কথায় কথায় জানলাম, তিনি কারওয়ান বাজারে শাহজাহানের হোটেলে কাজ করেন। আরও জানলাম, এই সিএনজি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১২০ টাকা পাবেন। আমি বললাম, এত অনেক কম! ১২০টাকায় হাতিরঝিল থেকে খিলগাঁও ঠেলে নিয়ে যাবেন। এত ভারি একটা গাড়ি!
তিনি বললেন, কি আর করা, ড্রাইভার আমার পরিচিত আর দুইডা টাকা ইনকাম হইবে এটাই বা কম কি। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সেই হাতিরঝিলের এক মাথা থেকে রামপুরার হাজিপাড়া পর্যন্ত ঠেলে দিয়ে আসলাম। (কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবেন না...)
মাঝে মাঝে কষ্ট কি ও যারা একটা লেভেলে থাকে তাদেরকে জানতে ও তাদের কষ্টটাকে ফিল করতে এরকম করি। এমন কি অনেক সময় মাল বোঝাই ভ্যান সেতুতে উঠতে পারে না, কষ্ট হয়। সেখানে আমি বাইক থামিয়ে আশে পাশে পথচারী পেলে তাদেরও বলি আসুন একটু হেল্প করেন। এরপরে ঐ ভ্যানওয়ালাগুলো যে কি সুন্দর একটা হাসি দেয়, যে যে এগুলো না দেখছে সে বুঝবে না। কত বড় বয়সী মানুষগুলো কাছে এসে হাতটা ধরে, মাথাটা নিচু করে ভাই অনেক কষ্ট করছেন, ধন্যবাদ ভাই। উফফ কি যে মজা ও আনন্দ লাগে। এরকম কতদিন যে কতজনকে সহযোগিতা করেছি কখনো গুনে রাখিনি। আমার কেন যেন মনে হয়, কাউকে না কাউকে উপকৃত করা দরকার। এই সহযোগিতাগুলো মানুষের মনে দাগ কেটে যায়। ভবিষ্যতে কেউ এরকম বিপদে পড়লে সেও যেন এগিয়ে আসে। তবে পিছনে বছর খানেক আগেও মাঝে মাঝে যখন বাইকে হঠাৎ তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় একটা হোন্ডাওয়ালাকে থামিয়ে সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু সেই আমি বাইক থামিয়ে কতজনকে নিজের বাইকের তেল দিয়ে সহযোগিতা করেছি...। অবশ্য প্রতিদানের আশায় এগুলো করিনি কিন্তু যখন নিজেই বিপদে পড়ি তখন মনটাই কেন যেন বলে ইসস কেউ কি নেই একটু হেল্প করার। তখন আসলেই আমি হেল্প পাইনি। ২ কিলো ঠেলে ফুয়েল স্টেশনে গিয়ে তারপর হাফ ছাড়ি।
আবার কিছু কিছু ব্যবহার আমি পাই। সেদিন ফার্মগেট থেকে হাতিরঝিল রিক্সা ভাড়া ৩০ টাকা বলে উঠেছি, হাতিরঝিলে এসে রিক্সাওয়ালা বেকে বসেন, সে নাকি আমাকে ৪০ টাকা বলে উঠিয়েছে। কিন্তু তার পাশেরজন রিক্সাওয়ালা ৪০ টাকা বলায় আমি উঠিনি এবং তাকে বলেছিও যে ৩০ টাকা ভাড়া। উল্লেখ্য, প্রকৃত ভাড়া ২৫টাকা। পরে আর কি ৫০ টাকা দিয়ে বললাম, ভাই তুই সারাজীবন এই রিক্সা চালিয়েই যাবি কোনদিন রিক্সার মালিক বা গ্যারেজের মালিক হতে পারবি না। তোমার যে স্বভাব এ স্বভাবে আল্লাহ কাউকে সহায় হন না। এটা বলেই চলে আসি তাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই। এরপরে আমার মনের ভেতর কয়েকটা প্রতিক্রিয়া হয়। ভাল মন বলে যা হইছে হোক, মাফ করে দে আর রাগে আর এক মন বলে, ওর যেন ক্ষতি হয়। হয়তো ২০ টাকা বেশি পেয়ে ওর বউ বা সন্তানের জন্য বেশি কিছু কিনে নিতে পারবে বা বেশি টাকা হলে গানজার পোটলা একটু বেশি কিনে আরামসে টানতে পারবে। পরে নিজের মনকে সবসময়ই বুঝাই। সব থেকে বড় কথা হল, আইএম ওয়াচিং এন্ড উপরে একজন আছেন তিনি প্রতিনিয়ত ওয়াচ করে যাচ্ছেন।
প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। শিখছি, জানছি। অনেকদিন আগে আমার একটা কমন ব্যাপার ছিল, লার্ন পিপলস মাইন্ড বা এরকম কিছু পরে কয়েকজন বলে আগে তুমি তোমার নিজের মনকে শিখো, তাকে জানো তারপরে অন্যের মনকে বুঝতে শিখবা। কথাটা আমার কাজে লেগেছে। আমি আমাকে জানি, আমার মনের সাথে, আমার বিবেকের সাথে প্রতিনিয়ত ফাইট করি। নিজেই নিজের আদালত বসাই এবং তা জাজ করি।
পৃথিবীতে মানুষ আসলেই আসে অল্প সময়ের জন্য। এই অল্প সময়ে মানুষ কত কিছু করে। একজনকে দিয়েতো হয়না তাই যার যার অবস্থান থেকেই ডে বাই ডে বিল্ড হয়। কারো কারো হেল্প লাগে কোন কিছু বিল্ডআপ করতে।
আমি চরম কিছু খারাপ মুহুর্তের মধ্য দিয়ে পার করেছি আবার সুখের সময়টাও মাঝে মাঝে পেয়েছি।
এটাই জীবন এবং আমি আমার জীবনটাকে সবদিক থেকে উপভোগ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫২