সন্ধ্যার পর, জ্যামাইকা থেকে বাসায় ফেরার সময় আমি সাবওয়ে ট্রেনের শেষ বগীতে উঠি; প্রায় সব সময়ই বগিটা খালি থাকে; ২৫ মিনিটের মত একা ভ্রমন করা যায়; আমি সাধারণত বসি না, বগিতে হাঁটি, বিজ্ঞাপন মিজ্ঞাপন পড়ি; লোকজন উঠার শুরু করলে অন্য বগিতে চলে যাই। গতকাল রাত একটায় ট্রেনে উঠে আমি হতবাক, ৮/১০ জন গৃহহীন শুয়ে আছে, অনেকের সাথে তাদের সংসারের সবকিছু। গৃহহীন মানুষ বগিতে উঠলে, বেশীরভাগ সময় পুরো বগি দুর্গন্ধে ভরে যায়; ৮/১০ জন গৃহহীন এক বগিতে, অবস্হা ভয়ংকর।
প্রতি ষ্টেশনে বগি বদলাতে শুরু করলাম, সবগুলোর অবস্হা একই; ৬/৭ বগি সামনে যাবার পর, এক বগিতে দেখলাম অবস্হা ভালো; মাঝের এক সীটে একজন বুড়ো গৃহহীন বসে বিয়ার খাচ্ছে, গান গাচ্ছে, মোটামুটি পরিস্কার; তার উভয় পাশে অনেক ট্যুরিষ্ট; এরা মাঝরাতে এসেছে, মনে হচ্ছে হোটেলে যাচ্ছে; সবাই চুপচাপ, ধরে নিলাম জার্মান। গৃহহীন বুড়োর সামনের সীটে বরাবর দাঁড়ালাম, বুড়োকে হ্যালো বললাম, বুড়ো বিয়ারের বড় বোতল আমার দিকে এগিয়ে দিলো; বললাম,
-ধন্যবাদ, এত রাতে বিয়ার খেয়ে প্রস্রাব করবো কোথায়? তুমি তো বগিতেই কাজ সেরে ফেলবা! সে জোরে হাসলো,
-না, আমি বগিতে পেসাব করিনা, আমার বাকী জীবন এখানে কাটবে; আমি ইহাকে অপমান করি না কখনো।
জার্মানগুলো কান খাড়া করে শুনছিলো; জার্মানরা গৃহহীন ইত্যাদিকে এড়িয়ে চলে, পয়সা চাইলে কিছু দেয় না; এদিক থেকে ফ্রান্সের টুরিষ্টরা ভালো, ওরা বকবক করতে থাকে সারাক্ষণ; ভিক্ষুকদের ২/৪ পয়সা দেয় মাঝেমাঝে।
বুড়ো প্রশ্ন করলো, তুমি কোন দেশী? আমি উত্তর দিলাম, বুড়ো মাথা নাড়লো। কিছুক্ষণ পর বললো,
-তোমরা বড় আশা নিয়ে নিউইয়র্ক আস, আমরা বড় আশা নিয়ে কোথায় যাবো? কেহ গৃহহীনদের দেখতে পারে না। হুশিয়ারে থেকো, গৃহহীন হয়ো না।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ সকাল ৯:২৩