বিশ্ববিদ্যালয় পাশ করার পর আমি বেশ কিছুদিন একটা কোচিং সেন্টারে ক্লাস নিয়েছিলাম।শুরুর দিকে একদিন কোচিং সেন্টারের পরিচালক বল্লেন- তুমি আজ থেকে স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস নাও!
আমি বাংলা এবং চাঁটগাইয়া বেশ ভাল বলতে পারলেও ইংরেজি ভাল বলতে পারতাম না। কাজেই ক্লাস জমাতে পারলাম না। স্টুডেন্ট রা টিচার্স ফিডব্যাকে লিখে দিল- ভেরি আন্সমার্ট গাই!
কো অর্ডিনেটর মিস কে বললাম- আমি তাইলে এই ক্লাস নেয়া বন্ধ করে দেই মিস?
কো অর্ডিনেটর মিস পাত্তা দিলেন না। ঝামটা দিয়ে বললেন- স্পোকেন ক্লাস করতে আসা বলদ পোলাইপান সামলাইতে গিয়া আপনের মত জ্ঞানী লোক হিমশিম খাইতেছেন! ব্যাপার টা ঠিক বুঝলাম না।
আমি বললাম- মিস, দুইটা বেয়াদপ ছেলে আছে ইংরেজিতে সেই রকম ফটফটাইতে পারে। অই দুইটাই যত নষ্টের গোড়া। অই দুইটারে বাইর কইরা দেন! বাকী দের আমি সামলে নেব ইনশাল্লাহ।
মিস বললেন- ক্লাসে আপনি ওদের ইংরেজি শিখাইতে গেছেন এটাই ত বিরাট ভুল করছেন! ক্লাসে মজা নিয়ে আসেন।
আমি বললাম- মিস মজা কিভাবে আনব?
মিস চোখ পাকিয়ে বললেন- ক্লাসে একজোড়া স্টুডেন্ট কে স্বামী- স্ত্রী বানায়ে তাদের কে ইংলিশে ঝগড়া করতে লাগাই দেন! দেখবেন আপনি সুপার ফ্লপ থেকে সুপার হিট হয়ে গেছেন!!
ক্লাসের স্টুডেন্ট দের মধ্যে একজন দেখতে বেশ ছ্যাঁতছোত টাইপ ছিল! তাকে স্ত্রী এবং দুই বেয়াদপ ছেলের একটাকে স্বামী চরিত্রে সিলেক্ট করে ঝগড়া র প্লট বুঝিয়ে দিলাম। বললাম- মনে কর তোমরা স্বামী স্ত্রী তে বিয়ের দাওয়াত খেতে যাচ্ছ। । স্বামীর ইচ্ছে স্ত্রী নীল শাড়ি পরে যাবে। কিন্তু স্ত্রীর পছন্দ লাল শাড়ি। এটা নিয়ে ইংলিশে ঝগড়া কর।
ক্লাসে মুহুর্তেই একটা উৎসব ভাব চলে আসল। স্বামী গলা খাকারি এবং স্ত্রী খুক খুক করে হাল্কা কাশি দিয়ে ঝগড়া শুরু করল। ঝগড়ার কথা গুলো ইংরেজিতে লিখলে জমবে না। কাজেই স্কাউন্ড্রেল গালি ছাড়া বাকী সবকিছু বাংলায় লিখলাম।
স্বামীঃ বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ের কনেও লাল শাড়ি পরবে আর তুমিও লালশাড়ি পরে বসে আছ! ফেরার সময় আমি যদি ভুল করে তোমার বদলে কনে কে আমার সাথে নিয়ে আসি?
স্ত্রীঃ কি? কি বললি? তুই অন্য মেয়েকে আমার রুমে এনে শোয়াবি?? আমি এক্ষুনি আব্বু কে বলে দেব! আব্বু যেন এক্ষুনি পুলিশ ডাকিয়ে তোকে ফ্ল্যাট থেকে বের করে দেয়। দু’পয়সার ঘর জামাই হয়ে তোর এত বড় সাহস! স্কাউন্ড্রেল!!
স্বামীঃ কথায় কথায় তুই তোকারি! খালি ঘর জামাই এর খোঁটা!! আমি কি স্বামী নাকি আসামী?আমার রড সিমেন্টের ফ্যাক্টরি একবার দাঁড় করাইতে পারলে ‘শালার বাপ’ রে শুদ্ধ নিয়া আমার ফ্ল্যাটে রাখুম। তখন বুঝবা কত ধানে কত চাল। কত রড সিমেন্টে কত ফ্ল্যাট!!
স্ত্রীঃ রাখ তোর রড-সিমেন্ট ফ্যাক্টরি! বিয়ের আগে থেকেই শুনতেছি খালি রড,রড,রড! কোথায় তোর রড রে? আর শালার বাপ বলতেছস কোন আক্কেলে? দুদিন পরে যখন টাকা লাগবে তখন ত ঠিকই আব্বু ডাকবি!
স্বামীঃ এইটা তুমি আবার কি বললা? আমার শ্বশুরের যখন টাকা ফুরাইছিল তখন ওনি কি উনি উনার শ্বশুর রে আব্বু ডাকেন নাই?
স্ত্রীঃ অসভ্য ইতর ছোট লোক! চামে আমার চৌদ্দ গুষ্টির অপমান করতেছস! আজকে তোর হিটলার মোচ যদি কাঁচি দিয়া অর্ধেক না কাটছি! ইহ,, বউ রে নিজের বাড়িতে রাখার মুরোদ নাই। আবার মোচ রাখছে হিটলারের!
স্বামীঃ কি? তু তু তুই(!) কাঁচি দিয়া আমার হিটলারি মোচ কাটবি আর আমি বসে বসে ল ল ললিপপ চুষুম? আজ তোর বাপের একদিন কি আমার একদিন!
স্ত্রীঃ আব্বু, আব্বুওও!! দেখে যাআআআও, ইতর, অসভ্য, লুইচ্চা, ঘর জামাই ছোট লোকটা আমাদের সবাইকে কিভাবে অপমান করছে দেখে যাআআও...আব্বু ও ও!!
কোচিং সেন্টারের পরিচালক সম্ভবত ওদিক দিয়ে যাচ্ছিলেন। অকস্মাৎ চিল্লানি শুনে ক্লাসে ঢুকলেন। ক্লাস রুমে দুই রন-রঙ্গিণী মুর্তি কে দেখে ত পরিচালকের চক্ষু চড়ক গাছ!! আমার দিকে তাকিয়ে কোনমতে জিজ্ঞেস করলেন-
এখানে কি হচ্ছে?
আমি কিছুটা নার্ভাস ভঙ্গিতে বললাম- সা স্যার...ওরা স্বামী স্ত্রী ঝগড়া লাগাইছে!
কিঞ্চিত ওভারস্মার্ট পরিচালক ওদের দিকে তাকিয়ে সাথে সাথে বলে উঠলেন- ঝগড়া করতে হলে বাসায় গিয়ে কর! এখানে ঝগড়া কিসের? তোমরা স্বামী স্ত্রী দুজন একসাথে আমাদের এখানে ভর্তি হইছ এটা ত একটা গুড এক্সাম্পল! তোমাদের দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হবে। কিন্তু তোমরা যদি ক্লাসরুমে এভাবে চিল্লিয়ে ঝগড়া কর তাইলে ত মুশকিল। সেক্ষেত্রে গুড এক্সাম্পল ব্যাড এক্সাম্পলে পরিনত হতে বেশি দিন লাগবে না!