প্রতয়ীর বিদায়ের পর মেসে নতুন অতিথি হিসেবে যোগ হয়েছিল উত্তর বঙ্গের দুরন্তর। অত্যন্ত মেধাবী ও অহংকারী তবে পারভেজের সাথে বেশ খাতির। সদ্য প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে পড়ালেখা গুটিয়ে ঢাকা শহরে একটি নামকরা স্কুলে জব করে। সময় কাটে টিউশনি আর স্কুলে। কিছু দিন যেতে না যেতেই লক্ষ্য করল জামিল আর দুরন্তর বারান্দায় একটু বেশী সময় দিচ্ছে। কিছু দিন পর আবিষ্কার করল প্রায় ২০০গজ দুরে অবস্থিত বিল্ডিং এ ৩য় তলায় দাঁড়িয়ে থাকা একজোড়া সদ্য ডানা গজানো পাখির। পাখিদ্বয় ও ইশারা দিচ্ছে আর এদিক থেকে জামিল ও দুরন্তরও দিচ্ছে। কাউকে কিছু না বলে পেছন থেকে খেয়াল করল তাদের এই ইশারার আলাপ। প্রসঙ্গত বলে রাখা ভাল ততদিনে মেসে একজন জন অতিরিক্ত বর্ডার আনার অজুহাতে আমরা ৩য় তলায় চলে এসিছি। কারণ তারা ৩রুমে কোন অবস্থাতেই ৬জনের বেশী থাকতে আগ্রহী না আর ২য় তলার এক ভদ্রলোক যে কিনা ৪জন থাকবে তাতে মেস মেম্বার দাঁড়াবে ৮জন তাই তারা বাড়ীওয়ালাকে বিষয়টি বলার পর বাড়ীওয়ালা ৩য় তলা তাদের জন্য খালি করে দিয়েছেন। তারা ৩য় তলায় চলে গিয়েছিল।
ওপাশেও ৩য় তলা আর এ পাশেও ৩য় তলা এভাবেই ইশারা ইঙ্গতি কথা চলছে কিছু দনি ধরেই। হয়তো ৭/৮দিন। জামিল দুরন্তর মনে করে তারা তাদের সাথেই আড্ডা দিচ্ছে কিন্তু আসলে তা নয় তারা ২য় তলা থেকে শুরু করে এক আড্ডায় ৪র্থ তলা পর্যন্ত আড্ডা দিচেছ। সবাই মনে করছে যে তাদের সাথেই আড্ডা দিচ্ছে। সে আড্ডা শুরু হয় ব্লগ আড্ডার মতই রাত ১০টার পর। কারণ পাখিদ্বয় রাত ১০টার পর খুবই ভদ্রনম্র ভাব নিয়ে ঘুমের ভান ধরে দরজা লাগিয়ে দেন আর এপাশ থেকে জানালা খুলে দেন। হঠাৎ ৪র্থ তলা থেকে গান ভেসে আসে, বালবাসি বলেই বন্দু আমায় কাদালে আর তাতেই জামিল ব্যপারটা ধরে ফেলে যে, তারা বিল্ডিং এর সবার সাথেই আড্ডা দিচ্ছে।
দুজনাই এসে ধরে পারভেজের, বস এই মেয়ে ২টি দেখেন কি করে, ইশারা দেয়, আড্ডা দেয়, বিল্ডিং এর সবার সাথেই মনে হয়, কিন্তু এসব যদি বাড়ীওয়ালা টের পাই তা হলে বাসা ছাড়তে হবে নির্ঘাত। যা ছিল আঙ্গুর ফল টক থিওরি। পারভেজ বলে- খোজ নাও মেয়ে দুটি কে, আগে তো দেখি নাই। ওরা সমস্ত ভাবে খোজ নিয়ে জানতে ব্যর্থ হয় যে কোথা থেকে এসেছে বা কোথায় বাড়ি। হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। মাস দেরেক পর আবার আগমন ঘটে। তাতে বুঝতে পারে যে তারা এখানকার অতিথি। আগমনে উত্তর সাইটের ইউনিটগুলাতে সুরের ঝংকার পরে যায়। জামিল আর দুরন্তর বেশ করে ধরে পারভেজকে, বস এদের এই আড্ডা দেয়া বন্ধ করুন যে ভাবেই হউক। পারভেজ জুতা থিওরি বাতলে দেন।
কথামত কাকডাকা ভোরে জামিল বারান্দায় একটি জুতা ঝুলিয়ে রাখে। ঘুম থেকে উঠেই জানালা খুলে জুতা দেখে তো অগ্নিমূর্তী, ঝাড়ু ঝুলে যায় তাদের জানালায়। কিন্তু সে ঝাড়ু বেশীক্ষণ রাখতে পারে না হয়তো বাড়ীর কর্তীর জন্যই। তাতে হয়তো তারা আরো রেগে যায়। শুরু হয় জুতা, কিল, ঘুষি ইত্যাদি প্রদর্শণ। অন্যান্য ইউনিটের লোকজন তো বিষয়টি ধরতে না পেরে হঠাৎ এই অগ্নিমুর্তির কারনে বেশ আশ্চর্য়ই হয়ে যায়। ২য় তলার অলি যার কিনা সব ফ্লাটে যাতায়াতরে অভ্যাস সে এসে জানায় যে তারা আড্ডা দিত ইশারায় হঠাৎ তারা অগ্নিমূর্তি, এখন যদি বাড়ীওয়ালার কাছে অভিযোগ দিয়ে বসে তা হলে তো বাসা ছাড়তে হবে। পারভেজ বলে- ৪তলা ৫তলারাও কি আড্ডা দিত। ও বলে খোজ নিয়ে জানাবে। খোজ নিয়ে দেখা যায় সবাই বেশ চিন্তিত আর উল্টা দিক থেকে জামিল আর দুরন্তর খুব আনন্দিত।
