এই অসময়ে বৃষ্টি শুরু হওয়া আমার জন্য সুসময় না দু:সময় বোঝা মুশকিল।এটা সম্পূর্ন রিয়ার উপর নির্ভরশীল।বৃষ্টির মধ্যে যদি বাসা থেকে বের হতে না চায়, তাহলে আমার দোকানের দরজা গোনা লাগবে।এই জায়গায় সময় পার করার জন্য অন্যকিছু পাওয়াও মুশকিল।
এই প্রথমবার নিজ থেকে দেখা করতে চেয়েছে।আমিও যে আগে খুব বেশীবার দেখা করতে চেয়েছি সেটা না।তবে আজকের ব্যাপারটা অন্যরকম।কাল ওর বার্থডে।গিফট কেনা উচিত, কিন্তু মনের কথা পকেট শুনবে না।
বলেছিল ৫ টার সময় আসবে।
আমি বলছিলাম, আমি এসে অপেক্ষা করবো না তুমি এসে আমার জন্য অপেক্ষা করবে?
ও বলেছিল, ছেলেদের অপেক্ষা করা উচিত।তবে তোমার প্রিয় খাদ্য তালিকায় ঝাড়ি থাকলে আমিই অপেক্ষা করবো।
না,মেয়েটা দেখা করতে চেয়েছে তাকে অপেক্ষা করানো ঠিক হবে না।
আর প্রিয়জনের জন্য অপেক্ষা নাকি মধুর।এটা অবশ্য শোনা কথা, বাস্তবতা কতটুকু আজকে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
এখন ৪:৫৫ বাজে।একটু অপেক্ষা করতে হবে, কিন্তু বৃষ্টি আমার দুর্ভাগ্য লেখার জন্য মনে হয় বেশ আগ্রহী।দেখা যাক কার জয় হয়।বৃষ্টির না আমার।
নিউমার্কেটের দুইতলায় দেখা করবে বলেছিল।
দুইবার ঘোরা হয়ে গেছে দুইতলায়।
ওর কাছে কল করবো, কিন্তু মেয়েটা মোবাইলের প্রতি বিরক্ত।মোবাইল ব্যবহার করার ব্যাপারে চরম আপত্তি।
মোবাইল না ব্যবহার করলে রাতে প্রেম ঠিক জমে বলে মনে হয় না।আমার অবশ্য দিনেও জমেনা।ফেসবুকে চ্যাটিং করে আর কতদিন!
দেখি ফেসবুকে একটা রাগমিশ্রিত মেসেজ পাঠাই।
"বৃষ্টির মধ্যে একা একা ভেজা মোটেও শোভনীয় না।তোমার অতিসত্তর এসে আমার সাথে অংশগ্রহন করা উচিত।এখন ৫:৩০ বাজে।"
ভালো একটা ফাকা জায়গা দেখে সোনালী ব্যাংকের সামনে দাড়ালাম।দুইপাশ যাতে ভালোভাবে দেখা যায়।কোন দিক দিয়ে আসবে বলা যায় না।
বৃষ্টির পানি গায়ে এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে!প্রায় অর্ধেক ভিজে আছি।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েক জোড়া ছেলেমেয়ে গেলো।আমার দিকে করুনার দৃষ্টি দিতে এদের কখনোই ভূল হয় না।
নাহ মেয়েদের সময় জ্ঞান খুব খারাপ।এদের জন্য ঘড়িও বোধহয় বিরক্ত হয়।
অপেক্ষার প্রহর অনেক মধুর হয় যদি সেটা ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।এক ঘন্টার মত হলে সহনীয় পর্যায়ে থাকে না।
কিছু কথা সাজিয়ে রাখি ঝাড়ি দেওয়ার জন্য।আজকে খুব করে বকে দেব।আজকে ছাড় দিলে এরপর আবার এরকম করবে।
