somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নীলা

২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সোফার ওপর বসে আছি। সামনেই একবাটি গরম স্যুপ। আমার অনেক পছন্দের। কিন্তু নীলার জন্য খেতে পারছি না। মনে মনে নিজের হবু বউকে গালি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি, তখনই আমাকে কোলে তুলে নিলো। তারপর এক চামচ স্যুপ মুখে দিতেই স্যুপের সাথে রাগটাকেও গলাধঃকরণ করে ফেললাম। ততটাও খারাপ নয় মেয়েটা!

ঘটনার কিংবা দূর্ঘটনার সূত্রপাত এক জেনেটিক ল্যাবরেটরীতে। সেখানে আমি একজন গবেষক হিসেবে কাজ করতাম। অন্তত ১০ জুলাই পর্যন্ত। ১১ জুলাই একটা টেস্ট করার সময়ই যত বিপত্তির শুরু। আমাদের ল্যাবে মূলত ন্যানোটেকনোলজী নিয়ে গবেষণা করা হয়। জীবন্ত প্রাণীর ওপর বিভিন্ন কেরদানি করে ছোট করাই মূল উদ্দেশ্য।


সেদিন আমাদের কাঙ্ক্ষিত সলুশান X এর টেস্ট ফেজ চলছিল। একটা গিনিপিগের উপর সলুশানটা নিয়ে কেবল ড্রপারটা টিপেছি , রিং রিং। অসময়ে টেলিফোন! ড্রপারটা সাবধানে নামিয়ে কলটা রিসিভ করলাম। নীলার গলা। হ্যালো বলতেই দেখি সবকিছু ছোট হয়ে গেল! টেলিফোনটা ঝুলছে মাথার ওপর। চিৎকার দিলাম।

চিৎকার শুনে সঙ্গে সঙ্গে সোফিয়া দৌড়ে এলো। আমাকে কোলে তুলে নিয়ে আমারই খোঁজ করতে লাগলো বেচারি! উষ্ণ কোমল কোলে ছোট্টোটি হয়ে রইলাম। কি আর করার! মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো... ওয়া ওয়া! যেন বললাম, " আরে বোকা এই তো আমি!! "


দুই ঘন্টা পর, ডিএনএ টেস্ট করে ওরা নিশ্চিত হলো যেঃ ইট ওয়াজ নান আদার দ্যান এই অধম :D । নীলাকে ডাকা হলো। এসেই আমাকে সোফিয়ার কোল থেকে কেড়ে নিলো! আদর করতে করতে ওদের কাছে আমার ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করে যখন বুঝলো এটা আমি... কাঁদতে শুরু করলো। আমি আর কি করবো! নীলার কোলে ঘুমিয়ে পড়লাম।


বাবা মা নেই। নীলাই আমার দায়িত্ব নিলো। স্কুল থেকে সাময়িক ইস্তফা দিয়ে সারাদিন আমার সাথেই কাটায়। গল্প করে। আমি ওয়া ওয়া করি। বয়স দাড়িয়েছে তিনে । আরেকবার ল্যাবে গিয়েছিলাম আমরা। একটা ইনজেকশন দেওয়া হলো। কথা বলার ক্ষমতা ফিরে পেলাম। ওদের গবেষণা লাটে উঠেছে। আমাকে ঠিক করাই এখন ওদের একমাত্র লক্ষ্য।


কথা বলতে পেরে যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেলাম। নীলার সাথে এটা সেটা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করি। ওর রান্না সবসময়ই ভালো লাগে, আর এখন তো আরো যত্ন করে খাওয়ায়। আমার জন্যই বেবি টি পট সহ সবকিছুই কেনা হয়েছে। ঘটনার দিন চারেক পর আমার বন্ধুরা এলো। রানা আমার জন্য একটা পুতুল এনেছে। "শালা আমার পুতুল তো আমার ঘরেই... ", নীলা আমাকে থামিয়ে দেয়। হাসির রোল ওঠে।


আরো দুটো দিন গেল। আমি বসে বসে ভাবি। সলুশান X এর উল্টো কোনো সলুশান আপাতত নেই। সোফিয়ারা বানানোর চেষ্টা করছে। প্রত্যেকদিনই আমার খোঁজ নেয়। বয়স বাড়ছে নাকি কমছে, শরীর কেমন এইসব জানতে চায়। নীলার সাথে থাকলেও মন খারাপ লাগে। আমার জন্য কত কষ্টই করতে হচ্ছে ওর! স্বাভাবিক হলেই বিয়েটা সেরে ফেলবো।



কিছুদিন পর এক সকালে ফোন পেলাম। সলুশান Y রেডি। একটা ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা করা হবে। আমরা যেন চলে আসি। ল্যাবে ঢুকতেই নীলার পা পিছলে গেলো। কোথা থেকে একটা সাবান X(( । হবু বউয়ের কোল থেকে আমিও রকেটের মতো ছুটে গেলাম একটা সিলেন্ডারের দিকে! আমার ভবলীলা সাঙ্গ তাহলে হয়েই গেল! না... কি যেন হচ্ছে! আমার হাত পা...


ঘুম ভাঙার পর দেখি,গভীর দৃষ্টিতে নীলা তাকিয়ে আছে। কিছু উল্টাপাল্টা করলাম নাকি? বেডসাইড টেবিলের ক্যালেন্ডারটা দেখলাম। ২৪ তারিখ। সাধারণ একটা দিনই তো! নীলাই মুখ খুললো, "তুমি বড় হয়ে গেছো "। ইউরেকা বলে দৌড় দিবো, কিন্তু নীলা বিছানায় চেপে ধরলো। "আর্কিমিডিসের মতোই তোমার শরীরে পোশাক নাই! "


পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত। নীলার সাথে গাঁটছাড়া বেঁধে ফেললাম। তাহার পূর্বেই ল্যাবে রিজাইন লেটারটা মেইল করা হইয়া গেছে। করলাম না গিনিপিগের চাকরি!


অতঃপর ... নীলা নাকটা টিপে দিলো। তুমি ছোট থাকলেই ভালো হতো! সত্যি? তাহলে তো.... বলেই, দড়াম করে দরজাটা লাগিয়ে দিলাম। লেখক মশাই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। নীলাকে বললাম, "অসাধু লেখক। সবকিছু লিখতে চায়! "




(ইহা একটি কাল্পনিক গল্প :D যাহা ড্রাফট হতে আমদানি করা হইলো ;) )
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:০০
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১২


যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:১৮



দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্তান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্তান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের বিয়ের খাওয়া

লিখেছেন প্রামানিক, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৮


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০০


২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×