‘জাতির বিবেক কে? সাংবাদিক। জাতির জাগ্রত সৈনিক কে? সাংবাদিক? জাতির কন্ঠস্বর কে? সাংবাদিক। জাতিকে সংশোধনে অগ্রনী ভূমিকা রাখে কে? সাংবাদিক।’
এমন কিছু বাক্য সেই স্কুল জীবন থেকে নানা ভাবে জেনে এবং পড়ে আসছি। যদিও এগুলো নিছক বই এর ভাষা এবং বাস্তবতাবর্জিত তা অনেক পরে বুঝতে পেরেছি। সাংবাদিকতা পেশাকে এখন দালালি পেশার নব্য সংস্করন ছাড়া আর কিছুই বলা যায় না। এই চিন্তাটা প্রথম আসে সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের পর। সাগর-রুনিকে হত্যার পরপরই সাংবাদিক সমাজ উত্তাল হয়ে ওঠে। মূহুমূহু আন্দোলন দেখে মনে হয়েছিল, অন্তত জাতির বিবেকখ্যাত সাংবাদিক দম্পত্তির মৃত্যুরহস্য ফাইল বন্দি হবে না। সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরীর নেতৃত্বে সাংবাদিকদের আন্দোলন সবেমাত্র হালে পানি পাওয়া শুরু করেছে। এর মাঝে সাংবাদিকরা দুই দলে বিভক্ত হয়ে গেল। ইকবাল সোবহান চৌধুরী সাংবাদিক থেকে প্রমোশন পেয়ে হয়ে গেলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উপদেষ্টা। ইকবাল সোবহান চৌধুরীর প্রমোশনের সাথে সাথে সাগর-রুনি হত্যার বিচারের আন্দোলন ডিমোশন পেতে শুরু করল। তারপর সাগর-রুনি এখন একটি অপ্রাসঙ্গিক ইস্যুতে পরিণত হল। শুধুমাত্র সাগর-রুনির মৃত্যুবার্ষিকীতে মিডিয়ারা দু’একটা ফিচার রিপোর্ট এবং তাদের সন্তান মেঘকে নিয়ে অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্যই সীমাবদ্ধ রেখে মৃত্যুদিবস পালন করে যাচ্ছেন। ঐ একটা দিনই সাগর-রুনি ইস্যুটি প্রাসঙ্গিক হলেও বছরের বাকি ৩৬৪ টি দিন তারা বড়ই বেমানান। ইস্যুটিকে ধামাচাপা দেবার দায়ভার কে নিবে? সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী অথবা নাইমদের মত সাংবাদিকরা নিবেন কি?
উপরোক্ত ছবিগুলো সম্পর্কে নতুন করে বর্ণনা দিতে হবে না বলে মনে করছি। কারণ, ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া এবং প্রিন্ট মিডিয়ার কল্যাণে সারাদেশের মানুষ জেনে গেছেন। সাংবাদিক দুইজন এটিএন নিউজের সাংবাদিক। পুলিশের উত্তম মধ্যম খেয়ে পা ভেঙ্গে এবং মাথা ফাটিয়ে এখন হাসপাতালে আছেন। মাত্র দুইজনই তো মার খেয়েছে। তাতে কি আর এমন হয়েছে! বাংলাদেশে এরকম প্রতিদিন কতজনই তো পুলিশের হাতে মাইর খাচ্ছে কই তখন তো এই সাংবাদিকরা কোন প্রতিবাদ করে না। প্রতিবাদ করা তো পরের কথা, এই পিটুনি দেবার সংবাদটাই তারা ভাল করে প্রকাশ করতে চায় না। যেমনটি তারা প্রকাশ করেনি, চট্টগ্রামে পুলিশের হাতে নিহত হওয়া স্কুল ছাত্র আবিদের কথা। আবিদকে হত্যা করার পর তার দুই চোখ উপড়িয়ে পুলিশ যে অন্ধকার যুগকে হার মানিয়ে রেকর্ড স্থাপন করেছিল, তারপরও সেই রেকর্ডের সংবাদ এই এটিএন বাংলাওয়ালারা প্রচার করে না। কারণ, আবিদরা জামায়াত শিবির! জামায়াত শিবির বাঁচুক আর মরুক তাতে কি! তারা সরকার বিরোধী। অতএব তাদের নিয়ে কোন কথা হবে না! আর দুইটা সাংবাদিক কি একটু মাইর খেয়েছে কি খায়নি তাতে মিডিয়া পাড়ার কান্নায় ঘরে থাকাটাই দায় হয়ে গেছে।
জামায়াত শিবিরের আবিদের কথা না হয় বাদই দিলাম। এবার আসি নার্সদের কথা। পুলিশের লাঠিচার্জে নার্সের গর্ভপাত