উফ এবার আর থাকা যায় না।আমার চলে যাওয়া উচিত।না আর এক মিনিট দাড়াই।
ডানদিক থেকে কাউকে আসতে দেখছি।নাহ চোখের অবস্থা খারাপ।চশমার পাওয়ার বাড়ানো লাগবে মনে হয়।ঝাপসা দেখি।কিন্তু রিয়ার হাটার ধরন।বৃষ্টির পানিতে ছিটা চশমার উপরটা ঝাপসা করে তুলছে।
হুম রিয়াই আসছে।নাহ রাগের মুড রাখতে পারছিনা।কিন্তু রাখা লাগবে।কিন্তু ওর দিক থেকে চোখ সরানো আরো কষ্টকর।লোহার গ্রীলের গায়ে হেলান দিয়ে দাড়ালাম আর আড় চোখে সময় জ্ঞানহীন এক অপ্সরীকে দেখতে লাগলাম।চুল গুলা বৃষ্টিতে হালকা ভিজে আছে।এত অপরুপ আগে কোনদিন দেখছি বলে মনে হয়না।
-৪৫ মিনিট।
-মাত্র!!আমিতো ভাবছিলাম ঘন্টা খানেক হবে।
-এক্ষুনী চলে যেতাম।আর একটু দেরী করলে এসে আমাকে পেতে না।
-উহু।তুমি থাকতে।যেতে পারতে না।কারন আমি আসব এটা তুমি জানতে।নাও ব্যাগ ধরো।
-মানে!!!
-সারাপথ ব্যাগ কাধে করে রাখা কষ্টকর।আর তুমি ছাড়া ব্যাগ কে বইবে বলো!!
-আসেপাশের মেয়েরা দেখলে হাসাহাসি শুরু করবে।
-করুক।আমার তাতে কিছু যায় আসে না।
-একটা ছেলের কাধে মেয়েদের ব্যাগ!!!না ভালোই মানিয়েছে।আধুনিক যুগ স্বামীদের স্ত্রী সেবার হাত থেকে রেহাই দিতে পারেনি, তবে স্ত্রীদের স্বামী সেবার হাত থেকে ঠিকই রেহাই দিয়েছে।
-হইছে, থামো।এবার চল।
-কোথায়???
-বাইরে!ভিজবেনা??
-না।তোমার ভেজা চুলের পরশ নেবো।
-কিন্তু আমিতো তোমার সাথে ভেজার জন্যই এলাম।ভিজতে ভিজতে চা খাব।আর হাত ধরে রাস্তার পাশদিয়ে হাটবো।
-উম!!!চল।কিন্তু আগে হাত ধরো।
-ধরলাম।
তারপর দুজন হাটতে থাকলাম বারান্দা দিয়ে।সিড়ির দিকে।বৃষ্টির পানিতে আমাদের দিকে অল্প অল্প ছিটিয়ে আসতে লাগল।আর আমি ওর চুলে হার দেবার বাহানা করতে লাগলাম।আশেপাশের দোকানদার গুলো,তাকিয়ে তাকিয়ে দেখতে লাগল!!!! তাতে কার কি এসে যায়।প্রেয়সীর ভেজা চুলের ভালবাসা ওরা বুঝবে না।
হাটতে হাটতে নিচতলায় নেমে আসলাম।
-কালকে তোমার বার্থডে গিফট কিনতে পারিনি!!
-তাতে কি!!!চল একসাথে কিনি।
-আমার কাছে টাকা নাই গিফট কেনার মত।
-চা খাওয়ানোর মত আছে????
-হুম আছে।চলো....ওইটাই আমার গিফট

-আচ্ছা।কিন্তু দুজনের এককাপ খাবো।
-টাকার অভাবে???
-না।ভালবাসা ভাগাভাগি করতে।
সিড়ি দিয়ে নেমে রাস্তায় ভিজতে ভিজতে জলের মধ্যে হাটতে থাকল দুইজন চা দোকানের দিকে।আর ছেলের কাধে মেয়ের ব্যাগ দেখে কিছু মেয়ে আর ছেলে তাকিয়ে হাসতেই থাকল।এসির মধ্যে বসে পিৎজার স্বাদ পেলেও বৃষ্টির মধ্যে টোঙের চায়ের ভালবাসা সবাই পায় না।