সোফার ওপর বসে আছি। সামনেই একবাটি গরম স্যুপ। আমার অনেক পছন্দের। কিন্তু নীলার জন্য খেতে পারছি না। মনে মনে নিজের হবু বউকে গালি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই আমাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর এক চামচ স্যুপ মুখে দিতেই স্যুপের সাথে রাগটাকেও গলাধঃকরণ করে ফেললাম। ততটাও খারাপ নয় মেয়েটা!
ঘটনার কিংবা দূর্ঘটনার সূত্রপাত এক জেনেটিক ল্যাবরেটরীতে। সেখানে আমি একজন গবেষক হিসেবে কাজ করতাম। অন্তত ১০ জুলাই পর্যন্ত। ১১ জুলাই একটা টেস্ট করার সময়ই যত বিপত্তির শুরু। আমাদের ল্যাবে মূলত ন্যানোটেকনোলজী নিয়ে গবেষণা করা হয়। জীবন্ত প্রাণীর ওপর বিভিন্ন কেরদানি করে ছোট করাই মূল উদ্দেশ্য।
সেদিন আমাদের কাঙ্ক্ষিত সলুশান X এর টেস্ট ফেজ চলছিল। একটা গিনিপিগের উপর সলুশানটা নিয়ে কেবল ড্রপারটা টিপেছি , রিং রিং। অসময়ে টেলিফোন! ড্রপারটা সাবধানে নামিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। নীলার গলা। হ্যালো বলতেই দেখি সবকিছু ছোট হয়ে গেল! টেলিফোনটা ঝুলছে মাথার ওপর। চিৎকার দিলাম।
চিৎকার শুনে সঙ্গে সঙ্গে সোফিয়া দৌড়ে এলো। আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমারই খোঁজ করতে লাগলো বেচারি! উষ্ণ কোমল কোলে ছোট্টোটি হয়ে রইলাম। কি আর করার! মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো... ওয়া ওয়া! যেন বললাম, " আরে বোকা এই তো আমি!! "
দুই ঘন্টা পর, ডিএনএ টেস্ট করে ওরা নিশ্চিত হলো যেঃ ইট ওয়াজ নান আদার দ্যান এই অধম । নীলাকে ডাকা হলো। এসেই আমাকে সোফিয়ার কোল থেকে কেড়ে নিলো! আদর করতে করতে ওদের কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে যখন বুঝলো এটা আমি... কাঁদতে শুরু করলো। আমি আর কি করবো! নীলার কোলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
বাবা মা নেই। নীলাই আমার দায়িত্ব নিলো। স্কুল থেকে সাময়িক ইস্তফা দিয়ে সারাদিন আমার সাথেই কাটায়। গল্প করে। আমি ওয়া ওয়া করি। বয়স দাড়িয়েছে তিনে । আরেকবার ল্যাবে গিয়েছিলাম আমরা। একটা ইনজেকশন দেওয়া হলো। কথা বলার ক্ষমতা ফিরে পেলাম। ওদের গবেষণা লাটে উঠেছে। আমাকে ঠিক করাই এখন ওদের একমাত্র লক্ষ্য।
কথা বলতে পেরে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। নীলার সাথে এটা সেটা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করি। ওর রান্না সবসময়ই ভালো লাগে, আর এখন তো আরো যত্ন করে খাওয়ায়। আমার জন্যই বেবি টি পট সহ সবকিছুই কেনা হয়েছে। ঘটনার দিন চারেক পর আমার বন্ধুরা এলো। রানা আমার জন্য একটা পুতুল এনেছে। "শালা আমার পুতুল তো আমার ঘরেই... ", নীলা আমাকে থামিয়ে দেয়। হাসির রোল ওঠে।
আরো দুটো দিন গেল। আমি বসে বসে ভাবি। সলুশান X এর উল্টো কোনো সলুশান আপাতত নেই। সোফিয়ারা বানানোর চেষ্টা করছে। প্রত্যেকদিনই আমার খোঁজ নেয়। বয়স বাড়ছে নাকি কমছে, শরীর কেমন এইসব জানতে চায়। নীলার সাথে থাকলেও মন খারাপ লাগে। আমার জন্য কত কষ্টই করতে হচ্ছে ওর! স্বাভাবিক হলেই বিয়েটা সেরে ফেলবো।
কিছুদিন পর এক সকালে ফোন পেলাম। সলুশান Y রেডি। একটা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করা হবে। আমরা যেন চলে আসি। ল্যাবে ঢুকতেই নীলার পা পিছলে গেলো। কোথা থেকে একটা সাবান । হবু বউয়ের কোল থেকে আমিও রকেটের মতো ছুটে গেলাম একটা সিলেন্ডারের দিকে! আমার ভবলীলা সাঙ্গ তাহলে হয়েই গেল! না... কি যেন হচ্ছে! আমার হাত পা...
ঘুম ভাঙার পর দেখি,গভীর দৃষ্টিতে নীলা তাকিয়ে আছে। কিছু উল্টাপাল্টা করলাম নাকি? বেডসাইড টেবিলের ক্যালেন্ডারটা দেখলাম। ২৪ তারিখ। সাধারণ একটা দিনই তো! নীলাই মুখ খুললো, "তুমি বড় হয়ে গেছো "। ইউরেকা বলে দৌড় দিবো, কিন্তু নীলা বিছানায় চেপে ধরলো। "আর্কিমিডিসের মতোই তোমার শরীরে পোশাক নাই! "
পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। নীলার সাথে গাঁটছাড়া বেঁধে ফেললাম। তাহার পূর্বেই ল্যাবে রিজাইন লেটারটা মেইল করা হইয়া গেছে। করলাম না গিনিপিগের চাকরি!
অতঃপর ... নীলা নাকটা টিপে দিলো। তুমি ছোট থাকলেই ভালো হতো! সত্যি? তাহলে তো.... বলেই, দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। লেখক মশাই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। নীলাকে বললাম, "অসাধু লেখক। সবকিছু লিখতে চায়! "
(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প যাহা ড্রাফট হতে আমদানি করা হইলো )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০০