২ জুন ২০১৬ সালে উপরোক্ত ঘটনাটি ঘটে। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে মিডিয়াপাড়ার লোকজনকে তেমন উদ্বিগ্ন হতে দেখা যায় নি। এই ঘটনা নিয়ে মুন্নী সাহা ফেসবুকে পোষ্টও করেন নি। তিনি নিজে নারী হয়ে আর এক নারীর অপমানকে অপমান গ্রাহ্য করেন নি। সরকারের বিরোধী করেছে কেন? যেমন বিরোধীতা করেছে তেমন সাজা হয়েছে। ভাবখানা এমনই। প্রভাস আমিনদেরকেও উচ্চবাচ্য করতে দেখিনি। আর তাদের উচ্চবাচ্যহীণ ইস্যু যে গায়েব হতে টাইম লাগে না তা তাদেরই জ্ঞাতি ভাই-বোন সাগর-রুনি ইস্যু দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন। দেশের এত্তোগুলো মানুষ মাইর খাচ্ছে, গুলি খাচ্ছে, গুম হচ্ছে তাতে যদি কোন সমস্যা না হয় তবে দুইটা আবাল সাংবাদিককে পেটালেই সরকার খারাপ হয়ে যায়? সাংবাদিক পেটালেই সরকার স্বৈরাচার হয়ে যায়, তার আগে জামায়াত শিবিরের হাজারও নেতা কর্মীকে হত্যা করেও সরকার স্বৈরাচার হতে পারে নি! ইসলামী বিশ্বদ্যিালয়ের ওয়ালিউল্লাহদের এবং ইলিয়াস আলীসহ নাম না জানা আর কতক জনকে গুম করেও সরকার ফ্যাসিষ্ট হতে পারে নি। তাই তো বলতে চান আপনারা?
জামায়াত শিবির বিএনপি অথবা নার্সদের কথাই বা বলে কি লাভ! প্রখ্যাত সম্পাদক এবং প্রকৌশলী মাহমুদুর রহমানের কথাই ধরুন না। সাংবাদিক মানুষ, এক লেখালেখি করা ছাড়া আর কিইবা করতে পারবে! সরকারের কি এমন ক্ষতি করতে পারবে! কিন্তু তারপরও নিজের জীবন নিয়ে তাঁকে সংশয়বোধ করতে দেখেছি। তাঁকে দেখেছি জীবনের ভয়ে অফিসে অবরুদ্ধ জীবন যাপন করতে। কিন্তু তাতেও কোন লাভ হল না। সেই পত্রিকা অফিসে আজকের এই পুলিশ বাহিনীর সদস্যরাই কমান্ডে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করেন। সেদিন আজকের এই প্রতিবাদমুখর সাংবাদিকদের কুপি লাগিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় নি। তারা যেন মুখে ভেবিকল মেরে দিয়েছিলেন। কিন্তু তলে তলে তাদের বগল বাজানোর আওয়াজ যে দেশবাসী ঠিকই শুনতে পেয়েছে তা চেপে রাখবেন কীভাবে?
সাংবাদিক মাহমুদুর রহমানকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হলেও মিডিয়াপাড়ায় কোন উত্তাপ দেখা যায় নি। বরঞ্চ টেবিল চাপড়িয়ে আনন্দ ধ্বনি করবার দুমদাম আওয়াজ কিন্তু ঠিকই পাওয়া গেছে। বগল বাজানো টেবিল চাপড়ানো সাংবাদিকরাই কিনা আজ পুলিশের বিরুদ্ধে কলম ধরেছেন। কি হাস্যকর পরিস্থিতি। আজকে দুই আবালকে মেরে এসআইসহ কয়েকজন পুলিশকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর মাহমুদুর রহমানকে অফিস থেকে উঠিয়ে নিয়ে আসা সেই পুলিশ সদস্যদের কোন খবর কি জানেন? রিমান্ডে নির্যাতনকারী সেই পুলিশ সদস্যরা কি শাস্তি পেয়েছে তা কি কেউ কখনো পত্রিকা বা টিভি সংবাদে জানতে পেরেছিলেন? পারবেন না। একই জাতিকে পিটিয়ে কেউ হয় বরখাস্ত আর কেউ পায় প্রমোশন। মাইর খাওয়া জাতিটি সেই সাংবাদিক আর বরখাস্ত এবং প্রমোশন পাওয়া জাতিটিও পুলিশ। সবই চেতনার খেলা। চেতনারা খেলা বোঝা বড় দায়। এই পিচ্চি মাথায় এই খেলা ধরবে না রে পাগলা, চুপ যা!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:৫০