জালাল ড্রাইবার, চট্টগ্রামের একটি ট্টাকিং কোম্পানীতে কাজ করেন, পোর্ট থেকে মালামাল নিয়ে দেশের সব এলাকায়ই যাচ্ছেন গত পঁচিশ বছর; আজ রাতে যাচ্ছেন গাজিপুর, বড় এয়ার কন্ডিশানিং ইউনিট নিয়ে যাচ্ছেন; রওয়ানা হওয়ার আগে, বাসায় এসেছেন; বাসা পোর্টের কাছে, নিমতলায়; ট্রিপে রওয়ানা দেন সাধারণত রাতে, বাসা থেকে খেয়ে, স্ত্রীকে টাকা পয়সা বুঝায়ে দিয়ে, ছেলেমেয়ের সাথে কথা বলে রওয়ানা দেন তিনি; তিনি জানেন ড্রাইভিং'এ ঝুঁকি আছে, যাওয়ার আগে পরিবারের সবাইকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে যান; ছেলেটা কলেজে প্রথম বর্ষে, মেয়েটা দশম শ্রেণীতে; জালাল ছেলেমেয়ের পড়ালেখার ব্যাপারে খুবই হুশিয়ার; নিজে দারিদ্রতার কারণে পড়তে পারেননি, অল্প বয়সে আয় করতে হয়েছে। ট্রাক বাসার সামনের রাস্তায়, আজকে এসিস্টেন্ট হিসেবে নিয়েছেন আসিফকে; আসিফ ট্রাক পাহারা দিচ্ছে।
রাত ৯টায় রওয়ানা হলেন ঢাকার দিকে; রওয়ানা হওয়ার আগে নিজে চাকা ও ইন্জিনটা দেখলেন; আসিফ মালামাল চেক করে দেখলো। রাত সাড়ে বারোটায় কুমিল্লা পৌঁছলো ট্রাক; আসিফ খেতে গেলো, ২০ মিনিট সময় দিলেন জালাল; নিজে ট্রাকের পাশে দাঁড়িয়ে পাহারা দিলেন। আসিফ খেয়ে আসার পর, আবারো রুটিন মাফিক চাকা ও ইন্জিন চেক করলেন জালাল; আসিফকে উপরে উঠে মালামাল দেখতে বললেন।
-ওস্তাদ, আপনার এত বড় এয়ার কন্ডিশানের বাক্স কি কেহ নিতে পারবে? আসিফ এই বাড়তি হুশিয়ারীটুকুকে অপ্রয়োজনীয় মনে করে।
-আসিফ, দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করো, এটাই চাকুরী, আমরা নিরাপদ থাকবো; টর্চ দিয়ে সবকিছু ভালো করে দেখ।
আসিফ ইন্জিনের পাশ দিয়ে উপরে উঠলো; একটু পরে লাফ দিয়ে নেমে এলো; বললো,
-ওস্তাদ, আপনার এক মেহমান কাঁথা বিছায়ে, মাথা ঢেকে ঘুমাচ্ছে।
জালাল উপরে উঠে, টর্চ দিয়ে দেখলো, মেয়ে একটা ছাদর দিয়ে মুখ ঢেকে কাথার উপর শুয়ে আছে।
-এই মেয়ে উঠে বস, বললেন জালাল। মেয়ে ঘুমাচ্ছে বলে মনে হলো না, কিন্তু সে নড়লো না।
-এই মেয়ে উঠ! এবার মেয়ে উঠে বসলো; জালাল হতবাক, পাশের বাসার ইন্জিনিয়ার সাহেবের চাকরাণী, জোবায়দা; ১৩/১৪ বছরের মেয়ে; দীর্ঘদিন ইন্জিনিয়ারের বাসায় আছে; মাঝে মাঝে জালালের বউ'এর কাছে আসে, জালালের মেয়ের ফুট-ফরমায়েশ ধরে, দোকানে পাঠায় এটা সেটা কিনে আনার জন্য; জালালকে চাচা ডাকে।
-তুই কোথায় যাচ্ছিস মেয়ে? জালাল প্রশ্ন করলেন।
-আমি ঢাকা যাবো; আমার মাকে খুঁজতে যাচ্ছি! মেয়ে উত্তর দিলো।
তুই পালায়ে যাচ্ছিস? ইন্জিনিয়ার সাবদের বলে এসেছিস?
-না।
-ঢাকা যেতে হলে আমাকে বলিস নাই কেন?
-আপনি হয়তো নিতেন না।
-ঠিক আছে, উঠ, সামনে আয়, কাঁথা এখানে থাক, তুই সামনে কেবিনে আয়। আসিফ, কাকু তুমি এখানে থাক।
-কাকু, আমাকে শাস্তি দিলেন? আসিফ বললো।
-কাকু, ট্রাক ছাড়ার আগে তুমি উপরে চেক করেছিলা, মনে আছে?
মেয়ে গায়ের চাদরটা ও ছোট একটা পুটলি নিয়ে কেবিনে এসে বসলো।
ট্রাক চলছে; জালাল জোবায়দাকে প্রশ্ন করলো, "তোর মা ঢাকায় কোথায় থাকে?
-আমি জানি না।
-তুই ইন্জিনিয়ার সাহেবের বাসায় কত বছর?
-ঠিক জানি না, চাচিমা বলেছেন, ৫ বছরের মতো হবে।
-পাঁচ বছরে তোর মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল?
-না।
-তোর মায়ের সাথে কোন যোগাযোগ হয়েছিল এই ৫ বছরে?
-না।
-তোর মার নাম কি?
-আমি মায়ের নাম জানি না, সবাই জোবায়দার মা ডাকে।
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:২৪