সবচেয়ে বড় কারণ হলো, নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতাকে শুধুমাত্র জীবিকা অর্জনের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে; বাংলাদেশে জীবিকা অর্জন এখনো কষ্টকর প্রচেষ্টা, জীবিকা অর্জনে অনেক প্রতিযোগীতা; ফলে, একজন শিক্ষিত মানুষ, অন্যজন সমমানের-শিক্ষিত, বা বেশী শিক্ষিতকে প্রতিযোগী হিসেবে নিচ্ছেন; এতে, প্রত্যেকেই কোন না কোনভাবে নিজকে অন্যের চেয়ে বড় পন্ডিত হিসেবে তুলে ধরার চেস্টা করছেন; অনেকেই, সমমানের শিক্ষিতদের সুযোগ মতো নাজেহাল করার চেস্টা করেন। শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রতিযোগীতা শিক্ষিতদের ঐক্যের বিপরিতে কাজ করছে।
আরেকটা বড় কারণ হচ্ছে, শিক্ষিতরা সামগ্রিকভাবে অশিক্ষিতদের ঠকায়ে এসেছে দীর্ঘ সময় থেকে; বিশেষ করে বৃটিশ আমলের শেষ দিক থেকে। এখনো একজন থানা পর্যায়ের অফিসারের অফিসে একজন সাধরণ মানষের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে; এতে করে শিক্ষিত ও সাধারণ মানুষের মাঝে যোজন যোজন দুরত্বের সৃস্টি হয়েছে; সাধারণ মানুষ দেখেছে, শিক্ষিতরা তাদের ঠকায়ে এসেছে যুগে যুগে।
কলোনিয়েল যুগের পর, শিক্ষার প্রসার ঠেকিয়ে দিয়েছেন শিক্ষিতরা নিজেই; পাকী ও বাংলাদেশ আমলে ক্ষমতায় থাকা ব্যুরোক্রেটরা পরিকল্পনা করে মানুষকে মানুষকে শিক্ষা থেকে বন্চিত করে আসছে; এতে করে নিজেদের শ্রেনীই বড় হতে পারেনি।
অন্য একটা বড় কারণ, শিক্ষার মান; কলোনিয়েল যুগের পর, যেটুকু শিক্ষার প্রসার ঘটেছে, সেই অনুযায়ী শিক্ষার মান বাড়েনি; অনেক পলিটিক্যাল সায়েন্সের ছাত্রও ঠিক মতো গণতান্ত্রিক ব্যবস্হাকে বুঝতে পারেননি; ফলে, তারা রাজনীতিতে ধর্ম কর্ম মিশায়ে এক জগা-খিচুড়ির সৃস্টি করেছেন, ও আলাদা হয়েছেন!
সমাজে শিক্ষা যদি জীবিকা অর্জন, জ্ঞানের প্রসার ও সমাজের প্রতি অবদানের যোগ্যতা হিসেবে গ্রহন করা হয়, তখন শিক্ষিতদের অবদান চোখে পড়বে, অবদানকে মাপা সম্ভব হবে; তখন শিক্ষিতরা নিজেদের অবস্হান বুঝতে পারবেন; অন্যেরাও অনুধাবন করতে পারবেন। অবদানকারীকে হেয় করার চেষ্টা যে হবে না, তা নয়; তবে, অবদানকারীকে সমাজ বড় চোখে দেখেন সব সময়। শিক্ষিতদের অবদান হতে হবে সবার জন্য ও নিরপেক্ষ। সর্বোপরি, শিক্ষিতদের বুঝতে হবে যে, তারা সমাজের দেয়া সুযোগ গ্রহন করে শিক্ষিত হয়েছেন, সমাজকে সময় মতো বহুগুণে ফেরত দিতে হবে, ও পেছনে-পড়ে-থাকা অংশের ভার বহন করতে হবে; তখই শুধু শিক্ষিতরা রাজনীতিতে নিজেদের অবস্হান শক্ত করতে পারবেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই আগস্ট, ২০১৭ বিকাল ৫:৪০