১৯৬৭ সালে, আমেরিকান সরকার "ড্রাফট" আইনের অধীনে বক্সার মোহাম্মদ আলীকে ভিয়েতনামে যুদ্ধে যেতে নির্দেশ দিলো; আলী বললো, "আমি দরিদ্র ভিয়েতনামীদের হত্যা করার যুদ্ধে যোগ দেবো না"; আলী শেষ অবধি যায়নি; কিন্তু আলীকে আমেরিকান সরকার অনেক কস্ট দিয়েছে, ১০ হাজার ডলার জরিমানা, ৫ বছরের জেল ও ৩ বছর বক্সিং থেকে নিষিদ্ধ , আলীর শিরোপা কেড়ে নেয়া হয়। আলীকে জেলে নিতে পারেনি।
ভিয়েতনাম যুদ্ধ ছিলো আমেরিকার জন্য আত্মঘাতী যুদ্ধ, যেখানে ৬০ হাজারের কাছাকাছি আমেরিকান প্রাণ দিয়েছেন অকারণে, ধ্বংস করেছে ভিয়েতনাম; অবশেষে, বেকুবের মত পরাজিত হয়েছে।
আজকে আমেরিকায় কোন বাংগালী, ভারতীয়, পাকিস্তানী, বা চীনা বাচ্ছাকে প্রশ্ন করলে,"জীবনে কি হতে চাও"; উ্ত্তর হবে, "ডাক্তার"। আফ্রিকান আমেরিকান বাচ্ছাকে একই প্রশ্ন করলে উত্তর দেবে, " বাস্কেটবল, বেইস-বল, ফুটবল খেলোয়াড়, বা কমপক্ষে গায়ক হবো"। ১৯৩০ সাল থেকে ১৯৫০ সালে আফ্রিকান আমেরিকান বাচ্ছারা বক্সিং তারকা হওয়ার চেস্টা করছিলো; এতে কিছুটা আয় হওয়ার সম্ভাবনা ছিলো, সাথে নিজকে রক্ষা করার একটা ইচ্ছাও লুকায়িত ছিলো। অশিক্ষিত আফ্রিকানদের ক্রীতদাস হিসেবে আনার ২০০ বছর পর, আজো তারা শিক্ষাকে আলিংগন না করে, শারীরিক শক্তিকে কাজে লাগানোর ভাবনায় বিভোর।
সময় ছিলো, আফ্রিকান আমেরিকানদের পড়ালেখা থেকে দুরে রাখতো আমেরিকান সরকার; সেটা কাজ করেছে; আজও আফ্রিকান আমেরিকানরা পড়ালেখায় মন দেয়নি পুরোপুরি। আমেরিকানদের এই ঘৃণ্য নীতিকে আফ্রিকা ও এশিয়ার অনেক সরকার অনুসরণ করে চলেছে আজকের পৃথিবীতে; এবং তাতে বাংলাদেশের নামও আছে।
আলী ৩ বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন; আলীর বক্সিং ছিল উপভোগ করার মতো, তিনি তাঁর প্রতিপক্ষকে লক্ষ্য করে যতসব উপভোগ্য কথা ছুঁড়ে দিতেন; তবে, তিনি খুবই সরল মনের মানুষ ছিলেন, সবকিছু করতেন হাসিখুশী থেকে। আলী ১৯৬৪ সালে প্রথমবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হন, উনি চীৎকার দিতে থাকেন, "আমি চ্যাম্পিয়ন, আমি সুন্দর, আমি বিখ্যাত, আমি সবার চেয়ে বিখ্যাত"; এই কথাগুলো বিশ্বের জন্য ছিল খুবই নতুন।
আলীর মৃত্যু হয়েছে গতকাল; তিনি পারকিনসন্স রোগে ভুগছিলেন; অনেক কারণেই পারকিনসন্স হয়, তবে আলীর ক্ষেত্রে শারিরীক ইনজুরি কাজ করেছে; খাদ্যে কেমিক্যাল, পরিবেশে শিসা, মাদক গ্রহনও পারকিনসন্স'এর কারণ হতে পারে।
আলী গত ৩০ বছর কোটী কোটী মানুষকে পড়ালেখায় উৎসাহিত করেছেন; আলী বলেছেন যে, তিনি জীবনে শিক্ষার সুযোগ পাননি, কিন্তু আজকে সুযোগ আছে, সবাই বক্সার হবে না, কিন্তু সবাইকে শিক্ষিত হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৯