somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবন যেখানে যেমন

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যায়যায়দিন অফিস থেকে বের হয়ে হাতিরঝিল আসলাম। পথেই এক বয়স্ক চাচাকে দেখলাম একটা সিএনজি ঠেলছে, কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, ‘চাচা আমি সাহায্য করি?’ তিনি বললেন, ‘না না, তোমার কষ্ট করার দরকার নাই।’ আমি তখন বললাম, ‘উহু চাচা আমার কষ্ট করার দরকার আছে। ডাক্তারে কইছে।’ তিনি বললেন, ‘তাহলে ঠেলতে পারো।’

কথায় কথায় জানলাম, তিনি কারওয়ান বাজারে শাহজাহানের হোটেলে কাজ করেন। আরও জানলাম, এই সিএনজি ঠেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য ১২০ টাকা পাবেন। আমি বললাম, এত অনেক কম! ১২০টাকায় হাতিরঝিল থেকে খিলগাঁও ঠেলে নিয়ে যাবেন। এত ভারি একটা গাড়ি!
তিনি বললেন, কি আর করা, ড্রাইভার আমার পরিচিত আর দুইডা টাকা ইনকাম হইবে এটাই বা কম কি। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে সেই হাতিরঝিলের এক মাথা থেকে রামপুরার হাজিপাড়া পর্যন্ত ঠেলে দিয়ে আসলাম। (কষ্টের কথা জিজ্ঞেস করে লজ্জা দিবেন না...)

মাঝে মাঝে কষ্ট কি ও যারা একটা লেভেলে থাকে তাদেরকে জানতে ও তাদের কষ্টটাকে ফিল করতে এরকম করি। এমন কি অনেক সময় মাল বোঝাই ভ্যান সেতুতে উঠতে পারে না, কষ্ট হয়। সেখানে আমি বাইক থামিয়ে আশে পাশে পথচারী পেলে তাদেরও বলি আসুন একটু হেল্প করেন। এরপরে ঐ ভ্যানওয়ালাগুলো যে কি সুন্দর একটা হাসি দেয়, যে যে এগুলো না দেখছে সে বুঝবে না। কত বড় বয়সী মানুষগুলো কাছে এসে হাতটা ধরে, মাথাটা নিচু করে ভাই অনেক কষ্ট করছেন, ধন্যবাদ ভাই। উফফ কি যে মজা ও আনন্দ লাগে। এরকম কতদিন যে কতজনকে সহযোগিতা করেছি কখনো গুনে রাখিনি। আমার কেন যেন মনে হয়, কাউকে না কাউকে উপকৃত করা দরকার। এই সহযোগিতাগুলো মানুষের মনে দাগ কেটে যায়। ভবিষ্যতে কেউ এরকম বিপদে পড়লে সেও যেন এগিয়ে আসে। তবে পিছনে বছর খানেক আগেও মাঝে মাঝে যখন বাইকে হঠাৎ তেল শেষ হয়ে যাওয়ায় একটা হোন্ডাওয়ালাকে থামিয়ে সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু সেই আমি বাইক থামিয়ে কতজনকে নিজের বাইকের তেল দিয়ে সহযোগিতা করেছি...। অবশ্য প্রতিদানের আশায় এগুলো করিনি কিন্তু যখন নিজেই বিপদে পড়ি তখন মনটাই কেন যেন বলে ইসস কেউ কি নেই একটু হেল্প করার। তখন আসলেই আমি হেল্প পাইনি। ২ কিলো ঠেলে ফুয়েল স্টেশনে গিয়ে তারপর হাফ ছাড়ি।

