মুসলমানদের আজকের বিপর্যয়ের মুলে কি কি কাজ করছে? উত্তর: (১) ইহুদী নাসারাদের ষড়যন্ত্র (২) কোরানের শিক্ষা থেকে দুরে সরে যাওয়া, কোরান নিয়ে গবেষণা না করা।
প্রথম উত্তরটা পাবেন যারা মাহফিল ইত্যাদিতে ওয়াজ করেন, জীবনে একজন ইহুদীও দেখেননি; এবং বর্তমান পোপের নাম জানেন না; ভেটিকান কি, উহা কোথায়, উহার আয় ব্যয় সম্পর্কে যার মাথায় কিছু নেই, তাদের কাছে!
দ্বিতীয় উত্তরটা মোটামুটি জামাত, শিবির, ও মাদ্রাসার ছাত্র, বুয়েট, রাজশাহী ও চট্টগ্রাম ইউনিভার্সিটিতে যারা পড়ছেন, তাদের।
যাক, উত্তর ২টিই ভুল; ইহুদী ও খৃস্টানরা বর্তমানে মুসলমানদের বিপক্ষে কোন ষড়যন্ত্র করে না; কারণ, ইউরোপ, আমেরিকা ও কানাডার মানুষ শান্তিপ্রিয়; অশান্তি-প্রিয় হচ্ছে আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশী ভাগ লোকজন। আজ, কোরান ও কোরানের সম্পুরক ধর্মীয় পুস্তক প্রকাশনীর দিক থেকে বিশ্বে ২য় স্হানে আছে, ৪০ মিলিয়নের বেশী কপি ছাপানো হয় বছরে। রসুলে ( স: )'এর সময়ে কয় কপি কোরান ছিল আরবে? আব্বাসীয় যুগে কত কপি কোরান ছিল, এবং কতজন পড়তে পারতেন? এখন শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমান পড়তে পারেন; যিনি মাতৃভাষায় নিজের নাম লিখতে জানেন না, তিনিও আরবীতে সুরা কালাম পড়তে জানেন।
কোরানের বেশীর ভাগ সুরা নাজেল হয়েছিল নবী (স: ) সময়ের সামাজিক ও ধর্মীয় সমস্যার সমাধান হিসেবে; ততকালীন সময়ে আল্লাহ মানুষের জন্য কোরানে "মেনডেলিভের পেরিওডিক টেবিল" দেননি; কিংবা পদ্মাসেতুর স্ট্রাকচারেল কালকুলেশনের ফরমুলাও দেননি; কোরানে এন্টিবাওটিকের কম্পাউন্ডের সিমবোল দেয়ার দরকার ছিলো না; কারণ ততকালীন মানুষ অতটুকু রসায়ন, পদার্থ বিজ্ঞান জানতেন না। কোরানে এমনভাবে বাণী দেয়া হয়েছে, যেন মানুষ বুঝতে পারেন; এবং ততকালীন মানুষ আজকের মানুষ থেকে বেশ কম বুঝতেন।
রসুল ( স: ) কোরান পাওয়ার আগেও মক্কা ও আশে পাশের মানুষদের প্রাকৃতিক জ্ঞান ছিল; হয়তো গ্রিক, পারসিক, বা রোমানদের সমান ছিলো না; তারা পশু পালন করতেন, কুয়া তৈরি করতেন, মরুদ্যানে চাষ করতেন, তাঁবু বানাতেন, তলোয়ার, বর্শা বানাতেন। কোরান আসার পর, তাদের প্রাকৃতিক জ্ঞান সাথে সাথে বাড়েনি, সময় লেগেছে; তাদের প্রাকৃতিক জ্ঞান বেড়েছে পারশিক, রোমান ও গ্রীকদের সংস্পর্শে এসে; এরপর আববাসীয় যুগে তারা নিজেরাও প্রাকৃতিক জ্ঞান উন্নয়নের চর্চা করেছেন। কোরান আসার আগে, গ্রীকেরা প্রাকৃতিক জ্ঞানে অনেক অগ্রসর ছিল। খৃস্টান ধর্ম ইউরোপে প্রসার হওয়ার পর, প্রাকৃতিক জ্ঞানের সাথে ধর্মীয় জ্ঞানের তেমন সংঘর্ষ হয়নি। আব্বাসীয়দের থেকে শুরু অটোম্যানদের সময়ে প্রাকৃতিক জ্ঞান যতটুকু উন্নতি লাভ করে, তার সামান্যটুকুও প্রসার লাভ করেনি; কারণ, শিক্ষার বিস্তার ঘটেনি।
রেনেসাঁর পুর্বে মুসলিম এলাকায় আল আজহার ব্যতিত নামকরা কোন ইউনিভার্সিটি ছিলো না; নবম ও দশম শতকে ইউরোপে অসংখ্য ইউনিভার্সিটি গড়ে উঠেছে; এসব ইউনিভার্সিটি ছিল রেনেসাঁর জন্মস্হান।
ওল্ড টেস্টামেন্ট, নিউটেস্টামেন্টের সাথে প্রাকৃতিক জ্ঞানের বিশাল কোন সংঘর্ষ হয়নি; সুতরাং, কোরানের সাথে প্রাকৃতিক জ্ঞানের সংঘর্ষের কোন কারণ থাকতে পারে না। অটোম্যনারা মানুষকে পেছনে ধরে রেখে, রাজতন্ত্র চালিয়ে যাবার জন্য ইউনিভার্সিটির যায়গায় মাদ্রাসা করেছিল, যা আজকের পাকিস্তানও করে বেড়াচ্ছে; এতে মুসলমানেরা বিশালভাবে পেছনে পড়ে যায় প্রাকৃতিক জ্ঞানে। এইসব মাদ্রাসার লোকেরা কোনভাবেই ইউরোপের ইউনিভার্সিটির লোকদের সাথে পেরে উঠছিলো না; তারা নিজেদের দৈন্যতা ঢেকেছে অন্যদের উপর দোষ চাপায়ে, স্বয়ং প্রাকৃতিক জ্ঞানকে অপবাদ দিয়ে; তারা প্রাকৃতিক জ্ঞানকে অস্বীকার করে আসছিলো; আজকেও করছে।
প্রাকৃতিক জ্ঞান কঠিন; কারণ ইহা সময়ের সাথে সামনুপাতিক হারে বাড়ছে; ইহা ধর্মীয় জ্ঞান থেকে কঠিন; কিন্তু ইহা ধর্মীয় জ্ঞানের সম্পুরক; মুসলমানদেরকে প্রাকৃতিক জ্ঞান আহরণ করতে হবে; তখন তারা বুঝতে পারবে, তারা কেন পেছনে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৩৯