সালটা ঠিক মনে নাই। থাকি বেইলী স্কয়ারে। ছাত্র জীবন চলিতেছে ফুল সুইং এ। সাথে নানারকম আরো কিছু। সেই সময় আবার কারো কারো মধ্যে ভাবের উদয়ও লক্ষ্য করা যাইতেছিলো, মানে প্রেম। সেই বেইলী স্কয়ার এর ৭ নাম্বার বিল্ডিং এর এক বালকের একদা মনে হইলো ১২ নাম্বার বিল্ডিং এর শ্যামাঙ্গিনী ই তাহার সেই প্রেম। যাই হোক, মজনু সাহেব শ্যামাঙ্গিনীকে কিছু বলিয়াছিলো কিনা তাহা আর আজ মনে করিতে পারিতেছিনা। তবে শ্যামাঙ্গিনী যে তাহার মাতাকে কিছু একখানা বলিয়াছিলো তাহাতে কোন সন্দেহ নাই। কারণ শ্যামাঙ্গিনীর মাতা মজনু বালকের পিতাকে একখানা অভিযোগ নামা শুনাইয়াছিলেন। ফলশ্রুতিতে মজনু তাহার প্রেমের তরীখানা অন্য কোন বন্দরে ভিড়ানোর পরিকল্পনা করিলেন।
তবে প্রেমের আগুন একবার জ্বলিলে সহজে নির্বাপিত হয়না। বালক মজনু তখন প্রতিশোধ স্পৃহায় উন্মাদ প্রায়। তাহার অহোরাত্রি একখানাই চিন্তা কি করিয়া একখানা শিক্ষা দিবে যাহাতে তাহার হৃদয়ের জ্বলন্ত অঙ্গার কিঞ্চিত নির্বাপিত হয়। আসিলো শবে বরাতের বিনিদ্র রজনী। মজনু বালক তাহার সহযোগী বালকদের নিয়া বাহির হইলো ইবাদতের উদ্দেশ্যে। তবে ইহাদের ইবাদতের চাইতে মাঙ্কি বিজনেস এর পাল্লা খানা একটু বেশী ই ভারী। এইখানে পটকা ফুটাইয়া ঐখানে তারাবাত্তি জ্বালাইয়া উহারা বিনিদ্র রজনী যাপন করিতে লাগিলো। কিন্তু মজনু বালকের মনে শান্তি নাই, তাহার পিঞ্জরার ভিতরে তুষের আগুন ধিকি ধিকি জ্বলিতেছে। কিছু একটা করিতে হইবে, না হইলে শান্তি নাই। হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকের ন্যায় কি যেন মাথার ভিতরে কুঠারাঘাত করিলো – দ্য আইডিয়া। পি টিপিয়া টিপিয়া মজনু বালক উঠিয়া গেল ১২ নাম্বার বিল্ডিং এর ষষ্ঠ তলায়। হাতে তাহার গাবদা সাইজের এক হালি ডিনামাইট। পকেটে আগরবাত্তি আর দিয়াশলাই। শ্যামাঙ্গিনীর বাড়ির দরজার চারি কোনায় কাঁপা কাঁপা হাতে চারখানা ডিনামাইট প্রোথিত হইলো। ইহার পর আগরবাত্তি চার টুকরা করিয়া ডিনামাইটের সুতলির গোড়ায় প্রবিষ্ট করানো হইলো। ইহা ফিউজ, নির্দিষ্ট সময় জ্বলিয়া আগুন সুতলিং গোড়ায় পৌছিলেই – বু–উ–ম । আগরবাত্তির চারখানা টুকরাই একই মাপের, আশা করা যায় একই সাথে ডিনামাইট চতুষ্টয় ফুটিবে। ইহার পর ? মজনু বালক কাঁপা কাঁপা হাতে প্রতি আগরবাত্তিতে অগ্নি সংযোগ করিলো। অগ্নি সংযোগ শেষে পুনরায় পা টিপিয়া টিপিয়া নিচে নামিয়া আসিলো।
এক মিনিট, দুই মিনিট, তিন মিনিট … কি মুশকিল !!! ডিনামাইট ফুটিবার নাম-নিশানাও নাই। আগুন কি নিভিয়া গেলো !?! মজনু বালক আবার পা টিপিয়া টিপিয়া পুনরায় ষষ্ঠতলার উদ্ধেশ্য যাত্রা করিলো …
দ্বিতীয় … তৃতীয় … চতুর্থ … পঞ্চম … আর মাত্র একটি তলা … বু – - উ – - ম !!!
মজনু বালক সেই রাত্রে কি করিয়া মাত্র কয়েকটি লাফ দিয়া কয়েক সেকেন্ডে পঞ্চমতলা হইতে একেবারে মসজিদে আসিয়া উপনিত হইয়াছিলো তাহা কেহই বলিতে পারিবে না। তবে তাহার হাটুসন্ধি আর দাঁতকপাটির ঠকাঠক কাপুনির শব্দ অনেকেই অনুধাবন করিতে পারিয়াছিল।
পরদিন প্রাতে শ্যামাঙ্গিনী’র মাতাকে দেখা গিয়াছিলো কোয়ার্টারের অভিযোগ কেন্দ্রে। অভিযোগের সারবস্তু – দুষ্টু বালকের দল কল্য রাত্রিতে বোমা মারিয়া বাহিরের ফটকের প্রভুত ক্ষতি সাধন করিয়াছে … ব্লা ব্লা ব্লা
ছবিওয়ালার রোজ নামচায় প্রকাশিত