এই নিবন্ধটি একেবারেই আমার ব্যাক্তিগত যদি কারো জীবনের সাথে মিলে যায় তবে সেটা কাকতালীয় ছাড়া কিছুই হবে না। বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বের অতি দরিদ্র কিংবা আমজনতার হৃদয়ের কথা যদি বলতে চাই তবে মুখে একটাই শব্দ উচ্চারিত হয় "হা-হুতাশ"। করোনা মহামারীর পর বিশ্বের কথা না হয় বাদ-ই দিলাম বাংলাদেশের মানুষের বেচেঁ থাকার মৌলিক যে ৫টি অধিকার রয়েছে আমি হলফ করে বলতে পারি নিম্ন বিত্ত ও মধ্যবিত্তরা সেটার শতকরা ১০ ভাগও পুরন করতে পারছে না।
তাদের হৃদয়ের মাঝে যে হাহাকার বিদ্যমান তা বাহিরে প্রকাশ করতেও পারে না আবার সইতেও পারে না। চাল, ডাল, তেল, নুনের দাম যেভাবে ক্রয় ক্ষমতার বাইরে যাচ্ছে তাতে সামনের দিনগুলোতে মানুষ কিভাবে বেচে থাকবে তা নিয়ে সন্দিহান। বাজার সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এক হপ্তায় হাজার হাজার কোটি টাকা নিদিষ্ঠ সিন্ডিকেট কারবারীর নিকট চলে যাচ্ছে। এতে গরীবের পকেট চুরি বলবো না ওটা পকেট ডাকাতি করে তাদের ”জিনা হারাম কার দিয়া”
অন্যদিকে ফি বছর যে হারে শিক্ষিত বেকার বের হচ্ছে তাতে বাংলাদেশের বেকার সমস্যা কতদুর যায় সেটাই দেখার বিষয়। বৃদ্ধ বাবা-মাদের নাভিস্বাষ। নুন আনতে পানতা ফুরায়। দেশের মাত্র ৫ শতাংশের মানুষের নিকট সকল টাকা। সুদখোরেরা আরও বড় লোক হচ্ছে। অর্থবন্টনের পাহাড়-সমতল বৈরি পার্থক্য গরীবের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে সেই কবি নজরুলের আমল থেকেই। প্রভুরা বা জমিদাররা তখন প্রজাদের নির্যাতন করতো সরাসরি। এখন গনতন্ত্র আসার পর সরকার প্রধান ও তাদের চেলা চামন্ডরা সেই গরীবদেরকেই নির্যাতিত করছে।
অর্থনৈতিক সমবন্টনের ছবি দেখতে পাওয়া যায় গুলশান-১ এর রাস্তায়, গোলচক্করে, কিংবা আজাদ মসজিদের পাশে লোটা হাতে নিয়ে আমির খানের থ্রি ইডিয়টের ভিক্ষুকের জীর্ন দেহের লোকের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। ওরা টাকা চাইলে বিড়িফুকে ওদের পাশদিয়ে চলে যায় যেটা আমিও করে থাকি কিন্তু ফুটো কড়িও ওদের কপালে জুটে না। ওরা গরুর মাংস কালেভদ্রে বছরে একবার খায়। দুধ ডিম কিংবা পুষ্টিকর খাবার ওদের কপালে জুটবে ক্যামনে, তাইতো ওদের দেহ জীর্ন শীর্ণ।
বাসার বুয়ার জামাই তিনশ টাকা রোজ কামাই করলে কোন টাকা দিয়ে চাল কিনবে আর তেল নুন-ই বা কোন টাকা দিয়ে কিনবে। ওদের ভিক্ষে দেওয়ার জন্য প্রতি বছর সেলফি জাকাতের কাপড় বিতরন করা হয়। রক্তচোষা গণতন্ত্রে ধব্জাধারীরের পেট ফুলে আরও বড় হচ্ছে কিন্তু জীর্ন শীর্ন ওদের দেহ আরও কংকাল দশা হয়ে যাচ্ছে। গরীবের আজ ব্রিটিশ আমল থেকেই নির্যাতিত নিষ্পেষিত। ওদের পাশে কবি নজরুল লিখেছিলেন কিন্তু সেই লেখার মর্মার্থ আমরা বুঝেও না বুঝাও ভান করে সবকিছু মেনে নিচ্ছি।
উনি লিখেছিলেন ভগবানের বুক ছেদ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি কোন ভগবানের কথা বলেছিলেন তা আমরা বুঝলেও অনুধাবন করতে চাই না। এই ভগবান হলো আগের আমলে যেমন বদ রাজা বাদশা এবং বর্তমানে গনতন্ত্রের রক্তচোষা শাসকরা। এখন গরীবরা টিসিবির ট্রাকের লাইলে কড়া রোদ মাথায় নিয়ে কম টাকায় চাল ডাল নুন তেল কিনতে যায়। এই কষ্ট গণতন্ত্রের ধজ্বাধারীরা এসির মনোরম ফ্লাটে বসে বুঝতে পারে না। সেখানে ওরা রাম পান করে নারী মাস্তি করে!
উপরে যে আসল ভগবান বসে আছেন তিনি তো গরীবের এমন দশা অবলোকন করছেন! কিন্তু তিনি তো মানুষ সৃষ্টি করেছেন পৃথীবিতে অরাজকতা না করতে, শয়তানের পথ অনুসরন না করতে। কিন্তু বর্তমানের শাসকদের আচরন দেখলে স্বয়ং শয়তানও হাফ ছেড়ে বেচে যায়। সে বলতে থাকে যাক আমার আর দরকার নাই আমার চেয়েও বড় বড় শয়তান বিশ্বের আনাচে কানাচে স্বগৌরবে দৃঢ় ভাবে বিদ্যমান। গরীবের দু:খ দেখে সে অট্টোহাসিতে শরাব পান করছে!
কবি নজরুল বলেছিলেন, যেদিন নির্যাতিতের ক্রন্দ্রন রোল আকাশ বাতাসে রনিবে না, আমি বলি সেই দিনটি কবে আসবে? তিনি এটা লিখেছিলেন প্রায় ৯০ বছর আগে। যখন তিনি লিখেছিলেন সেময়ে যে নির্যাতিত ছিল আজও তারচেয়ে বেশি ডিজিটাল নির্যাতিত গরীব আছেন। এখন প্রশ্ন হলো স্বয়ং আসল ভগবান কি নিজে এসে এই নির্যাতিতের ক্রন্দনরোল মেটাবেন? নাকি আমাদের এই বিশ্নের ৮০০ কোটি মানুষের মধ্যে থেকে এমন একজন নেতা তৈরি হবে যিনি কিনা সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন!
সুদ, ঘুস, নারী নির্যাতন, খুন, ধর্ষন, অসম অর্থনৈতিক বন্টন সহ আরও যাবতীয় শয়তানী কার্যকলাপ রয়েছে তা নি:শেষ করবেন। সেটা আমাদের মতো মানুষদের মধ্যে থেকে একজন লিডার হয়ে তার সমমনা সহচর দিয়ে শয়তানীর অবস্থাদৃষ্টে শক্ত অথচ খুব দুর্বল ব্যবস্থাপনাকে ভেঙে চুরে গুরমার করে দিয়ে সত্য ও ন্যায়ের একটি সমাজ কিংবা সেইসমমনাদের একটি রাষ্ট্র গঠন করবেন যেখানে নির্যাতিতের ক্রন্দ্রন রোল আর বহিবে না?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৫