দুদিন বাদেই পাখি দ্বয়ের একজন ইশারায় ফোন নাম্বার চাই দুরন্তের কাছে। দুরন্তর ও জামিল দুজনেই দুপুরে সেদিন বাসায় ছিল, দুজন মিলে প্রথমে কাগজে লিখে, দেয়ালে লিখে সবভাবেই ব্যর্থ হয়ে শেষে আঙ্গুলের ইশারায় নাম্বার দেয় দুরন্তের স্কুলের। সময় বলে দেয় কখন ফোন করবে। আর তাতেই শুরু হয় দুরন্তের বাঁশ পর্ব। পরের দিন ঠিক ১১টায় ফোন ধরে দুরন্তর চমকে ওঠে। ওপাশ থেকে তেজি কন্ঠে- এই শালা তোর এতবড় শাহস তুই আমাদের জুতা দেখাস, তোর ঠ্যাং ভেঙ্গে হাতে ধরিয়ে দিব যদি বাইরে পাই। তুই আমাদের চিনিস? তার কথা শেষ হতে না হতেই আরেকজন এই শালার বাচ্চা খুব পন্ডিত না, ইশারায় নাম্বার দাও, খাড়া আইজই আইতাছি আমার নানুর সাথে, তোদের বাসা থেকে যদি না তাড়াতে পেরেছি তা হলে আমার নাম 'ধারা' না।
দুরন্তর বুঝতে পারে বড় ভুল করে বসেছে, দুরন্তর রেগে গিয়ে বলে এই তোমাদের পড়া লেখা নাই, তোমরা রাতদিন জানালায় কি কর? বেয়াদপ মেয়ে। কিন্তু এরা দুরন্তর, সবে কৈশরে, এদের তো এই সামান্য ধমকে আটকানো যাবে না। সোজা ব্লাকমেলই করে বসে, এই তোর নাম বল- তা না হলে আমি কিছু সময় পরে ফোন করে তোর প্রিন্সিপালকে নালিশ দিব। উপায়ন্ত না দেখে নাম বলতে বাধ্য হয়। আর তাতেই বিপরীত দিক থেকে হাসির রোল পরে যায়। হাসির আওয়াজে শান্তু হয়ে ভাবে এ যাত্রাই বেঁচে গেছে। অনুরোধ করে বলে তোমরা আর ফোন করো না। কিন্তু তাতে আবার উত্তর, এই শালা তোর কাছ থেকে জেনে ফোন করতে হবে আমরা কি করব না করব বলেই ফোন রেখে দেই।
দ্বিতীয় দিন আবারও ফোন করে, সে সময় ক্লাসে থাকায় ওর কলিগের সাথে কথা বলে ও না ফেরা পর্যন্ত। আসলে ফোন করে বলে আজ তুই কান ধরে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকবি তা না হলে আমি কিন্তু নালিশ দিব। বেচারা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে তাই করে কিন্তু ফোন ঠেকাতে পারে না। পরের দিনও ফোন দেই। তার পর দিন চলে যায় কিন্তু ফোন করতেই থাকে প্রতি নিয়ত আর ফাইজলামি করে ওর জীবন তথা চাকুরী যাওয়ার কাছা কাছি করে ফেলে। উপায়ন্ত না দেখে আবার সেই পারভেজের শরনাপন্ন। পারভেজ বলে আবার ফোন করলে আমার সাথে কথা বলতে বলবেন দেখি বোঝানো যায় কিনা। ২দিন পর ফোন পারভেজের নাম্বার দিয়ে মাফ চেয়ে নেয়।
ঠিক তার ২দিন পর মিস কল আসে পারভেজের মোবাইলে। কলব্যাক করে পরিচয় জানতে চাইলে বলে দুরন্তর নাম্বার দিছে, ও আছে নাকি ওর দেন। খুব শান্ত ভাবে বলে কেমন আছেন আপনারা। - সোজা উত্তর আপনাকে বলতে হবে। পারভেজ বড়াবড়ই সহজে রাগে না, তাই নরম সুরে বলে মুসলমান হিসেবে আগে কুসল বিনিময় তারপর অন্য কথা। আমি ভাল আছি আপনারা ভাল আছেন। উত্তরে বলে আপনি কোন জন? কাইলা না ভুটকু। পারভেজ উত্তরে বলে দেখুন আল্লাহ সকলকে সৃষ্টি করেছে, জামির একটু কালো আর আমিম একটু মোটা তাইবলে আপনারা নাম বিকৃতি করবেন। কারো নামের বিকৃতি করা গুনাহের কাজ। তাতে কিছুটা শান্ত হয়ে বলে আপনি কে, পারভেজ তার নাম বলতেই বলে ও কোথায় আমরা ওর সাথে কথা বলব। পারভেজ শান্ত হয়ে বলে- দেখেন উনি তো ভুল করেছে তার জন্য ক্ষামাও চেয়েছে তারপরও কি উনার উপর এধরনের শাস্তি ঠিক? উত্তর আসে- এই শালা তোর কাছ থেকে আমাদের জ্ঞান নিতে হবে কোনটা ঠিক আর কোনটা বেঠিক?
