কবি নজরুল ইসলামের বাবার মৃত্যু হয়, যখন নজরুলের ইসলামের বয়স ৯ বছর; বাবা ছিলেন মাসজিদের ইমাম; পরিবারে ৩ ভাই, ১ বোন ও মা; কোন আয় নেই; নজরুল ইসলাম হলেন মুয়াজ্জিন। চাচা লেটো গান করতেন, চাচাকে গান লিখে দেয়ার শুরু করলেন; চাচার সহিত গান করতে গেলে নিজের খাওয়াটা হতো, পরিবারের বাকীদের চলতো না; তাই চাকুরী নিলেন বেকারীতে ও চা দোকানে।
ততকালীন বৃটিশ-বিরোধীদের মাঝে বড় হওয়ায়, কৈশোরে নজরুল ইসলাম কলোনিয়েল সিস্টেমের বিপক্ষে কথা বলতেন, গানেও সেই মনোভাব ছিলো; কিন্তু দারিদ্রতা মানুষকে পরাজিত করে, সব সন্মান কেড়ে নেয়; কবি বাধ্য হলেন বৃটিশ মিলিটারীতে যোগ দিতে; তখন ১ম মহাযুদ্ধ চলছে; কবি ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিতে পারলেন না।
যুদ্ধ-শেষে কবি দেশে ফিরলেন, কবিতা লিখলেন, গান গাইলেন, সুরকার হলেন, সাংবাদিকতা করলেন, রাজনীতি করলেন; কিন্তু দারিদ্রতা চির সাথী হয়েই রলো। কবি অসুস্হ হলেন ১৯৪২ সালে। ততকালীন কলিকাতাবাসী উনাকে একেবারে ফেলে দেননি, চিকিৎসা করায়েছেন দেশে বিদেশে; কিন্তু পরিবার খুবই দরিদ্র অবস্হায় ছিল; কলিকাতার লোকেরাও বেশীর ভাগ দরিদ্র ছিলেন।
১৯৫৩ সালের পর থেকে কবিপত্নী প্রমিলা দেবীও ক্রমেই অসুস্হতায় ভুগতে থাকেন; এই অসুস্হতা নিয়েও কবির যত্ন নিয়েছেন; প্রমিলা খুবই অসুস্হ থাকলেও স্বামীকে খাওয়ায়ে দিতেন নিয়মিত। ১৯৬২ সালে প্রমিলা দেবীর মৃত্যু হওয়ার পর, কবির পরিবার খুবই অগোছালো ও বেশ দারিদ্রতায় ভোগেন; কবির ভক্তদের সংখ্যাও তখন কমে গেছে; তদুপরি, ১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগকে কেন্দ্র করে হিন্দু-মুসলিম সম্পর্কেও টানাটানি চলছিলো।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর, শেখ সাহেবের নজরে পড়েন কবির পরিবারের অবস্হা; শেখ সাহেব কবিকে ঢাকা নিয়ে আসেন; শেখ সাহেব পুরো বাংগালী জাতির মুখ উজ্বল করলেন। কবির পরিবারের কেহ কেহ ঢাকায় তাল মিলাতে পারছিেলন না; অসুবিধা নেই, কবির জীবনের শেষ ৪ বছর দারিদ্রতা ছিলো না; নিশ্চয় কবি সেটা অনুভব করতে পেরেছেন; ঢাকার মানুষ কবির প্রতি আগ্রহী ছিলেন, সন্মান করেছেন। শেখ সাহেব ও বাংগালীরা মিলে কমপক্ষে কবিকে শেষ জীবনের সময়টুকু দারিদ্রতার বাহিরে রেখেছিলেন; এটা একটা বড় ইতিহাস।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মে, ২০১৭ রাত ১:২৫