ইসলাম ধর্মটা একটু কেমন জানি! খুবই বর্বর। জোর করে মানুষের উপর তাদের মতামতকে চাপিয়ে দেয়। জোর করে মানুষকে তাদের ধর্ম পালন করতে বাধ্য করে এক সময় তাদের পরিচয় হয়ে যায়, মুসলিম।
বন্ধুগোছের এক হিন্দু বড় ভাই এই কথাগুলো বললেন। আরো বললেন, ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল হিন্দুদের। সব নষ্টের গোড়ায় এই ইসলাম। তারা ভারতে আসল, ভারত জয় করল এবং মানুষকে তরবারীর নিচে ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করল। সেই দিন মুসলিমরা তাদের ইসলামকে যদি এমনভাবে ব্যবহার না করত, তবে কোন কালেও মুসলিমদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র পাকিস্তানের প্রয়োজন পড়তো না। তিনি আমার দিকে বাঁকা হাসি দিয়ে বললেন, এর জবাবে কি বলবি! যাই বলিস, আমাকে আমার চিন্তাধারা থেকে এক চুলও নড়াতে পারবি না। ইসলাম বর্বর। মুসলিমরা বর্বর।
তার এইসব কথার পিঠে আমি একটি কথাও বলিনি। শুধু বলেছি, আগামীতে যেকোন একদিন জবাব দিব। কিছুদিন আগে, তার সঙ্গে আবারো দেখা হল। তিনি দুঃখ করে বললেন,“ ধর্ম কর্ম বাদ দিছি। যে হালার ধর্ম মানুষকে মানুষ বলে না সেই ধর্ম মানলাম নাহ”।
আসল ঘটনা হলো, তার এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে রিলেশন ছিল। কিন্তু তারা জাতের দিক থেকে কিছুটা নিঁচু জাতের। ছেলেদের তুলনায় বেশ নিঁচু। সেই নিঁচু জাতের কারণেই ছেলের পরিবার এই মেয়েকে মানতে নারাজ। অথচ টাকা পয়সা এবং সমাজে প্রতিপত্তির দিক থেকে মেয়েরাই বরং অনেক উপরে। কিন্তু ঐ যে, জাত বলে কথা! হিন্দুর যদি জাত যায় তবে নাকি সবই যায়! এই জাত যাবার ভয়ে মন্দিরও পৃথক করা হয়। মন্দিরে পূজো দেবার ক্ষমতা শুধু ব্রাক্ষণদের হাতেই রয়ে যায়। ব্রাক্ষণ ছাড়া আর কারোর সক্ষমতা নেই তাদের দেবীর সামনে মন্ত্র পড়ে পূজা দিবে। আর দলিতরা তো মন্দিরেই প্রবেশ করতে পারবে না।
তাকে বললাম,একটা ঘটনা তাহলে বলি। কিছুদিন আগে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে গিয়েছিলাম। সেখানে থাকতেই মাগরিবের আযান দিল। হাসপাতালের বারান্দায় চাটাই বিছিয়ে নামাযের ব্যবস্থা হল। ইকামত দিয়ে নামাযও শুরু হয়ে গেল। কিছুক্ষনের মধ্যে হাসপাতালের ডাক্তার এবং পরিচালনা পরিষদের মেম্বারও নামাযে শরীক হল। আমরা সাধারণ মুসল্লিরাও নামাযে দাঁড়িয়ে গেলাম। সেই নামাযে ইমামতি কে করেছিল, জানেন? ঐ হাসপাতালের একজন ক্লিনার। ঐ ক্লিনারের পিছনে ডাক্তার হাসপাতালের পরিচালকরা নিঃসংকোচে, দাঁড়িয়ে গেল। মনে পড়ে যায়, সেই ইতিহাসের কথা। গজনীর সুলতান মাহমুদ দাঁড়িয়ে গেছে নামাযে। পাশে দাঁড়িয়েছে সুলতান মাহমুদের ভৃত্য। সেখানে সুলতান মাহমুদ এবং সুলতান মাহমুদের ভৃত্য মিলে মিশে একাকার। এখানে কে সুলতান আর কে ভৃত্য তা মূল পরিচয় নয়। মূল পরিচয় একটাই, সুলতান মাহমুদ এবং সুলতান মাহমুদের ভৃত্য এক আল্লাহর গোলাম। আর সেই আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায়ে সুলতান এবং সুলতানের ভৃত্য একই কাতারে দাড়িয়ে গেছে। এটাই ইসলাম। এটাই মানবাধিকার। এটাই ধর্মাধিকার।
আর আপনার মত ভারতীয় উপমহাদেশের হিন্দুরা যারা জাত পাতের কারণে তাদের ধর্মীয় নির্যাতনের স্বীকার হন, তারা এই সাম্য দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণে কখনোই তরবারীর আশ্রয় গ্রহণ করা হয় নি। ভারতীয় উপমহাদেশের কোটি কোটি নির্যাতিত হিন্দুরা স্বইচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করে নিজের মানবাধিকারটুকু ফিরে পেয়েছে। সে ইসলাম গ্রহণ করে নিজেকে মানুষ ভাবার সৌভাগ্য অর্জন
করেছে। তার আগে সে নিজেকে নিঁচু জাত ছাড়া আর কিছুই ভাবতে পারতো না। সে ছিল ব্রাক্ষণদের সেবাদাস। তার জীবনভর কাজ একটাই ব্রাক্ষণদের সেবা করে যাওয়া। ব্রাক্ষণ কে তুষ্ট করতে পারলেই স্বর্গ মিলতে পারে। আবার নিঁচু জাতের কারণে তাদের ভগবান স্বর্গ নাও দিতে পারে। নিঁচু জাতের সাথে সব কিছুই করা যায়। তাতে কারো কোন কিচ্ছুরই যায় আসে না। সেই যায় আসে না থেকেই হিন্দুরা ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হয়েছে। ফলে উপমহাদেশের অন্যতম প্রধান ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে।
ইসলাম বর্বর নয়, বরঞ্জ উদার। ইসলাম সংকির্ণ নয়, বরঞ্চ অবার প্রসারিত। ইসলাম মানুষকে নির্যাতনের খাতিরে ব্যবহৃত হয় না। বরঞ্জ ইসলাম মানুষকে নির্যাতন থেকে মুক্তি দিয়ে শান্তির জীবন উপহার দিয়েছে। যার প্রমাণ, এই একবিংশ শতাব্দিতেও ভারতের হাজার দলিত হিন্দুরা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করছে। আর সবচেয়ে ধ্রুব সত্য কথাটি হল, ইসলামই মানুষকে মানবিক অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:৫৫