আগামী কয়েকদিন দেশের মিডিয়া সমাজ এবং আপামর সাধারণ মানুষের নেক নজর থাকবে নারায়নগঞ্জের দিকে। কারণ, ইতিমধ্যেই জেনে গেছেন নারায়নগঞ্জের আলোচিত ৭ মার্ডার মামলা ২৬ জনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হয়েছে। আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠায় এই রায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ রাখবে তা নিঃসন্দেহে বলতে পারি। তারপরও দেশটি বাংলাদেশ! তাই কিছু কথা রয়ে যায়। আমরা জাতি হিসেবে প্রচন্ড স্বার্থপর এবং শর্টটার্ম মেমোরি লস হলেও কিছু কথা ঠিকই স্মরণ রাখি। বলতে পারেন নিজের প্রয়োজনে রাখতে হয়। তাই এই রায় নিয়ে কিছু কথা বলতে চাই।
প্রথমত, এই রায় স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি যুগান্তসৃষ্টিকারী রায়। এক সাথে এতোগুলো অপরাধীকে আইনের আওতায় শাস্তি দেওয়া হয়েছিল কিনা তা আমি জানি না। কিন্তু ক্রসফায়ারের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের কথা বললে, এই রায় পাত্তাই পাবে না। বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের মাধ্যমে যতগুলো শাস্তি প্রদান করা হয়েছে স্বাধীনতা পরবর্তি ৪৬ বছরেও হয়তো এতোগুলো শাস্তি দেওয়া যায় নি। এই রায়ে নিহত ৭ জনের স্বজনরা ভিন্ন ভিন্নমত পোষন করেছে। কেউ বলেছে, ন্যায্য বিচার পেয়েছে আবার কেউ বলেছে মূল পরিকল্পনাকারীকে বাঁচানো হয়েছে। এমন বিক্ষিপ্ত বক্তব্য সবসময়ই থাকবে। তাই বলে শেখ হাসিনার সরকারের অর্জনতো আর ম্লান হয়ে যাবে না। আমরা আগামীতে কোন একদিন প্রধানমন্ত্রীর কন্ঠে অবশ্যই শুনতে পারবো যে, আওয়ামীলীগ সরকার দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। প্রমাণ, নারায়নগঞ্জের ৭ মার্ডার মামলায় আমরা ২৬ জনকে ফাঁসি দন্ডাদেশ প্রদান করেছি।
দ্বিতীয়ত, এই রায় জাতির জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই মামলার অন্যতম প্রধান আসীমীরা হলেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে আগত এলিট ফোর্স র্যাবের সদস্য কর্ণেল তারেক সাইদ এবং মেজর আরিফ।
এছাড়াও মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামীদের মধ্যে র্যাবের মোট ১৭ জন সদস্য রয়েছেন। সেনাবাহিনীর এক একজন কর্ণেল তৈরী করতে দেশের হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এই এলিট ফোর্সের পিছনে সরকার প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করেন। আর এতোসব খরচের ফলাফল দাড়াচ্ছে, আইনের রক্ষকরাই এখন ভক্ষক। যারা জনগনের জানমালের নিরাপত্তার বিধান করবেন তারাই কিনা জনগনের জীবন নিয়ে বানিজ্য করছেন। একটি দেশের মূল ভিত্তিটা কতোটা দুর্বল হলে এমন নেক্কারজনক ঘটনা ঘটতে পারে তা কি বুঝতে পারছেন?
তৃতীয়ত, এই রায়ে পৈশাচিক আনন্দ পেয়েছি। আলিফ লায়লার দৈত্যদের ন্যায় হো..হো..হো.. করে হাসতে ইচ্ছে করছে। রায় শোনার পর মন্ত্রীর জামাই তারেক সাইদ নাকি কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছিলেন।
আমি ভাবতেছি, সেই ৭ ব্যক্তিদের যখন হত্যা করা হচ্ছিল নিশ্চয়ই তারাও তখন নিজের জীবন ভিক্ষা চেয়ে এমন কান্নাকাটি করেছিল। বরঞ্জ এর চেয়ে ঢের বেশি কান্নাকাটি আহজারি করেছিল। আর আরব্য উপন্যাস আলিফ লায়লাল দৈত্যরা যেমন মানুষকে খাওয়ার আগে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ত তেমনি তারেক সাইদ এবং মেজর আরিফরাও হয়তো হাসিতে ফেটে পড়েছিল। কিন্তু আজ তারা নিজেরাই মৃত্যুর মুখে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু পরোক্ষনেই ভাবতেছি, তবে আমিও কি কোন না কোন ভাবে দৈত্যদের ন্যায় পিশাচ হয়ে যাচ্ছি! তাদের মৃত্যু কী আমাকে আনন্দিত করবে? হয়তো করবে কিংবা শাসন ব্যবস্থার অগ্রগতিই আমাকে আনন্দিত করবে। কিন্তু আমি তাদের ন্যায় নরপিশাচ হতে চাই না।
রায় না হয় হয়ে গেল! এরপর উচ্চ আদালতেও যে একই রায় বহাল থাকবে তা অনেককাংশেই নিশ্চিন্তে বলা যায়। কিন্তু ঐ যে বললাম, দেশটা বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশ নামক দেশটিতে এমন কিছু নেই যা ঘটতে পারে না। তাই অনিশ্চয়তার দ্বিধাদন্দে কেটে যাবে আরো কিছুটা সময়। সেই সময়ের মাঝখানে আপনাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই আমাদের প্রধানমন্ত্রীর আরো কিছু অর্জন। রায় যাইহোক, সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তো রাষ্ট্রপতি। রাষ্ট্রপতি কতৃক শেষ বাঁশি না বাজা পর্যন্ত কোন কিছু ঠিক করে বলা যাচ্ছে না। রাষ্ট্রপতি কতৃক শেষ বাঁশি বাজার আগে এমন কি ঘটতে পারে তা অতীত ইতিহাস থেকে দেখা যাক।
লক্ষীপুর পৌরসভার মেয়র ও আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা আবু তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ডাদেশ মওকুফ করেছেন রাষ্ট্রপতি। এ নিয়ে দেশ জুড়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল।আবারও খুনি বিপ্লবকে দুটি খুনের সাজা আংশিক মাফ করে দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।
মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগ নেতা আবু তাহেরের পুত্র বিপ্লবের নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ২০০১ সালের অক্টোবরে বিএনপিকর্মী কামাল উদ্দিনকে নিজ বাড়িতে মা-বাবার সামনে পিটিয়ে হত্যা করে। অন্যদিকে, ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে লক্ষ্মীপুর শহরের আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে শিবিরকর্মী এ এস এম মহসিনকে বিপ্লবের নেতৃত্বে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করে। লক্ষ্মীপুরের কামাল হত্যা ও মহসিন হত্যা মামলায় বিপ্লবের যাবজ্জীবন সাজা হয়েছিল।
সামান্য একজন মেয়রের ছেলে যদি জীবন ভিক্ষা পেতে পারেন তবে মন্ত্রীর জামাই কি দোষ করল? মোফাজ্জল হোসেন মায়ার একমাত্র মেয়ে জামাই বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহিঃস্কৃত কর্ণেল তারেক সাইদও যে জীবন ভিক্ষা পাবে না তার গ্যারান্টি কে দিবে? তাই যতোক্ষণ না এই ২৬ জনকে ফাঁসিতে ঝুলানো হচ্ছে ততোক্ষন কোন কিছুই ঠিক নেই। কারণ,দেশটি বাংলাদেশ। এই দেশে সবকিছুই সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:৪৮