসূরী রয়েছে।
তাঁর মত সফল নায়ক বিরল।
তাঁর নিস্প্রাণ দেহ মুবারাক আনার আগেই উম্মুল মাদারিসের সুবিশাল প্রাঙন সফেদ পাঞ্জাবি আর টুপিতে কানায় কানায় ভরে যায়। সহস্র মানুষের কান্নার রোলে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে, গাছগুলো যেন শোকে চুপচাপ হয়ে যায়।
হাটহাজারীর ডাক-বাংলো চত্বর থেকে তাঁর জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
আশ-পাশের প্রায় সব বিল্ডিংএর ছাদ ভর্তি হয়ে যায় , মাদ্রাসার বাইরের রাস্তা ছাড়িয়ে কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত জানাযায় অংশগ্রহণকারী তৌহিদী জনতার কাতার প্রলম্বিত হয়। কয়েক লক্ষ মানুষের অংশগ্রহণে স্মরণকালের সর্ববৃহৎ একটি মাত্র জানাযা শেষে সযত্নে ও সসম্মানে তাঁর অসিয়তকৃত মাদ্রাসার মারকাবায় শায়িত করা হয়।
আল্লাহ্ তাঁর মাগফিরাত নসীব করুন, জান্নাতুল ফিরদাউস এর সুউচ্চ মর্যাদায় ভূষিত করুন, আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১০:৩৪