প্রায় পুরোদিন কেটে গেছে চক্ষু হাসপাতালের আউটডোরে; বাসায় ফিরছি 'পিক-টাইমে'(কাজের লোকেরা যখন বাসায় ফেরে), ট্রেনে ভীড়। ট্রেনের দরজার দুইপাশে ২টি আফ্রিকান আমেরিকান মেয়ে বাহিরের দিকে পিঠ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, মাঝখান দিয়ে একজন করে যাত্রী এঁকেবেঁকে উঠছে; মেয়ে ২টির কানে এয়ারফোন লাগানো, কিছু বললে শোনার সম্ভাবনা নেই। দরজা বন্ধ করার ঘোষণা শুনলাম, আমি কোনভাবে উঠলাম; বামপাশের মেয়েটার গায়ে ধাক্কা লেগেছে, সে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, কিছু বলতে যাচ্ছে; আমি বললাম,
-এক মিনিট অপেক্ষা কর, আমি দাঁড়ানোর ব্যবস্হা করে নিই।
আমি তার সামনে দাঁড়ানোর যায়গা পেলাম। বললাম,
-এবার বলো!
-তুমি উঠার সময় আমাকে ধাক্কা দিয়েছ, স্যরি ম্যরি কিছু তো বললে না, মেয়েটি বললো।
- ঠিক আছে , আমি স্যরি; তুনি দরজা ব্লক করে দাঁড়ায়ে আছ, মানুষ কিভাবে উঠানামা করছে?
- মানুষ ঠিকই উঠেছে, কই কেহ তো ধাক্কা দেয়নি, শুধু তুমি ধাক্কা দিয়েছ!
-আমি ধাক্কা দিইনি, বরং তোমার পেছনভাগে ধাক্কা লেগে আমার কোমরের বামদিকে ব্যথা পেয়েছি, তোমার পেছনের পকেটে শক্ত লোহা টোহা আছে নাকি?
সে নিজের পেছনের পকেট দেখায়ে বললো:
-দেখ আমার পকেটে কিছুই নেই!
-ম্যান, তা'হলে তো বেশ ভাবনার বিষয়; তুমি সম্ভব হলে ঘনঘন ম্যাসেজ পার্লারে যেয়ো ও রুটির সাথে বেশী করে মাখন খেয়ো! না হয়, কারো ভাগে শক্ত কিছু পড়বে!
-হেই, হেই, এটা কিন্তু সেক্সুয়েল এসাল্ট!
-তুমি সিরিয়াস?
আমি বললাম,
-শোন, আমি তোমাকে স্পর্শ করছি না, শুধু কথা বলছি, এতে সেক্সুয়েল এসাল্ট হচ্ছে কিভাবে?
-শোন, তোমরা কোন দেশ থেকে আস কে জানে, আমাকে মাখন খেতে বলা কিন্তু ভালো হয়নি; স্যরি বলো!
-ঠিক আছে, স্যরি। আমি অন্য ওয়াগণে যাচ্ছি, না হয় স্যরি স্যরি চলতে থাকবে।
-কথা কিন্তু শেষ হয়নি!
-কথা শেষ, তুমি অন্য লোক খুঁজতে থাকো।
পরের ষ্টেশনে আমি সামনের একটি ওয়াগণে উঠলাম, ভীড়। মাঝখানে একটা মেয়ের কাঁধে বিরাট ব্যাগ, হাতে আরেক ব্যাগ; সে নড়লো,ব্যগটা আমার মেরুদন্ডে আঘাত করলো। আমি তার দিকে তাকাতে সে বুঝতে পারলো, বললো,
-স্যরি, আজকে তোমার দিনটা ভালো যাচ্ছে না।
-তুমি কি করে জানো?
-আমি কিছুক্ষণ আগে পেছনের ওয়াগণে ছিলাম। তোমার ও এক সুন্দীর ডায়ালগ শুনেছি কিছুক্ষণ।
আমার সামনে একটা সিট খালি আছে; কিন্তু পাশের সীটের মেয়েটি এই সীটের অর্ধেক দখল করে বসে আছে; তার পায়ের বিস্তার ১২০ ডিগ্রির মতো, এবং কোটটি ছড়ায়ে ছিটায়ে আছে। আমি ট্রেনে মোটামুটি বসি না; ব্যাগ-ওয়ালা মেয়েটাকে বললাম,
-এদিকে একটা সীট আছে, বসে পড়, ব্যাগ নিয়ে তুমি সমস্যায় আছ!
-তুমি বয়স্ক, তুমি বস, তাতে কিছুটা যায়গা বাড়বে।
পা-ছড়ানো মেয়েটা কোট টোট সরায়ে আমাকে বসতে দিলো; বসে বুঝলাম, উহার কোটের সামান্য কোণার উপর আমি বসেছি। মেয়েটি বললো:
-সর্বনাশ, তুমি আমার পুরো কোটটা নষ্ট করে দিয়েছ! সে একটু টানতেই কোণটুকু মুক্ত হলো। সে আবার বললো,
-আমার দামী কোটটা একেবারেই শেষ।
-তোমার কোটের একটু কোণার উপর বসাতে পুরো কোট নষ্ট হয়ে গেছে? শোন, এত পুরোনো কোট পরে পাবলিক ট্রেনে উঠাই ঠিক হয়নি!
-তোমার কোটের চেয়ে আমার কোট অনেক দামী! কোট কি তুমি কিনে দিয়েছ?
-আমি যখন কিনে দেবো, সবচেয়ে দামী কোটই কিনে দেবো; এটা ফেলে দিও, না হয় তোমার কোট থেকে মানুষের গায়ে ছারপোকা উঠবে!
-কি বললে? আমার কোটে ছারপোকা আছে? তুমি আমাকে অপমান করেছ।
-ওকে, স্যরি; তোমার কোটে ছারপোকা নেই!
ব্যাগ-ওয়ালা মেয়েটা বললো,
-শোন, তোমার সামনের ওয়াগণে যাবার সময় হয়েছে। স্যরি, আজকে তোমার দিনটা কিছুতেই ভালো যাচ্ছে না।
ট্রেন থামার সাথে সাথে নেমে গেলাম; পরের ট্রেনে যবো!
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:৪০