শিয়ালের ডাকে ঘুম ভাংগলো, মাঝরাত হবে, মনে হচ্ছে; নিঝুম রাতে শিয়ালের চীৎকার অদ্ভুত লাগছিলো; মিনিট খানেক পরে শিয়ালগুলো শান্ত হলো, চারিদিকে গভীর রাতের প্রশান্তি; জানালায় ফাগুনের হালকা বাতাস; কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ অনেকটুকু উঠেছে, হালকা মিস্টি আলো, আকাশভরা তারকারাজি; পুর্ব পাশের মাঠে চার পাঁচটা শিয়াল দৌঁড়াচ্ছে: শামুক, কাঁকড়া, কিংবা ইঁদুর ধরার চেস্টা করছে। ফার্মে ঘুম ভাংলে প্রথম কাজ গরুগুলোকে একবার দেখা; গরু ঘরের সামনে যেতে লাল বলদটি উঠে দাঁড়ালো; পানি খাবে। বালতি হাতে টর্চ নিয়ে পুকুরের দিকে চললাম, হালকা আলোকেও টর্চ দরকার, রাতের এই হালকা আলোকে সাপের বাচ্চাগুলোকে দেখা যায় না। দুর থেকেই দেখছি, ঘাটে একজন লোক বসে আছেন; এত রাতে এদিকে কেহ আসার কথা নয়; আমি কাছে যেতে লোকটি উঠে দাঁড়ালেন, বয়স্ক।
-আপনাকে তো চিনলাম না, আমি বললাম।
-বাবা, আমি সোনাগাজীর লোক, কাজের খোঁজে এসেছিলাম, আজ ৩ দিন কিছু পাইনি; আজ বিকেলে সাধুর হাঁটে গিয়েছিলাম, কেহ নিলো না; এই ফার্মে আমি কাজ করেছিলাম কয়েক বছর আগে, সেই আশায় এসেছি; মালিকের বাড়ীটা মাঠের কোন পাশে ভুলে গেছি।
-আসেন, ঘরে আসেন। রাতে খেয়েছেন?
-না বাবা, কিছু খাইনি।
উনাকে বসায়ে আমি বাড়ী গেলাম, ১০ মিনিটের পথ, সবাই ঘুমাচ্ছে; ভাতে পানি দিয়ে দিয়েছে; যাক, এটাই দিতে হবে। লোকটার বয়স পন্চাশের কাছাকাছি হবে, বয়সের তুলনায় দুর্বল। সকালে উনি আমার আগেই উঠে গেছেন।
-চলেন, বাড়ী থেকে খেয়ে আসি। বাড়ীর কাছে যেতেই তিনি বাড়ী চিনলেন।
-আপনি কি মালিকের ছেলে? উনার চেহারার সথে মিল আছে!
-হ্যাঁ উনার ছেলে; উনি নেই, উনার মৃত্যু হয়েছে।
কাছারী ঘরে বসে দুইজনে খেলাম।
-আপনার ছেলেমেয়ে কয়জন? আমি জানতে চাইলাম।
-দুই মেয়ে, এক ছেলে!
-ওদের ব্যবস্হা আছে বাড়ীতে?
-না, বাবা; আমি আসার সময় ঘরে কিছু ছিলো না; আমিও খালি হাতে বের হয়েছি।
-মিয়াজান ঘাট হয়ে মুহুরী নদী পার হলে, কত মাইলের মধ্যে আপনার বাড়ী?
-কাছেই বাবা; ৩/৪ মাইল হবে।
-আপনি আমাদের কাজ করবেন, আমি আপনাকে ২ সপ্তাহের বেতন দেবো এখন, আপনি বাড়ী গিয়ে টাকাগুলো দিয়ে চলে আসেন।
লোকটার চোখে পানি; উনি ২ দিন পর ফেরত আসলেন। আমাদের কাজ করেছিলেন ৪ বছর। আমাকে মাঝে মাঝে প্রশ্ন করতেন,
-আপনি কিভাবে আমাকে বিশ্বাস করে, ২ সপ্তাহের অগ্রিম বেতন দিয়েছিলেন?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ ভোর ৪:২০