মাত্র বছর খানেক আগে, আইন করা হয়েছে, "চাকরাণীর বয়স ১৪ বছরের উপরে হতে হবে"; বর্তমান সরকারের অধীনে আইনটা হয়েছে; আইনটা ভুল; শ্রমের বয়স কমপক্ষে ১৬ বছরের উপরে হওয়া দরকার; মেয়ে ভৃত্যের বয়স ১৮ বছরের উপর হওয়া দরকার।
সাবিনা খুবই সৌভাগ্যবান যে, সে জীবিত আছে; তার কাছাকাছি বয়সের বহু চাকরাণী মেয়ে প্রান হারায়েছে এই বাংলাদেশে। সাবিনার পক্ষে সারাদেশ প্রতিবাদী হয়েছে; কিন্তু সাবিনার দুভাগ্য যে, যারা সাবিনার পক্ষে প্রতিবাদ করছেন, তাদের ৯৯% ভুল ভাবনার উপর দাঁড়ায়ে প্রতিবাদ করছেন; প্রতিবাদীরা সাবিনার মালিকদের শাস্তি চেয়েছেন, ঘৃনা প্রকাশ করেছেন, এটুকুই; আসলে, এই প্রতিবাদীরা কিশোরীদের চাকরাণী হওয়ার পক্ষে, এদের মগজ ছোট। মালিকদের শাস্তি সাবিনাকে সাহায্য করবে না, সুস্হ হওয়ার পর, তাকে আরেক ঘরে যেতে হবে, এটাই ভুল। আসলে, এটর্নি জেনারেল মেয়েটার পক্ষে এগিয়ে আসা উচিত ছিল ও ক্ষতিপুরণ দাবী করে, মেয়েটাকে পড়ানোর খরচের ব্যবস্হার দরকার ছিলো; হাইকোর্ট সেই পদক্ষেপটি নিজের থেকে এখনো নিতে পারে। সাবিনার সিভিল রাইট আছে, সরকারের কাছে ক্ষতিপুরণ চাওয়ার।
সাবিনার উপর অনেকগুলো পোস্ট পড়েছি ব্লগে; দু:খের বিষয়, তাঁদের ভাবনাও মালিকের শাস্তি চাওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ। বিচার চাইলে শাস্তি হতে পারে, নাও হতে পারে; মালিকের শাস্তিতে সাবিনার পেট ভরবে না, ওর দরকার ক্ষতিপুরণ ও এই চাকরাণী জীবন থেকে বের হওয়া; কিন্তু ব্লগারেরা অতদুর অবধি লিখেননি; ব্লগারেরা চাইলেই যে, হয়ে যাতো তা নয়; ব্লগারদের চিন্তাশক্তির লেভেল বুঝা যেতো।
শেখ হাসিনা, মতিয়া চৌধূরী, রওশন এরশাদ, শিরিণ আক্তার, সাজেদা চৌধুরীর যুগে, কমপক্ষে "১৪ বছর বয়সের চাকরাণী"র ভুল আইনটা কার্যকরী করা তো সম্ভব, সামন্য মগজের দরকার মাত্র। যাদের বাসায় ১৪ বছরের নীচের বয়সের চাকরাণী আছে, তাদেরকে রিপোর্ট করতে বললে, তারা রিপোর্ট করবে; সরকারের একটা ব্রান্চ এই কিশোরীদের দায়িত্ব নেবে, পড়াবে; ভয়ংকর কঠিন কিছু না!
মাত্র ৬ মাস আগে, শেখ হাসিনা "ডিজিটাল বাংলাদেশ'এর এক প্রোগ্রামে প্রায় ৮০ লাখ স্কুলগামী মেয়ের একাউন্টে উপবৃত্তির টাকা ডিপোজিট করেছেন; এই ৮০ লাখের ভেতর কমপক্ষে ২০ লাখ মেয়ের পরিবারের অবস্হা খুবই ভালো; সরকারের ২ পয়সার জন্য এসব পরিবার বসে নেই; এই টাকাগুলো অপ্রয়োজনে দেয়া হয়েছে।
কিন্তু স্কুলের বাহিরে, একই বয়সী ১১ লাখ কিশোরী, যারা চাকরাণী হিসেবে কাজ করছে, তারা এই টাকা হতে বন্চিত হয়েছে; আসলে, টাকাটা কার বেশী দরকার ছিলো? শেখ হাসিনা ভয়ংকর অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন, কোথায় টাকা খরচ করতে হবে, কার বেশী প্রয়োজন, সেটি নির্ণয়ে তিনি অদক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন; ধনী পরিবারের ২০ লাখ মেয়ের টাকাটা সাবিনার মতো কিশোরীদের জন্য দেয়ার দরকার ছিলো।
১৯৭২ সালে, শেখ সাহেবের উচিত ছিলো আইন করা, কোন কিশোরীকে "চাকরাণী" করা যাবে না; কারো পরিবার পড়াতে অসমর্থ হলে, জাতি সেই কিশোরীর অর্থনৈতিক ও শিক্ষার দায়িত্ব নেবে; তিনি ফেল করেছেন, ১৯৭২ সালের পর, তিনি সবকিছুতে ফেল করেছেন; আজ দেখছি, বাবার মগজ মেয়েও পেয়েছেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:৩২