আফগানিস্তান এবং তালেবান এই দু’টি শব্দ আমাদের দেশের রাজনীতিকদের মুখে প্রায়ই শুনতে পাওয়া যায়। একদল অপরদলকে কুপোকাত করতে বলে থাকেন, সরকারী দল দেশকে আফগানিস্তান বানাতে বদ্ধ পরিকর। আবার সরকারী দল বলে থাকেন, তালেবানদের অনুকরনে দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে বিরোধী দল। তারা তালেবানদের মত ধ্বংসাত্নক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এসব তালগোল পাকানো বক্তব্যকে পাশ কাটিয়ে একটু তাত্বিক আলোচনায় যাই। তাত্বিক আলোচনা বললেও আমি কোন গভীর আলোচনায় যেতে চাই না।
রুশদের আগ্রাসন এবং আফগানিস্তানের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কিছুটা পড়াশুনা করার সুযোগ হয়েছিল। সেই পড়াশুনা লবদ্ধ জ্ঞান থেকে তালেবান এবং আফগান মানুষদের চরিত্র ও বৈশিষ্ঠ্য সম্পর্কে একটি কথা বলি। আফগানিস্তানের অলিগলিতে ক্লাশনিকভ ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। আফগানদের প্রতিটি ঘরই ছোট খাট অস্ত্র ভান্ডার। আফগানদের কোন বিয়ে শাদি হলে,তারা গুলি ছুড়ে আনন্দ প্রকাশ করে। এই রীতিটা তালেবানদের যুদ্ধ জয়ের আনন্দ্র প্রকাশেও দেখা যায়। খুব খেয়াল করে দেখুন, ২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ এবং আফগানিস্তান ক্রিকেট টিমের মধ্যে তিন ম্যাচের ওয়ান-ডে সিরিজের আয়োজন করা হয়েছিল। সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে বাংলাদেশ পরাজয় বরণ করে। আর এই আনন্দে আফগানিস্তানের মানুষ আকাশে গুলি ছুঁড়ে উৎযাপন করে। এটা আফগানিস্তান অথবা তালেবানদের সংস্কৃতি।
কিন্তু এখন আমরা দেখছি, আফগান অথবা তালেবানদের সেই সংস্কৃতি যেন উড়ে এসে বাঙ্গালীর উপরে ভর করেছে। এবার ভাতিজির বিয়েতে গুলি ছুড়ে উল্লাস আ.লীগ নেতার!
আওয়ামী লীগ নেতার বড় ভাইয়ের মেয়ের বিয়ে। গায়েহলুদের অনুষ্ঠান চলছে। লাল-নীল আলোয় সাজানো বাড়িতে সবাই গানের তালে নেচে-গেয়ে উদ্যাপন করছেন। ছোট-বড় সবাই আছে সেখানে। হঠাৎ আওয়ামী লীগ নেতা একটি শটগান ও একটি পিস্তল নিয়ে হাজির হলেন। সবার সামনেই খোলা আকাশে ছুড়লেন শটগানের গুলি।
গত মঙ্গলবার রাতে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা পৌরসভার মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শামীমুল ইসলাম তাঁর বড় ভাই সাইফুল ইসলামের মেয়ের বিয়েতে এ কাণ্ড ঘটান। গুলি ছোড়ার ওই দৃশ্য তাঁর ভাইয়ের ছেলে সাদমান আল সাকিব তাঁর ফেসবুক আইডিতে সরাসরি প্রচার (লাইভ) করেন। মঙ্গলবার রাতে ছিল গায়েহলুদের অনুষ্ঠান। বিয়ে হয়েছে গতকাল শুক্রবার।
ফেসবুক লাইভে আপলোড হওয়া দুটি ভিডিওতে দেখা গেছে, শামীমুল শটগান উঁচু করে গুলি ছুড়ছেন। এ সময় তাঁকে ঘিরে থাকা কয়েকজন তরুণ ছবি ও ভিডিও তুলছিলেন। ‘দিলাম’ বলেই গুলি ছোড়েন ওই নেতা। এরপর তরুণেরা হাসিমুখে উল্লাস করেন।
ফেসবুকে এ রকম ভিডিও চিত্র সরাসরি দেখানোর পর কয়েকজন সেখানে মন্তব্য করেন। আল-আমিন নামের একজন লেখেন, ‘এটা কোন আইনের মধ্যে পড়ে?’ জবাবে সাদমান আল সাকিব লেখেন, ‘এখানে আমরাই আইন’।
চমৎকার মন্তব্য। এখানে আমরাই আইন। আমি আগেই বলেছি মুজিবের সৈনিক হলে আর কোন আইনের প্রয়োজন নেই। যেমন যে কেউ আল্লাহু আকবার বলে গুলি অথবা চাপাতি চালালেই যে কেউ হয়ে যায় জামায়াত শিবির। সে মিল্কির মত জাত আওয়ামীলীগ নেতা হলেও রক্ষে নেই। সে জামায়াত শিবির এই কথা ফলাও করে টিভির ব্রেকিং নিউজের লাল ঘরে শো করতে দেখা যায়। ঠিক তার উল্টো কোন অপরাধ করার আগে জয় বাংলা বললেই হল! তার যতোসব অন্যায় পুলিশের খাতায় লেখা আছে তা এক নিমিষের মধ্যেই পূ্ণ্য হয়ে যাবে। তখন সে অপরাধী নয়, মহান মুজিব সৈনিক।
শুনেছি, তালেবান সৈন্যদের মধ্যে যদি কেউ অপরাধ করে তবে তাকে নাকি কঠিন শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু মুজিব সৈন্যরা অপরাধ করলে বরঞ্জ বুকে টেনে নেয়া হয়। থানার ওসিরা কুমিল্লার মাতৃ ভান্ডারের মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করানোর চেষ্টা করেন। সব মিলিয়ে দেখতেছি, এই মুজিবের সৈন্যরাই বেশি ভয়ানক। কেন যে শুধু শুধু বিশ্ব টেরোরিষ্টদের তালিকায় তালেবানের নাম দেখা যাচ্ছে। এ সত্যিই অবমাননাকর। মুজিব কাকুর সৈন্যদের অপমান মেনে নেয়া যায় না। বিশ্বের ভয়ানক টেরোরিষ্টদের তালিকার সবার উপরে মুজিব কাকুর সৈন্যবাহিনী মানে আওয়ামীলীগের নাম থাকা উচিত।
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