ইস্যু মূখর জাতির যে কোন একটি ইস্যু দরকার। আমিও তার ব্যাতিক্রম না।
হাইস্কুল জীবনের দুটি ঘটনা।
অসিত বাবু আমাদের ইংরেজী শিক্ষক, ক্লাসে সেদিন সবাইকে পিটানি দিলেন, গনহারে দুটি করে কারো কপালে একটি। সবাই অতিউৎসাহি হয়ে বিচার দিব প্রধান শিক্ষকের কাছে, শেষ পর্যন্ত কেওই বিচার দায়ের করলাম না, ক্লাসের ১ম স্থান অধিকারী থেকে শুরু করে আমি ২০তম স্থানের ছাত্র পর্যন্ত। বাড়ি দেয়ার কারণ ছিল তার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সম্ভবত ফুটবল খেলা। কিন্তু তার মধ্য থেকেও কেও একজন বিচার দিয়ে বসল। বিজ্ঞান বিভাগের রোল নং ৫। বলে রাখা ভালো যে বিজ্ঞান বিভাগে মোট ছাত্র সংখ্যা ৫ এবং সে ৫নম্বরকে যদি মানবিক বিভাগে আনা হয় সে ২১নম্বরের পরে চলে যাবে কিন্তু তার বাবার ইচ্ছা সে ডাক্টার হবে। পরের দিন প্রধান শিক্ষক ব্যবস্থা নিলেন এবং শিক্ষককে তিরষ্কার করলেন। ক্লাসে এসে শিক্ষক দুঃখ প্রকাশ করলেন এবং সে যে অনেক কষ্ট পেয়েছে সেটি তার চেহারায় ফুটে ছিল। যা হউক তারপর দিন থেকে তার হাতে আর বেত দেখা যায় নি, তার পড়ানো পড়িয়ে চলে যেতেন ব্যাস এটুকুই সীমাবদ্ধ। আগে বেতের ভয়ে যারা পড়া করত (আমি তার মধ্যে অন্যতম), তাদের পড়া লেখাও নিচে নামতে থাকল।
আমাদের নিচের ক্লাসের ছাত্র চেহারা মাশাল্লাহ দেখার মত। সম্ভবত তখন ক্লাস ৭ম বা অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। আজ এ মেয়ের ওড়না ধরে টান দেয় কাল আরেক জনকে মারে পরশু স্কুলের ভিতর মাস্তানি করে, আরেক দিন স্কুলে চায়নিজ কুড়াল নিয়ে আসে স্কুলের পার্শবর্তী সুবাদে। একাধিকবার বিচারে বুঝিয়ে পড়িয়ে কোন লাভ হল না। শেষমেষ সহকারী হেড মাস্টার তার অস্ত্র চালালেন, পাশের মোল্লার খেতের কাচা বেত। চেহারা সুন্দরের সুবাদে প্রতিটি বাড়ি স্পট হিসেবে শরীরে বসে থাকল। স্বাভাবিক ভাবেই পিতামাতা ও আত্মীয় স্বজনের কষ্ট লাগবে। দরবার বসল মাস্টারের এমন অমানবিক আচরণ নিয়ে, তার অপসারণ চাই। পুরা স্কুল কমিটি এক দিকে শিক্ষক সকল একদিকে। সে যাত্রায় রক্ষা পেলেন শিক্ষক। ভাগ্যিস সে সময় এত মিডিয়ার বাহার ছিল না। তবে এক দারুন ফলাফল পাওয়া গেল, তারপর দিন থেকে সে ছেলের হাতে কোনদিন কুড়াল তো দুরে থাক লাঠিও দেখা যায় নাই, এমনকি মেয়েদের ওড়না তো দুরে থাক ছায়া পর্যন্ত মাড়ায় নাই।
অনেক ঘটনার মাঝে দুটি ঘটনা মাত্র। ধান ভাঙতে শীবের গীত আর না আসল প্যাচালে আসি।
গতকালের ছাত্রীর আত্মহত্যা নিয়ে মিয়ে থেকে ফেসবুক সবাই বেশ সরব শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বা স্কুলের বিরুদ্ধে। স্কুল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ ব্যাগে মোবাইল ও অসৎ উপায় অবলম্বন।