আবার কিছু কিছু ব্যবহার আমি পাই। সেদিন ফার্মগেট থেকে হাতিরঝিল রিক্সা ভাড়া ৩০ টাকা বলে উঠেছি, হাতিরঝিলে এসে রিক্সাওয়ালা বেকে বসেন, সে নাকি আমাকে ৪০ টাকা বলে উঠিয়েছে। কিন্তু তার পাশেরজন রিক্সাওয়ালা ৪০ টাকা বলায় আমি উঠিনি এবং তাকে বলেছিও যে ৩০ টাকা ভাড়া। উল্লেখ্য, প্রকৃত ভাড়া ২৫টাকা। পরে আর কি ৫০ টাকা দিয়ে বললাম, ভাই তুই সারাজীবন এই রিক্সা চালিয়েই যাবি কোনদিন রিক্সার মালিক বা গ্যারেজের মালিক হতে পারবি না। তোমার যে স্বভাব এ স্বভাবে আল্লাহ কাউকে সহায় হন না। এটা বলেই চলে আসি তাকে কিছু না বলার সুযোগ দিয়েই। এরপরে আমার মনের ভেতর কয়েকটা প্রতিক্রিয়া হয়। ভাল মন বলে যা হইছে হোক, মাফ করে দে আর রাগে আর এক মন বলে, ওর যেন ক্ষতি হয়। হয়তো ২০ টাকা বেশি পেয়ে ওর বউ বা সন্তানের জন্য বেশি কিছু কিনে নিতে পারবে বা বেশি টাকা হলে গানজার পোটলা একটু বেশি কিনে আরামসে টানতে পারবে। পরে নিজের মনকে সবসময়ই বুঝাই। সব থেকে বড় কথা হল, আইএম ওয়াচিং এন্ড উপরে একজন আছেন তিনি প্রতিনিয়ত ওয়াচ করে যাচ্ছেন।

প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছি। শিখছি, জানছি। অনেকদিন আগে আমার একটা কমন ব্যাপার ছিল, লার্ন পিপলস মাইন্ড বা এরকম কিছু পরে কয়েকজন বলে আগে তুমি তোমার নিজের মনকে শিখো, তাকে জানো তারপরে অন্যের মনকে বুঝতে শিখবা। কথাটা আমার কাজে লেগেছে। আমি আমাকে জানি, আমার মনের সাথে, আমার বিবেকের সাথে প্রতিনিয়ত ফাইট করি। নিজেই নিজের আদালত বসাই এবং তা জাজ করি।

পৃথিবীতে মানুষ আসলেই আসে অল্প সময়ের জন্য। এই অল্প সময়ে মানুষ কত কিছু করে। একজনকে দিয়েতো হয়না তাই যার যার অবস্থান থেকেই ডে বাই ডে বিল্ড হয়। কারো কারো হেল্প লাগে কোন কিছু বিল্ডআপ করতে।

আমি চরম কিছু খারাপ মুহুর্তের মধ্য দিয়ে পার করেছি আবার সুখের সময়টাও মাঝে মাঝে পেয়েছি।

এটাই জীবন এবং আমি আমার জীবনটাকে সবদিক থেকে উপভোগ করছি।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫২
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

"মিস্টার মাওলা"

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ ভোর ৫:০৯


বিটিভিতে খুব সম্ভবত আগে একটি বাংলা ছবি প্রচার করা হতো , নাম 'মিস্টার মাওলা'। নায়ক রাজ রাজ্জাক, অভিনিত ছবির সার-সংক্ষেপ কিছুটা এমন: গ্রামের বোকাসোকা, নির্বোধ ছেলে মাওলা‌। মাকে হারিয়ে শহরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখন বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ কেন উন্নত দেশ হতে পারেনি এবং ভবিষ্যতেও (সম্ভবত) হতে পারবে না…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২২


১. সশস্ত্র যুদ্ধের মাধ্যমে গুটিকয়েক যে কয়েকটি দেশ বিশ্বে স্বাধীনতা লাভ করেছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। ১৯৭১ সালে এত রক্তের বিনিময়ে যে দেশ তৈরি হয়েছিল, তার সরকারে যারা ছিল... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সুনিতা উইলিয়ামস: মহাকাশ অনুসন্ধানে অনুপ্রেরণার যাত্রা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:২৪





সুনিতা উইলিয়ামস কে? যদিও তুমি তোমার পাঠ্যপুস্তকে সুনিতা উইলিয়ামসের কথা শুনেছো, তবুও তুমি হয়তো ভাবছো যে সে কে ?

বিখ্যাত নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামসের ক্যারিয়ার ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেরা, এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইলন মাস্ক , এসময়ের নায়ক

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ দুপুর ১:১০




সুনিতা উইলিয়ামদের ফিরিয়ে আনার আসল নায়ক!

৯ মাস! হ্যাঁ, পুরো ৯ মাস ধরে মহাকাশে আটকে ছিলেন নাসার মহাকাশচারী সুনিতা উইলিয়াম। একটি কারিগরি ত্রুটির কারণে তিনি পৃথিবীতে ফিরে আসতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পরিপক্কতা বনাম আবেগ: হাসনাত ও সারজিস বিতর্কের বিশ্লেষণ

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৩ শে মার্চ, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৪


প্রতিকী ছবি

বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলমের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্ট আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে। এই দুই নেতার প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণ করলে স্পষ্ট হয়, তারা একই ঘটনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×