পারভেজ বুঝতে পারে এদের এভাবে কন্ট্রোল করা যাবে না, ভিন্ন থিওরিতে যেতে হবে। বলে না আমি আপনাদের জ্ঞান দিচ্ছি না, তবে আপনাদের ও খুব ভয় পায় সাথে আমিও ভয় পাই। জামিল তো ভয়ে বারান্দায়ই আসে না। আপনারা শহরের মানুষ, অনেক জ্ঞানি ও স্মার্ট আর ও সদ্য এসেছে গ্রাম থেকে, আপনাদের মত কি ওর জ্ঞান বলেন? একটু মনে হয় বরফ গলে যায় সেই কথায়। তখন বলতে থাকে তারা ১/২মাস পর নানু বাসয় যায় আর ওদের কে জুতা দেখানো হয়েছে, মার দেখানো হয়েছে, লেজার লাইট আমরা ভয় পাই আমাদের লেজার লাইট মেরেছে যাতে আমরা জানালায় বসতে না পারি। সেই লাইটের আলো দেখে আমার নানু আমাদের বকাবকি করেছে, সেই শোধ আমরা তুলব না, ওকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিব আমরা কি। শান্তনা দিয়ে পারভেজ বলে ঠিক আছে আমি দেখি কি করা যায় আর ওর স্কুলে ফোন করো না, তাতে ও চাকুরীর সমস্য হবে।
আগামীকাল তোমাদের সাথে আবার কথা বলব। কয়েকদিন আবারও মিস কল আসে, বিনয়ের সহিত কল ব্যাক করে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময়ের পর জানতে চাই তারা কোন ক্লাসে পড়ে- উত্তরে জানা যায় তারা দু'জন খালাতো বোন ৪০দিনের ছোট বড় দুজনাই ক্লাস এইটে পড়ে। পারভেজ বলে তোমরা তো অনেক সুন্দর (যা ছিল ঠান্ডা করার কৌশল), তোমাদের তো কারো প্রতি রাগলে চলবে না, কারো শাস্তি চাও ঠিক আছে তাই বলে তার চাকুরী চলে যাক সেটিকি আশা কর? তারপর আমি তোমার নানু বাসায় বাসা ভাড়া নিতে গিয়েছিলাম, তোমার নানুর ফোন নাম্বারও আছে উনি কোন সমস্যা করলে আমাকে বলো আমি বেল দিব যে তোমাদের দোষ নাই।
সঙ্গে সঙ্গে কাউন্টার পায়- আপনি তো দেখি আরেক চাপাবাজ, আমার নানু বাসার ফোন নাম্বার আপনি কোথা থেকে পাবেন। পারভেজ ওদের নানু বাসার নাম্বারটি বলতেই পারভেজের হাতে পায়ে ধরা শুরু হয়ে যায়। দেখেন ভাই আমার নানুদের কাছে বলবেন না ইত্যাদি ইত্যাদি। পারভেজ ওদের নানু বাসায় নাম্বার জোগার করে ছিল ব্যকআপ হিসেবে যদি তারা নাই মানে তা হলে ওদের গার্ডিয়ানদের কাছে বলে দুরন্তের চাকুরী বাঁচাতে হবে। কারণ এরই মাঝে একদিন ওদের প্রিন্সিপাল ফোন ধরেছিল, মেয়ে কন্ঠ দেখে প্রিন্সিপাল সাহেব খুব মাইন্ড করেছি।
পারভেজ সুযোগ পেয়ে শর্ত দিয়ে বসে- তোমরা যদি আর ওর অফিসে ফোন না কর তবেই আমি তোমার নানুদের জনাব না। তাতে তারা রাজি হয় তবে শর্ত ধরিয়ে দেয়- যদি তাদের সাথে আবার এধনের আচরণ করা হয় তবে তারা কিন্তু ছেড়ে দেবে না, এও বলে নানুকে কিন্তু আমারা বেশি ডরায় না। (চলবে)