পৃথিবীতে শুরু হল, ট্রাম্প অধ্যায়। ট্রাম্প অধ্যায়ের আর্বিভাব থেকে সূচনা পর্যন্ত এ নিয়ে কোন ব্লগ লিখিনি। বলতে পারেন, এই বিষয়ে কলম ধরার যোগ্য মনে করিনি। এখনো মনে করি না। কিন্তু আজ একটি ভিন্ন প্রসঙ্গে কথা বলি।
আমেরিকার সংবিধাননুসারে তাদের প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ শুরু হবে, পবিত্র বাইবেলের উপর হাত রেখে। অতীতের ন্যায় এবারও আমেরিকার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাইবেলের উপর হাত রেখেই শপথ গ্রহণ করলেন। পশ্চিমা মিডিয়ার মাধ্যমে সারাবিশ্ব ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রটির এই সংস্কৃতি অবলোকন করল। সারাবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশের মানুষও এই দৃশ্যটি সরাসরি স্যাটেলাইটের মাধ্যমে অবলোকন করেছেন। কিন্তু কেউ আমেরিকানদের এই কালচারকে মৌলবাদ বলল না! কেউই তাদের এই রীতিনীতিকে সেকালে মৌলবাদীদের আচরণ বলার দুঃসাহস করলেন না! বরঞ্জ তাদের নীরবতা যেন আমেরিকানদের এই নীতিকে বাহবা যোগায়। তাদের এইনীরবতা, ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রটির ধর্মীয় বিধানকে সম্মান প্রদর্শন এবং বিশ্বাসকে হাত তালি দিয়ে উৎসাহ যোগাচ্ছে। সেক্যুলারগংদের এমন নীরবতাকে আমার কাছে হাত তালিই মনে হচ্ছে।
যাইহোক, এমন চিত্র যদি বাংলাদেশে দেখা যেত তবে কেমন হতো? মনে করুন, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে জয় লাভ করে আবারো বঙ্গবন্ধুর কন্যার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসল। দায়িত্বভার পুনরায় বুঝে নিবার আগে তাদেরকে বঙ্গ ভবনে রাষ্ট্রপতির সামনে আবারো শপথ বাক্য পাঠ করানো হবে। কিন্তু এই শপথ অনুষ্ঠান হবে, বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ব্যতিক্রমী শপথ অনুষ্ঠান। প্রধানমন্ত্রীকে উযূ করে দুই রাকাত নফল নামায পড়ে পবিত্র কুরআন শরীফে ডান হাত রেখে শপথ বাক্য উচ্চারণ করতে হবে। এমনকি মাননীয় মন্ত্রী এবং সংসদ সদস্যদেরকেও এহেন পদ্ধতিতে শপথ বাক্য পাঠ করতে হবে। তবে বাংলাদেশের মিডিয়া বুদ্ধিজীবিদের অবস্থা কি রকম হতো, তার একটি কাল্পনিক চিত্র তুলে ধরছি।
প্রথমেই মুন্নী সাহা তার রিপোর্টে বলতেছেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন পরবর্তি শপথ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দেশের ইতিহাসে স্থান করে নিল একটি কালো অধ্যায়। একটি মৌলবাদী অধ্যায়। দেশের ইতিহাস এবং ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুরআনের উপরে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করলেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। বিজ্ঞজনরা বলছেন, কুরআনের উপরে হাত রেখে শপথ গ্রহণ দেশের ইতিহাসকে চরমভাবে লাঞ্চিত করেছে। এর খেসারত দেশকে দিতে হবে। অচিরেই দেশ যে আল কায়েদা তালেবান এবং আফগানদের ন্যায় হয়ে যাবে সে কথা এই শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
মুন্নী সাহা এইবার শাহরিয়ার কবিরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছেন। মুন্নীসাহা প্রশ্ন করলেন, ‘আজকে দেশে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি আবারো ক্ষমতায় এসেছে এবং পবিত্র কুরআনে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করেছে। এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী?
- শাহরিয়ার কবির মুখটা প্যাচার মত করে বলবেন, এই সরকার স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি ছিল। কিন্তু আজকে এই কুরআনের উপরে হাত রেখে শপথ গ্রহণ করার কারণে তাদেরকে আর স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি বলা যায় না। তারা মৌলবাদি স্বপক্ষে চলে গেছে। আমি বারংবার বলেছি, আওয়ামীলীগে জামায়াত-শিবির অনুপ্রবেশ করেছে। তারই প্রমাণ আজকে আপনারা স্বচক্ষে দেখতে পেলেন। এই সরকার এখন জামায়াত শিবিরের তাবেদার গোলাম হয়ে গেছে। তারা মৌলবাদী হয়ে গেছে। তারা দেশটাকে অচিরেই আফগানিস্তান পাকিস্তান বানিয়ে ছাড়বে!
এবার সবাইকে ছাড়িয়ে একাত্তর টেলিভিশন নির্বাসিত লেখিকা তসলিমা নাসরিনের সরাসরি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করবে। যিনি কিনা সেই আমেরিকাতেই নির্বাসিত জীবনযাপস করছে। তসলিমা নাসরিন, কুরআনের উপর হাত রেখে শপথকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
- এই আওয়ামীলীগ সরকার সব সময় নিজেদেরকে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবি করে থাকে। তারা যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী হতো তবে সেই কবেই আমার দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দিতো। কিন্তু সেই বিষয়ে তারা কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করে নি। আমি তখনই বলেছি, এই সরকারের উপর জামায়াত শিবিরের প্রভাব রয়েছে। আজ তা প্রমাণ হয়ে গেল। তসলিমা নাসরিনের কথার মাঝখানে একাত্তর টিভির সাংবাদিক আবারো প্রশ্ন করলেন, তসলিমা নাসরিন! আমেরিকাতেও কিন্তু বাইবেলের উপর হাত রেখে শপথ নেয়া হচ্ছে। কিন্তু সেই বিষয়ে তো আপনার কোন ফেসবুক ষ্ট্যাটাস অথবা বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় কলাম দেখলাম না। তবে কি আপনি তাদের শপথ গ্রহণকে মেনে নিচ্ছেন?
তসলিমা নাসরিন একটু কেশে নিয়ে বলবেন, দেখুন আমেরিকানরা স্বতন্ত্র জাতি। তাদের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। সেই সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই তারা বাইবেলের উপর হাত রাখে। এটাকে মৌলবাদ বলা যায় না। কিন্তু আমাদের দেশ সম্পূর্ণ রূপে ধর্মনিরপেক্ষ। আপনারা যাই বলুন, দেশ অচিরেই আফগানিস্তান পাকিস্তানের রূপ বরণ করতে যাচ্ছে। সেই সাথে এটাও বলছি, আওয়ামীলীগ এখন জামায়াত ইসলামীর ‘বি’ টিম হিসেবে কাজ করছে। জামায়াত এখন আওয়ামীলীগকে দিয়েই বাংলাদেশকে মৌলবাদের আস্তাবলে ঠেলে দিচ্ছে।
এরকম নানা জনের আগাম বক্তব্য তুলে ধরা যায়। কথায় আছে, কৃষ্ঞ করলে লিলা খেলা আর গরীব করলে ঢং! আমেরিকানরা যাই করুক কোন সমস্যা নেই মুসলিমরা মুসলামনিত্ব দেখালেই মৌলবাদী হয়ে যায়!
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৭