রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে, সেই এলাকা ও বাংলাদেশের মানুষের উন্নয়ন হবে না? অবশ্যই হবে। সুন্দর বনের আশেপাশের যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ নেই, তাঁরা বিদ্যূৎ পাবেন, "বিদ্যুতের বিল" দেবেন; যিনি চুরি করে সুন্দর বন থেকে মধু আহরণ করেন, তাঁর মধু চুরির ব্যবসায় বিদ্যুৎ কি "বিলের পরিমাণ" নতুন টাকা যোগ করবে? করবে না। উনাকে মধুর পরিমাণ বাড়ানোর জন্য মধুতে আরো বেশী চিনির সিরাপ যোগ করতে হবে। বিদ্যুতের কয়লার ধোঁয়ায় যদি মধুপোকা প্রাণ নিয়ে পালিয়ে যায়, তারপরও মধু বিক্রয় বন্ধ করা যাবে না, বিল দিতেই হবে।
বিদ্যুত আসার পর, মধু চোরের বিল বাড়বে, সম্পদ বাড়বে না; অসততা বাড়বে, আয় বাড়বে না; কিন্তু ভারতীয় কোম্পানীর শেয়ার হোল্ডারদের শেয়ারের দাম বাড়বে, ডিভিডেন্ড বাড়বে; পিডিপির লোকদের বোনাস বাড়বে, মিটার রিডারদের আয় বাড়বে।
কিন্তু এভাবে কি বিদ্যুত কেন্দ্র করা যায় না, যাতে করে, যারা বিল দেবে, তাদের বিলের কিছু টাকা বিদ্যুতের লাভের থেকে আসবে; শুধু মধু চুরি ও মধুর বদলে চিনির সিরাপ থেকে বিল দিতে না হয়? যাক, বিদ্যুত এলে কলকারখানা হবে না? হবে, অবশ্যই হবে! সেই কলকারখানা হওয়ার সময় কি মধু আহরণকারীকে ডাকা হবে? তাঁকে কি সুযোগ দেয়া হবে কল-কারখানা করতে? তার কি মুলধন আছে? মুলধন আছে কর্ণেল ফারুকের, সালমান রহমানের, আলম ব্রাদার্সের, ওরিয়নের, বসুন্ধরার; কলকারখানা তারা করবে! মধু বিক্রতা বরাবরই 'বাজার হিসেবে' থাকবে! সে কি মিটার রিডারের কাজ পাবে? না পাবে না; কারণ মিটার রিডারের চাকুরী ৫০ লাখের নীচে বিক্রয় হবে না; মধু মিয়া কি ৫০ লাখ যোগাড় করতে পারবে? মনে হয় না।
দেশের ৬০% মানুষ কোন না কোনভাবে মধুমিয়া হয়ে গেছে, এরা পরিস্কার "বাজার", বৃটিশ কলোনীর মত বাজার; এরা বিল দিতে থাকবে, সেল ফোনের বিল, বিদ্যুতের বিল, কেবল টেলিভিশনের বিল, ভ্যাট; এরা এইসব বিল দেয়ার জন্য ভুমধ্য সাগের পাড়ি দেবে, সাউথ আফ্রিকা যাবে, ট্রলারে করে মালয়েশিয়া যাবে, রাতের ফ্লাইটে আরব যাবে।
বর্তমান বিশ্বের অনেক দেশে, এবং বাংলাদেশে গড়ে ৬০% মানুষকে মধুমিয়া বানানো হয়েছে; এরা বাজারে পরিণত হয়েছেন, এদের মুলা দেখায়ে ভোট নেয়া হচ্ছে; ঘুরে ফিরে এরা মধু মিয়াই হয়েই বেঁচে আছে; কিন্তু সামান্য মধু থেকে, সামান্য ধানের আয় থেকে, সামান্য দিন মজুরীর টাকা থেকেও বিদ্যুত কেন্দ্র করা সম্ভব, সেই ধরণের অংক আছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১১:৫৪