প্রথম কথা একজন ছাত্র/ছাত্রী অসৎ উপায় অবলম্বন কখন করে? যখন সে পড়া লেখা করে না। আর পড়া লেখা করে না ব্যাপারটা তেমন না, পড়া লেখায় তার মন নেই বা সে পড়ার যোগ্য সে না। এই দুটির ব্যাপারে দায়ভার কার? যে যা পারে না তার ঘারে সেটি চাপিয়ে দেয়ার দায়িত্ব নিশ্চয় স্কুলের না? পড়া লেখায় মন না থাকলে সেখানে পরিবারের দায়িত্ব সবার আগে আবার পড়া লেখা যদি নাও করে তাও পরিবারেরই দায়িত্ব কেননা স্কুলের হাত-পা বাঁধা তারা কিছু বলতে পারবে না। আবার যদি সে যোগ্য না হয়- যোগ্য না হলে সে যে কাজের যোগ্য তাকে সে কাজেই দিতে হবে। সবাই পড়ালেখায় পারদর্শী বা যোগ্য না।
অসৎ উপায় অবলম্বনের আরেকটি ব্যাপার রেজাল্ট খারাপ করলে তার বাসা থেকে টরচার। পরীক্ষায় ফেল করলেই আমাদের অভিভাবকেরা এমন আচরণ শুরু করে যেন মান সম্মান তার আর নেই। তাদের সমস্ত মান সম্মান বাচ্চা-কাচ্চার পড়ালেখার মধ্যেই লুকায়িত আছে। তাই ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুলের ভয় যতটা না অভিভাবকের ভয় তার থেকে বহুগুন বেশী। এখনকার অভিভাবকদের অবস্থা এমন যে নিজেরা পারে না ডোঙ্গা বানাতে সন্তানকে বলে রকেট বিজ্ঞানী হতে হবে।
স্কুল তার নিয়মানুসারে তার বাবা-মাকে ডাকবে, যেহেতু এখন স্কুলে বাচ্চাদের শাসন করা নিষেধ, না বেত্রাঘাত না করা যাবে বকাঝকা, যদি সে ঝড়ে যায়। তারা তাদের নিয়মানুসারে গার্ডিয়ানকে ডেকেছে, নিয়মানুসারে টিসির ব্যবস্থাও হয়তো করত, তখন পর্যন্ত করে নাই। ধরে নিলাম করবেই। কিন্তু হঠাৎ একদিন এমন আচরণ করার জন্য কি কোন স্কুল টিসির ব্যবস্থা করে? আসলে আমরা যতটা না আপেক্ষিক তার থেকে বেশী আবেগী অন্যের দোষ খুজতে।
আমার তো মনে হয় স্কুল যতটা না শাসন করেছে তার থেকে বহুগুন বেশী করেছে তার মা। প্রসঙ্গক্রমে উল্লেখ করতে হয় কুমিল্লায় ছাত্রীর আত্মহত্যার নোটের কথা। রেজাল্ট খারাপ করায় তার বাবা ভাতের প্লেট লাথি দিয়ে ফেলে দিছে, মা চুলের মুঠি ধরে থাপ্পর দিছে ইত্যাদি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এখানে একতরফা শুধু স্কুলের দোষ দেয়া হচ্ছে, অভিভাবককে বাঁচাতে। আমার তো মনে হয় আগে অভিভাবকদের ধরে রিমান্ডে নিলে আসল সত্য বের হয়ে আসবে। কোন অভিভাবকই তার বাচ্চার অমঙ্গল কামনা করে না কিন্তু মঙ্গল কামনা করতে গিয়ে অমঙ্গলের অতিরিক্ত করে ফেলে যা আমরা বিভিন্ন পরীক্ষার রেজাল্ট পাবলিশ হওয়ার পর দেখতে পাই।
তাই আমরা আসুন আবেগ নয় বিবেক দিয়ে বিবেচনা করি।